স্বত্ব বিলোপ নীতি কি?, লর্ড ডালহৌসি কর্তৃক অনুসৃত স্বত্ব বিলোপ নীতি ব্যাখ্যা কর
ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসনের ইতিহাসে লর্ড ডালহৌসি ১৮৪৮ সালে গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন। এর পূর্বে তিনি লন্ডনে বোর্ড অব ট্রেডের সহসভাপতি ছিলেন। এ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ভারতে এসে সাম্রাজ্য বিস্তার নীতিকে বেছে নেন। সাম্রাজ্য বিস্তার প্রক্রিয়াকে সফল করার জন্য তিনি যে কোন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে প্রস্তুত ছিলেন । তাই তিনি ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য এক অভিনব নীতির প্রবর্তন করেন। এটাই ছিল তাঁর বিখ্যাত স্বত্ব বিলোপ নীতি । এ নীতির প্রয়োগ করার জন্যই তিনি ভারতে ধিকৃত হন ।
ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি : ভারতবাসী ও ভারতীয় সভ্যতা সম্পর্কে লর্ড ডালহৌসি একটি তাচ্ছিল্যপূর্ণ অনুকম্পাবোধ নিয়ে ভারতে আসেন। ডালহৌসি বিশ্বাস করতেন যে, ভারতবাসীর মঙ্গলের জন্য এদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রয়োজন। ভারতীয় রাজাদের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর চরম অশ্রদ্ধা ছিল। তিনি মনে করতেন যে, ভারতীয় রাজাদের শাসনব্যবস্থা ছিল ঘোরতর দুর্নীতিপূর্ণ ও অত্যাচারী। এ ব্যবস্থাকে লক্ষ করে ব্রিটিশ শাসন বা Fax Britannica এর বিস্তার ভারতবাসীর পক্ষে মঙ্গলজনক হবে। তবে ভারতবাসী তাঁর পরিকল্পনাকে সমর্থন করবে কিনা এ চিন্তাচেতনা তাঁর ছিল না। তাঁর নীতি ছিল পূর্ববর্তী গভর্নরদের সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী। তাঁর নীতি ছিল আইন বাঁচিয়ে যতদূর সম্ভব রাজ্য অধিগ্রহণ করা। ডালহৌসি এক পত্রে তাঁর নীতি ব্যাখ্যা করে বলেন : আমার মতে, কোম্পানির পক্ষে বিজ্ঞ ও সুচিন্তিত নীতি এটা হওয়া উচিত যে, দেশীয় রাজ্য অধিগ্রহণ বা রাজস্ব অধিগ্রহণের ন্যায় সুযোগ পেলে তা প্রত্যাখ্যান বা অবহেলা না করা। ডালহৌসি তাঁর রাজ্য গ্রহণ নীতির সমর্থনে দুটি উদ্দেশ্যের কথা বলেন। যথা :
১. দেশীয় রাজ্যগুলোকে ব্রিটিশের প্রত্যক্ষ শাসনে এনে পাশ্চাত্য ভাবধারার শাসন ও সংস্কার প্রবর্তন দ্বারা ভারতবাসীর কল্যাণ সাধন করা। তিনি রাজ্যগ্রহণ নীতির দ্বিতীয় লক্ষ্যে বলেন যে, ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষাকে গ্রহণ করতে হবে এবং ভারতে ব্রিটিশ পণ্যের বাজার দখল করতে হবে।
এ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তিনি যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে রাজি ছিলেন। তাই তিনি শেষে রাজ্যবিস্তারের জন্য তিনটি নীতির কথা বলেন। যথা :
ক. স্বত্ব বিলোপ নীতির প্রয়োগ দ্বারা রাজ্যবিস্তার,
খ. প্রত্যক্ষ যুদ্ধের দ্বারা রাজ্যবিস্তার।
গ. কুশাসনের অজুহাতে পররাজ্য গ্রাস।
ক. স্বত্ব বিলোপ নীতির প্রকৃতি। ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তারের মূল অস্ত্র ছিল স্বত্ব বিলোপ নীতি। তবে তিনি এ জাতির প্রয়োগ করলেও এর উদ্ভাবক ছিলেন না। অনেক আগ থেকেই এ বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছিল। কিন্তু ডালহৌসি তাঁর সময়ে এর বহুল প্রয়োগ করেন। লর্ড ডালহৌসির মতে, তখন ভারতে তিন শ্রেণীর রাজ্য ছিল। যথা : যে সকল দেশীয় রাজ্য অধিকারভুক্ত ছিল না, কোম্পানিকে কর দিত মা ও বশ্যতা জানাত না।
১. যে সকল দেশীয় রাজ্য কোম্পানির প্রতি বশ্যতা জানাত বা কর প্রদান করত। iii. যে সকল দেশীয় রাজ্য বা রাজবংশ কোম্পানির দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল এবং কোম্পানির উপর নির্ভরশীল ছিল। ডালহৌসি তাঁর স্বত্ব বিলোপ নীতি দ্বারা ঘোষণা করেন যে, প্রথম শ্রেণীর রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে এ নীতি প্রয়োগ হবে দ্বিতীয় শ্রেণী তথা যে রাজ্যগুলো ব্রিটিশের আশ্রিত ছিল সে রাজ্যের ক্ষেত্রে এ নীতি প্রয়োগ করা হল। তৃতীয় শ্রেণীর রাজ্য যথা : যে রাজ্য ব্রিটিশের দ্বারা সৃষ্ট এবং ব্রিটিশের উপর নির্ভরশীল ছিল তাদের ক্ষেত্রে কোন রাজার পুত্র বা উত্তরাধিকারী না থাকলে সে রাজাকে দত্তক পুত্র গ্রহণে অনুমতি দেওয়া হবে না। সে সকল রাজ্য রাজার মৃত্যুর পর কোম্পানির উপর বর্তাবে। ডালহৌসি ঘোষণা দেন, কেবলমাত্র আশ্রিত বা নির্ভরশীল হিন্দু রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রেই এ নীতির প্রযুক্তি হবে। যে রাজ্য কোম্পানির আশ্রিত ও কোম্পানির উপর নির্ভরশীল এবং যে রাজ্য কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট সে হাজাগুলোর ক্ষেত্রেই একমাত্র এ আইন প্রদত্ত হবে।
খ. স্বত্ব বিলোপ নীতির প্রয়োগ : স্বত্ব বিলোপ নীতির প্রয়োগ করে ডালহৌসি একাধিক রাজ্য অধিকার করেন। যথা : ১. সাঁতারা অধিকার : ১৮১৮ সালে পেশোয়া পদের বিলুপ্তি ঘটলে পেশোয়ার রাজ্যের একাংশে শিবাজীর এক বংশধরকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। সাঁতারার রাজা ব্রিটিশের অনুমতি ভিন্ন দত্তকপুত্র গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৮ সালে সে রাজার মৃত্যু হলে দত্তক পুত্রের উত্তরাধিকার অগ্রাহ্য করা হল এবং সাঁতারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হল ।
২. নাগপুর ও সম্বলপুর অধিকার : ১৮৫৩ সালে নাগপুরের ভোঁসলে রাজ্যের ভাগ্যে এরূপ ঘটল। সে বছর নাগপুরের রাজা অপুত্রক ও দত্তক পুত্রবিহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে নাগপুর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হল। ১৮৫০ সালে উড়িষ্যার অন্তর্গত সম্বলপুরের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে সম্বলপুর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হল ।
৩. ফাঁসি, ভগৎ, উদয়পুর, কৌরলী অধিকার : ১৮৫০ সালে ঝাঁসির রাজা অপুত্রক অবস্থায় প্রাণত্যাগ করলে ঝাঁসি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হল। এ একই কারণের জন্য ভগৎ, উদয়পুর, কৌরলী প্রভৃতি রাজ্যগুলোকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হল। অবশ্য লর্ড কানিং পরবর্তীকালে ভগৎ ও উদয়পুর রাজ্য দুটো এদের উত্তরাধিকারীদের হাতে ফেরত দিয়েছিলেন। ডাইরেক্টর সভার নির্দেশে কৌরলীও এদের উত্তরাধিকারীদের হস্তে অর্পণ করা হয়।
৪. তাঞ্জোর কর্নাট : স্বত্ব বিলোপ নীতি অনুসরণ করে লর্ড ডালহৌসি কয়েকটি ভূতপূর্ব রাজন্যবর্গের বৃত্তি ও পদমর্যাদা বন্ধ করে দেন। যেমন ১৮৫৩ সালে কর্নাটের নবাব পরলোক গমন করলে তাঁর উত্তরাধিকারীকে বাৎসরিক বৃত্তি থেকে বঞ্চিত করা হল। ১৮৫৫ সালে তাঞ্জোরের রাজা পরলোক গমন করলে তাঞ্জোরের রাজপরিবার থেকে রাজা উপাধি উঠিয়ে দেওয়া হয় । ১৮১৮ সালে পেশবা দ্বিতীয় বাজীরাও এর দত্তকপুত্র ধন্দুপন্থকে বৃত্তিদানের ব্যবস্থা হয়েছিল। ১৮৫৩ সালে ধন্দুপন্থের বৃত্তি বন্ধ করে দেওয়া হয় । ডালহৌসির যুক্তি ছিল যে, এ বৃত্তি পেশোয়াকে ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া হয়েছিল উত্তরাধিকার সূত্রে নয় ।
গ. স্বত্ব বিলোপ নীতির সমালোচনা : একথা সত্য যে, স্বত্ব বিলোপ নীতির তিনি উদ্ভাবক ছিলেন না। ১৮৩৪ সালে ডাইরেক্টর সভা স্বত্ব বিলোপ নীতির কথা চিন্তা করেছিলেন। তবে তারা নির্দেশও দিয়েছিলেন যে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দত্তকপুত্র গ্রহণের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। ১৮৪১ সালে ডাইরেক্টর সভা আদেশ দেন যে, সম্মত ও সম্মানজনকভাবে কোন রাজ্য বা কোন রূপ রাজস্ব লাভ করার সুযোগ গ্রহণ করা হবে। বস্তুত ডালহৌসির পূর্বে ১৮৪০ সালে কোবলা এবং ১৮৪২ সালে সুরাটের ক্ষেত্রে স্বত্ব বিলোপ নীতি প্রয়োগ করা হয়েছিল। যাহোক এ নীতি ডালহৌসি কর্তৃক উদ্ভাবিত না হলেও এ নীতি যে তাঁর সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় সাহায্য করেছিল এবং তিনি যে এটা কঠোরভাবে প্রয়োগ করেছিলেন ভাতে দ্বিমত নেই।
ইন্স ডালহৌসির সমর্থনে বলেছেন, Dalhousis predecessors had acted on the general principle of avoiding annexation if it could be avoided, Dalhousie acted on the general principle of annexing it if he could do so legitimately,
এ নীতি প্রয়োগের পশ্চাতে ডালহৌসির দুটি উদ্দেশ্য ছিল। যথা ঃ ব্রিটিশের আশ্রিত রাজ্যের প্রজাবর্গের কল্যাণ সাধন করা, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, দেশীয় শাসনব্যবস্থা অপেক্ষা ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা উন্নতর ও শ্রেষ্ঠ।
২. ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষা, সাঁতারা ও নাগপুরের রাজ্য দুটির বিলুপ্তির পশ্চাতে এটাই ছিল ডালহৌসির প্রধান যুক্তি। স্বত্ব বিলোপ নীতি তাঁর উদ্ভাবিত না হলেও তিনি এর প্রয়োগ করে অশ্রদ্ধার পাত্র হন। এ নীতি সম্পর্কে বলা হয় ঃ প্রথমত, আশ্রিত মিত্র রাজ্য, ব্রিটিশের অনুগ্রহে সৃষ্ট অধীন রাজ্য এ দুটি শ্রেণীগত পার্থক্য সম্পর্কে দেশীয় নৃপতিবর্গের কোন রূণ সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। এমনকি ডালহৌসি নিজেই এ পার্থক্য বুঝে উঠতে পারেন নি। ফলে স্বত্ব বিলোপ নীতির অপপ্রয়োগ করা হয়েছিল। উদয়পুরের রাজ্য ব্রিটিশের সৃষ্ট রাজ্য ছিল না। কিন্তু স্বত্ব বিলোপ নীতির কাছে একে বলি দেওয়া হয়েছিল। কৌরনীও ছিল আশ্রিত রাজ্য। কিন্তু এর প্রতিও স্বত্ব বিলোপ নীতি প্রযুক্ত হয়েছিল। এস্থলে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, স্বত্ব বিলোপ নীতি একমাত্র ব্রিটিশের সৃষ্ট রাজ্যগুলোর সম্পর্কেই প্রযুক্ত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা হয় নি।
দ্বিতীয়ত, ডালহৌসি দেশীয় রাজ্যগুলো সম্পর্কে অসংযত ও অসতর্ক ভাষা প্রয়োগ করে দেশীয় রাজন্যবর্গের মনে অযথা আতংকের সৃষ্টি করেছিলেন।
তৃতীয়ত, স্বত্ব বিলোপ নীতি হিন্দুদের চিরাচরিত নীতি ও ধর্মীয় সংস্কারের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। সুতরাং স্বত্ব বিলোপ নীতির মধ্যে সিপাহী বিদ্রোহের বীজ যে নিহিত ছিল তা বলা যায়। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের জন্য ডালহৌসির দায়িত্ব : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের জন্য ডালহৌসি যথেষ্ট পরিমাণে দায়ী ছিলেন, নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক মাত্রই এ কথা স্বীকার করে থাকেন। ডালহৌসি ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবিস্তারে তিনি কোন প্রকার নৈতিকতা বা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কথা বিবেচনা করতে প্রস্তুত ছিলেন। স্বত্ত্ব বিলোপ নীতির উদ্ভাবন করেছিলেন ইংল্যান্ডস্থ কোম্পানির ডাইরেক্টর সভা। কিন্তু ডালহৌসির পূর্ববর্তী গভর্নর জেনারেলগণ ভারতীয় চিরাচরিত রীতিনীতি বা সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির কোন প্রশ্নই ছিল না। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে, দেশীয় রাজ্যগুলোকে যতই ব্রিটিশ অধিকারভুক্ত করা যাবে ততই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি যেমন ঘটবে তেমন দেশীয় রাজাগণের প্রজারা ইংরেজ শাসনের সুফল ভোগ করবে। এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি সাঁতারা ও নাগপুর রাজ্য দুটি অধিকার করেন এবং নানা সাহেবের ভাতা বন্ধ করেন। এভাবে মারাঠা রাজ্য পঞ্চকের মধ্যে তিনটিই তিনি অবসান ঘটান। তাঞ্জের ও কর্ণাটের রাজপরিবারের ভ্রাতা তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতেও তাঁর রাজ্যবিস্তারের আশংকা মিটল না। তিনি অযোধ্যা রাজ্যটি অরাজকতার অজুহাতে দখল করে নিলেন। এমনকি তিনি দিল্লির সম্রাটের উপাধি নাকচ করে দিয়ে ব্রিটিশ সংস্কারকে ভারতের সার্বভৌম শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। কেবল ডাইরেক্টর সভার অনুমোদন না পাওয়াতে তা কার্যকরী হয় নি।
ডালহৌসির স্বত্ব বিলোপ নীতি প্রয়োগের অনৈতিকতা, নাগপুর ও অযোধ্যা রাজ্য অধিকারকালে তাঁর নীচ স্বার্থপরতা ও অত্যাচার ভারতবাসীর মনে ব্রিটিশদের প্রতি ব্যাপক ঘৃণা বিদ্বেষের সৃষ্টি করেছিল। নাগপুরের রাজ প্রাসাদ অবরোধ করে গরু, ঘোড়া, হাতি হতে আরম্ভ করে আসবাবপত্র ও মণিমুক্তা লুণ্ঠন করতেও ইংরেজরা দ্বিধাবোধ করেন নি। অশীতি বছরের বৃদ্ধা নারীমাতার আপত্তি সত্ত্বেও ইংরেজগণ প্রাসাদ হতে আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে লজ্জাবোধ করেন নি। এসকল আসবাবপত্র ও মণিমুক্তা বিক্রয়ের জন্য কলকাতায় প্রেরণ করা হয়েছিল। নাগপুর রাজ্য অধিকার অপেক্ষা রাজ প্রাসাদ লুণ্ঠন প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর মধ্যে এক দারুণ বিক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। অযোধ্যা রাজ্য অধিকারের সময়ও নাগপুর রাজ্য অধিকার কালের বর্বরতার পুনরাবৃত্তি ঘটান। নবাব পরিবারকে রাস্ত ায় বের করে দিয়ে নবাবের কোষাগারের দরজা ভেঙে ধনরত্ন লুণ্ঠন করেছিল।
এতে অযোধ্যার নবাবকে তারই প্রজাবর্গের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছিল। এ আচরণ ব্রিটিশ জাতি ও ব্রিটিশ মর্যাদায় কলঙ্ক লেপন করেছিল সন্দেহ নেই । ডালহৌসির উপরিউক্ত কার্যাবলি ভারতবর্ষের সর্বত্র দেশী রাজাগণের মনে এক দারুণ সন্দেহের সৃষ্টি করেছিল। তাদের মনে একথাই উদিত হল যে, নাগপুর বা অযোধ্যার ন্যায় ব্রিটিশের সমর্থক দেশীয় রাজ্যগুলোর প্রতি যখন ব্রিটিশগণ এরূপ নীতি ব্যবহার করতে কুণ্ঠিত হয় নি। তখন অপরাপর রাজ্যের ক্ষেত্রে না জানি তারা কি করবে! ঝাঁসি রাজ্য দখল ও নানা সাহেবের ভাতা বন্ধ করেও ডালহৌসি ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের পথ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। লর্ড ডালহৌসি ভারতবর্ষ ত্যাগ করার পূর্বে বিদ্রোহ শুরু না হলেও তাঁর সাম্রাজ্যবাদী নীতির কঠোর প্রয়োগ এবং অপরাপর নানাবিধ কারণে বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল। সুতরাং এ বিদ্রোহের জন্য ডালহৌসির নীতি অনেকটা দায়ী ছিল ।
উপসংহার : অতএব বলা যায়, লর্ড ডালহৌসি কোম্পানির স্বার্থকে সফল করতে গিয়ে যে নীতি প্রয়োগ করেন তা ছিল ভারতবাসীর কাছে ঘৃণাজনক। তবে তিনি তাঁর নীতি প্রয়োগের সময় যদি ভারতবাসীর মতামতের প্রাধান্য দিতেন তাহলে হয়ত এত কুফল দেখা দিত না। কিন্তু তা করতে না পারায় কুফল দেখা দেয়। তাই বলা যায়, লর্ড ডালহৌসি ভারতবাসীর প্রশংসা না পেলেও কোম্পানি তথা ব্রিটিশের স্বার্থ উদ্ধারে সফল হন, আর এটাই ছিল কোম্পানি তথা ব্রিটিশ শাসনের লক্ষ্য। কেননা, কোম্পানি যত ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার সবগুলোই ছিল কোম্পানির স্বার্থে প্রণীত, ভারতীয়দের স্বার্থে নয়।