ভাব সম্প্রসারণ ‘চন্দ্র কহে বিশ্বে আলো দিয়েছি ছড়ায়ে কলঙ্ক যা আছে তাহা আছে মোর গায়ে।’

‘চন্দ্র কহে বিশ্বে আলো দিয়েছি ছড়ায়ে
কলঙ্ক যা আছে তাহা আছে মোর গায়ে।’

উত্তর: মূল ভাবঃ
মহৎ যাঁরা, পরহিতব্রতী যাঁরা, তাঁরা নিজেকে বিলিয়ে দেন জগৎ ও জগৎবাসীর কল্যাণে। তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ, যন্ত্রণা, নিন্দা ও কালিমা যদি কিছু থাকে তবে তা তাঁরা একাকী বহন করেন, সর্বদা সচেষ্ট থাকেন সেই বিষ যেন অন্যকে স্পর্শ না করে। সমস্ত বিষজ্বালা সয়ে তাঁরা বিশ্বমানবকে দান করেন হিরন্ময় আলো। সে আলোতে মানুষের জীবন হয় আলোকিত।

সম্প্রসারিত ভাবঃ
আকাশের চাঁদ যেমন তার কলঙ্ককে যথাসম্ভব ঢেকে রেখে স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার শুভ্রতা চড়িয়ে ঘুচিয়ে দেয় পৃথিবীর মালিন্যের অন্ধকার, মহামনীষীদের জীবনও তেমনি। তাঁরা ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো অপরিসীম দুঃখ-ক্লেশ ভোগ করেন, অসম্মান ও লাঞ্ছনা সহ্য করেন, স্থলন ও ত্রুটিতে জড়িয়ে যান। কিন্তু তার বিন্দুমাত্রও তাঁরা অন্যকে স্পর্শ করতে দেন না। তাঁরা অপরিসীম গুণাবলি দিয়ে সেসব দুঃখ-ক্লেশ আড়াল করেন। অপরিসীম মমতা ও আন্তরিকতা দিয়ে অন্যের দুঃখ মোচনে ব্রতী হন, দুঃস্থ মানবতার জন্যে নিজের স্বস্তি বিলিয়ে দেন, অন্যের বিপদে জীবনের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করেন না, জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করেন, মহৎ সাধনায় অনুপ্রাণিত করেন বিশ্বজনকে। হৃদয়ের বিশালতা দিয়ে এঁরা জয় করেন সকল সংকীর্ণতা, ক্ষুদ্রতা ও মালিন্যকে।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে হজরত মুহম্মদ (স.), শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধদেব, যিশু খ্রিস্ট, চৈতন্যদেব প্রমুখ ধর্মবেত্তাদের ভূমিকা এমনি। কেবল এই সব মহামনীষীই নন, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, রাষ্ট্রনায়করাও বিশ্বজনের অন্তরকে আলোময় করে মানব সভ্যতার নিত্য নব উত্তরণে মহৎ অবদান রেখে আসছেন। এঁদের অনেকে জীবনে অপরিসীম দুঃখ দহনে জর্জরিত হয়েছেন। কিন্তু দুঃখজয়ী চেতনা দিয়ে তাঁরা শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞানের নব নব সৃষ্টির সাহায্যে মানুষের জীবনে ছড়িয়েছেন আনন্দ ও আলো। তাঁদের অবদানেই পৃথিবী এগিয়ে চলেছে আলোর পথে।

শিক্ষা

Leave a Comment