করোনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বেড়েছে অনলাইন-নির্ভরতা। গুগলে সার্চ দিয়ে শিক্ষক তৈরি করছেন প্রশ্ন। একইভাবে বিভিন্ন পরীক্ষায় গুগলকে সোনার কাঠির মতোই ব্যবহার করছে শিক্ষার্থীরাও।
মুহূর্তেই গুগল থেকে উত্তর ডাউনলোড করে পরীক্ষার উত্তরপত্রে সেটি অনায়াসে সাবমিটও করছে তারা। গুগলের এই সুবিধা নিয়ে পাঠ্যবইয়ের কাছেও ঘেঁষছে না অনেক শিক্ষার্থী। অথচ পরীক্ষায় তারা পেয়ে যাচ্ছে পূর্ণ নম্বর। আর এতে প্রকৃত মেধাবীদের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে পড়াশোনার প্রতি অনীহা।
ভালো পড়াশোনা করে প্রস্তুতির পরেও মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের কাক্সিক্ষত মূল্যায়ন পাচ্ছে না। আর এসব বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসির) সাথে কথা বললে তারাও জানিয়েছেন নানা অভিজ্ঞতার কথা।
দেশে গত ১৭ মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রকট হলে একযোগে ছুটি ঘোষণা করা হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা। কিন্তু অনলাইনে নানা সুবিধার পাশাপাশি নতুন এক অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতাও এখন প্রত্যক্ষ করছে সবাই।
শ্রেণিভিত্তিক সিলেবাসভুক্ত নির্দিষ্ট কিছু লেসনের ওপর পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র তৈরিতে অনেক শিক্ষক যেমন গুগলে সার্চ দিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করছেন, তেমনি শিক্ষার্থীরাও একই পদ্ধতিতে গুগল থেকেই উত্তর বের করে সেটি হুবহু কপি পেস্ট করে সাবমিট কিংবা রিসেন্ডও করছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকে গ্রামে কিংবা শহরের বাইরে অবস্থান করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণেও পাঠ্যবইয়ের সাথে তাদের দূরত্ব বেড়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের চাপ থাকায় তারা মাস শেষে মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি না থাকায় তারা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সহায়তা নিচ্ছে গুগলের। আর উত্তরও পেয়ে যাচ্ছে তারা সম্পুর্ণ প্রস্তুত অবস্থায়। আর এই উত্তরই তারা ব্যবহার করছে তাদের পরীক্ষার উত্তরপত্রে। পাঠ্যবই কিংবা ক্লাসের নোট ঘেঁটে উত্তর তৈরি করার কষ্ট বা চাপ না নিয়ে তারা সহজেই সার্চ করছে গুগলে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ‘ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং’ বিভাগের শিক্ষার্থী আমেনা জান্নাত নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদকের কাছে তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, অনলাইনে পরীক্ষায় কিছু শিক্ষার্থী তাদের পাঠ প্রস্তুতির দুর্বলতাকে লুকোচুরির মাধ্যমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আর এর প্রধানতম মাধ্যম হলো গুগল থেকে প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে সেটিই হুবহু কপি পেস্ট করা। আর আমরা যারা সারা বছর পড়াশোনা করে পরীক্ষার ভালো একটি প্রস্তুতি গ্রহণ করি তারা এই গুলবাবুদের কাছে পরাস্ত হই। কেননা আগের পরীক্ষাগুলোতে যারা পয়েন্টের হিসেবে চার এর মধ্যে দুই কিংবা আড়াইয়ের ঘরে সীমাবন্ধ থাকতো এখন ওই শিক্ষার্থীরাও সাড়ে তিন বা চার এর ঘরে পয়েন্ট পাচ্ছে। আর এতে আমরা যারা অন্য সময়ে ভালো ফলাফল করতাম আমাদেরও এখন তাদের সমকাতারেই অবস্থান করতে হচ্ছে। এটা মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মনোকষ্টেরও কারণ বলেও জানান এই শিক্ষার্থী।
গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের প্রভাষক ডা: ফরিদুল আলম নয়া দিগন্তকে জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্লাসে যারা বরাবরই খারাপ করত এখন অনলাইনের সুবাদে তারাও দেখছি অনেক ভালো ফলাফল করছে। যদিও বিষয়টিকে আমরা শিক্ষকরা ইতিবাচকভাবে দেখছি না। কেননা করোনার এই সময়ে তারা রাতারাতি এতটা ভালো ফলাফল করার পর্যায়ে চলে আসার কথা নয়। তবে আগে থেকে যারা ভালো রেজাল্ট করত তারাতো নিঃসন্দেহে ভালো করবেই। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী অনলাইনের সুযোগে কিছুটা কৌশলের (অপকৌশল) ব্যবহার করছে বৈকি! আর এতে সঙ্গত কারণেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না।
বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য আলমগীর হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন কখনোই হবে না। এটা আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি। তারপরও ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনলাইন মাধ্যমের অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে আমাদেরও কিছু বিধিনিষেধও ছিল। আমরা বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে বলেছিলাম তারা যেন অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ইউজিসিকে প্রস্তাব আকারে দেয়। কিন্তু সেই প্রস্তাব তারা এখনো দেয়নি। অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার অনুমতিও তারা ইউজিসি থেকে কেউই নেয়নি। যারা অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে তারা এই কাজটি সঠিক করছেন না। তিনি আরো জানান, তারা (পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়) কোনো কিছু না জানিয়েই অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে।
- শেয়ার বিক্রয় প্রাথমিক কার্যাবলী আলোচনা কর, শেয়ার বিক্রয়ের পদ্ধতি আলোচনা কর
- পাবলিক ইস্যুর বিধানাবলি আলোচনা কর
- কন্টেন্ট মার্কেটিং করে ইনকাম করুন,কন্টেন্ট মার্কেটিং করে কিভাবে আয় করা যায়?
- গর্ভাবস্থায় ভুল ধারণা
- সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩ সম্পর্কে আলোচনা কর