৮ম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ের ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে টোপরের উল্লেখ আছে

টোপর শোলা দিয়ে নির্মিত বাঙালি হিন্দুদের ব্যবহৃত এক ধরনের ধর্মীয় মস্তকাবরণী। সাধারণত হিন্দু বিয়েতে বর টোপর পরে। বিবাহ অনুষ্ঠানে টোপর শুধু তার সৌন্দর্যের কারণেই পরা হয় না,

বিশেষ ধর্মীয় তাৎপর্যও রয়েছে। সেই আদিকাল থেকে বিশ্বাস করা হয়, এই টোপর অধিকতর দায়িত্বকে নির্দেশ করে। নতুন মুকুট পরিয়ে অভিষেকের মাধ্যমে রাজার হাতে যেমন দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়, তেমনি বরকে টোপর পরিয়ে নতুন জীবনের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হয়।

বিশেষ দিনটিতে পরা টোপর যেন হালকা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। ধারণা করা হয়, দীর্ঘক্ষণ মাথায় থাকে বলে টোপর শোলার মতো হালকা জিনিস দিয়ে বানানো হয়।

টোপরের রং সাদা। বিশ্বাস করা হয়, সাদা শুভ্রতা ও সাহসের প্রতীক। সংসার সফরে বাধাবিঘ্ন ও সমস্যায় ভয় না পেয়ে দম্পতি যেন সাহসের সঙ্গে তা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারে, তারই প্রতীক সাদা টোপর। পাশাপাশি তাদের জীবন যেন মসৃণ, সুন্দর ও মধুময় হয়ে ওঠে সে জন্যও সাদা টোপরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

টোপরের উৎপত্তি সম্পর্কে হিন্দু দেবতা শিবের বিবাহসংক্রান্ত একটি উপাখ্যান প্রচলিত আছে। সেই উপখ্যানে বর্ণিত আছে যে, শিব তাঁর নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ মুকুট পরার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মাকে তা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেন; কিন্তু বিশ্বকর্মা ছিলেন ধাতুশিল্পী।

তিনি শিবের চাহিদামতো মুকুট নির্মাণে ব্যর্থ হন। তখন মালাকার নামে এক ব্যক্তি জলা অঞ্চল থেকে শোলা সংগ্রহ করে শিবের জন্য এক বিশেষ মস্তকাবরণী প্রস্তুত করেন। এই মস্তকাবরণীই বর্তমানে টোপর নামে পরিচিত।

বিয়ে উপলক্ষে হিন্দুদের টোপর পরা একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রথা। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, টোপর সৌভাগ্য এনে দেয়। সাধারণত কনের বাড়ি থেকে টোপর পাঠানো হয় বরের বাড়িতে।

বিয়ে অনুষ্ঠানের আগে বর টোপর মাথায় দিয়ে ছাদনাতলায় উপস্থিত হয়। বিয়ে ছাড়াও অন্নপ্রাশনে (শিশুদের প্রথম মুখে অন্নগ্রহণের অনুষ্ঠান) টোপরের প্রচলন রয়েছে।

টোপর নিয়ে হিন্দু সমাজে নানা সংস্কারও রয়েছে। টোপর খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। টোপর ভেঙে বা পুড়ে যাওয়াকে দুর্ভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।

শিক্ষা

2 thoughts on “৮ম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ের ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে টোপরের উল্লেখ আছে”

Leave a Comment