স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের কৌশলগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা কর

স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের কৌশলগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা কর

অর্থনৈতিক পূর্বাভাস স্বল্পমেয়াদি (১ বছর-৩ বছর), মধ্যমেয়াদি (৩ বছর-৫ বছর), দীর্ঘমেয়াদি (৫ বছরের অধিক) সময়ের জন্য হতে পারে। কিন্তু বিনিয়োগকারী সবসময় স্বল্পমেয়াদি পূর্বাভাস নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। স্বল্পমেয়াদি পূর্বাভাস প্রক্রিয়ার চারটি কৌশল নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. পূর্ববর্তিতামূলক জরিপ : ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প এমনকি সরকারি অনেক কার্যের পরিকল্পনা আগাম করা হয়। সাধারণ ভোক্তাও তাদের প্রধান প্রধান ব্যয় সম্পর্কে অগ্রিম পরিকল্পনা করে। তাছাড়া বিভিন্ন ধনের প্রতিষ্ঠান তাদের আয় ও মূলধনী ব্যয় সম্পর্কে আগাম হিসাব-নিকাশ করে থাকে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের এই অগ্রিম পরিকল্পনার উদ্দেশ্যের জরিপ অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের জন্য মূল্যবান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয় ।

পূর্ববর্তিতামূলক জরিপ হচ্ছে জরিপ যা সরকার, ব্যবসা-বাণিজ্য, কোম্পানি ও শিল্পের কারখানা যন্ত্রপাতি ব্যয় এবং কাঁচামালের গঠনমূলক ব্যবহারের উদ্দেশ্যের সাথে জড়িত। এই জরিপ ভোক্তার স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যয় সম্পর্কে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত করে। একজন বিশ্লেষক এসব জরিপের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অবস্থা সম্পর্কে পূর্বানুমান করতে পারে ।

২. আবহমান সংক্রান্ত বা নির্দেশক কৌশল : অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের এই তত্ত্ব বিভিন্ন ধরনের নির্দেশক (Indicator) ব্যবহার করে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। এসব নির্দেশক হচ্ছে বিভিন্ন অর্থনৈতিক চলকের কারীন সারির তথ্য। নির্দেশকসমূহ তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) প্রধান নির্দেশক,
(খ) সাম্প্রতিক অথবা সমকালীন নির্দেশক ও (গ) পিছিয়ে পড়া নির্দেশক ।

৩. গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিক মডেল গঠন : এটি হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান ও বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস পদ্ধতি। এটি অর্থনৈতিক চলক ও এর পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে উন্নয়নকৃত কৌশল । অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের মধ্যে একটি জটিল আন্তঃসম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। নির্ভরশীল ও স্বাধীন চলকের মধ্যকার এই সম্পর্ক একটি গাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়। এই সমীকরণ সমাধানের মাধ্যমে পূর্বাভাসের সাফল্য আনয়ন সম্ভব।

অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের জন্য গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিক মডেল প্রয়োগ খুব কঠিন কাজ। এই মডেলের সমীকরণ সমাধানের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ ও ইহা ব্যবহার উপযোগী করতে হয় যা সময় সাপেক্ষ। যার কারণে সময়োপযোগী ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না ।

৪. সুযোগসন্ধানী মডেল : এটি বহুল ব্যবহৃত পূর্বাভাস কৌশল। এই কৌশল মোট জাতীয় উৎপাদন মডেল তৈরিকরণ (GNP model building) হিসেবে পরিচিত। প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষক যে সময়ের জন্য পূর্বাভাস করবেন সে সময়ের মোট আয় মোট জাতীয় উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে মোট চাহিদা নির্ণয় করেন। এই মোট চাহিদা পরবর্তীতে কর হার সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতির হার ও অন্যান্য সরকারি রাজস্বনীতির সাথে বিবেচনায় আনতে হয় । এরপর বিশ্লেষক মোট জাতীয় আয়ের বিভিন্ন উপাদান নির্ণয় করে মোট জাতীয় আয় (GNP) সম্পর্কে পূর্বাভাস দেন।

এই সংখ্যামাত্রিক প্রকাশের জন্য ব্যক্তিগত বিনিয়োগ, পণ্য ও সেবার সরকারি ক্রয়, নিট রপ্তানি ও ভোগ ব্যয় গণনা করতে হয় ।


মৌলিক বিশ্লেষণের অংশ হিসেবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিনিয়োগকারী প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে সক্ষম হয় যা বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজ করে ।

একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের কৌশলগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা কর

Leave a Comment