সূরা যারিয়াত সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল যারিয়াত আলমল ও ফজিলত, সূরা যারিয়াত কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা যারিয়াত নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৫১ সূরা আল – যারিয়াত

আজকের বিষয়: সূরা যারিয়াত সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল যারিয়াত আলমল ও ফজিলত, সূরা যারিয়াত কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা যারিয়াত নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৫১ সূরা আল – যারিয়াত

নামকরণ

সূরার প্রথম শব্দ আয যারিয়াত থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে । অর্থাৎ এটি সেই সূরা যা আয যারিয়াত শব্দ দ্বারা শুরু হয়েছে ।

নাযিলহওয়ারসময়কাল

বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভঙ্গী থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, যে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসলামী আন্দোলনের মোকাবিলা অস্বীকৃতি, ঠাট্রা-বিদ্রুপ ও মিথ্যা অভিযোগ আরোপের মাধ্যমে অত্যন্ত জোরে শোরেই করা হচ্ছিলো ঠিকই কিন্তু তখনো জুলুম ও নিষ্ঠুরতার যাঁতাকালে নিষ্পেষণ শুরু হয়নি, ঠিক সেই যুগে এ সূরাটি নাযিল হয়েছিলো । এ কারণে যে যুগে সূরা ক্বাফ নাযিল হয়েছিলে এটিই সে যুগের নাযিল হওয়া সূরা বলে প্রতীয়মান হয় ।

বিষয়বস্তুমূলবক্তব্য

এর অধিকাংশটাই জুড়ে আছে আখেরাত সম্পর্কিত আলোচনা এবং শেষভাগে তাওহীদের দাওয়াত পেশ করা হয়েছে । সাথে সাথে মানুষকে এ বিষয়েও হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে যে, নবী -রসূলদের ( আ) কথা না মানা এবং নিজেদের জাহেলী ধ্যান-ধারণা আকড়ে ধরে একগুঁয়েমী করা সেসব জাতির নিজেদের জন্যই ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হয়েছে যারা এ নীতি অবলম্বন করেছিলো ।

এ সূরার ছোট ছোট কিন্তু অত্যন্ত অর্থপূর্ণ আয়াতসমূহে আখেরাত সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে, মানব জীবনের পরিণাম ও পরিণতি সম্পর্কে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ও পরস্পর বিরোধী আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করে । এটাই প্রমাণ করে যে, এসব আকীদা-বিশ্বাসের কোনটিই জ্ঞানগত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয় । প্রত্যেকেই নিজের অনুমান ও ধারণার ভিত্তিতে নিজ নিজ অবস্থানে যে মতবাদ গড়ে নিয়েছে সেটাকেই সে তার আঁকিদা-বিশ্বাস বানিয়ে আঁকড়ে ধরেছে । কেউ মনে করে নিয়েছে, মৃত্যুর পরে কোন জীবন হবে না । কেউ আখেরাত মানলেও জন্মান্তর বাদের ধারণা সহ মেনেছে । কেউ আখেরাতের জীবন এবং পুরস্কার ও শাস্তির কথা বিশ্বাস করলেও কর্মের প্রতিফল থেকে বাঁচার জন্য নানা রকমের সহায় ও অবলম্বন কল্পনা করে নিয়েছে । যে বিষয়ে ব্যক্তির সিদ্ধান্ত ভুল হলে তার গোটা জীবনকেই ব্যর্থ এবং চিরদিনের জন্য তার ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দেয় এমন একটি বড় ও সর্বাধিক গুরুত্ববহ মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান ছাড়া শুধু অনুমান ও ধারণার ভিত্তিতে কোন আকীদা-বিশ্বাস গড়ে নেয়া একটি সর্বনাশা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয় । এর অর্থ হলো, মানুষ একটি বড় ভ্রান্তিতে ডুবে থেকে গোটা জীবন জাহেলী ঔদাসীন্যে কাটিয়ে দেবে এবং মৃত্যুর পর হঠাৎ এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে যার জন্য সে আদৌ প্রস্তুত গ্রহণ করেনি । এরূপ বিষয় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটিই মাত্র পথ আছে, তা হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নবী আখেরাত সম্পর্কে যে জ্ঞান দান করেছেন সে বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ধীর মস্তিষ্কে গভীরভাবে ভেবে দেখবে এবং আসমান ও যমীনের ব্যবস্থাপনা এবং নিজের সত্তা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে উন্মুক্ত চোখে দেখবে যে, চার পাশে সেই জ্ঞানটির যথাযর্থতার স্বপক্ষে প্রমাণ বিদ্যমান আছে কিনা? এ ক্ষেত্রে বাতাস ও বৃষ্টির ব্যবস্থাপনা পৃথিবীর গঠনাকৃতি এবং তার সৃষ্টিকূল মানুষ নিজে, আসমানের সৃষ্টি এবং পৃথিবীর সকল বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করাকে আখেরাতের প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে এবং মানবেতিহাস থেকে উদাহারণ পেশ করে বলা হয়েছে যে, একটা কর্মফল ব্যবস্থা থাকা যে অত্যাবশ্যক এটা এ বিশ্ব-সম্রাজ্যের স্বভাব -প্রকৃতি স্বতস্ফূর্ত দাবী বলেই প্রতীয়মান হয় ।

এরপর অতি সংক্ষিপ্তভাবে তাওহীদের দাওয়াত পেশ করে বলা হয়েছে তোমাদের স্রষ্টা তোমাদেরকে অন্যদের বন্দেগী ও দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করেননি, বরং নিজের বন্দেগী ও দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করেছেন । তিনি তোমাদের মিথ্যা উপাস্যদের মত নন । তোমাদের মিথ্যা উপাস্যরা তোমাদের থেকে রিযিক গ্রহন করে এবং তোমাদের সাহায্য ছাড়া তাদের প্রভুত্ব অচল । তিনি এমন উপাস্য যিনি সবার রিযিকদাতা । তিনি কারো নিকট থেকে রিযক গ্রহণের মুখাপেক্ষী নন এবং নিজ ক্ষমতাবলেই তার প্রভুত্ব চলছে ।

এ প্রসঙ্গে একথাও বলা হয়েছে যে, যখনই নবী-রসূলের বিরোধীতা করা হয়েছে তা যুক্তির ভিত্তিতে না করে একগুঁয়েমী , হঠকারীতা এবং জাহেলী অহংকারের ভিত্তিতে করা হয়েছে । ঠিক যেমনটি আজ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে । অথচ এর উৎস ও চালিক শক্তি বিদ্রোহাত্মক মনোভাব ছাড়া আর কিছুই নয় । অতপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তিনি এসব বিদ্রোহীদের আদৌ ভ্রুক্ষেপ না করেন এবং নিজের দাওয়াত ও নসীহতের কাজ চালিয়ে যান । কারণ, তা এ লোকদের কোন উপকারে না আসলেও ইমানদারদের জন্য অবশ্যই উপকারে আসবে । কিন্তু যেসব জালেম তাদের বিদ্রোহের ওপর অটল তাদের প্রাপ্য শাস্তি প্রস্তুত হয়ে আছে । কারণ, তাদের পূর্বে এ নীতি ও আচরণ অবলম্বনকারী জালেমরাও তাদের প্রাপ্য আযাব পুরোপুরি লাভ করেছে ।


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ

وَالذَّارِيَاتِ ذَرْوًا

ওয়াযযা-রিয়া-তি যারওয়া-।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কসম সেই সবের (অর্থাৎ সেই বায়ুর), যা ধুলোবালি উড়িয়ে বিক্ষিপ্ত করে দেয়,

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কসম ঝঞ্ঝাবায়ুর।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শপথ ধূলিঝঞ্ঝার,

فَالْحَامِلَاتِ وِقْرًا

ফাল হা-মিলা-তি বিকরা-।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর সেই সবের, যা (মেঘের) ভার বহন করে,

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর বোঝা বহনকারী মেঘের।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শপথ বোঝা বহনকারী মেঘপুঞ্জের,

فَالْجَارِيَاتِ يُسْرًا

ফালজা-রিয়া-তি ইউছরা-।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর সেই সবের, যা সচ্ছন্দ গতিতে চলাচল করে,

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর মৃদু চলমান জলযানের,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শপথ স্বচ্ছন্দগতি নৌযানের,

فَالْمُقَسِّمَاتِ أَمْرًا

ফাল মুকাছছিমা-তি আমরা-।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর সেই সবের, যা বস্তুরাজি বণ্টন করে ১

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর কর্ম বন্টনকারী ফেরেশতাগণের,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শপথ কর্ম বণ্টনকারী ফেরেশতাগণের-

তাফসীরঃ
১. এখানে দু’টি বিষয় বুঝে রাখা প্রয়োজন। (এক) নিজের কোন কথা বিশ্বাস করানোর জন্য আল্লাহ তাআলার কোন কসম করার প্রয়োজন নেই। নিজের কোন কথা সম্পর্কে কসম করা হতে তিনি বেনিয়ায। কুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানে যে বিভিন্ন বিষয়ে কসম করা হয়েছে, তার উদ্দেশ্য কথাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত, অলঙ্কারপূর্ণ ও বলিষ্ঠ করে তোলা। অনেক সময় এ দিকটার প্রতি লক্ষ্য থাকে যে, যেই জিনিসের কসম করা হচ্ছে, তার ভেতর দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে, তা তার পরবর্তীতে যে বক্তব্য আসছে তার সত্যতার প্রমাণ বহন করে। আলোচ্য স্থলে কসমের পরে যে বক্তব্য আসছে তা হল, কিয়ামত অবশ্যই আসবে এবং পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কিত ফায়সালা অবশ্যই হবে। এখানে কসম করা হয়েছে বাতাসের, যা ধুলোবালি উড়িয়ে নিয়ে যায়, মেঘের বোঝা বয়ে তা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায় এবং যখন সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয়, তখন তার পানি মৃত ভূমিতে জীবন সঞ্চার করে তার উৎপাদন থেকে সৃষ্টির জীবিকা বণ্টন করে এবং এভাবে তা সৃষ্টি রাজির জন্য নতুন জীবনের কারণে পরিণত হয়। তো এই বাতাসের কসম করে বান্দার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে যে, যেই আল্লাহ এই বাতাসকে এবং তার প্রভাবে বর্ষিত বৃষ্টির পানিকে নতুন জীবনের মাধ্যম বানান, নিশ্চয়ই তিনি মৃত মানুষকে পুনর্জীবন দান করতে সক্ষম। আয়াতের এ ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ হিসেবে যে, আয়াতে যে চারটি জিনিসের কসম করা হয়েছে, তার সবগুলো দ্বারাই বায়ুকে বোঝানো হয়েছে, যার সঙ্গে বায়ুর চারটি বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে। (দুই) এই আয়াতসমূহের আরও একটি তাফসীর বর্ণিত আছে। তা এই যে, প্রথম বিশেষণটি অর্থাৎ ‘ধুলোবালি উড়ানো’-এর সম্পর্ক বাতাসের সঙ্গে বটে, কিন্তু বাকিগুলো বাতাসের বিশেষণ নয়; বরং দ্বিতীয়টি দ্বারা বোঝানো হয়েছে মেঘপুঞ্জকে, যা পানির ভার বহন করে। তৃতীয় বিশেষণটি জলযানের, যা পানিতে সচ্ছন্দে চলাচল করে আর চতুর্থ বিশেষণটি হল ফেরেশতাদের, যা সৃষ্টির মাঝে জীবিকা ইত্যাদি বণ্টনের দায়িত্বে নিয়োজিত। এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি একটি হাদীছে খোদ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে। তবে বর্ণনাটি সম্পর্কে আল্লামা হায়ছামী (রহ.) বলেন, এটি বর্ণনা করেছেন আবু বকর ইবনে আবী সাব্রা, যিনি একজন যয়ীফ ও পরিত্যক্ত রাবী (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড ২৪৪২৪৫ পৃষ্ঠা, তাফসীর অধ্যায়, হাদীছ নং ১১৩৬৫)। তারপরও যেহেতু এ তাফসীরটির এক রকম সম্পর্ক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রয়েছে, তাই বহু মুফাসসির এটাই গ্রহণ করেছেন। আর আমি যে তরজমা করেছি, তা থেকে বন্ধনীর অংশটুকু বাদ দিলে এর ভেতর ওই ব্যাখ্যারও অবকাশ থাকে। এ তাফসীর অনুযায়ী এ কসমের সাথে আখেরাতের সম্পর্ক দৃশ্যত এভাবে যে, আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনাদি সমাধার জন্য এসব ব্যবস্থাপনা উদ্দেশ্যহীনভাবে করেননি। এসবের উদ্দেশ্য হল মানুষকে পরীক্ষা করা, তারা আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমতসমূহ যথাযথ পন্থায় ব্যবহার করে, না অন্যায় পন্থা অবলম্বন করে। যারা এর যথাযথ ব্যবহার করবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে আর যারা অন্যায়ভাবে ব্যবহার করবে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে। সুতরাং সৃষ্টি জগতের এসব বস্তুর দাবি হল যে, এমন একদিন অবশ্যই আসুক, যে দিন পুরস্কার ও শাস্তি দানের ফায়সালাকে কার্যকর করা হবে।

إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَصَادِقٌ

ইন্নামা-তূ‘আদূনা লাসা-দিক।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তা নিশ্চিত সত্য

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদের প্রদত্ত ওয়াদা অবশ্যই সত্য।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য।

وَإِنَّ الدِّينَ لَوَاقِعٌ

ওয়া ইন্নাদ দীনা লাওয়া-কি‘উ।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং কর্মের প্রতিফল অবশ্যম্ভাবী।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ইনসাফ অবশ্যম্ভাবী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কর্মফল দিবস অবশ্যম্ভাবী।

وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْحُبُكِ

ওয়াছছামাই যা-তিল হুবুক।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কসম বহু পথবিশিষ্ট আকাশের, ২

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
পথবিশিষ্ট আকাশের কসম,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শপথ বহু পথবিশিষ্ট আকাশের,

তাফসীরঃ
২. এখানে ‘পথ’ বলে আমাদের দৃষ্টির অগোচর পথ বোঝানো হয়েছে, যে পথ দিয়ে ফেরেশতাগণ চলাচল করে। কেউ কেউ বলেন, السماء (আকাশ) বলতে অনেক সময় উপরের যে-কোনও বস্তুকেও বোঝায়। এখানে উপরের শূন্যমণ্ডল বোঝানো হয়েছে, যাতে তারকারাজির জন্য গতিপথ নির্দিষ্ট করা আছে।

إِنَّكُمْ لَفِي قَوْلٍ مُّخْتَلِفٍ

ইন্নাকুম লাফী কাওলিম মুখতালিফ।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা পরস্পর বিরোধী কথায় লিপ্ত। ৩

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা তো বিরোধপূর্ণ কথা বলছ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা তো পরস্পর বিরোধী কথায় লিপ্ত।

তাফসীরঃ
৩. ‘পরস্পর বিরোধী কথায় লিপ্ত’, অর্থাৎ একদিকে তো স্বীকার কর আল্লাহ তাআলাই বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা, অন্য দিকে তিনি যে মানুষকে তাদের মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন দান করতে সক্ষম, তাঁর এ শক্তিকে মানতে রাজি নও, এর চেয়ে স্ববিরোধিতা আর কী হতে পারে?

يُؤْفَكُ عَنْهُ مَنْ أُفِكَ

ইউ’ফাকু‘আনহু মান উফিক।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এর (অর্থাৎ আখেরাতের বিশ্বাস) থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে কেবল সেই যে সম্পূর্ণরূপে সত্যবিমুখ। ৪

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে ভ্রষ্ট, সেই এ থেকে মুখ ফিরায়,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যে ব্যক্তি সত্যভ্রষ্ট সে-ই তা পরিত্যাগ করে,

তাফসীরঃ
৪. সত্য সন্ধানী ব্যক্তির পক্ষে আখেরাতকে স্বীকার করা মোটেই কঠিন নয়। এ সত্যকে অস্বীকার করে কেবল তারাই যাদের মনে সত্যের অনুসন্ধিৎসা নেই; বরং তারা সত্যের প্রতি বীতশ্রদ্ধ।

১০

قُتِلَ الْخَرَّاصُونَ

কুতিলাল খাররা-ছূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহর ‘মার’ হোক (আকীদা-বিশ্বাসের ব্যাপারে) অনুমান নির্ভর উক্তিকারীদের প্রতি।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অনুমানকারীরা ধ্বংস হোক,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অভিশপ্ত হোক মিথ্যাচারীরা,

১১

الَّذِينَ هُمْ فِي غَمْرَةٍ سَاهُونَ

আল্লাযীনা হুম ফী গামরাতিন ছা-হূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা উদাসীনতায় নিমজ্জিত থেকে সব কিছু বিস্মৃত হয়ে আছে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা উদাসীন, ভ্রান্ত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা অজ্ঞ ও উদাসীন!

১২

يَسْأَلُونَ أَيَّانَ يَوْمُ الدِّينِ

ইয়াছআলূনা আইয়া-না ইয়াওমুদ্দীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
জিজ্ঞেস করে, কর্মফল দিবস কবে? ৫

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা জিজ্ঞাসা করে, কেয়ামত কবে হবে?

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা জিজ্ঞাসা করে, ‘কর্মফল দিবস কবে হবে ?’

তাফসীরঃ
৫. তারা এ প্রশ্ন সত্য জানার উদ্দেশ্যে নয়; বরং উপহাস করার জন্যই করত।

১৩

يَوْمَ هُمْ عَلَى النَّارِ يُفْتَنُونَ

ইয়াওমা হুম ‘আলান্না-রি ইউফতানূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তা সেই দিন, যে দিন তাদেরকে আগুনে দগ্ধ করা হবে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যেদিন তারা অগ্নিতে পতিত হবে,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বল, ‘সেদিন যখন এদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে অগ্নিতে।’

১৪

ذُوقُوا فِتْنَتَكُمْ هَـٰذَا الَّذِي كُنتُم بِهِ تَسْتَعْجِلُونَ

যূকূফিতনাতাকুম হা-যাল্লাযী কনতুম বিহী তাছতা‘জিলূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(বলা হবে) নিজেদের দুষ্কর্মের মজা ভোগ কর। এটাই সেই জিনিস, যা তোমরা তাড়াতাড়ি চাচ্ছিলে। ৬

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা তোমাদের শাস্তি আস্বাদন কর। তোমরা একেই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তোমরা তোমাদের শাস্তি আস্বাদন কর, তোমরা এই শাস্তিই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলে।’

তাফসীরঃ
৬. কাফেরদেরকে যখন আখেরাতের শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করা হত, তখন তারা বলত, সে শাস্তি এখনই আসছে না কেন?

১৫

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ

ইন্নাল মুত্তাকীনা ফী জান্না-তিওঁ ওয়া উ‘ইয়ূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মুত্তাকীগণ অবশ্যই উদ্যানরাজি ও প্রস্রবণসমূহের ভেতর থাকবে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
খোদাভীরুরা জান্নাতে ও প্রস্রবণে থাকবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেদিন নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে প্রস্রবণ-বিশিষ্ট জান্নাতে,

১৬

آخِذِينَ مَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَٰلِكَ مُحْسِنِينَ

আ-খিযীনা মাআ-তা-হুম রাব্বুহুম ইন্নাহুম কা-নূকাবলা যা-লিকা মুহছিনীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাদের প্রতিপালক তাদেরকে যা-কিছু দেবেন, তারা তা উপভোগ করতে থাকবে। তারা তো এর আগেই সৎকর্মশীল ছিল।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এমতাবস্থায় যে, তারা গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
উপভোগ করবে তা যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে দিবেন; কারণ পার্থিব জীবনে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ,

১৭

كَانُوا قَلِيلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ

কা-নূকালীলাম মিনাল্লাইলি মা-ইয়াহজা‘ঊন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা রাতের অল্প সময়ই ঘুমাত

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তারা রাত্রির সামান্য অংশই অতিবাহিত করত নিদ্রায়,

১৮

وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

ওয়া বিলআছহা-রিহুম ইয়াছতাগফিরূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তারা সাহরীর সময় ইস্তিগফার করত। ৭

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করত,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
রাত্রির শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত,

তাফসীরঃ
৭. অর্থাৎ রাতের বেশির ভাগ ইবাদতে কাটানোর পরও তারা নিজেদের আমল নিয়ে অহংকার বোধ করে না, বরং না-জানি ইবাদতের ভেতর কত ভুল-ত্রুটি হয়ে গেছে, যদ্দরুণ তা আল্লাহ তাআলার কাছে কবুলের উপযুক্ত হবে না, এই চিন্তা তাদের ভেতর কাজ করে। ফলে সাহরীকালে আল্লাহ তাআলার দরবারে বিনয় প্রকাশ করে ও কাকুতি-মিনতির সাথে ইস্তিগফার করে।

১৯

وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ

ওয়া ফীআমওয়া-লিহিম হাক্কুল লিছছাইলি ওয়াল মাহরূম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাদের ধন-সম্পদে যাচক ও বঞ্চিতের (যথারীতি) হক থাকত। ৮

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।

তাফসীরঃ
৮. السائل (যাচক) দ্বারা সেই অভাবগ্রস্তকে বোঝানো হয়েছে, যে মুখে তার অভাবের কথা প্রকাশ করে আর المحروم (বঞ্চিত) দ্বারা বোঝানো হয়েছে তাকে, যে অভাব থাকা সত্ত্বেও কারও কাছে কিছু চায় না। এ আয়াতে ‘হক’ শব্দটি ব্যবহার করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ধনী ব্যক্তি গরীবদেরকে যে যাকাত-ফিতরা দেয়, সেটা তাদের প্রতি তার কোন দয়া নয়; বরং তা তাদের প্রাপ্য, যা তাদেরকে দেওয়াই তার কর্তব্য ছিল। কেননা ধন-সম্পদ আল্লাহ তাআলার দান। এটা তাঁরই নির্দেশ যে, তাতে গরীব-দুঃখীর অংশ আছে।

২০

وَفِي الْأَرْضِ آيَاتٌ لِّلْمُوقِنِينَ

ওয়া ফিল আরদিআ-য়া-তুলিলল মূ’কিনীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী, তাদের জন্য পৃথিবীতে আছে বহু নিদর্শন।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বিশ্বাসকারীদের জন্যে পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে ধরিত্রীতে

২১

وَفِي أَنفُسِكُمْ ۚ أَفَلَا تُبْصِرُونَ

ওয়া ফীআনফুছিকুম আফালা-তুবসিরূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং স্বয়ং তোমাদের অস্তিত্বেও! তবুও কি তোমরা অনুধাবন করতে পার না?

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না?

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং তোমাদের মধ্যেও। তোমরা কি অনুধাবন করবে না ?

২২

وَفِي السَّمَاءِ رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ

ওয়া ফিছছামাই রিঝকুকুম ওয়ামা-তূ‘আদূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আসমানেই আছে তোমাদের রিযক এবং তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাও। ৯

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সবকিছু।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সমস্ত কিছু।

তাফসীরঃ
৯. এখানে আসমান দ্বারা ঊর্ধ্বজগত বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের রিযকের ফায়সালাও ঊর্ধ্বজগতে হয়ে থাকে এবং তোমাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ে থাকে তার ফায়সালাও সেখানেই হয়।

২৩

فَوَرَبِّ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِنَّهُ لَحَقٌّ مِّثْلَ مَا أَنَّكُمْ تَنطِقُونَ

ফাওয়ারাব্বিছ ছামাই ওয়াল আরদিইন্নাহূলাহাক্কুম মিছলা মাআন্নাকুম তানতিকূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয়ই এটা সত্য, যেমন (সত্য) তোমাদের কথা বলাটা। ১০

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তার কসম, তোমাদের কথাবার্তার মতই এটা সত্য।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই তোমাদের বাক্স্ফ‚র্তির মতই এই সকল সত্য।

তাফসীরঃ
১০. অর্থাৎ ‘তোমরা কথা বলছ’এটা যেমন সত্য, তেমনি আখেরাতের যে কথা বলা হচ্ছে তাও নিশ্চিত সত্য। কেননা এটা বিশ্ব জগতের স্রষ্টা নিজে বলেছেন।

২৪

هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ

হাল আতা-কা হাদীছুদাইফি ইবরা-হীমাল মুকরামীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে রাসূল!) তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত অতিথিদের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে? ১১

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনার কাছে ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি?

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি ?

তাফসীরঃ
১১. সে অতিথিগণ মূলত ফেরেশতা ছিলেন। তারা এসেছিলেন দু’টি কাজে। (ক) হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে এই সুসংবাদ দানের জন্য যে, ইসহাক নামে তার এক পুত্র সন্তান জন্ম নেবে। (খ) হযরত লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়কে শাস্তি দানের জন্য। তাদের ঘটনা বিস্তারিতভাবে সূরা হুদ (১১ : ৬৯-৮৩) ও সূরা হিজর (১৫ : ৫১-৭৭)-এ গত হয়েছে।

২৫

إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا ۖ قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُّنكَرُونَ

ইয দাখালূ‘আলাইহি ফাকা-লূছালা-মান কা-লা ছালা-মুন কাওমুম মুনকারূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যখন তারা ইবরাহীমের কাছে উপস্থিত হয়ে বলল সালাম, তখন ইবরাহীমও বলল, সালাম (এবং সে মনে মনে চিন্তা করল যে,) এরা তো অপরিচিত লোক।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললঃ সালাম, তখন সে বললঃ সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যখন এরা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’। উত্তরে সে বলল,‘সালাম’। এরা তো অপরিচিত লোক।

২৬

فَرَاغَ إِلَىٰ أَهْلِهِ فَجَاءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ

ফারা-গা ইলাআহলিহী ফাজাআ বি‘ইজলিন ছামীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর সে চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেল এবং একটি মোটাতাজা বাছুর (-ভাজা) নিয়ে আসল।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর সে গ্রহে গেল এবং একটি ঘৃতেপক্ক মোটা গোবৎস নিয়ে হাযির হল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর ইব্রাহীম তার স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি মাংসল গো-বৎস ভাজা নিয়ে এলো

২৭

فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ

ফাকাররাবাহূইলাইহিম কা-লা আলা-তা’কুলূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তা সেই অতিথিদের সামনে এগিয়ে দিল এবং বলল, আপনারা খাচ্ছেন না যে?

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে গোবৎসটি তাদের সামনে রেখে বললঃ তোমরা আহার করছ না কেন?

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ও তাদের সামনে রাখলো এবং বলল, ‘তোমরা খাচ্ছ না কেন ?’

২৮

فَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً ۖ قَالُوا لَا تَخَفْ ۖ وَبَشَّرُوهُ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ

ফাআওজাছা মিন হুম খীফাতান কা-লূলা-তাখাফ ওয়াবাশশারূহু বিগুলা-মিন ‘আলীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এতে তাদের সম্পর্কে ইবরাহীমের মনে ভয় দেখা ১২ দিল। তারা বলল, ভয় পাবেন না। অতঃপর তারা তাকে এক মস্ত জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিল।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হলঃ তারা বললঃ ভীত হবেন না। তারা তাঁকে একট জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এতে এদের সম্পর্কে তার মনে ভীতির সঞ্চার হল। এরা বলল, ‘ভীত হয়ো না।’ এরপর এরা তাকে এক জ্ঞানী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল।

তাফসীরঃ
১২. ফেরেশতাগণ যেহেতু পানাহার করেন না, তাই তারা সে খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থেকেছিলেন, কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দেশীয় প্রথা অনুযায়ী মনে করেছিলেন, তারা তার শত্রু (কেননা প্রথা অনুযায়ী শত্রুই মেযবানের বাড়িতে খাদ্য গ্রহণ করে না)। তারপর তারা যখন পুত্র জন্মের সংবাদ দিলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন, তারা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা। সুতরাং ৩০ নং আয়াতে তারা তাঁর সাথে সে হিসেবেই কথা বলেছেন।

২৯

فَأَقْبَلَتِ امْرَأَتُهُ فِي صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَقَالَتْ عَجُوزٌ عَقِيمٌ

ফাআকবালাতিম রাআতুহূফী সাররাতিন ফাসাক্কাত ওয়াজহাহা- ওয়াকা-লাত ‘আজূঝুন ‘আকীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তখন তার স্ত্রী উচ্চৈঃস্বরে বলতে বলতে সামনে আসল এবং সে তার গাল চাপড়িয়ে বলতে লাগল, এক বৃদ্ধা বন্ধ্যা (বাচ্চা জন্ম দেবে)?

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তাঁর স্ত্রী চীৎকার করতে করতে সামনে এল এবং মুখ চাপড়িয়ে বললঃ আমি তো বৃদ্ধা, বন্ধ্যা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তখন তার স্ত্রী চিৎকার করতে করতে সামনে এলো এবং গাল চাপড়িয়ে বলল, ‘এই বৃদ্ধ-বন্ধ্যার সন্তান হবে!’

৩০

قَالُوا كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ ۖ إِنَّهُ هُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ

কা-লূকাযা-লিকি কা-লা রাব্বুকি ইন্নাহূহুওয়াল হাকীমুল ‘আলীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতিথিগণ বলল, তোমার প্রতিপালক এ রকমই বলেছেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি হেকমতওয়ালা, সর্বজ্ঞ।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বললঃ তোমার পালনকর্তা এরূপই বলেছেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তারা বলল, ‘তোমার প্রতিপালক এরূপই বলেছেন ; তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।’

৩১

۞ قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ

কা-লা ফামা-খাতবুকুম আইয়ুহাল মুরছালূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
ইবরাহীম বলল, ওহে আল্লাহ-প্রেরিত ফেরেশতাগণ! তোমাদের গুরু কার্যটি কী?

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ইব্রাহীম বললঃ হে প্রেরিত ফেরেশতাগণ, তোমাদের উদ্দেশ্য কি?

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ইব্রাহীম বলল, ‘হে ফেরেশতাগণ ! তোমাদের বিশেষ কাজ কী ?’

৩২

قَالُوا إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمٍ مُّجْرِمِينَ

কা-লূইন্নাউরছিলনাইলা-কাওমিম মুজরিমীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা বলল, আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বললঃ আমরা এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে।

৩৩

لِنُرْسِلَ عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّن طِينٍ

লিনুরছিলা ‘আলাইহিম হিজা-রাতাম মিন তীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যেন তাদের উপর নিক্ষেপ করি পাকা মাটির ঢেলা।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যাতে তাদের উপর মাটির ঢিলা নিক্ষেপ করি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এদের ওপর নিক্ষেপ করার জন্যে মাটির শক্ত ঢেলা,

৩৪

مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَ لِلْمُسْرِفِينَ

মুছাওয়ামাতান ‘ইন্দা রাব্বিকা লিলমুছরিফীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যাতে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ চিহ্ন দেওয়া আছে সীমালংঘনকারীদের জন্য।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যা সীমাতিক্রমকারীদের জন্যে আপনার পালনকর্তার কাছে চিহ্নিত আছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘যা সীমালংঘনকারীদের জন্যে চিহ্নিত তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে।’

৩৫

فَأَخْرَجْنَا مَن كَانَ فِيهَا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

ফাআখরাজনা-মান কা-না ফীহা-মিনাল মু’মিনীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর সেই জনপদে যেসব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে সেখান থেকে বের করলাম।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর সেখানে যারা ঈমানদার ছিল, আমি তাদেরকে উদ্ধার করলাম।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেখানে যেসব মু’মিন ছিল আমি তাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম,

৩৬

فَمَا وَجَدْنَا فِيهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِّنَ الْمُسْلِمِينَ

ফামা-ওয়াজাদনা-ফীহা-গাইরা বাইতিম মিনাল মুছলিমীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং সেখানে একটি পরিবার ১৩ ছাড়া আর কোন মুসলিম পাইনি।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং সেখানে একটি গৃহ ব্যতীত কোন মুসলমান আমি পাইনি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর সেখানে আমি একটি পরিবার ব্যতীত কোন আত্মসমর্পণকারী পাই নাই।

তাফসীরঃ
১৩. ইশারা হযরত লূত আলাইহিস সালামের পরিবারের প্রতি। তিনি ও তার দুই কন্যা ছাড়া আর কোনো মুসলিম সে জনপদে ছিল না।

৩৭

وَتَرَكْنَا فِيهَا آيَةً لِّلَّذِينَ يَخَافُونَ الْعَذَابَ الْأَلِيمَ

ওয়াতারাকনা-ফীহাআ-য়াতালিলল্লাযীনা ইয়াখা-ফূনাল ‘আযা-বাল আলীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি তাতে (শিক্ষা গ্রহণের জন্য) এক নিদর্শন রেখে দিয়েছি তাদের জন্য, যারা যন্ত্রণাময় শাস্তিকে ভয় করে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয় করে, আমি তাদের জন্যে সেখানে একটি নিদর্শন রেখেছি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা মর্মন্তুদ শাস্তিকে ভয় করে আমি তাদের জন্যে এতে একটি নিদর্শন রেখেছি।

৩৮

وَفِي مُوسَىٰ إِذْ أَرْسَلْنَاهُ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ بِسُلْطَانٍ مُّبِينٍ

ওয়া ফী মূছাইয আরছালনা -হু ইলা-ফির‘আওনা বিছুলতা-নিম মুবীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং মূসার ঘটনায়ও (আমি এ রকম নিদর্শন রেখেছি), যখন আমি তাকে এক প্রকাশ্য দলীলসহ ফির‘আউনের কাছে পাঠিয়েছিলাম।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং নিদর্শন রয়েছে মূসার বৃত্তান্তে; যখন আমি তাকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ ফেরাউনের কাছে প্রেরণ করেছিলাম।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং নিদর্শন রেখেছি মূসার বৃত্তান্তে, যখন আমি তাকে স্পষ্ট প্রমাণসহ ফির‘আওনের নিকট প্রেরণ করেছিলাম,

৩৯

فَتَوَلَّىٰ بِرُكْنِهِ وَقَالَ سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ

ফাতাওয়াল্লা-বিরুকনিহী ওয়াকা-লা ছা-হিরুন আও মাজনূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
ফির‘আউন তার ক্ষমতার দর্পে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, সে একজন যাদুকর অথবা উন্মাদ।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর সে শক্তিবলে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বললঃ সে হয় যাদুকর, না হয় পাগল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তখন সে ক্ষমতার দম্ভে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, ‘এই ব্যক্তি হয় এক জাদুকর, না হয় এক উন্মাদ।

৪০

فَأَخَذْنَاهُ وَجُنُودَهُ فَنَبَذْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ وَهُوَ مُلِيمٌ

ফাআখাযনা-হু ওয়া জুনূদাহূফানাবাযনা-হুম ফিল ইয়াম্মি ওয়া হুওয়া মুলীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং সকলকে সাগরে নিক্ষেপ করলাম। সে তো ছিলই তিরস্কার যোগ্য।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর আমি তাকে ও তার সেনাবাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। সে ছিল অভিযুক্ত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সুতরাং আমি তাকে ও তার দলবলকে শাস্তি দিলাম এবং এদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম, সে তো ছিল তিরস্কারযোগ্য।

৪১

وَفِي عَادٍ إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيحَ الْعَقِيمَ

ওয়া ফী ‘আ-দিন ইযআরছালনা-‘আলাইহিমুররী হাল ‘আকীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং আদ জাতির মধ্যেও (আমি অনুরূপ নিদর্শন রেখেছিলাম), যখন আমি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম এমন ঝঞ্ঝা বায়ু, যা সর্বপ্রকার কল্যাণ থেকে বন্ধ্যা ছিল। ১৪

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং নিদর্শন রয়েছে তাদের কাহিনীতে; যখন আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম অশুভ বায়ু।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং নিদর্শন রয়েছে ‘আদের ঘটনায়, যখন আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম অকল্যাণকর বায়ু;

তাফসীরঃ
১৪. অর্থাৎ তা ছিল শাস্তির ঝড়ো হাওয়া, যে কারণে সাধারণত বাতাসের মধ্যে যেসব উপকার থাকে তার মধ্যে তা ছিল না, আদ জাতির বৃত্তান্ত সূরা আরাফে (৭ : ৬৫) এবং ছামুদ জাতির বৃত্তান্ত সূরা আরাফে (৭ : ৭৩) গত হয়েছে।

৪২

مَا تَذَرُ مِن شَيْءٍ أَتَتْ عَلَيْهِ إِلَّا جَعَلَتْهُ كَالرَّمِيمِ

মা-তাযারু মিন শাইয়িন আতাত ‘আলাইহি ইল্লা-জা‘আলাতহু কার রামীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তা যা-কিছুর উপর দিয়েই বয়ে যেত তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে রেখে যেত।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এই বায়ু যার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিলঃ তাকেই চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দিয়েছিল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটা যা কিছুর ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল তাকেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল,

৪৩

وَفِي ثَمُودَ إِذْ قِيلَ لَهُمْ تَمَتَّعُوا حَتَّىٰ حِينٍ

ওয়া ফী ছামূদা ইযকীলা লাহুম তামাত্তা‘ঊ হাত্তা-হীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং ছামুদ জাতির মধ্যেও (অনুরূপ নিদর্শন রেখেছিলাম), যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, কিছু কালের জন্য মজা লুটে নাও (এর মধ্যে নিজেদের না শোধরালে শাস্তি ভোগ করতে হবে)।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আরও নিদর্শন রয়েছে সামূদের ঘটনায়; যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, কিছুকাল মজা লুটে নাও।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আরও নিদর্শন রয়েছে সামূদের বৃত্তান্তে, যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, ‘ভোগ করে নাও স্বল্পকাল।’

৪৪

فَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ وَهُمْ يَنظُرُونَ

ফা‘আতাও ‘আন আমরি রাব্বিহিম ফাআখাযাতহুমুসসা-‘ইকাতুওয়া হুম ইয়ানজুরূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। ফলে তাদেরকে আক্রান্ত করল বজ্র এবং তারা তা দেখছিল। ১৫

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তারা তাদের পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল এবং তাদের প্রতি বজ্রঘাত হল এমতাবস্থায় যে, তারা তা দেখেছিল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কিন্তু এরা এদের প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল ; ফলে এদের প্রতি বজ্রাঘাত হল এবং এরা তা দেখছিল।

তাফসীরঃ
১৫. হযরত সালিহ ‘আলায়হিস সালাম তাদেরকে বলেছিলেন, ‘তোমাদেরকে তিনদিন পর চরম শাস্তি দেওয়া হবে। আগামীকাল তোমাদের চেহারা হলুদ হয়ে যাবে। তার পরের দিন হবে লাল এবং তৃতীয় দিন কালো। পরদিন ভোরে আসবে আসল শাস্তি। তারা যখন এসব আলামত দেখতে পাচ্ছিল তখন উচিত তো ছিল তওবা করা, তা না করে উল্টো তারা হযরত সালিহ আলায়হিস সালামকেই হত্যা করতে উদ্যত হল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে রক্ষা করলেন এবং চতুর্থদিন ভোরে বজ্রাঘাত ও অগ্নিবর্ষণ দ্বারা তাদেরকে ধ্বংস করে দিলেন। -অনুবাদক

৪৫

فَمَا اسْتَطَاعُوا مِن قِيَامٍ وَمَا كَانُوا مُنتَصِرِينَ

ফামাছতাতা-‘ঊ মিন কিয়া-মিওঁ ওয়ামা-কা-নূমুনতাসিরীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
ফলে তারা না পারল উঠে দাঁড়াতে আর না ছিল তারা আত্মরক্ষায় সক্ষম।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তারা দাঁড়াতে সক্ষম হল না এবং কোন প্রতিকারও করতে পারল না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা উঠে দাঁড়াতে পারল না এবং তা প্রতিরোধ করতেও পারল না।

৪৬

وَقَوْمَ نُوحٍ مِّن قَبْلُ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ

ওয়া কাওমা নূহিম মিন কাবলু ইন্নাহুম কা-নূকাওমান ফা-ছিকীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারও আগে আমি নূহের সম্প্রদায়কে পাকড়াও করেছিলাম। ১৬ নিশ্চয়ই তারা ছিল এক অবাধ্য সম্প্রদায়।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি ইতিপূর্বে নূহের সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি। নিশ্চিতই তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি ধ্বংস করেছিলাম এদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কে, এরা তো ছিল সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।

তাফসীরঃ
১৬. হযরত নূহ আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায়ের বৃত্তান্ত বিস্তারিতভাবে সূরা হুদে (১১ : ২৫-৪৮) গত হয়েছে।

৪৭

وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ

ওয়াছ ছামাআ বানাইনা-হা-বিআইদিওঁ ওয়া ইন্না-লামূছি‘ঊন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি আকাশকে নির্মাণ করেছি (আমার) ক্ষমতাবলে এবং নিশ্চয়ই আমি বিস্তৃতি দাতা। ১৭

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই ব্যাপক ক্ষমতাশালী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা-সম্প্রসারণকারী।

তাফসীরঃ
১৭. কোন কোন মুফাসসির এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে মানুষের রিযকে বিস্তৃতি ও প্রাচুর্য দান করেছেন। কোন কোন মুফাসসির বাক্যটির তরজমা করেছেন, ‘আমার ক্ষমতা অতি বিস্তৃত’। এর এরূপ অর্থও করা যেতে পারে যে, ‘আমি আকাশকেই বিস্তৃতি দান করেছি।’

৪৮

وَالْأَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُونَ

ওয়াল আর দা ফারাশ-হা-ফানি‘মাল মা-হিদূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি ভূমিকে বিছিয়ে দিয়েছি। সুতরাং আমি কত উত্তম করে বিছাই!

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর ভ‚মি, আমি একে বিছিয়ে দিয়েছি, আমি কত সুন্দর প্রসারণকারী!

৪৯

وَمِن كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

ওয়া মিন কুল্লি শাইয়িন খালাকনা-ঝাওজাইনি লা‘আল্লাকুম তাযাক্কারূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, ১৮ যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর প্রত্যেক বস্তু আমি সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।

তাফসীরঃ
১৮. কুরআন মাজীদ একাধিক স্থানে এই বাস্তবতা তুলে ধরেছে যে, আল্লাহ তাআলা প্রতিটি বস্তুর মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষের যুগল সৃষ্টি করেছেন। বিজ্ঞান আগে এ সত্য জানতে পারেনি, তবে আধুনিক বিজ্ঞান এই কুরআনী তত্ত্ব স্বীকার করে নিয়েছে।

৫০

فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ ۖ إِنِّي لَكُم مِّنْهُ نَذِيرٌ مُّبِينٌ

ফাফিররূইলাল্লা-হি ইন্নী লাকুম মিনহু নাযীরুম মুবীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং ধাবিত হও আল্লাহর দিকে। ১৯ নিশ্চয়ই আমি তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী (হয়ে এসেছি)।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব, আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তাঁর তরফ থেকে তোমাদের জন্যে সুস্পষ্ট সতর্ককারী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অতএব তোমরা আল্লাহ্ র দিকে ধাবিত হও, আমি তো তোমাদের প্রতি আল্লাহ্-প্রেরিত স্পষ্ট সতর্ককারী।

তাফসীরঃ
১৯. অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার মনোনীত দীনের উপর ঈমান আনা ও তার দাবি অনুযায়ী কাজ করার জন্য দ্রুত এগিয়ে চল।

৫১

وَلَا تَجْعَلُوا مَعَ اللَّهِ إِلَـٰهًا آخَرَ ۖ إِنِّي لَكُم مِّنْهُ نَذِيرٌ مُّبِينٌ

ওয়ালা-তাজ‘আলূমা‘আল্লা-হি ইলা-হান আ-খারা ইন্নী লাকুম মিনহু নাযীরুম মুবীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে মাবুদ বানিও না। নিশ্চয়ই আমি তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী (হয়ে এসেছি)।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা আল্লাহর সাথে কোন উপাস্য সাব্যস্ত করো না। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্ককারী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা আল্লাহ্ র সঙ্গে কোন ইলাহ্ স্থির কর না; আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহ্-প্রেরিত স্পষ্ট সতর্ককারী।

৫২

كَذَٰلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ

কাযা-লিকা মাআতাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম মির রাছূলিন ইল্লা-কা-লূছা-হিরুন আও মাজনূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এমনিভাবে তাদের আগে যারা ছিল, তাদের কাছেও এমন কোন রাসূল আসেনি, যার সম্পর্কে তারা বলেনি যে, সে একজন যাদুকর বা উন্মাদ।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এমনিভাবে, তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোন রসূল আগমন করেছে, তারা বলছেঃ যাদুকর, না হয় উম্মাদ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এভাবে এদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে এরা তাকে বলেছে, ‘তুমি তো এক জাদুকর, না হয় এক উন্মাদ!’

৫৩

أَتَوَاصَوْا بِهِ ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ

আতাওয়া-সাও বিহী বাল হুম কাওমুন তা-গূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা কি পরস্পরে এ কথার অসিয়ত করে আসছে? না, বরং তারা এক উদ্ধত সম্প্রদায়। ২০

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা কি একে অপরকে এই উপদেশই দিয়ে গেছে? বস্তুতঃ ওরা দুষ্ট সম্প্রদায়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা কি একে অপরকে এই যন্ত্রণাই দিয়ে এসেছে ? বস্তুত এরা সীমা-লংঘনকারী সম্প্রদায়।

তাফসীরঃ
২০. অর্থাৎ পূর্ববর্তীগণ পরবর্তীদেরকে এই ওসিয়ত করে যায় নি যে, তারাও যেন তাদের মত রাসূলদেরকে অস্বীকার করে। বরং পূর্ববর্তীদের মত তারাও অত্যন্ত উদ্ধত এক জাতি। ঔদ্ধত্যই পূর্ববর্তীদেরকে অবিশ্বাস ও অবাধ্যতায় প্ররোচিত করেছিল। আর সেই একই চরিত্রের কারণে এরাও তাদের মত কর্মকাণ্ড করছে। -অনুবাদক

৫৪

فَتَوَلَّ عَنْهُمْ فَمَا أَنتَ بِمَلُومٍ

ফাতাওয়াল্লা ‘আনহুম ফামাআনতা বিমালূম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে অগ্রাহ্য কর। কেননা তুমি নিন্দাযোগ্য নও।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব, আপনি ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। এতে আপনি অপরাধী হবেন না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অতএব তুমি এদেরকে উপেক্ষা কর, এতে তুমি অভিযুক্ত হবে না।

৫৫

وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنفَعُ الْمُؤْمِنِينَ

ওয়া যাক্কির ফাইন্নাযযিকরা-তানফা‘উল মু’মিনীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং উপদেশ দিতে থাক। কেননা উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং বোঝাতে থাকুন; কেননা, বোঝানো মুমিনদের উপকারে আসবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি উপদেশ দিতে থাক, কারণ উপদেশ মু’মিনদেরই উপকারে আসে।

৫৬

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

ওয়ামা-খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনছা ইল্লা-লিইয়া‘বুদূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যে যে, তারা আমারই ‘ইবাদত করবে।

৫৭

مَا أُرِيدُ مِنْهُم مِّن رِّزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَن يُطْعِمُونِ

মাউরীদুমিনহুম মির রিঝকিওঁ ওয়ামাউরীদুআইঁ ইয়ুত‘ইমূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি তাদের কাছে কোন রকম রিযক চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিক।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি এদের নিকট হতে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, এরা আমার আহার্য যোগাবে।

৫৮

إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ

ইন্নাল্লা-হা হুওয়াররাঝঝা-কুযুল কুওওয়াতিল মাতীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ নিজেই তো রিযিকদাতা এবং তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ তা’আলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ই তো রিযিক দান করেন এবং তিনি প্রবল, পরাক্রান্ত।

৫৯

فَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذَنُوبًا مِّثْلَ ذَنُوبِ أَصْحَابِهِمْ فَلَا يَسْتَعْجِلُونِ

ফাইন্না লিল্লাযীনা জালামূযানূবাম মিছলা যানূবি আসহা-বিহিম ফালা-ইয়াছতা‘জিলূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা জুলুম করেছে তাদেরও (শাস্তির) সেই পালা আসবে, যেমন পালা এসেছিল তাদের (পূর্ববর্তী) অনুরূপ লোকদের ক্ষেত্রে। সুতরাং তারা যেন আমার কাছে তাড়াহুড়া করে (শাস্তি) না চায়।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব, এই যালেমদের প্রাপ্য তাই, যা ওদের অতীত সহচরদের প্রাপ্য ছিল। কাজেই ওরা যেন আমার কাছে তা তাড়াতাড়ি না চায়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
জালিমদের প্রাপ্য তাই যা অতীতে এদের সমমতাবলম্বীরা ভোগ করেছে। সুতরাং এরা এটার জন্যে আমার নিকট যেন ত্বরা না করে।

৬০

فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا مِن يَوْمِهِمُ الَّذِي يُوعَدُونَ

ফাওয়াইলুলিলল্লাযীনা কাফারূমিইঁ ইয়াওমিহিমুল্লাযী ইঊ‘আদুন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ সেই দিনের, যে দিনের প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব, কাফেরদের জন্যে দুর্ভোগ সেই দিনের, যেদিনের প্রতিশ্রুতি ওদেরকে দেয়া হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কাফিরদের জন্যে দুর্ভোগ তাদের সে দিনের, যে দিনের বিষয়ে এদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  

আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড

Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !! 

Leave a Comment