১৯৭১ সালের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের বর্ণনা দাও,১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকার গঠন সম্পর্কে লিখ।

১৯৭১ সালের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের বর্ণনা দাও,১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকার গঠন সম্পর্কে লিখ।


মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ, মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার

মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল এ সরকার গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে।

মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে টীকা লিখ, মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ

ভূমিকা : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক উজ্জ্বল অধ্যায় হলো এ মুজিবনগর সরকার। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশের সরকার মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত।

মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে টীকা লিখ

কখন গঠিত হয় : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১০ এপ্রিল এ সরকার গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে এ সরকার শপথ গ্রহণ করে। বৈদ্যনাথতলার বর্তমান নাম মুজিবনগর। একই সাথে এখানে যে সরকার গঠিত হয় তা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। এ শপথ অনুষ্ঠানে দেশি বিদেশি ১২৭ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সরকারের নেতৃবৃন্দকে শপথ পাঠ করান অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলী।

কত তারিখে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়? সংক্ষেপে আলোচনা কর

মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভা: মুজিবনগর সরকারের মোট ১২টি মন্ত্রাণালয় বা বিভাগ ছিল। নিচে মুজিবনগর সরকারের কাঠামো আলোচনা করা হলো :
১. রাষ্ট্রপতি- শেখ মুজিবুর রহমান
২. উপরাষ্ট্রপতি— সৈয়দ নজরুল ইসলাম
৩. প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ
৪. অর্থমন্ত্রী- এম. মনসুর আলী
৫. স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনবার্সন মন্ত্রী— এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান
৬. পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ
৭. প্রধান সেনাপতি— কর্নেল (অব.) এম. এ. জি. ওসমানী
৮. চিফ অব স্টাফ— কর্নেল (অব.) আব্দুর রব
৯. ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং বিমানবাহিনীর প্রধান – গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার।

মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ

এছাড়া মুজিবনগর সরকারের ১২টি মন্ত্রাণালয় ছিল। এগুলো হলো :
১. প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়,
২. পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,
৪. মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রণালয়,
৬. আঞ্চলিক প্রশাসন,
৩. অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়,
৫. সাধারণ প্রশাসন ও সংস্থাপন বিভাগ,
৭. স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ,
৮. তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়,
৯. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,
১০. ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ,
১১. সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়,
১২. কৃষি ও প্রকৌশল বিভাগ ।
এছাড়া মুজিবনগর সরকার বৈদেশিক কূটনীতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। সেখানে তারা অনেক সফলতা অর্জন করে। ফলে অনেক সহায়তা লাভে সক্ষম হয়।

১৯৭১ সালের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের বর্ণনা দাও

এ মন্ত্রণালয়ের বাইরে আরও কয়েকটি সংস্থা সরাসরি মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীন হয়ে কাজ করত। যেমন-

* পরিকল্পনা কমিশন
* শিল্প ও বাণিজ্য বোর্ড
* নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, যুব ও অভ্যর্থনা শিবির
* ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি
* শরণার্থী কল্যাণ বোর্ড।

মুজিবনগর সরকার কবে শপথ গ্রহণ করে

মুজিবনগর সরকার ছিল জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধের ওপর এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ে বাংলার যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, তার ঠিক ২১৪ বছর পর অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আরেক আম্রকাননে বাংলার সেই অস্তমিত সূর্য আবারও উদিত হয়।

১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকার গঠন সম্পর্কে লিখ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়া মুজিবনগর সরকার প্রায় একটা পূর্ণাঙ্গ সরকারের কাজ নিয়ে গঠিত হয়। যদিও যুদ্ধ চলার কারণে তারা যুদ্ধজয়কেই বেশি প্রাধান্য দেয়। তাদের এ প্রাধান্যের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

Leave a Comment