৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে বীণার উল্লেখ আছে

বীণা তারযুক্ত বাদ্যযন্ত্রবিশেষ। সব ততযন্ত্রই বীণা পর্যায়ভুক্ত, অর্থাৎ তত আর বীণা সমার্থক। এটি একটি পুরনো ও প্রিয় বাদ্যযন্ত্র। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে বীণা নামে একাধিক বাদ্যযন্ত্র রয়েছে। নির্মাণশৈলী ও ধ্বনি প্রকৃতির বিচারে এদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। সটান তারে আঘাত করলে যে টঙ্কার তৈরি হয়, তা থেকে প্রথম তৈরি হয়েছিল একতন্ত্রী বীণা। কালক্রমে তারের সংখ্যা ও কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নানা ধরনের বীণার উদ্ভব ঘটে। বৃহদারণ্যক উপনিষদে বীণা বাদ্যযন্ত্রটির নাম পাওয়া যায়। বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থে নানা ধরনের বীণারও উল্লেখ আছে। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী পার্বতী কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে শিব রুদ্রবীণা সৃষ্টি করেন। রুদ্র শিবের অপর নাম; রুদ্রবীণা বলতে ‘রুদ্রের বীণা’ বা ‘শিবের বীণা’ বোঝায়। এটি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের বীণা বাদ্যযন্ত্রের একটি প্রকরণ।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী মা সরস্বতীর হাতে এক ধরনের বীণা শোভা পায়। সরস্বতীর বাদিত বীণার নাম কচ্ছপী। এই বীণা দেখতে সপ্ততন্ত্রী বীণার অনুরূপ।

বীণায় চামড়া ও লোহা উভয় প্রকারের তন্ত্রী ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে বীণা শ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃত। কারণ এতে এমন কতগুলো সুর ও গমকের কাজ দেখানো যায়, যা অন্য কোনো যন্ত্রে সম্ভব নয়। বীণার সুর মধুর, তবে ক্ষণস্থায়ী এবং বেশি দূর পর্যন্ত শোনা যায় না।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার বীণার প্রচলন ছিল। সেগুলোর গঠন ও সুরেও ছিল বৈচিত্র্য। সেসব বীণার মধ্যে একতন্ত্রী, কচ্ছপী, কণ্ডোল, কলাবতী, চিত্র, বিচিত্র, বৃহতী, মহতী, মোহন, রুদ্র, লক্ষ্মী, সরস্বতী, হংস, সপ্ততন্ত্রী, সারঙ্গ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই বীণাগুলোর বেশির ভাগই এখন বিলুপ্ত। কোনো কোনোটি আবার নতুন নামে প্রচলিত আছে। মহতী বীণা এ শ্রেণির যন্ত্রের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য। এরই প্রচলিত নাম বীণা।

মীড়-গমক-মূর্ছনার অনুরণনে সুর-লহরির আবেশময় রূপ শুধু বীণাযন্ত্রেই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। বীণা আদি ও মৌলিক যন্ত্র। পরবর্তীকালের রবাব, সেতার, সুরবাহার, সুরশৃঙ্গার প্রভৃতি ততযন্ত্র বীণা থেকেই উদ্ভূত।

Leave a Comment