বিষয়: হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সম্পর্কে A-Z তথ্য PDF,হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সম্পর্কে বিগত সালের প্রশ্ন সমাধানসহ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী জীবনী, এক নজরে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী জীবনী,একনজরে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বর্ণাঢ্য সংক্ষিপ্ত জীবনী,হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নিয়ে আলোচনা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সমূহ, বিসিএস প্রস্তুতি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী,হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রশ্ন উত্তর,হরপ্রসাদ শাস্ত্রী mcq
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাংলা সাহিত্য তথা সামাজিক ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে ছিলেন পুরাতত্ত্ববিদ, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, সংরক্ষণবিদ এবং গবেষক। তাঁর মতো এত বৈচিত্র নিয়ে বাংলাদেশে খুব কম ব্যক্তিত্বেরই আবির্ভাব ঘটেছে।
জন্ম ও বংশপরিচয়
হরপ্রসাদশাস্ত্রীর আদি নিবাস ছিল উত্তর চব্বিশ পরগণা নৈহাটিতে। তবে তিনি জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের খুলনা জেলায় ১৮৫৩ সালে। তাঁর পিতার নাম রামকমল ন্যায়রত্ন। ছোটো বেলায় তাঁর নাম ছিল শরৎনাথ ভট্টাচার্য। জটিল অসুখে আক্রান্ত হলে শিবের পূজা দিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন বলে তাঁর নাম পালটে রাখা হয় শিব অর্থাৎ হর, হরপ্রসাদ ভট্টাচার্য। পরবর্তীকালে সংস্কৃত কলেজ থেকে এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করলে তাঁকে শাস্ত্রী উপাধী দেওয়া হয়। তারপর থেকেই তিনি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নামে পরিচিত হন।
শিক্ষাজীবন :
হরপ্রসাদশাস্ত্রী অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের স্কুল থেকে। এরপর কোলকাতায় সংস্কৃত কলেজ ও প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৮৭১ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে অষ্টম স্থান অধিকার করে বি.এ. পাস করেন। ১৮৭৭ খ্রীষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজক থেকে এম.এ. পরীক্ষায় তিনিই একমাত্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং শাস্ত্রী উপাধী লাভ করেন।
কর্মজীবন :
হরপ্রসাদশাস্ত্রী তাঁর সুদীর্ঘ জীবনে বহু জায়গায় কর্মসূত্রে যোগ দেন। ১৮৭৮ সালে হেয়ার স্কুলে ট্রান্সেলেশনের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর কিছুদিন লৌখনো ক্যানিং কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৮৮৩ সালে কোলকাতার সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৯৪ পর্যন্ত সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপনার সঙ্গে বেঙ্গল লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সী কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজে অধ্যক্ষ হন। ১৯০৮ সালে সেখান থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯২১ সালে ১৮ই জুন বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে প্রধান রূপে সেখানে যোগদান করেন এবং ১৯২৪ সালে ৩০ই জুন অবসর গ্রহণ করেন। এইসবের পাশাপাশি বহু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, এসিয়াটিক শোসাইটি প্রভৃতিতে ছিলেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত এসিয়াটিক সোশাইটির সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেন।
উল্লেখযোগ্য কীর্তি :
প্রাচীন সাহিত্য ও পুঁথির উপর তাঁর গভীর অনুরাগ তাঁকে প্রাচীন পুঁথি উদ্ধারে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের The Buddhist Sanskril literature গ্রন্থের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে চারবার নেপাল গমন করেন। সেখানকার রাজপ্রাসাদের রয়াল লাইব্রেরী থেকে চর্যাচর্যবিনশ্চয়, কৃষ্ণ ও সরহা বজ্রের দোহা, ডাকর্ণব আবিষ্কার করেন ১৯০৭ সালে। এগুলিকে তিনি বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদের্শন মনের করে ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে “হাজার বছরের পুরানো বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা” নামে প্রকাশ করেন। গ্রন্থটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষার নবদিগন্তের সূচনা হয়। আবিষ্কৃত চারটি পুঁথির মধ্যে চর্যাচর্যবিনশ্চয়কে গবেষকগণ বাংলা ভাষায় লেখা বলে মেনে নেন। ফলে হরপ্রসাদ বাংলা ভাষার প্রথম পুঁথি তথা নিদর্শন আবিষ্কারের অমর কৃতিত্বের অধিকারী হন। এই গ্রন্থটির আবিষ্কার ও সম্পাদনা বাংলা সাহিত্যের গবেষণায় তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি। এছাড়া তিনি বৃহদ্ধর্ম পূরাণ, সন্ধাকর নন্দীর রামচরিতন ও আর্যদেবের চতুঃশতকও তিনি উদ্ধার করেন।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ :
হরপ্রসাদ বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থগুলির মধ্যে সময় তত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, শাসনতন্ত্র বিষয়ে যেমন আছে, তেমনি ইংরেজি প্রবন্ধ, বাংলা প্রবন্ধ এবং উপন্যাসও আছে। তাঁর রচিত ৫২টি নিবন্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : পাঠ্যগ্রন্থ- বাংলা প্রথম ব্যাকরণ, ভারতবর্ষের ইতিহাস, প্রভৃতি। ইংরেজি নিবন্ধের মধ্যে Maghadhan Literature, Sanskrit Culture in India, Discovery of living Buddhism in Bengal. এছাড়া ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দে মেঘদুত কাব্যে ভাবানুবাদ রূপে মেঘদূত ব্যাখ্যা রচনা করেন। বাল্মিকির জয় ১৮৮১-তে রচিত পৌরাণিক আখ্যায়িকা। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় প্রাচীন বাংলার গৌরব এবং বৌদ্ধধর্ম।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সাহিত্যে অবদান :
১। প্রবন্ধ : বঙ্কিম সূর্যকে ঘিরে বঙ্গদর্শনের আকাশে যে প্রাবন্ধিক গোষ্ঠীর আবির্ভাব হয় তাঁর কনিষ্ঠতম সদস্য হলেন হরপ্রসাদ। কিন্তু স্বীয় ক্ষমতাবলে তিনি এর অন্যতম প্রধান লেখক হয়ে ওঠেন। তিনি বাংলা প্রবন্ধকে শুধুমাত্র জ্ঞান পরিবেশনের কর্তব্যভার থেকে মুক্তি দিয়ে বাঙালীর রস ও রুচিবোধের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। ১৮৮১ সালে বঙ্গদর্শনে তাঁর প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ ভারত মহিলা প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধের জন্য তিনি হোলকার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া আর্যদর্শন , কল্পনা, সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, নারায়ণ, মর্মবাণী প্রভৃতি পত্রিকাতে তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ তাঁর পাণ্ডিত্য, মনস্বিতা ও জ্ঞানের গভীরতকে প্রকাশ করেছে।
উপন্যাস :
তাঁর রচিত দুটি উপন্যাস, যথা বেনের মেয়ে- ১৯২২, কাঞ্চনমালা- ১৯২৩-এ তাঁর সৃষ্টিশীল সাহিত্যিক প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। বেনের মেয়ে তাঁর শ্রেষ্ঠ বাংলা রচনা। এই উপন্যাসে দশম-একাদশ শতাব্দীর বাংলাদেশের বৌদ্ধধর্মের চিত্রকে জ্বলন্ত ও যথাযথ রূপে উপস্থাপন করেছেন।
মূল্যায়ন : হরপ্রসাদ পূরাতত্ত্ববিদ, সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এবং হিস্ট্রিওগ্রাফার হলেও ইতিহাস তাঁর কাছে শুধু সন-তারিখের হিসাব ও তথ্যসংগ্রহ ছিল না, একটি যুগে জীবনাচরণে বহু বিচিত্র দিক, সাধারণ মানুষের জীবনবোধ ও জীবন যাত্রা এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য প্রভৃতির মধ্যে তিনি ইতিহাসের প্রাণবন্তরূপ সন্ধান করতেন।
পাণ্ডিত্ব তাঁর লেখায় গুরুভার হয়ে ওঠেনি। সাধারণ পাঠকের কাছে পৌছবার ঐকান্তিক আগ্রহে সাধু ভাষার কাঠামোতেই কথ্যভাষার আশ্চর্য রকমের বাকছন্দ ব্যবহার করেছেন। সহজ-সরল ভাষা, প্রসন্ন কৌতুকবোধ, বিচারশীল যৌক্তিকতা তাঁর প্রবন্ধগুলিকে যেভাবে হার্দ্য ও রমণীয় করে তুলেছে বাংলা গদ্যসাহিত্যে তার তুলনা নেই। তাঁর ভাষা বাংলার এক অপূর্ব সম্পদ।
খ্যাতি ও সম্মান
“ভারতমহিলা”-র জন্য হোলকার পুরস্কার
১৯৯৮ সালে পাণ্ডিত্বের জন্য সরকারের তরফ থেকে মহামোহপাধ্যায় উপাধী পান।
১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট দেয়।
এসিয়াটিক সোসাইটি আজীবন সহাসভাপতি হন।
১৯১১ সালে সি.আই.ই. উপাধী পান।
শেষকথায় বলা যায় হরপ্রসাদ ছিলেন স্বাধীনচেতা ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। মতাদর্শগত দিক দিয়ে কোনো আপোশ করতে রাজি ছিলেন না। সেজন্য তাঁর কোলকাতা বিশ্ববিদ্যলয় অধ্যাপনা করা হয়ে ওঠেনি। এমনকি বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যকে ধর্মপ্রচারে ব্যবহার করলে তাঁরও সমালোচনা ছাড়েননি।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে ১৭-ই ডিসেম্বর এই মহান মনীষার মহাপ্রয়াণ ঘটে।
Paragraph & Composition/Application/Emali | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
রচনাসমগ্রঃ
১৯১৬ সালে চর্যাপদের পুঁথি নিয়ে রচিত তাঁর গবেষণাপত্র হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহা নামে প্রকাশিত হয়। হরপ্রসাদ অনেক প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বহু গবেষণাপত্রও রচনা করেন। তিনি ছিলেন এক খ্যাতনামা হিস্টোরিওগ্রাফার। স্বীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেছিলেন বহু পুরস্কার ও সম্মান।
📖 তাঁর বিখ্যাত বইগুলি হলোঃ
🔸 বাল্মীকির জয়,
🔸 মেঘদূত ব্যাখ্যা,
🔸 বেণের মেয়ে (উপন্যাস),
🔸 কাঞ্চনমালা (উপন্যাস),
🔸 সচিত্র রামায়ণ,
🔸 প্রাচীন বাংলার গৌরব,
🔸 বৌদ্ধধর্ম,
📖 তাঁর উল্লেখযোগ্য ইংরেজি রচনাগুলি হলোঃ
🔸 মগধান লিটারেচার,
🔸 সংস্কৃত কালচার ইন মডার্ন ইন্ডিয়া,
🔸 ডিসকভারি অফ লিভিং বুদ্ধিজম ইন বেঙ্গল।
এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও
- জানা অজানা ড. মুহাম্মদ ইউনূস , দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এর জীবনী
- আবু সাঈদ কোটা আন্দোলন, আবু সাঈদ আন্দোলনকর্মী,কোটা আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ,জানা অজানা আবু সাঈদ
- তারামন বিবি মেয়েদের নাম কি?,তারামন বিবি মায়ের নাম কি?