১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির কারণ,১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ সংক্ষেপে, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়
ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সাত বছর পর অবশেষে ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটাই ছিল পাকিস্তানে পূর্ববাংলার প্রথম প্রাদেশিক নির্বাচন । সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটের ভিত্তিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কয়েকটি দল যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।
যুক্তফ্রন্ট গঠন : তৎকালীন ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী মুসলিম লীগ সরকারকে প্রতিহত করার জন্য পূর্ববাংলার জনদরদি রাজনৈতিক নেতা এ.কে.এম. ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণযোগ্য ন্যূনতম কর্মসূচি ২১ দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। ঐতিহাসিক ২১ ফেব্রুয়ারিকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করে।
১. লাহোর প্রস্তাব সংশোধন : মূল লাহোর প্রস্তাবে আঞ্চলিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি মুসলিম লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা ১৯৪৬ সালের মুসলিম লীগের এক সম্মেলনে সংশোধন করা হয়। এ ঘোষণার ফলে বাঙালিদের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করায় জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় ।
২. নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা : প্রচলিত সংবিধান অনুযায়ী পূর্ববাংলার প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন ১৯৫১ সালেই অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার সে বছর নির্বাচন হতে দেয় নি। পূর্ববাংলা আইনসভার মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো হয়। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের নির্বাচন নিয়ে এরূপ টালবাহানার কারণে পূর্ববাংলায় তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠে। ফলে ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কয়েকটি দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
৩. বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র : পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর মধ্যে পূর্ববাংলাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ভাষা ছিল বাংলা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অনীহা প্রকাশ করায় পূর্ববাংলার ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তার উপর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ায় পূর্ববাংলার অধিবাসীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে। প্রতিবাদমুখর জনতার উপর পুলিশ গুলি চালালে বরকত, রফিক ও জব্বার প্রমুখ অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ শহীদ হন। এভাবে ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার কারণে মুসলিম লীগ পূর্ববাংলার জনগণ হতে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
৪. পূর্ববাংলার স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা : পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকার পূর্ববাংলার জনগণের কোন আশাই মেটাতে পারে নি। পূর্ববাংলার তৎকালীন সরকারি নেতৃবৃন্দ ছিল স্বার্থলোভী ও মর্যাদালোভী। তাদের আচার-আচরণ ও কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এ দল পূর্ববাংলার জনগণের দাবিদাওয়া পূরণ করতে অক্ষম। ফলে মুসলিম লীগের প্রতি পূর্ববাংলার জনগণ অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে।
৫. লবণ সংকট : পূর্ববাংলায় তীব্র লবণ সংকট দেখা দেয় এবং প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সোনালি আঁশের ক্ষেত্রেও চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এসব কার্যকলাপের দরুন জনগণ মুসলিম লীগ সরকারের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠে।
যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়। এ নির্বাচনে জয়লাভ করে বাঙালিরা গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক নব অধ্যায়ের সূচনা করে। যুক্তফ্রন্টের এ বিজয়ের ফলে মুসলিম লীগের সুদীর্ঘ সাত বছরের কুশাসন, শোষণ ও অত্যাচারের সমাধি রচিত হয়।
আরো ও সাজেশন:-
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ : ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ববাংলার মুসলিম লীগের চরম পরাজয় ঘটে। নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল :
১. মুসলিম লীগের স্বার্থান্বেষী মনোভাব : মুসলিম লীগ পূর্ববাংলার জনগণের স্বার্থের প্রতি চরম উপেক্ষা দেখিয়েছিল। এ দল বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবির বিরোধিতা করায় এর প্রতি বাংলার জনগণ বিক্ষুব্ধ ছিল। মুসলিম লীগ বাঙালিদের বিক্ষোভ উপলব্ধি করেও পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদীদের প্রতি অনুগত থাকে। এর ফলে মুসলিম লীগের পরাজয় অনিবার্য হয়ে উঠে।
২. মুসলিম লীগের আদর্শগত কোন্দল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব : মুসলিম লীগ আদর্শগত কোন্দল ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে পূর্ববাংলায় সাংগঠনিক দিক দিয়ে বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে বিভিন্ন অঞ্চলকে স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল নেতারা লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্বের সংস্থান বিলোপ করেন। এতে এসব নেতার সাথে আবুল হাশেম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী প্রমুখের আদর্শগত বিরোধ দেখা দেয়। মুসলিম লীগের গোঁড়া নেতাদের চক্রান্তে সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী প্রমুখকে মুসলিম লীগ ত্যাগ করতে হয়।
৩. স্বায়ত্তশাসনের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন : পূর্ববাংলার জনগণ নিজেদের, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। কিন্তু মুসলিম লীগ এ দাবির প্রতি উপযুক্তভাবে সাড়া দেয় নি । ৪. বৈষম্যমূলক মনোভাব : মুসলিম লীগ নেতৃত্বে পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্যে পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। পূর্ববাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশে পরিণত হয়।
৫. প্রশাসনিক ব্যর্থতা : প্রাদেশিক নির্বাচনের আগে থেকেই পূর্ববাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় ঘটতে থাকে। খাদ্য সংকট ও বন্যা সমস্যা মারাত্মক আকারে দেখা দেয়। এ সংকটময় অবস্থা রোধে মুসলিম লীগ সরকার ব্যর্থ হয়।
৬. অগণতান্ত্রিক মনোভাব : মুসলিম লীগ সরকার ১৯৫১ সালে অনুষ্ঠেয় পূর্ববাংলার প্রাদেশিক নির্বাচন হতে দেয় নি । বরং প্রাদেশিক আইনসভার মেয়াদ ৩ বছরের জন্য বাড়িয়ে নিয়েছিল। এ গণতন্ত্রবিরোধী কাজের ফলে মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ হয় ।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৭. ২১ ফেব্রুয়ারির বিয়োগান্তক ঘটনা : পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জন মানুষের মুখের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত করে। তাদের এ চক্রান্তের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এ শ্লোগান দিয়ে মিছিল বের করে।
মুসলিম লীগ দলীয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি করে। এতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক প্রমুখ সম্ভাবনাময় তরুণ। এ ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে দেশের জনসাধারণ মুসলিম লীগের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে
৮. নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ ঃ মুসলিম লীগ পূর্ববাংলায় বিভিন্ন গণআন্দোলনকে দেশদ্রোহী বলে অভিহিত করে। এ দলীয় সরকার নির্বাচনে পরাজয় অনিবার্য ভেবে বিরোধী নেতা ও কর্মীদের উপর নির্যাতন করার পথ অবলম্বন করে। এতে জনগণের মনে আরো বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
৯. সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থতা : মুসলিম লীগের নেতৃত্বাধীন গণপরিষদ পাকিস্তানের নতুন সংবিধান রচনায় ব্যর্থ হয় । ফলে দলের জনপ্রিয়তা অনেকাংশে কমে যায়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক মনোভাব, বিরোধী দলীয় নেতা ও কর্মীদের উপর নির্যাতন এবং সর্বোপরি বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ প্রভৃতি কারণে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজয় বরণ করে এবং যুক্তফ্রন্ট জয়ী হয়।
রচনা ,প্রবন্ধ | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক | Paragraph | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র ও Application | উত্তর লিংক | অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক | Composition | উত্তর লিংক |
চিঠি ও Letter | উত্তর লিংক | প্রতিবেদন | উত্তর লিংক | CV | উত্তর লিংক |
ইমেল ও Email | উত্তর লিংক | সারাংশ ও সারমর্ম | উত্তর লিংক | Seen, Unseen | উত্তর লিংক |
Essay | উত্তর লিংক | Completing Story | উত্তর লিংক | Dialog/সংলাপ | উত্তর লিংক |
অনুবাদ | উত্তর লিংক | Short Stories/Poems/খুদেগল্প | উত্তর লিংক | Sentence Writing | উত্তর লিংক |
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করোবিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো বিনিয়োগ ব্যাংকের (Investment Bank) ট্রেডিং ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা মূলত ক্লায়েন্টদের জন্য এবং …
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্যখিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য, খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য খিলাফত ও বর্তমান আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের …
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communicationWhat do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication What is Business Communication? Business communication refers …
- Describe the barriers to effective communication in business organizationWhat are the barriers to effective communication?, Describe the barriers to effective communication in business organization Barriers to Effective Communication …
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophyসমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy সমাজতত্ত্বের সঙ্গে যেমন সমাজদর্শনের …
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন। দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ …
- দর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা করদর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর,দর্শনের প্রকৃতি বা স্বরূপ বা ধরন বা বৈশিষ্ট্যগুলাে আলােচনা কর ঘটনা ও তথ্য সম্পর্কে স্পষ্ট …
- দর্শন বলতে কী বোঝো?, দর্শনের বৈশিষ্ট্য ,দর্শন ও বিজ্ঞানের সাদৃশ্য ,“দর্শনের প্রত্যয়”- পাশ্চাত্য দর্শনদর্শন বলতে কী বোঝো?, দর্শনের বৈশিষ্ট্য ,দর্শন ও বিজ্ঞানের সাদৃশ্য ,“দর্শনের প্রত্যয়”- পাশ্চাত্য দর্শন Philosophy (ফিলোসোফি) শব্দের অর্থ কি? ইংরেজি …