সেবার বুড়ির বাড়িতে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না,তেনার বড্ড অসুখ এবার বোধ হয় বাঁচবে না, গোলাপোরা ধান গোয়ালপোরা গরু,পৈত্রিক বাড়ি যা ছিল ভেঙ্গে চুরে ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে

বিষয়: সেবার বুড়ির বাড়িতে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না,তেনার বড্ড অসুখ এবার বোধ হয় বাঁচবে না, গোলাপোরা ধান গোয়ালপোরা গরু,পৈত্রিক বাড়ি যা ছিল ভেঙ্গে চুরে ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের লেখক কে?

উত্তর : ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন-২. ‘আহ্বান’ গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত?

উত্তর : ‘আহ্বান’ গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলি থেকে সংকলিত।

প্রশ্ন-৩. ‘আহ্বান’ কোন ধরনের গল্প?

উত্তর : ‘আহ্বান’ একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প।

প্রশ্ন-৪. বিভূতিভূষণের কালজয়ী উপন্যাসের নাম কি?

উত্তর : বিভূতিভূষণের কালজয়ী উপন্যাসের নাম হলো— ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’।

প্রশ্ন-৫. ‘আহ্বান’ গল্পের গল্পকথকের পৈতৃক বাড়ির ভিটিতে কী গজিয়েছে?

উত্তর : ‘আহ্বান’ গল্পের গল্পকথকের পৈতৃক বাড়ির ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে।

প্রশ্ন-৬. গল্পকথক কোন বাগানের মধ্য দিয়ে বাজারে গেলেন?

উত্তর : গল্পকথক আম বাগানের মধ্য দিয়ে বাজারে গেলেন।

প্রশ্ন-৭. ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির স্বামী পেশায় কী ছিলেন?

উত্তর : ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির স্বামী পেশায় করাতি ছিলেন।

প্রশ্ন-৮. কে গল্পকথককে বুড়ির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন?

উত্তর : গল্পকথকের খুড়োমশায় তাঁকে বুড়ির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

প্রশ্ন-৯. ‘আহ্বান’ গল্পে গল্পকথকের জন্যে বুড়িকে কে দুধ দিয়েছিল?

উত্তর : ‘আহ্বান’ গল্পে গল্পকথকের জন্যে বুড়িকে হাজরার বউ দুধ দিয়েছিল।

প্রশ্ন-১০. গল্পকথক কোন মাসে তৃতীয়বার গ্রামে এলেন?

উত্তর : গল্পকথক আশ্বিন মাসে তৃতীয়বার গ্রামে এলেন।

প্রশ্ন-১১. অসুস্থ বুড়ি কাকে দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল?

উত্তর : অসুস্থ বুড়ি গোপালকে দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল।

প্রশ্ন-১২. ‘আহ্বান’ গল্পে বুড়ি মরার সময় বার বার কার নাম উচ্চারণ করেছিল?

উত্তর : ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি মরার সময় বার বার গোপালের নাম উচ্চারণ করেছিল।

প্রশ্ন-১৩. ‘আহ্বান’ গল্পে আবদুল, শুকুর, নসর- এরা লেখকের কে হন?

উত্তর : ‘আহ্বান’ গল্পে আবদুল, শুকুর, নসর– এরা লেখকের স্কুল জীবনের বন্ধু হন।

প্রশ্ন-১৪. বুড়ি মারা যাওয়ার সময় কোন সাধ অপূর্ণ থেকে যায়?

উত্তর : বুড়ি মারা যাওয়ার সময় গোপালকে দেখার সাধ অপূর্ণ থেকে যায়।

প্রশ্ন-১৫. বুড়িকে মা বলে ডাকত কে?

উত্তর : বুড়িকে মা বলে ডাকত হাজরা ব্যাটার বৌ।

প্রশ্ন-১৬. ‘আহ্বান’ গল্পে কীসের ছুটিতে গিয়ে গল্পকথক বুড়ির মৃত্যু সংবাদ পেলেন?

উত্তর : ‘আহ্বান’ গল্পে শরতের ছুটিতে গিয়ে গল্পকথক বুড়ির মৃত্যু সংবাদ পেলেন।

প্রশ্ন-১৭. বুড়ি গোপাল বলে কাকে সম্বোধন করেছিল?

উত্তর : বুড়ি গোপাল বলে গল্পকথককে সম্বোধন করেছিল।

প্রশ্ন-১৮. বুড়ি গল্পকথকের জন্যে কী বুনে রেখেছিল?

উত্তর : বুড়ি গল্পকথকের জন্যে খেজুরপাতার চাটাই বুনে রেখেছিল।

প্রশ্ন-১৯. কার স্নেহাতুর আত্মা গল্পকথককে বহু দূর থেকে আহ্বান করে এনেছে?

উত্তর : বুড়ির স্নেহাতুর আত্মা গল্পকথককে বহু দূর থেকে আহ্বান করে এনেছে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১। গল্পকথকের বিষয়ে চক্রবর্তী মহাশয়ের অভিপ্রায়টি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : গল্পকথক যেহেতু গ্রামের ছেলে, সেহেতু গ্রামের ছেলে গ্রামে বাস করবে— চক্রবর্তী মহাশয় গল্পকথক সম্পর্কে এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন।

গল্পকথক ছিলেন চক্রবর্তী মহাশয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর একমাত্র ছেলে। বন্ধুটি মারা যাবার অনেকদিন পর তার একমাত্র ছেলেকে দেখে তিনি অত্যন্ত খুশি হন এবং বন্ধুর ছেলেটিকে গ্রামে মাঝে-মধ্যে আসার অভিপ্রায়ে বাবার ভিটায় অন্তত একটি চালাঘর তোলার পরামর্শ দেন।

প্রশ্ন-২। গল্পকথককে বুড়ি চিনতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : বয়সের কারণে চোখের দৃষ্টি কমে আসায় বুড়ি গল্পকথককে চিনতে পারে না।

অনেকদিন পর গ্রামে এসে গল্পকথক বাজারে যাবার পথে আমগাছের ছায়ায় গ্রামের এক বুড়ির সাক্ষাৎ পায়। বুড়িকে দেখে গল্পকথক দাঁড়ালেও বুড়ির দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ায় এবং লেখক দীর্ঘদিন গ্রামে না থাকায় বুড়ি তাকে চিনতে পারে না।

প্রশ্ন-৩। গল্পকথকের গ্রাম ছাড়ার পর বুড়িকে স্মরণ না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : গ্রাম থেকে ফিরে গল্পকথক পুনরায় কলকাতায় গিয়ে নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বুড়িকে মনে রাখতে পারে না।

গল্পকথক গ্রামে আসার পর বুড়ি যেভাবে তাকে ভালোবেসে আপন করে কাছে টেনেছে, সেভাবে গল্পকথক বুড়িকে আপন ভাবতে পারেনি। তবে বুড়ির প্রতি তার যে মায়ামমতা ছিল না তা নয়। মূলত কর্মব্যস্ততার কারণেই বুড়িকে তার স্মরণে আসেনি।


আরো ও সাজেশন:-

প্রশ্ন-৪। বুড়ি গোপালের অবহেলা গায়ে মাখল না কেন?

উত্তর : বুড়ি গোপালকে খুব ভালোবাসত বলেই তার অবহেলা গায়ে মাখল না।

সন্তানরা যতই অবহেলা করুক, মা সেই অবহেলাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে তার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নেয়। কারণ মা সন্তানকে ভালোবাসে। তেমনিভাবে গোপালকে বুড়ি সন্তানের মতোই ভালোবাসত। আর এ কারণেই গোপালের অবহেলা বুড়ি গায়ে মাখল না।

প্রশ্ন-৫। ‘দুধ খেতে পাচ্ছ না ভালো, সে বুঝেছি।’— কথাটির ভাবার্থ লেখো।

উত্তর : বিভূতিভূষণের ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি দুধের বিশুদ্ধতা নিয়ে গল্পকথককে এ কথাটি বলেছে।

গ্রামে থাকা অবস্থায় গল্পকথককে ঘুঁটে গোয়ালিনী দুধ দেয়। কিন্তু গোয়ালিনী সম্পর্কে গল্পকথক জানে না যে তার দুধে পানির মিশ্রণ থাকে। গ্রামের বুড়ির সাথে গল্পকথকের বেশ ভাব হয়েছে। তাই বুড়ি দুধের ভেজালের কথা আলোচ্য বাক্যটির মাধ্যমে লেখককে বুঝিয়েছেন।

 পাঠ বিশ্লেষণ:

 দিলাম এক কোদাল মাটি—
মুসলিম রীতি অনুসারে মানুষ মারা গেলে তাকে কবর দেওয়া হয়। লেখককে বুড়ি যে স্নেহের বাঁধনে বেঁধেছিলেন তাতে ধর্মের ভেদ ছিল না। লেখকের গ্রামের মানুষরা পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিল লেখকের ধর্ম-বর্ণের কথা। শুকুর মিঞা যখন লেখককে বুড়ির কবরে মাটি কবরে দিলেন। এখানে লেখকের অসা¤প্রদায়িক চেতনাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

 বুড়ি একটু ঘাবড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে বলে, কেন বাবা, পয়সা কেন?
বুড়ি তার স্নেহের বন্ধনে লেখককে বেঁধে নেয়। লেখককে আদর করে ‘গোপাল’ বলে ডাকে। একদিন সকালবেলা বুড়ি দুধ নিয়ে গেলে লেখক তার কারণ জানতে চান এবং বুড়িতে কত টাকা দিতে হবে তা জিজ্ঞাসা করেন। বুড়ি লেখকের এ আচরণে ঘাবড়ে গেল। পরে সে লেখকের প্রতি স্নেহের দাবিতে ঐ দুধের জন্য পয়সা কেন নিবে সেই প্রসঙ্গে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।



 আমার কি মরণ আছে রে বাবা!
লেখক কুশলাদি জিজ্ঞাসা করায় বুড়ি তাকে আক্ষেপ করে এ কথা বলেছিল। কারণ এই জগতে বুড়ির আপন বলতে কেউ নেই। এক নাতজামাই তার খোঁজখবর নেয় না। এক পাতানো মেয়ের কাছে সে থাকে। ঠিকমতো খেতে পায় না। তার জীবন-যন্ত্রণা কেবল মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শেষ হতে পারে। এই কারণে সে আক্ষেপ করে লেখককে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।

 সেবার বুড়ির বাড়িতে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না।
গল্পের লেখককে বুড়ি সন্তানের মতো স্নেহ করত। সেই স্নেহের দাবিতেই বুড়ি লেখককে তার বাড়িতে যেতে বলেছিল। কিন্তু লেখক নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় বৃদ্ধার বাড়িতে যেতে পারেননি।

 তেনার বড্ড অসুখ। এবার বোধ হয় বাঁচবে না।
ছয় মাস পরে লেখক গ্রামে গেলে সেখানে বুড়ির পাতানো মেয়ে হাজরা ব্যাটার বউ তাকে খবর দেয় যে, বুড়ি খুব অসুস্থ, হয়তো আর বাঁচবে না। লেখককে সে দেখতে চায়।

 কিছু না কিছু আনবেই। কখনো পাকা আম, কখনো পাতি লেবু, কখনো বা একছড়া কাঁচকলা কি এক ফালি কুমড়ো।
‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি লেখককে সন্তানের মতো স্নেহ-মমতায় সিক্ত করতে চাইত। তাই সে স্নেহের দাবিতে লেখকের জন্য নানা কিছু নিয়ে আসে। লেখক অন্য ধর্মের লোক হলেও বুড়ির কাছে তিনি ছিলেন সন্তানতুল্য। তাই তাঁর জন্য বুড়ির এত দরদ।

 গোলাপোরা ধান, গোয়ালপোরা গরু।
বহুদিন পরে লেখক গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এক বুড়ির সাথে পরিচিত হন। সে এখন জীর্ণ-শীর্ণ দেহের অধিকারী, সব দিন ঠিকমতো খেতে পায় না। পাতানো এক মেয়ে অন্যের বাড়ি কাজ করে যা আয় করে তার থেকে ঐ বুড়িকে সাহায্য করে। কিন্তু বুড়ির অবস্থা এমন ছিল না স্বামী জমির করাতির জীবিতকালে তার গোলাভরা ধান ছিল, গোয়ালভরা গরু ছিল।

 পৈত্রিক বাড়ি যা ছিল ভেঙ্গে চুরে ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে।
ছেলেবেলায় লেখক তাঁর পৈতৃক বাড়ির যে অবস্থা দেখেছেন তার সাথে বর্তমানের কোন মিল নেই। কোন বসতবাড়িতে মানুষ বসবাস করলে তা যেমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও জীর্ণতামুক্ত থাকে, সেখানে বসবাস না করলে তার আবার আগাছা জঙ্গলে পরিপূর্ণ, জীর্ণ হয়ে পড়ে। ঝড়ে, বৃষ্টিতে ঘর-বাড়ি ভেঙে যায়। মেরামত না করার ফলে দেয়াল ধসে পড়ে। আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে লেখক সেটিই তুলে ধরতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment