১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমি আলোচনা কর, মুক্তিযুদ্ধের সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমি আলোচনা কর, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমি

প্রশ্ন সমাধান: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমি আলোচনা কর

ভূমিকা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ। সুদীর্ঘ নয় মাসের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ফলে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিজয় সূর্য উদিত হয় একই সালের ১৬ই ডিসেম্বরে। এর বিনিময়ে বাংলাদেশকে হারাতে হয়েছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র যুবক, শিক্ষক, সাংবাদিক প্রভৃতি। এ স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ডিসেম্বরে মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে যেমন করুণ, শোকাবহ ও লোমহর্ষক তেমনি অপরদিকে তা ত্যাগ মহিমা ও বীরবত্বপূর্ণ।


স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি : পাকিস্তান সৃষ্টির পর হতেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগণ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর বিমাতাসুলভ আচরণ করে থাকে। তারা প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাতৃভাষা বাংলাকে পদদলিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।

পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমষ্টি হওয়া সত্ত্বেও তারা বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোঘণা দেয়। তাদের এ নির্বিচারবাদের প্রতিবাদস্বরূপ শুরু হয় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রখ্যাত রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান তাঁর “The Bangladesh Revolution and its Fistermath” নামক মূল্যবান গ্রন্থে লিখেছেন, “The extra ordinary process of our birth affected almost all aspects of political development in Bangladesh during the first years of her existence as a nation state.”


বস্তুত তালুকদার মনিরুজ্জামানের সুরে সুর মিলিয়ে আমরা বলতে পারি যে, প্রতিটি আন্দোলন তথা সংগ্রামের ফল দু’ভাবে কোন দেশ ও জাতিকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এদেশের রাজনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশের সমাজকাঠামোতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি : স্বাধীনতার পূর্বে সমাজকাঠামো ছিল আধা সামন্ততান্ত্রিক, আধা পুঁজিবাদী। স্বাধীনতার পর পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন হয়। সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থা অবলুপ্ত হয়। মার্ক্সীয় ভাষায় সমাজের মৌল কাঠামো ও উপরিকাঠামো উভয়েরই পরিবর্তন হয়েছে।


আরো ও সাজেশন:-

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ : গতিশীলতার মাত্রা শহরাঞ্চলে অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে গ্রাম সমাজেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। শহরের শিল্পায়ন ও সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে গ্রামাঞ্চলে। নিম্নে বাংলাদেশের সমাজকাঠামোতে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তা আলোকপাত করা হল :


১. স্বাধীনতা অর্জন এবং পাকিস্তানি শোষণ ও শাসনের অবদান : বাংলাদেশের বিপ্লব বাংলাদেশবাসীকে করছে স্বাধীন। বিদায় দিয়েছে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ ও অত্যাচারের কালো হাতকে। ফলে এদেশের জনগণ পেয়েছে নিজস্ব এখতিয়ার; যা পূর্বে ছিল না। |


২. নতুনভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন : বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাংলাদেশবাসীকে স্বাধীনভাবে নতুন করে নতুন নতুন দেশের সাথে স্বীয় বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন এবং জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করেছে। এ ফলে কেবলমাত্র বাংলাদেশই উপকৃত হয়নি বরং বিশ্বের অপরাপর জাতি বাংলাদেশের সাহায্য, পরিকল্পনা, প্রস্তাব, সমর্থন ইত্যাদির সুযোগ পাচ্ছে। এটা পাকিস্তান শাসনামলে সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ অনেক সম্মেলনে এমন অনেক মূল্যবান প্রস্তাব পেশ করেছে যা বিশ্বকে করেছে বিস্মিত। বাংলাদেশকে করেছে নন্দিত। বাংলাদেশ বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করছে।


৩. রাজনৈতিক পরিবর্তন : স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়। যেমন- বাংলাদেশের রাজনৈতিক সৃষ্টির উন্মেষ।
খ. বামপন্থী রাজনীতির অবাধ অনুশীলন ধারা।
গ. ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ।
ঘ. নেতৃত্ব।


৪. শহরমুখী মনোভাব : স্বাধীনতার পর আধুনিক উচ্চ শিক্ষা, চাকরি, কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য, আশ্রয় ইত্যাদির প্রয়োজন। মুক্ত মানুষ গ্রাম ছেড়ে দ্রুত শহরমুখী হচ্ছে। কেউ বা কাজ-কর্মের প্রয়োজনে স্থায়ীভাবেই শহরে বসবাস করতে আরম্ভ করেছে। এতে শহরে একদিকে উন্নত সংস্কৃত সৃষ্টি হচ্ছে অপরদিকে দিন দিন শহরের চেহারাও পাল্টে যাচ্ছে। ফলে উন্নত শহুরে সমাজ গড়ে উঠেছে। শহরে দিন দিন উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।


৫. শিল্প কারখানার প্রসার : স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে বাংলাদেশ শিল্পে অনুন্নত ছিল। শিল্পের কাঁচামালের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বৈরী ভাবাপন্নতার কারণে এদেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান তেমন একটা গড়ে উঠেনি। শিল্পের অগ্রগতি হওয়ায় সামাজিক জীবনে ব্যাপক উন্নয়ন সংগঠিত হয় ।


৬. প্রশাসনিক কেন্দ্র : স্বাধীনতার পর শিল্পোন্নত সমাজে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- অবাধ যৌনাচার, বস্তি সমস্যা, কিশোর অপরাধ প্রভৃতি। এসব সমস্যায় শহরের সমাজ ক্রমেই জর্জরিত হতে থাকে। তাই এ সকল সমস্যা নিরোধকল্পে শহরে বিভিন্ন প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপিত হয়।


৭. পারিবারিক কাঠামো : স্বাধীনতার পর জনগণের মধ্যে অধিক সচেতনতা এসেছে। তাই মানুষের মনে বড় পরিবারের পরিবর্তে ছোট পরিবার গড়ার মানসিকতা এসেছে। বিশেষ করে শহরে আবাসিক সমস্যা প্রকট হওয়ায় এখানে পরিবারের সকলকে নিয়ে বসবাস করা সম্ভব হয় না। তাই শহরে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার প্রাধান্য পায়।

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


৮. কৃষি ব্যবস্থা : স্বাধীনতার পর যান্ত্রিক সভ্যতা গ্রাম বাংলাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। ফলে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সেচ ব্যবস্থায় বিদ্যুতের ব্যবহার, উন্নত যন্ত্রপাতি, যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করে। তাছাড়া সার, কীটনাশক ও সেচ ব্যবস্থার প্রসার হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায় ৷


৯. ব্যবসায় বাণিজ্য : স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে গ্রামীণ সমাজে নেতৃত্বের পরিবর্তনের ফলে মানুষ শহরমুখী হতে থাকে। তারা গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য শহরে রপ্তানি করতে থাকে এবং শহরের শিল্পপণ্য গ্রামে আমদানি করতে থাকে। ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যবসায় বাণিজ্যে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় বিদেশের সাথে আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।


১০. শিক্ষা ও সংস্কৃতি : স্বাধীনতার পর গ্রামীণ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন গঠিত হয়। এতে জনগণ শিক্ষার প্রতি সচেতন হয়ে উঠে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অধিকাংশ গ্রাম এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষার হার পাকিস্তান আমলে ছিল ১২%, কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার ৩৭% ।


১১. আমলাতান্ত্রিক ধারার প্রভাব : স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমলারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমলাদের মধ্যেও দু’টি স্রোত বিদ্যমান ছিল। একটি ব্রিটিশ ফেরৎ আমলা এবং অপরটি পাকিস্তান ফেরৎ আমলা। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এ দু’য়ের স্বাতন্ত্র্যবোধ মাথাচাড়া দিয়ে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অনেক বিভক্তি ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে।


উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সমাজ জীবনে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রভাব অপরিসীম। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তীতে এদেশের শহর ও গ্রামের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তাছাড়া মহিলাদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য গ্রাম্য স্কুল দশম শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। এভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রভাব আমাদের সমাজকাঠামোকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।


রচনা ,প্রবন্ধউত্তর লিংক ভাবসম্প্রসারণউত্তর লিংক Paragraphউত্তর লিংক
আবেদন পত্র ও Applicationউত্তর লিংক অনুচ্ছেদ রচনাউত্তর লিংক Compositionউত্তর লিংক
চিঠি Letterউত্তর লিংক প্রতিবেদনউত্তর লিংক CVউত্তর লিংক
ইমেলEmailউত্তর লিংক সারাংশ ও সারমর্মউত্তর লিংক Seen, Unseenউত্তর লিংক
Essayউত্তর লিংকCompleting Storyউত্তর লিংকDialog/সংলাপউত্তর লিংক
অনুবাদউত্তর লিংকShort Stories/Poems/খুদেগল্পউত্তর লিংকSentence Writingউত্তর লিংক

আপনার জন্য আমাদের ক্যাটাগরি


প্রশ্ন সমাধান
সাজেশন
চাকরি
ধর্ম
মতামত
শিক্ষা
শিক্ষা সংবাদ
নিয়োগ পরীক্ষা
জানা অজানা
Writing Side
অনার্স ও মাস্টার্স
এইচ এস সি
এসএসসি
ডিগ্রি ও উন্মুক্ত
স্বাস্থ্য
উদ্ভিদ ও প্রাণী
ঔষধি গুন
গোপন সমস্যা
রূপচর্চা
রেসিপি
রোগ প্রতিরোধ

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment