৮ম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ের ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মালাকারের উল্লেখ আছে

শোলা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফুল, মালা, সাজসজ্জা, খেলনা, পুতুল, পশুপাখি, নৌকা ইত্যাদি তৈরি করা যে পেশাজীবী মানুষের কাজ তাদের মালাকার বলে। মালা শব্দ থেকে মালাকার শব্দের উৎপত্তি।

এটি বাঙালি হিন্দুদের একটি উপাধিবিশেষ বা সম্প্রদায়। মালাকার সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ লোক শিবকে পূজা করে।

বাংলাদেশের মাগুরা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় মালাকার সম্প্রদায়ের গুচ্ছ গুচ্ছ বাস রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শোলার মধ্যে মালাকাররা মূলত ফুলশোলা দিয়ে কাজ করে।

একে ভাতশোলাও বলা হয়। এই পেশাজীবী সম্প্রদায়ের নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে শোলার কাজ করে। শোলার জিনিস তৈরিতে শোলার পাশাপাশি সুতা, বিভিন্ন রং, বাঁশ প্রভৃতি উপকরণেরও প্রয়োজন হয়।

শোলা সংগ্রহ বা শোলা দিয়ে কাজ আরম্ভ করার বা কাজের মধ্যে বিশেষ কোনো ধর্মীয় রীতি বা আচার নেই। সারা বছরই কমবেশি কাজ করে তারা। তবে বিশ্বকর্মা পূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মীপূজার দিন নিজেরাই কাজ বন্ধ রাখে। এক মৌসুমের সংগ্রহ দিয়েই সারা বছর কাজ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের ফুল যেমন—কদম, গাঁদা, রজনীগন্ধা, সূর্যমুখী, বেলিফুল; বিয়ের মুকুট, খেলনা, পাখা, পাখি, মুখোশ, বিয়ের গেটের সাজসজ্জা, বাড়ি সাজানো, বাসর সাজানোর নানা উপকরণ, সাহেবি টুপি, পুতুল, ঘোড়া, হাতি, কলাগাছ, হিন্দুদের বিয়ের টোপর, ঘটের ফুল, ফুলের ঝাড়, মেয়েদের কপালের টিকলি, নাকের ফুল, গলার মালা, কানের দুলসহ বিভিন্ন আভরণ তৈরি হয় ভাত বা ফুল শোলা দিয়ে।

এ ছাড়া পূজার মণ্ডপ, পূজার সাজসজ্জা, প্রতিমার অলংকার, পূজায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ফুল, এমনকি প্রতিমা তৈরিতেও শোলা ব্যবহৃত হয়। হিন্দুদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও যার যার প্রয়োজন মতো সাজসজ্জা এবং খেলনার জন্য শোলার জিনিস ব্যবহার করে।

মালাকারদের তৈরি শোলার জিনিস বিক্রির সবচেয়ে বড় জায়গা বিভিন্ন ধরনের মেলা। এলাকার মেলার মধ্যে রয়েছে—রথের মেলা, পৌষমেলা, দুর্গাপূজার মেলা, লক্ষ্মীপূজার মেলা, ঈদের মেলা ইত্যাদি। এ ছাড়া বিসিকের মেলা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর মাসব্যাপী লোকশিল্প মেলা, শিল্পকলা একাডেমির মেলা, জাদুঘরের আয়োজনে মেলা, বাংলা একাডেমির মেলা—সব মেলায়ই অংশ নেওয়ার চেষ্টা করে তারা।

মালাকারদের এই শিল্পের মধ্যে একদিকে প্রকাশিত হয় রুচি, সংস্কৃতি আর জীবনবোধ; অন্যদিকে রয়েছে ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্পের শ্রী দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

J.S.C

1 thought on “৮ম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ের ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মালাকারের উল্লেখ আছে”

Leave a Comment