Google Adsense Ads
১৩ ডিসেম্বর ছিল ঘোড়াঘাট শক্র মুক্ত দিবস
১৩ই ডিসেম্বর ছিল ঘোড়াঘাট শক্র মুক্ত দিবস। এই দিনে ঘোড়াঘাট শক্র মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার স্বাধীনতাকামী দামাল ছেলেরা, বৃদ্ধ, বনিতা, নারী, পুরুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘোড়াঘাটে তৎকালীন মুজাহিদ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর বদর উদ্দিনের রক্তে সঞ্চালীত হয় ঘোড়াঘাটের মাটি।
তার তেজদীপ্ত বক্তব্য ছিল মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে। আর এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই তিনি ঘোাড়াঘাটের মজাহিদ বাহিনীর সদস্য হযরত আলী, আনছার, মজিবর রহমান, আঃ লতিফ খাঁন, মোঃ হান্নান, আনোয়ার হোসেন, শাহাজাহান, নজরুল ইসলাম, আঃ হান্নান, দুদু মিয়া, মফিজ উদ্দিন, ইসমাইল, আমিরুল ইসলাম সহ আরো সহযোদ্ধাদেরকে সংগে নিয়ে সেই সময়ে পলাশবাড়ী থানাধীন হোসেনপুর আমবাগানে অবস্থানরত তিন ও চার বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে যোগদান করেন। ঐ বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ল্যাপ্টেনেন্ট রফিক এবং সুবাদার আলতাফ হোসেন ও হাওয়ালদার মেজর মুুনসুর আলী।
এরই সূত্র ধরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এক দল সেনা বাহিনী রংপুর হতে সাজোয়া গাড়ী নিয়ে এসে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে সন্ধি করার কথা বলে ওয়ারলেছ বার্তায় জানান যে, তারা ভাই ভাই হানাহানি না করে শান্তির জন্য আলাপ করার কথা বলে পলাশবাড়ীতে যেতে বলে।
বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক খাঁন সেনার কথায় বিশ্বাস করে গত ২৭/০৩/১৯৭১ইং তারিখ বেলা অনুমান ২টার দিকে সেখানে গেলে বাঙ্গালী সৈনিকরা আক্রোমনের শ্বিকার হয়। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হলে হাওয়ালাদার খমির উদ্দিন ও নায়েক আঃ মালেক সহ মুজাহিদ ইসলাইল নামের তিনজন বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
ঐ সময় খাঁন সেনারা লেঃ রফিককে কৌশলে ধরে নিয়ে যায়। তখন থেকেই আলতাফ হোসেন সুবাদার ও মজাহিদ মেজর বদর উদ্দিনের রক্তে স্বাধীনতা যুদ্ধের সঞ্চলন বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত করে স্বাধীন করতে হবে এই প্রত্যয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝপিয়ে পড়ে।
যুদ্ধের কৌশল মতে বেঙ্গল রেজিমেন্ট সহ মুজাহিদ মেজর বদর উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীদেরকে নিয়ে পলাশবাড়ী বিটিসির উত্তর পুর্ব পাশ্বে রংপুর মহা সড়কে বেরিকেট সৃষ্টি করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান করতে থাকে।
সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর পরিকল্পনা মোতাবেক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রোমন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মুজাহিদ বাহীনির মুক্তিযোদ্ধারা একটি করে খন্ড দলে ভাগ হয়ে মাদারগঞ্জ চৌধুরীনি হয়ে রংপুরের দিকে রওনা দেয় এবং একটি দল পলাশবাড়ীতে এ্যাম্বুশ নিয়ে থাকে।
এই অবস্থায় খন্ড খন্ড ভাবে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হলে সেখানে তুমুল যুদ্ধের সম্মুখিন হয়। গোলাবারুদের সল্পতার কারণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা নিরাপদ স্থানে চলে যায়।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী বন্ধু ভারতে গিয়ে গেরিলা প্রশিক্ষন নিলেও মুজাহিদ মেজর বদর উদ্দিন বাংলার মাটিতে অবস্থান নিয়েই মুক্তিযুদ্ধ করার প্রতিজ্ঞায় যুদ্ধের প্রস্তুতিতে আত্মগোপনে থাকা কালে খাঁন সেনার হাতে আটক হয়।
সেই সময়ে আর সি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে খাঁন সেনাদের ক্যান্টনমেন্টে তাকে একটি ঘরে আটক রেখে হাত-পা বেধে ঝুলিয়ে ব্লেড দিয়ে শরীর কেটে কাটা স্থানে লবণ ছিটিয়ে যন্ত্রনা দিতো।
Google Adsense Ads
মেজর বদর উদ্দিনকে খাঁন সেনারা জিজ্ঞাসা করেছিল যে, তার সাথে কে, কে ছিল, ইনশাল্লাহ আমি একাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমার সাথে কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই। বেইনেট চার্জের মাধ্যমে খতবিক্ষত করে অমানুষিক ভাবে চরম যন্ত্রনার পরেও মেজর বদর উদ্দিন তার সহযোদ্ধাদের নাম প্রকাশ করে নাই।
অবশেষে খাঁন সেনাদের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তার শরীর হতে মাংস পচে খষে ২১ দিন পর চির নিদ্রায় না ফেরার দেশে চলে গিয়ে শহীদ হন মেজর বদর উদ্দিন। মেজর বদর উদ্দিন সহ সারা বাংলাদেশে আরো অগনিত যোদ্ধা শহীদ হলেও তারা না থাকলেও তাদের নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাঅক্ষরে শহীদের খাতায়, আর তারই সাথে চির অমর হয়ে থাকবে এই স্বাধীন বাংলাদেশের নাম।
পরে ঘোড়াঘাট থেকে ৪১ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।১৯৭১ সালে টানা নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলাকালীন মুক্তিবাহিনী সহ যৌথ বাহিনীর অব্যাহত গেরিলা হামলার মুখে ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাশ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রতন্ত অঞ্চল দিয়ে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৩ জন শহীদ হন।
আমরা ঘোড়াঘাটের মানুষ প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর যেন এই দিনে শক্র মুক্ত দিবসটি পালন করতে পারি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও আমরা স্বাধীনতা ভোগের পাশাপাশি প্রতি বৎসর ঘোড়াঘাটে শক্র মুক্ত দিবসটি পালন করছি। অথচ ঘোড়াঘাটে মেজর বদের উদ্দিন সহ অন্যান্য শহীদের বদ্যভুমির কোন সংস্কার বা উন্নয়ন হয়নি। ঘোড়াঘাটবাসী উন্নয়নশীল আওয়ামীলীগ সরকারের হস্তক্ষেপে ঘোড়াঘাট শহীদের বদ্যভূমির উন্নয়ন চায়।
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) থেকেঃ মোঃ রাজন মিয়া
মোঃ রাজন মিয়া
ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।
তাং- ১৪-১২-২০২০ইং
মোবাঃ ০১৭৮৮১৯৫৬৫৪
Google Adsense Ads