৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের অষ্টম অধ্যায় দোতারার উল্লেখ আছে

দোতারা এক ধরনের লোকবাদ্যযন্ত্র। বাংলাদেশে ও পশ্চিম বাংলায় এর বেশি ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। ১৫ ও ১৬ শতকের সময় থেকেই বাংলার বাউল ফকিররা তাঁদের গানের সঙ্গে এই বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে আসছেন। উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া গানে প্রধানত দোতারা বাজানো হয়।

দোতারার কোরডং কোরডং ধ্বনির সঙ্গে ভাওয়াইয়ার ভাঁজযুক্ত দীর্ঘ টানা কণ্ঠধ্বনির নিগূঢ় সম্পর্কের কারণে ওই গানকে ‘দোতারার গান’ নামেও অভিহিত করা হয়। তবে নামে দোতারা হলেও যন্ত্রটিতে তারের সংখ্যা সব সময় দুটিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। আসলে দুটি তারের সাহায্যেই এতে এক সপ্তকের সব সুর বাজানো যায় বলে একে দোতারা বলা হয়। কোনো কোনো দোতারায় তারের সংখ্যা চার থেকে ছয়টিও হয়ে থাকে।

তারগুলো পিতল বা রেশমের পাকানো সুতা দিয়ে তৈরি। মাঝারি আকারের ঢেউয়ের মতো কাঠের ফ্রেমে চামড়া ও তার বেঁধে দোতারা তৈরি করা হয়। তারগুলোকে ফ্রেমের নিচ থেকে উঠিয়ে মাথায় কানের সঙ্গে পেঁচিয়ে বাঁধা হয়, যাতে কান ঘুরিয়ে সেগুলোর ধ্বনি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

দোতারার মাথায় কাঠ কেটে ময়ূরের নকশা করা হয়। এর ‘কটি’ তৈরি করা হয় গরু-মহিষের শিং, হাড় বা কাঠের টুকরা দিয়ে। রংপুর অঞ্চলে একে বলা হয় ‘চুটকি’ বা ‘খুটনি’। আনুমানিক দেড়-দুই হাত লম্বা হয় দোতারা। এ বাদ্যযন্ত্রটি বসা অবস্থায় পায়ের ওপর রেখে এবং দাঁড়ানো অবস্থায় গলার সঙ্গে ঝুলিয়ে বাঁ হাতে আড়াআড়িভাবে ধরে ডান হাতে কটির ঘর্ষণ দিয়ে বাজানো হয়।

দোতারার তারগুলো ধ্বনির বিচারে চার ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো জিল তার, সুর তার, বম তার ও গম তার। ভাওয়াইয়া গান ছাড়াও  মুর্শিদি, মারফতি, জারি ও কবি গানে অন্যান্য যন্ত্রের সঙ্গে দোতারাও বাজানো হয়। মধ্যযুগের ‘পদ্মাপুরাণ’, ‘ধ্যানমালা’ ইত্যাদি গ্রন্থে দোতারার উল্লেখ আছে।     

J.S.C

1 thought on “৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের অষ্টম অধ্যায় দোতারার উল্লেখ আছে”

Leave a Comment