আজকের বিষয়: সূরা মুজাদালাহ্ সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল মুজাদালাহ্ আলমল ও ফজিলত, সূরা মুজাদালাহ্ কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা মুজাদালাহ্ নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৫৮ সূরা আল – মুজাদালাহ্
নামকরণ
() এবং () উভয়টিই ও সূরার নাম। নামটি প্রথমে আয়াতের () শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। সূরার প্রারম্ভেই যেহেতু সে মহিলার কথা উল্লেখ আছে যে, তার স্বামীর ‘যিহারে’র ঘটনা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পেশ করে পীড়াপীড়ি করেছিল যে, তিনি যে এমন কেন উপায় বলে দেন যাতে তার এবং তার সন্তানদের জীবন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। আল্লাহ তা’আলা তার এ পীড়াপীড়িকে মুজাদালাহ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন। তাই এ শব্দটিকে এ সূরার নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। শব্দটিকে যদি () পড়া হয় তাহলে অর্থ হবে “আলোচনা ও যুক্তি তর্ক” আর যদি () পড়া হয় তাহলে অর্থ হবে “আলোচনা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকারিনী। ”
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
মুজাদালার এ ঘটনাটি কখন সংঘটিত হয়েছিল তা কোন রেওয়াতেই স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়নি। কিন্তু এ সূরার বিষয়বস্তুর মধ্যে এমন একটি ইংগিত আছে যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করে বলা যায় যে, এ সূরা আহযাব যুদ্ধের (৫ম হিজরীর শাওয়াল মাস) পরে নাযিল হয়েছে। পালিত পুত্র যে প্রকৃতই পুত্র হয় না সে বিষয়ে বলতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা সূরা আহযাবে যিহার সম্পর্কে শুধু এতটুকু বলেছিলেনঃ
“তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে যিহার করো আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের মা বানিয়ে দেননি। ” (আল আহযাবঃ ৪)
কিন্তু যিহার করা যে, একটি গোনাহ বা অপরাধ সেখানে তা বলা হয়নি। এ কাজের শরয়ী বিধান কি সেখানে তাও বলা হয়নি। পক্ষান্তরে এ সূরায় যিহারের সমস্ত বিধি -বিধান বলে দেয়া হয়েছে। এতে বুঝা যায় বিস্তারিত এ হুকুম আহকাম ঐ সংক্ষিপ্ত হিদায়াতের পরেই নাযিল হয়েছে।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
- নামাজে আমরা যা বলি , তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- “লা আদওয়া” সংক্রমন নেই!হাদীসটি কী বুঝায়?
- রমজানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যত পরামর্শ
- ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
- আজহারী: কোন ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙে
বিষয়বস্তু ও মুল বক্তব্য
সেসময় মুসলমানগণ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলের এ সূরায় সেসব সমস্যা সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সূরার শুরু থেকে ৬ নং আয়াত পর্যন্ত যিহারের শরয়ী হুকুম আহকাম বর্ণনা করা হয়েছে। সে সাথে মুসলমানদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে যে, ইসলাম গ্রহণ করার পর জাহেলী রীতিনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমাসমূহ লংঘন করা অথবা তা মেনে চলতে অস্বীকার করা অথবা তার পরিবর্তে নিজের ইচ্ছা মাফিক অন্য নিয়ম নীতি ও আইন কানুন তৈরী করে নেয়া ঈমানদের চরম পরিপন্থী কাজ ও আচরণ। এর শাস্তি হচ্ছে পার্থিব জীবনের লাঞ্ছনা । এ ব্যাপারে আখেরাতেও কঠোর জবাবদিহি করতে হবে।
৭ থেকে ১০ আয়াতে মুনাফিকদের আচরণের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। তারা পরস্পর গোপন সলা পরামর্শ করে নানারূপ ক্ষতি সাধনের পরিকল্পনা করতো। তাদের মনে যে গোপন হিংসা বিদ্বেষ ছিল তার কারণে তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইহুদীদের মত এমন কায়দায় সালাম দিতো যা দ্বারা দোয়ার পরিবর্তে বদ দোয়া প্রকাশ পেতো। এ ক্ষেত্রে মুসলমানদেরকে এই বলে সান্তনা দেয়া হয়েছে যে, মুনাফিকদের ঐ সলা পরামর্শ তোমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। সুতরাং তোমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে নিজেদের কাজ করতে থাক। সাথে সাথে তাদেরকে এই নৈতিক শিক্ষাও দেয়া হয়েছে যে, গোনাহ জুলুম বাড়াবাড়ি এবং নাফরমানীর কাজে সলা পরামর্শ করা ঈমানদারদের কাজ নয়। তারা গোপনে বসে কোন কিছু করলে তা নেকী ও পরহেজগারীর কাজ হওয়া উচিত।
১১ থেকে ১৩ আয়াতে মুসলমানদের কিছু মজলিসী সভ্যতা ও বৈঠকী আদব-কায়দা শেখানো হয়েছে। তাছাড়া এমন কিছু সামাজিক দোষ-ত্রুটি দূর করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যা মানুষের মধ্যে আগেও ছিল এবং এখনো আছে। কোন মজলিসে যদি বহু সংখ্যক লোক বসে থাকে এমতাবস্থায় যদি বাইরে থেকে কিছুলোক আসে তাহলে মজলিসে পূর্ব থেকে বসে থাকা ব্যক্তিগণ নিজেরা কিছুটা গুটিয়ে বসে তাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার কষ্টটুকু স্বীকার করতেও রাজী হয় না। ফলে পরে আগমনকারীগণ দাঁড়িয়ে থাকেন, অথবা দহলিজে বসতে বাধ্য হয় অথবা ফিরে চলে যায় অথবা মজলিসে এখনো যথেষ্ট স্থান আছে দেখে উপস্থিত লোকজনকে ডিঙ্গিয়ে ভিতরে চলে আসেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে প্রায়ই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। তাই আল্লাহ তা’আলা সবাইকে হাদিয়াত বা নির্দেশনা দিয়েছেন যে, মজলিসে আত্মস্বার্থ এবং সংকীর্ণ মনের পরিচয় দিও না। বরং খোলা মনে পরবর্তী আগমনকারীদের জন্য স্থান করে দাও।
অনুরূপ আরো একটি ত্রুটি মানুষের মধ্যে দেখা যায়। কেউ কারো কাছে গেলে বিশেষ করে কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে গেলে জেঁকে বসে থাকে এবং এদিকে মোটেই লক্ষ করে না যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় নেয়া তার কষ্টের কারণ হবে। তিনি যদি বলেন, জনাব এখন যান তাহলে সে খারাপ মনে করবে। তাকে ছেড়ে উঠে গেলে অভদ্র আচরণের অভিযোগ করবে। ইশারা ইংগিতে যদি বুঝাতে চান যে, অন্য কিছু জরুরী কাজের জন্য তার এখন কিছু সময় পাওয়া দরকার তাহলে শুনেও শুনবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও মানুষের এ আচরণের সম্মুখীন হতেন আর তাঁর সাহচর্য থেকে উপকৃত হওয়ার আকাঙ্খায় আল্লাহর বান্দারা মোটেই খেয়াল করতেন না যে, তারা অতি মূল্যবান কাজের সময় নষ্ট করেছেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা এ কষ্টদায়ক বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করার জন্য নির্দেশ দিলেন যে, যখন বৈঠনে শেষ করার জন্য উঠে যাওয়ার কথা বলা হবে তখন উঠে চলে যাবে।
মানুষের মধ্যে আরো একটি বদঅভ্যাস ছিল। তা হচ্ছে, কেউ হয়তো নবীর (সা) সাথে অযথা নির্জনে কথা বলতে চাইতো অথবা বড় মজলিসে তাঁর নিকটে গিয়ে গোপনীয় কথা বলার ঢংয়ে কথা বলতে চাইতো। এটি নবীর (সা) জন্য যেমন কষ্টদায়ক ছিল । তাই যে ব্যক্তিই নির্জনে একাকী তাঁর কথা বলতে চায়, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য কথা বলার আগে সাদকা দেয়া বাধ্যতামূলক করে দিলেন। লোকজনকে তাদের এ বদঅভ্যাস সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য। যাতে তারা এ বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করে ।
সুতরাং এ বাধ্যবাধকতা মাত্র অল্প দিন কার্যকর রাখা হয়েছিল। মানুষ তাদের কার্যধারা ও অভ্যাস সংশোধন করে নিলে এ নির্দেশ বাতিল করে দেয়া হলো।
মুসলিম সমাজের মানুষের মধ্যে নিস্বার্থ ঈমানদার, মুনাফিক এবং দোদুল্যমান তথা সিদ্ধান্তহীনতার রোগে আক্রান্ত মানুষ সবাই মিলে মিশে একাকার হয়েছিল। তাই কারো সত্যিকার ও নিস্বার্থ ঈমানদার হওয়ার মানদণ্ড কি তা ১৪ আয়াত থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত তা স্পষ্টভাষায় বলে দেয়া হয়েছে। এক শ্রেণীর মুসলমান ইসলামের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে, সে যে দীনের ওপর ঈমান আনার দাবী করে নিজের স্বার্থের খাতিরে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতেও দ্বিধাবোধ করে না এবং ইসলামের বিরুদ্ধে নানারকম সন্দেহ -সংশয় এবং দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয়। তবে যেহেতু তারা মুসলমানদের দলে অন্তরভুক্ত তাই ঈমান গ্রহণের মিথ্যা স্বীকৃতি তাদের জন্য ঢালের কাজ করে। আরেক শ্রেণীর মুসলমান তাদের দীনের ব্যাপারে অন্য কারো পরোয়া করা তো দূরের কথা নিজের বাপ, ভাই, সন্তান-সন্তুতি এবং গোষ্ঠীকে পর্যন্ত পরোয়া করে না। তাদের অবস্থা হলো, যে আল্লাহ, রসূল এবং তার দীনের শত্রু তার জন্য তার মনে কোন ভালবাসা নেই। এ আয়াতসমূহে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন প্রথম শ্রেণীর এই মুসলমানরা যতই শপথ করে তাদের মুসলমান হওয়ার নিশ্চয়তা দিক না কেন প্রকৃতপক্ষে তারা শয়তানের দলের লোক। সুতরাং শুধু দ্বিতীয় প্রকার মুসলমানগণই আল্লাহর দলে অন্তরভুক্ত হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছে। তারাই খাঁটি মুসলমান। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই লাভ করবে সফলতা।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
৫৮ . আল মুজাদালাহ্ – ( الـمجادلـة ) | অনুযোগকারিণী
মাদানী, মোট আয়াতঃ ২২
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
১
قَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا وَتَشْتَكِي إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَا ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
কাদ ছামি‘আল্লা-হু কাওলাল্লাতী তুজা-দিলুকা ফী ঝাওজিহা-ওয়া তাশতাকীইলাল্লা-হি ওয়াল্লা-হু ইয়াছমা‘উ তাহা-উরাকুমা- ইন্নাল্লা-হা ছামী‘উম বাসীর।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে নবী!) আল্লাহ সেই নারীর কথা শুনেছেন, যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে। ১ আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং অভিযোগ পেশ করছে আল্লাহর দরবারে, আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ আপনাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ অবশ্যই শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সঙ্গে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহ্ র নিকটও ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ্ তোমাদের কথোপকথন শোনেন, আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
তাফসীরঃ
১. আয়াতের শানে নুযুলঃ হযরত খাওলা (রাযি.) একজন মহিলা সাহাবী এবং তিনি ছিলেন হযরত আওস ইবনুস সামিত (রাযি.)-এর স্ত্রী। হযরত আওস বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। একবার রাগের বশে স্ত্রীকে বলে ফেললেন, তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মত (অর্থাৎ আমি তোমাকে আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মত হারাম করলাম)। স্ত্রীকে লক্ষ করে এরূপ বলাকে জিহার বলা হয়। সেকালে এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যেত। তারপর আর তাদেরকে মিলানোর কোন উপায় থাকত না। হযরত আওস ইবনুস সামিত (রাযি.) যদিও উত্তেজিত হয়ে জিহার করে ফেলেছিলেন, কিন্তু একটু পরেই তিনি এজন্য অনুতপ্ত হন। ফলে হযরত খাওলা (রাযি.) পেরেশান হয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছুটে যান এবং এ বিষয়ে তাঁর কাছে বিধান চান। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আমার কাছে কোন বিধান আসেনি। তবে সম্ভাবনা এটাই প্রকাশ করলেন যে, তিনি তার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে গেছেন। হযরত খাওলা (রাযি.) বললেন, আমার স্বামী তো আমাকে তালাক দেয়নি। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই একই সম্ভাবনা প্রকাশ করলেন আর হযরত খাওলা (রাযি.)-ও প্রতিবার একই প্রতিউত্তর করলেন। তার এই বারবার একই কথা বলে যাওয়াকে কুরআন মাজীদে বাদানুবাদ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হযরত খাওলা (রাযি.) আল্লাহ তাআলার কাছেও ফরিয়াদ করলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার সাহায্য প্রার্থনা করি আমার এই বিপদে। আমার বাচ্চারা সব ছোট-ছোট। তারা তো ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকলেন, হে আল্লাহ! আমি আমার এ বিপদের কথা তোমাকেই জানাই। তিনি এভাবে ফরিয়াদ করে যাচ্ছিলেন, এরই মধ্যে আয়াত নাযিল হয়ে গেল এবং জিহারের বিধান ও জিহার প্রত্যাহার করার নিয়ম জানিয়ে দেওয়া হল (তাফসীরে ইবনে কাসীর হতে সংক্ষেপিত)।
২
الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنكُم مِّن نِّسَائِهِم مَّا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ ۖ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلَّا اللَّائِي وَلَدْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنكَرًا مِّنَ الْقَوْلِ وَزُورًا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ
আল্লাযীনা ইউজা-হিরূনা মিনকুম মিনিছাইহিম মা-হুন্না উম্মাহা-তিহিম ইন উম্মাহাতুহুম ইল্লাল লাঈ ওয়ালাদনাহুম ওয়া ইন্নাহুম লাইয়াকূলূনা মুনকারাম মিনাল কাওলি ওয়াঝূরা- ওয়া ইন্নাল্লা-হা লা‘আফুওউন গাফূর।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে জিহার করে, (তাদের এ কাজ দ্বারা) তাদের সে স্ত্রীগণ তাদের মা হয়ে যায় না। তাদের মা তো তারাই যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা এমন কথা বলে, যা অতি মন্দ ও মিথ্যা। ২ নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি মার্জনাকারী, অতি ক্ষমাশীল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীগণের সঙ্গে যিহার করে, তারা জেনে রাখুক-তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নন, যারা তাদেরকে জন্মদান করে কেবল তারাই তাদের মাতা; এরা তো অসঙ্গত ও অসত্য কথাই বলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাপ মোচনকারী ও ক্ষমাশীল।
তাফসীরঃ
২. অর্থাৎ এরূপ কথা বলা গুনাহ। তবে পরের আয়াতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ এরূপ গুনাহ করার পর তা হতে তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন।
৩
وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِن نِّسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِّن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۚ ذَٰلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
ওয়াল্লাযীনা ইউজা-হিরূনা মিন্নিছাইহিম ছু ম্মা ইয়া‘ঊদূ না লিমা-কা-লূফাতাহরীরু রাকাবাতিম মিন কাবলি আইঁ ইয়াতামাছছা- যা-লিকুম তূ‘আজূনা বিহী ওয়াল্লাহু বিমা-তা‘মালূনা খাবীর।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে জিহার করে, তারপর তারা তাদের সে কথা প্রত্যাহার করে নেয়, তাদের কর্তব্য একটি গোলাম আযাদ করা তারা (স্বামী-স্ত্রী) একে অন্যকে স্পর্শ করার আগে। ৩ এই উপদেশ তোমাদেরকে দেওয়া হচ্ছে। তোমরা যা-কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, অতঃপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা এই একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাসকে মুক্তি দিবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা নিজেদের স্ত্রীগণের সঙ্গে যিহার করে এবং পরে এদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তবে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাস মুক্ত করতে হবে, এটা দিয়ে তোমাদেরকে উপদেশ দেওয়া যাচ্ছে। তোমরা যা কর আল্লাহ্ তার খবর রাখেন।
তাফসীরঃ
৩. এবার জিহারের বিধান জানানো হচ্ছে। জিহার করার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার অন্তরঙ্গ কার্যাবলী, যথা চুম্বন, আলিঙ্গন, সহবাস ইত্যাদি জায়েয থাকে না। হাঁ, জিহার প্রত্যাহার করে নিলে পূর্বেকার অবস্থা ফিরে আসে এবং এসব আবার জায়েয হয়ে যায়। তবে সেজন্য কাফফারা দেওয়া জরুরি। কী কাফফারা দিতে হবে? আয়াতে বলা হয়েছে, কারও পক্ষে যদি একটি গোলাম আযাদ করা সম্ভব হয়, তবে তাকে গোলাম আযাদের দ্বারা কাফফারা আদায় করতে হবে। যদি কোন ব্যক্তির পক্ষে তা সম্ভব না হয়, (যেমন আজকাল গোলামের কোন অস্তিত্বই নেই) তবে তাকে একটানা দু’মাস রোযা রাখতে হবে। আর যদি বার্ধক্য, অসুস্থতা ইত্যাদির কারণে কারও পক্ষে রোযা রাখাও সম্ভব না হয়, তবে সে ষাটজন মিসকীনকে দু’বেলা পেট ভরে খানা খাওয়াবে; এর দ্বারাও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। কাফফারা আদায়ের পর স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য হালাল হয়ে যায়।
৪
فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۖ فَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ۚ ذَٰلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۗ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ
ফামাল্লাম ইয়াজিদ ফাসিয়া-মুশাহরাইনি মুতাতা-বি‘আইনি মিন কাবলি আইঁ ইয়াতামাছছা- ফামাল্লাম ইয়াছতাতি‘ ফাইত‘আ-মুছিত্তীনা মিছকীনা- যা-লিকা লিতু’মিনূবিল্লাহি ওয়া রাছূলিহী ওয়া তিলকা হুদূদুল্লা-হি ওয়া লিল কা-ফিরীনা ‘আযা-বুন আলীম।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে ব্যক্তি এ সামর্থ্য রাখে না, তাকে একটানা দু’মাস রোযা রাখতে হবে তারা ( স্বামী-স্ত্রী) একে অন্যকে স্পর্শ করার আগে। যে ব্যক্তি সে ক্ষমতাও রাখে না তার কর্তব্য ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো। এটা এজন্য, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন। ৪ এটা আল্লাহর স্থিরীকৃত সীমা (বিধান)। আর কাফেরদের জন্য আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একাদিক্রমে দুই মাস রোযা রাখবে। যে এতেও অক্ষম হয় সে ষাট জন মিসকীনকে আহার করাবে। এটা এজন্যে, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণা দায়ক আযাব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কিন্তু যার এ সামর্থ্য থাকবে না, একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে তাকে একাদিক্রমে দুই মাস সিয়াম পালন করতে হবে ; যে তাতেও অসমর্থ, সে ষাটজন অভাবগ্রস্তকে খাওয়াবে; এটা এজন্যে যে, তোমরা যেন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলি আল্লাহ্ র নির্ধারিত বিধান ; কাফিরদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
তাফসীরঃ
৪. অর্থাৎ জিহার সম্পর্কে এই যে বিধান দেওয়া হল তা এ জন্য, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেওয়া বিধান মেনে নিয়ে তাদের প্রতি প্রকৃত ঈমানের পরিচয় দাও এবং জাহিলী যুগের প্রথা মেনে নিজ ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত না কর। -অনুবাদক
৫
إِنَّ الَّذِينَ يُحَادُّونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ كُبِتُوا كَمَا كُبِتَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ وَقَدْ أَنزَلْنَا آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ ۚ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ مُّهِينٌ
ইন্নাল্লাযীনা ইউহাদ্দূনাল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূকুবিতূকামা-কুবিতাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ওয়া কাদ আনঝালনাআ-য়া-তিম বাইয়িনা-তিওঁ ওয়ালিলকা-ফিরীনা ‘আযা-বুম মুহীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হবে, যেমন লাঞ্ছিত হয়েছিল তাদের পূর্ববর্তীগণ। আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি। কাফেরদের জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা আল্লাহর তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা অপদস্থ হয়েছে, যেমন অপদস্থ হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীরা। আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদেরকে অপদস্থ করা হবে যেমন অপদস্থ করা হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীদেরকে; আমি সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করেছি; কাফিরদের জন্যে রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি-
৬
يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوا ۚ أَحْصَاهُ اللَّهُ وَنَسُوهُ ۚ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
ইয়াওমা ইয়াব‘আছুহুমুল্লা-হু জামী‘আন ফাইউনাব্বিউহুম বিমা-‘আমিলূ আহসা-হুল্লা-হু ওয়া নাছূহু ওয়াল্লা-হু ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন শাহীদ।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই দিন, যে দিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনর্জীবিত করবেন, তারপর তারা যা-কিছু করত সে সম্বন্ধে তাদেরকে অবহিত করবেন। আল্লাহ তা গুণে গুণে সংরক্ষণ করেছেন। আর তারা তা ভুলে গেছে। আল্লাহ সবকিছুর সাক্ষী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সেদিন স্মরণীয়; যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুত্থিত করবেন, অতঃপর তাদেরকে জানিয়ে দিবেন যা তারা করত। আল্লাহ তার হিসাব রেখেছেন, আর তারা তা ভুলে গেছে। আল্লাহর সামনে উপস্থিত আছে সব বস্তুই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেদিন, যেদিন এদের সকলকে একত্রে উত্থিত করা হবে এবং এদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে যা এরা করত; আল্লাহ্ এর হিসেব রেখেছেন, আর এরা তা বিস্মৃত হয়েছে। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।
তাফসীরঃ
৫. মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করার পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথাকার ইয়াহুদীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। কিন্তু ইয়াহুদীদের অন্তরে মুসলিমদের প্রতি যে হিংসা-বিদ্বেষ বদ্ধমূল ছিল, সে কারণে তারা তাদের বিরুদ্ধে নানা রকম অপতৎপরতা চালাত ও তাদেরকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করত। মুসলিমদেরকে উত্যক্ত করার একটা কৌশল তাদের এই ছিল যে, মুসলিমদেরকে দেখলেই তারা পরস্পরে এমনভাবে কানাকানি করত ও ইশারা দিত, যা দেখে মুসলিমদের মনে হত তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কোন কোন মুনাফেকও এ রকম করত। এতে যেহেতু মুমিনদের কষ্ট হত, তাই তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তারা এরূপ করেই যাচ্ছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়।
৭
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۖ مَا يَكُونُ مِن نَّجْوَىٰ ثَلَاثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا أَدْنَىٰ مِن ذَٰلِكَ وَلَا أَكْثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا ۖ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
আলাম তারা আন্নাল্লা-হা ইয়া‘লামুমা-ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি মাইয়াকূনুমিন নাজওয়া-ছালা-ছাতিন ইল্লা-হুওয়া রা-বি‘উহুম ওয়ালা-খামছাতিন ইল্লাহুওয়া ছা-দিছুহুম ওয়ালাআদনা-মিন যা-লিকা ওয়ালাআকছারা ইল্লা-হুওয়া মা‘আহুম আইনা মা-কা-নূ ছু ম্মা ইউনাব্বিউহুম বিমা-‘আমিলূইয়াওমাল কিয়া-মাতি ইন্নাল্লা-হা বিকুল্লি শাইয়িন ‘আলীম।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তুমি কি দেখনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে তা আল্লাহ জানেন? কখনও তিনজনের মধ্যে এমন কোন গোপন কথা হয় না, যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন এবং কখনও পাঁচ জনের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। ৫ অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন তারা যা-কিছু করত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনি কি ভেবে দেখেননি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, আল্লাহ তা জানেন। তিন ব্যক্তির এমন কোন পরামর্শ হয় না যাতে তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাদের সাথে আছেন, তারা যা করে, তিনি কেয়ামতের দিন তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কি লক্ষ্য কর না, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ্ তা জানেন ? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না যাতে ষষ্ঠ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকেন না। এরা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশি হোক তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, এরা যেখানেই থাকুক না কেন। এরপর এরা যা করে, তিনি এদেরকে কিয়ামতের দিন তা জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত।
৮
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ نُهُوا عَنِ النَّجْوَىٰ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا نُهُوا عَنْهُ وَيَتَنَاجَوْنَ بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ الرَّسُولِ وَإِذَا جَاءُوكَ حَيَّوْكَ بِمَا لَمْ يُحَيِّكَ بِهِ اللَّهُ وَيَقُولُونَ فِي أَنفُسِهِمْ لَوْلَا يُعَذِّبُنَا اللَّهُ بِمَا نَقُولُ ۚ حَسْبُهُمْ جَهَنَّمُ يَصْلَوْنَهَا ۖ فَبِئْسَ الْمَصِيرُ
আলাম তারা ইলাল্লাযীনা নুহূ‘আনিন্নাজওয়া-ছু ম্মা ইয়া‘ঊদূ না লিমা-নুহূ ‘আনহু ওয়া ইয়াতানা-জাওনা বিলইছমি ওয়াল ‘উদওয়া-নি ওয়া মা‘সিয়াতিররাছূলি ওয়া ইযাজাঊকা হাইইয়াওকা বিমা-লাম ইউহায়িকা বিহিল্লা-হু ওয়া ইয়াকূলূনা ফী আনফুছিহিম লাওলা-ইউ‘আযযি বুনাল্লা-হু বিমা-নাকূলু হাছবুহুম জাহান্নামু ইয়াসলাওনাহা- ফাবি’ছাল মাসীর।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তুমি কি দেখনি তাদেরকে, যাদেরকে কানে কানে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছিল, তারপরও তারা তাদেরকে যা করতে নিষেধ করা হয়েছিল তাই করে? তারা পরস্পরে এমন বিষয়ে কানাকানি করে, যা গুনাহ, সীমালংঘন ও রাসূলের অবাধ্যতা এবং (হে রাসূল!) তারা তোমার কাছে যখন আসে, তখন তারা তোমাকে এমন কথা দ্বারা অভিবাদন জানায়, যা দ্বারা আল্লাহ তোমাকে অভিবাদন জানাননি ৬ এবং তারা মনে মনে বলে, আমরা যা বলছি সেজন্য আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছেন না কেন? ৭ জাহান্নামই তাদের (শাস্তি দানের) জন্য যথেষ্ট। তারা তাতেই গিয়ে পৌঁছবে এবং তা অতি নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনি কি ভেবে দেখেননি, যাদেরকে কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছিল অতঃপর তারা নিষিদ্ধ কাজেরই পুনরাবৃত্তি করে এবং পাপাচার, সীমালংঘন এবং রসূলের অবাধ্যতার বিষয়েই কানাঘুষা করে। তারা যখন আপনার কাছে আসে, তখন আপনাকে এমন ভাষায় সালাম করে, যদ্দ্বারা আল্লাহ আপনাকে সালাম করেননি। তারা মনে মনে বলেঃ আমরা যা বলি, তজ্জন্যে আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দেন না কেন? জাহান্নামই তাদের জন্যে যথেষ্ট। তারা তাতে প্রবেশ করবে। কতই না নিকৃষ্ট সেই জায়গা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কি তাদেরকে লক্ষ্য কর না, যাদেরকে গোপন পরামর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছিল ? এরপর এরা যা নিষিদ্ধ তারই পুনরাবৃত্তি করে এবং পাপাচরণ, সীমালংঘন ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের জন্যে কানাকানি করে। এরা যখন তোমার নিকট আসে তখন এরা তোমাকে এমন কথা দিয়ে অভিবাদন করে যা দিয়ে আল্লাহ্ তোমাকে অভিবাদন করেন নাই। এরা মনে মনে বলে, ‘আমরা যা বলি তার জন্যে আল্লাহ্ আমাদেরকে শাস্তি দেন না কেন ?’ জাহান্নামই এদের জন্যে যথেষ্ট, যেখানে এরা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট সেই আবাস!
তাফসীরঃ
৬. উপরে বর্ণিত অপকর্মগুলো তো করতই, সেই সঙ্গে আরও বলত, আমাদের এসব কাজ অন্যায় হলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এজন্য শাস্তি দেন না কেন? আমাদেরকে যেহেতু শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না, তার দ্বারা প্রমাণ হয়ে যায় আমরা অন্যায় কিছু করছি না; আমরা ন্যায়ের উপরই আছি।
৭. ইয়াহুদীদের আরেকটি দুষ্কর্ম ছিল এরূপ, তারা মুমিনদের সঙ্গে সাক্ষাতকালে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ না বলে বলত ‘আস-সামু আলাইকুম’। ‘আস-সালামু আলাইকুম’-এর অর্থ ‘তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক’। আর ‘আস-সামু আলাইকুম’-এর অর্থ তোমার মরণ হোক’। উভয়ের মধ্যে শুধুমাত্র ‘লা’-এর প্রভেদ থাকায় শ্রোতা সাধারণত তা উপলব্ধি করতে পারত না। ফলে সে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’ বলে জবাব দিত। এতে তারা নিজেদের মধ্যে হেসে গড়াগড়ি খেত আর এভাবে নিজেদের মনের ঝাল মেটানোর চেষ্টা করত। এ আয়াতে তাদের সেই ইতরামির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৯
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ الرَّسُولِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূইযা-তানা-জাইতুম ফালা-তাতানা-জাও বিল ইছমি ওয়াল ‘উদওয়া-নি ওয়ামা‘সিয়াতির রাছূলি ওয়া তানা-জাও বিলবিররি ওয়াত্তাকওয়া- ওয়াত্তাকুল্লা-হাল্লাযীইলাইহি তুহশারূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরে যখন কানে কানে কথা বল, তখন এমন বিষয়ে কানাকানি করবে না, যাতে গুনাহ, সীমালংঘন ও রাসূলের অবাধ্যতা হয়। বরং কানাকানি করবে সৎকর্ম ও তাকওয়া সম্বন্ধে এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার কাছে তোমাদেরকে একত্র করে নিয়ে যাওয়া হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মুমিনগণ, তোমরা যখন কানাকানি কর, তখন পাপাচার, সীমালংঘন ও রসূলের অবাধ্যতার বিষয়ে কানাকানি করো না বরং অনুগ্রহ ও খোদাভীতির ব্যাপারে কানাকানি করো। আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর কাছে তোমরা একত্রিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন গোপন পরামর্শ কর, সে পরামর্শ যেন পাপাচরণ, সীমালংঘন ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ সম্পর্কে না হয়। তোমরা কল্যাণকর কাজ ও তাক্ওয়া অবলম্বনের পরামর্শ কর, এবং ভয় কর আল্লাহ্কে যাঁহার নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।
১০
إِنَّمَا النَّجْوَىٰ مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
ইন্নামান্নাজওয়া-মিনাশশাইতা-নি লিয়াহঝুনাল্লাযীনা আ-মানূওয়া লাইছা বিদারিহিম শাইআন ইল্লা-বিইযনিল্লা -হি ওয়া ‘আলাল্লা-হি ফালইয়াতাওয়াক্কালিল মু’মিনূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এরূপ কানাকানি হয় শয়তানের প্ররোচনায়, যাতে সে মুমিনদেরকে দুঃখ দিতে পারে। কিন্তু সে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে না। মুমিনদের উচিত কেবল আল্লাহরই উপর ভরসা করা।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এই কানাঘুষা তো শয়তানের কাজ; মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার দেয়ার জন্যে। তবে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সে তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শয়তানের প্ররোচনায় হয় এই গোপন পরামর্শ মু’মিনদেরকে দুঃখ দেওয়ার জন্যে। তবে আল্লাহ্ র ইচ্ছা ব্যতীত শয়তান তাদের সামান্যতম ক্ষতি সাধনেও সক্ষম নয়। মু’মিনদের কর্তব্য আল্লাহ্ র ওপর নির্ভর করা।
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
১১
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قِيلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوا فِي الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوا يَفْسَحِ اللَّهُ لَكُمْ ۖ وَإِذَا قِيلَ انشُزُوا فَانشُزُوا يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূইযা-কীলা লাকুম তাফাছ ছাহূফিল মাজা-লিছি ফাফছাহূ ইয়াফছাহিল্লা-হু লাকুম ওয়া ইযা-কীলানশুঝূফানশুঝূইয়ারফা‘ইল্লা-হুল্লাযীনা আমানূমিনকুম ওয়াল্লাযীনা ঊতুল ‘ইলমা দারাজা-তিও ওয়াল্লা-হু বিমা- তা‘মালূনা খাবীর।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে যখন বলা হয়, মজলিসে অন্যদের জন্য স্থান সংকুলান করে দাও, তখন স্থান সংকুলান করে দিও। ৮ আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান সংকুলান করে দেবেন এবং যখন বলা হয়, উঠে যাও, তখন উঠে যেও। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন। তোমরা যা-কিছু কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে পরিপূর্ণ অবগত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মুমিনগণ, যখন তোমাদেরকে বলা হয়ঃ মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান প্রশস্ত করে দিও। আল্লাহর জন্যে তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দিবেন। যখন বলা হয়ঃ উঠে যাও, তখন উঠে যেয়ো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা কিছু তোমরা কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হে মু’মিনগণ! যখন তোমাদেরকে বলা হয়, মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান করে দিও, আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে স্থান প্রশস্ত করে দিবেন এবং যখন বলা হয়, ‘উঠে যাও’, তোমরা উঠে যেও। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ্ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; তোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।
তাফসীরঃ
৮. এ আয়াতের প্রেক্ষাপট নিম্নরূপ, একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীর চত্বরে, যাকে ‘সুফফা’ বলা হয়ে থাকে, অবস্থান করছিলেন। তার আশপাশে বহু সাহাবীও বসা ছিলেন। এ অবস্থায় আরও কয়েকজন সাহাবী এসে উপস্থিত হলেন, যারা বদরের যুদ্ধে শরীক ছিলেন এবং তাদের উচ্চ মর্যাদার অধিকারী মনে করা হত। মজলিসে বসার জায়গা না পেয়ে তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসের লোকদেরকে বললেন, তারা যেন চাপাচাপি করে বসে আগন্তুকদেরকে বসার সুযোগ করে দেয়। তারপরও যখন তাদের বসার মত যথেষ্ট জায়গা হল না, তখন তিনি কাউকে কাউকে বললেন, তারা যেন উঠে জায়গা খালি করে দেয়। মজলিসে কিছু মুনাফেকও ছিল। তাদের কাছে বিষয়টা খারাপ লাগল। বসা লোককে উঠিয়ে অন্যকে বসতে দেওয়া হবে এটা তারা মানতে পারছিল না। বস্তুত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের সাধারণ নিয়মও এরূপ ছিল না। সম্ভবত সে দিন মুনাফেকরা আগত সাহাবীগণকে বসতে দিতে কুণ্ঠাবোধ করছিল। আর সে কারণে তিনি তাদেরকে উঠিয়ে দিয়ে থাকবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঐ আয়াত নাযিল হয়। এতে এক তো সাধারণ নিয়ম বলে দেওয়া হয়েছে যে, মজলিসে উপস্থিত লোকদের উচিত আগন্তুকদেরকে বসার সুযোগ করে দেওয়া। দ্বিতীয় হুকুম দেওয়া হয়েছে, মজলিস-প্রধান যদি আগন্তুকদের জন্য জায়গা খালি করার প্রয়োজন বোধ করেন, তবে আগে থেকে বসা লোকদেরকেও তিনি উঠে যাওয়ার হুকুম দিতে পারেন। আর তখন তাদের কর্তব্য হয়ে যাবে নিজেরা উঠে গিয়ে আগন্তুকদেরকে বসতে দেওয়া। তবে নতুন আগমনকারী নিজে থেকে কাউকে উঠিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে এ রকমই শিক্ষা দিয়েছেন।
১২
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَاجَيْتُمُ الرَّسُولَ فَقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَةً ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَأَطْهَرُ ۚ فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূইযা-না-জাইতুমুর রাছূলা ফাকাদ্দিমূবাইনা ইয়াদাই নাজওয়া-কুম সাদাকাতান যা-লিকা খাইরুল্লাকুম ওয়া আতহারু ফাইল্লাম তাজিদূ ফাইন্নাল্লা-হা গাফূরুর রাহীম।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নবীর সঙ্গে নিভৃতে কোন কথা বলতে চাবে, তখন নিভৃতে কথা বলার আগে কিছু সদকা দিয়ে দেবে। ৯ এটা তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট ও পবিত্রতম পন্থা। তবে তোমাদের কাছে (সদকা করার মত) কিছু না থাকলে তো আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মুমিনগণ, তোমরা রসূলের কাছে কানকথা বলতে চাইলে তৎপূর্বে সদকা প্রদান করবে। এটা তোমাদের জন্যে শ্রেয়ঃ ও পবিত্র হওয়ার ভাল উপায়। যদি তাতে সক্ষম না হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হে মু’মিনগণ! তোমরা রাসূলের সঙ্গে চুপি চুপি কথা বলতে চাইলে তার পূর্বে সাদাকা প্রদান করবে, এটাই তোমাদের জন্যে শ্রেয় ও পরিশোধক ; যদি তাতে অক্ষম হও, আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
তাফসীরঃ
৯. যারা নিভৃতে কথা বলার জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সময় চাইত, অনেক সময় তারা অহেতুকভাবে তাঁর থেকে বেশি সময় নিয়ে নিত। তাঁর নীতি ছিল, কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বললে, তিনি নিজে থেকে তার কথা কেটে দিতেন না। কেউ কেউ এর থেকে অন্যায় সুযোগ গ্রহণ করত। কিছু মুনাফেকও এদের মধ্যে ছিল। তাই এ আয়াতে হুকুম দেওয়া হয়েছিল, কেউ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নিভৃতে কথা বলতে চাইলে সে যেন তার আগে গরীবদেরকে কিছু দান-খয়রাত করে আসে। সেই সঙ্গে এটাও বলে দেওয়া হয়েছিল যে, কারও দান-খয়রাত করার সামর্থ্য না থাকলে তার কথা আলাদা। সে এই হুকুমের আওতায় পড়বে না। কী পরিমাণ সদকা করতে হবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। অবশ্য হযরত আলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থেকে এরূপ সময় নিলে এক দীনার সদকা করেছিলেন। এ নির্দেশের উদ্দেশ্য ছিল, যাতে কেউ অপ্রয়োজনীয় কাজে তাঁর মূল্যবান সময় নষ্ট করতে না পারে এবং যাদের সত্যিকারের প্রয়োজন থাকে, কেবল তারাই তাঁর থেকে সময় গ্রহণ করে, তবে পরবর্তীতে এ হুকুমটি রহিত করে দেওয়া হয়, যেমন সামনের টীকায় আসছে।
১৩
أَأَشْفَقْتُمْ أَن تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَاتٍ ۚ فَإِذْ لَمْ تَفْعَلُوا وَتَابَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
আ আশফাকতুম আন তুকাদ্দিমূবাইনা ইয়াদাই নাজওয়া-কুম সাদাকা-তিন ফাইযলাম তাফ‘আলূওয়া তা-বাল্লা-হু ‘আলাইকুম ফাআকীমুসসালা-তা ওয়া আ-তুঝঝাকা-তা ওয়া আতী‘উল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূ ওয়াল্লা-হু খাবীরুম বিমা-তা‘মালূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা নিভৃতে কথা বলার আগে সদকা করতে কি ভয় পাচ্ছ? তোমরা যখন তা করতে পারনি এবং আল্লাহ তাআলাও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তখন নামায কায়েম করতে থাক, যাকাত দিতে থাক এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে যাও। ১০ তোমরা যা-কিছু কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে পরিপূর্ণ অবগত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা কি কানকথা বলার পূর্বে সদকা প্রদান করতে ভীত হয়ে গেলে? অতঃপর তোমরা যখন সদকা দিতে পারলে না এবং আল্লাহ তোমাদেরকে মাফ করে দিলেন তখন তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য কর। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা কি চুপে চুপে কথা বলার পূর্বে সাদাকা প্রদানকে কষ্টকর মনে কর! যখন তোমরা সাদাকা দিতে পারলে না, আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন, তখন তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। তোমরা যা কর আল্লাহ্ তা সম্যক অবগত।
তাফসীরঃ
১০. পূর্বের আয়াতে সদকা করার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এ আয়াত তা মানসুখ (রহিত) করে দিয়েছে। কেননা যে উদ্দেশ্যে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা পূরণ হয়ে গিয়েছিল। লোকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থেকে সময় নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হয়ে গিয়েছিল। মুনাফেকরাও বুঝে ফেলেছিল, এরপরও তারা আগের মত দুষ্কৃতি চালাতে থাকলে তাদের মুখোশ খুলে দেওয়া হবে। কাজেই এ আয়াত জানাচ্ছে, এখন আর সদকা করা জরুরি নয়। তবে অন্যান্য দীনী কার্যাবলী, যথা নামায, যাকাত ইত্যাদি করে যেতে থাক।
১৪
۞ أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ تَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِم مَّا هُم مِّنكُمْ وَلَا مِنْهُمْ وَيَحْلِفُونَ عَلَى الْكَذِبِ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
আলাম তারা ইলাল্লাযীনা তাওয়াল্লাও কাওমান গাদিবাল্লা-হু ‘আলাইহিম মা-হুম মিনকুম ওয়ালা-মিনহুম ওয়া ইয়াহলিফূনা ‘আলাল কাযিবি ওয়া হুম ইয়া‘লামূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা আল্লাহ যে সম্প্রদায়ের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন তাদেরকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে? তারা তাদের দলেরও নয় এবং তোমাদের দলেরও নয়। ১১ তারা জেনে শুনে মিথ্যা বিষয়ের উপর কসম করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি, যারা আল্লাহর গযবে নিপতিত সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করে? তারা মুসলমানদের দলভুক্ত নয় এবং তাদেরও দলভূক্ত নয়। তারা জেনেশুনে মিথ্যা বিষয়ে শপথ করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য কর নাই যারা, আল্লাহ্ যে সম্প্রদায়ের প্রতি রুষ্ট, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ? এরা তোমাদের দলভুক্ত নয়, তাদের দলভুক্তও নয় এবং এরা জেনে-শুনে মিথ্যা শপথ করে।
তাফসীরঃ
১১. ইশারা মুনাফেকদের প্রতি। তারা ইয়াহুদীদের সাথে বন্ধুত্বের গাঁটছড়া বেঁধে রেখেছিল এবং তারই ফলশ্রুতিতে সর্বদা মুমিনদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত।
১৫
أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا ۖ إِنَّهُمْ سَاءَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
আ‘আদ্দাল্লা-হু লাহুম ‘আযা-বান শাদীদান ইন্নাহুম ছাআ মা-কা-নূইয়া‘মালূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ তাদের জন্য কঠোর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। বস্তুত তারা যে কাজ করত তা অতি মন্দ।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ তাদের জন্যে কঠোর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। নিশ্চয় তারা যা করে, খুবই মন্দ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ এদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন কঠিন শাস্তি। এরা যা করে তা কত মন্দ!
১৬
اتَّخَذُوا أَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ فَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
ইত্তাখাযূআইমা-নাহুম জূন্নাতান ফাসাদ্দূ‘আন ছাবীলিল্লা-হি ফালাহুম ‘আযা-বুম মুহীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা তাদের কসমসমূহকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, ১২ অতঃপর তারা অন্যদেরকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। সুতরাং তাদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা তাদের শপথকে ঢাল করে রেখেছেন, অতঃপর তারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা প্রদান করে। অতএব, তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা এদের শপথগুলিকে ঢালস্বরূপ ব্যবহার করে, আর এরা আল্লাহ্ র পথ হতে নিবৃত্ত করে; অতএব এদের জন্যে রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
তাফসীরঃ
১২. অর্থাৎ ঢাল দ্বারা যেমন তরবারীর আঘাত প্রতিহত করা হয়, তেমনি তারা ষড়যন্ত্র চালাতে থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা কসমের মাধ্যমে মুমিনদের কাছে নিজেদেরকে তাদের অকৃত্রিম বন্ধু ও তাদেরই দলের লোক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পায় এবং এভাবে নিজেদেরকে তাদের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ হতে রক্ষা করে।
১৭
لَّن تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُم مِّنَ اللَّهِ شَيْئًا ۚ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
লান তুগনিয়া ‘আনহুম আমওয়া-লুহুম ওয়ালাআওলা-দুহুম মিনাল্লা-হি শাইআন উলাইকা আসহা-বুন্না-রি হুম ফীহা-খা-লিদূ ন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহর মোকাবেলায় তাদের অর্থ-সম্পদ ও তাদের সন্তান-সন্ততি তাদের কোন কাজে আসবে না। তারা হবে জাহান্নামবাসী। তারা সর্বদাই তাতে থাকবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহর কবল থেকে তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদেরকে মোটেই বাঁচাতে পারবেনা। তারাই জাহান্নামের অধিবাসী তথায় তারা চিরকাল থাকবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ র শাস্তির মুকাবিলায় এদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এদের কোন কাজে আসবে না; এরাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে এরা স্থায়ী হবে।
১৮
يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ جَمِيعًا فَيَحْلِفُونَ لَهُ كَمَا يَحْلِفُونَ لَكُمْ ۖ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ عَلَىٰ شَيْءٍ ۚ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْكَاذِبُونَ
ইয়াওমা ইয়াব‘আছুহুমুল্লা-হু জামী‘আন ফাইয়াহলিফূনা লাহূকামা-ইয়াহলিফূনা লাকুম ওয়া ইয়াহছাবূনা আন্নাহুম ‘আলা-শাইয়িন আলাইন্নাহুম হুমুল কা-যিবূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে দিন আল্লাহ তাদেরকে পুনর্জীবিত করবেন, সে দিন তাঁর সামনেও তারা এভাবে কসম করবে, যেমন তোমাদের সামনে কসম করে। তারা মনে করবে কোন (উপকারী) জিনিস পেয়ে গেছে। ১৩ মনে রেখ, তারা সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুত্থিত করবেন। অতঃপর তারা আল্লাহর সামনে শপথ করবে, যেমন তোমাদের সামনে শপথ করে। তারা মনে করবে যে, তারা কিছু সৎপথে আছে। সাবধান, তারাই তো আসল মিথ্যাবাদী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যে দিন আল্লাহ্ পুনরুত্থিত করবেন এদের সকলকে, তখন এরা আল্লাহ্ র নিকট সেরূপ শপথ করবে যেরূপ শপথ তোমাদের নিকট করে এবং এরা মনে করে যে, এতে এরা ভাল কিছুর ওপর রয়েছে। সাবধান! এরাই তো প্রকৃত মিথ্যাবাদী।
তাফসীরঃ
১৩. অর্থাৎ দুনিয়ায় যেমন মিথ্যা কসম দ্বারা উপকার লাভ করেছে, নিজেদেরকে কতল থেকে রক্ষা করে ফেলেছে, মনে করবে আখিরাতেও সে রকম মিথ্যা কসম করে বেঁচে যাবে, কি করে বাঁচতে পারবে, যখন আল্লাহ তাআলা আলেমুল-গায়েব। মনের গুপ্ত কুফরী তিনি ঠিকই জানেন। কিন্তু মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এই সোজা কথাটাও তাদের মাথায় আসবে না। ফলে আল্লাহ তাআলাকে মানুষের কাতারে ফেলে মনে করবে মিথ্যা কসম দ্বারা সেখানেও উপকার পেয়ে যাবে। -অনুবাদক
১৯
اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ ۚ أُولَـٰئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ
ইছতাহওয়াযা ‘আলাইহিমুশশাইতা-নুফাআনছা-হুম যিকরাল্লা-হি উলাইকা হিঝবুশশাইতা-নি আলাইন্না হিঝবাশশাইতা-নি হুমুল খা-ছিরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
শয়তান তাদের উপর পুরোপুরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে। ফলে সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে রেখেছে। তারা শয়তানের দল। মনে রেখ, শয়তানের দলই অকৃতকার্য হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভূলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শয়তান এদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে ; ফলে এদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহ্ র স্মরণ। এরা শয়তানের দল। সাবধান! শয়তানের দল অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত।
২০
إِنَّ الَّذِينَ يُحَادُّونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَـٰئِكَ فِي الْأَذَلِّينَ
ইন্নাল্লাযীনা ইউহাদ্দূনাল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূউলাইকা ফিল আযাল্লীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা হীনতম লোকদের অন্তর্ভুক্ত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তারাই লাঞ্ছিতদের দলভূক্ত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা হবে চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।
২১
كَتَبَ اللَّهُ لَأَغْلِبَنَّ أَنَا وَرُسُلِي ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ
কাতাবাল্লা-হু লাআগলিবান্না আনা ওয়া রুছুলী ইন্নাল্লা-হা কাবিইয়ুন ‘আঝীঝ।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ লিখে দিয়েছেন, আমি ও আমার রাসূলগণ অবশ্যই জয়যুক্ত হব। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি শক্তিমান, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ লিখে দিয়েছেনঃ আমি এবং আমার রসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হব। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ সিদ্ধান্ত করেছেন, আমি অবশ্যই বিজয়ী হব এবং আমার রাসূলগণও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
২২
لَّا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُولَـٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَـٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
লা-তাজিদুকাওমাইঁ ইউ’মিনূনা বিল্লা-হি ওয়াল ইয়াওমিল আ-খিরি ইউওয়াদ্দূনা মান হাদ্দাল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূওয়া লাও কা-নূআ-বাআহুম আও আবনাআহুম আও ইখওয়া-নাহুম আও ‘আশীরাতাহুম উলাইকা কাতাবা ফী কুলূবিহিমুল ঈমা-না ওয়া আইয়াদাহুম বিরূহিম মিন হু ওয়া ইউদখিলুহুম জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু খা-লিদীনা ফীহা- রাদিআল্লা-হু ‘আনহুম ওয়ারাদূ‘আনহু উলাইকা হিঝবুল্লাহি আলাইন্না হিঝবাল্লা-হি হুমুল মুফলিহূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে সব লোক আল্লাহ ও আখেরাত দিবসে ঈমান রাখে, তাদেরকে তুমি এমন পাবে না যে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখছে। হোক না তারা তাদের পিতা বা তাদের পুত্র বা তাদের ভাই কিংবা তাদের স্বগোত্রীয়। ১৪ তারাই এমন, আল্লাহ যাদের অন্তরে ঈমানকে খোদাই করে দিয়েছেন এবং নিজ রূহ দ্বারা তাদের সাহায্য করেছেন। ১৫ তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। তারা আল্লাহর দল। স্মরণ রেখ, আল্লাহর দলই কৃতকার্য হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি পাবে না আল্লাহ্ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায়, যারা ভালবাসে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদেরকে-হোক না এই বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই বা এদের জ্ঞাতি-গোত্র। এদের অন্তরে আল্লাহ্ সুদৃঢ় করেছেন ঈমান এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ হতে রূহ্ দিয়ে। তিনি এদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে এরা স্থায়ী হবে ; আল্লাহ্ এদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং এরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, এরাই আল্লাহ্ র দল। জেনে রাখ, আল্লাহ্ র দলই সফলকাম হবে।
তাফসীরঃ
১৪. অমুসলিমদের সাথে কী রকম বন্ধুত্ব জায়েয ও কী রকম বন্ধুত্ব জায়েয নয়, তা বিস্তারিতভাবে সূরা আলে ইমরান (৩ : ২৮)-এর টীকায় লেখা হয়েছে।
১৫. অর্থাৎ অদৃশ্য নূর দান করেছেন, যা দ্বারা তারা এক বিশেষ রকমের অতীন্দ্রিয় জীবন লাভ করে। অথবা রূহুল কুদস (হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম)-এর দ্বারা তাদের সাহায্য করেছেন (-অনুবাদক, তাফসীরে উছমানী হতে গৃহীত)।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড
Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
- ইসলামে কুরবানীর গুরুত্ব ও বিধান,ইসলামে কোরবানির যত ফজিলত গুরুত্ব ও শিক্ষা
- বৃষ্টির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বৃষ্টির নামাজের পর আমল
- ইসতিসকার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, ইসতিসকার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইসতিসকার নামাজের পর আমল
- বাসর রাত সম্পর্কে ইসলামের বিধান,বাসর রাতের নামাজ