বৈদেশিক বাণিজ্যের রপ্তানির পদ্ধতি গুলো লিখবে

ভূমিকা : একটি দেশের পক্ষে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সকল প্রকার পণ্যদ্রব্য উৎপাদন সম্ভব নয়। কারণ ভৌগােলিক অবস্থান, জলবায়ু, খনিজ সম্পদ, জনসম্পদ, প্রযুক্তিগত ব্যবধান ইত্যাদি কারণে প্রতিটি দেশ এককভাবে সকল দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না। ফলে প্রত্যেক দেশেই পণ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। নিজের দেশে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্মাদি উদ্বৃত্ত অংশ অন্যকোনাে দেশে বিক্রি ও প্রেরণ করাই হলাে রপ্তানি বাণিজ্য।

বাংলাদেশ হতে বিদেশে পণ্য রপ্তানি পদ্ধতি : পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা সকল দেশকেই অনুসরণ করে রপ্তানি কার্যক্রম চালাতে হয়। বাংলাদেশ হতেও বিদেশে পণ্যদ্রব্য রপ্তানি করতে হলে বিশেষ কতকগুলাে নিয়ম ও পদ্ধতি বা প্রণালি যথারীতি পালন করতে হয়।

নিচে রপ্তানি পদ্ধতিগুলাে আলােচনা করা হলোঃ
১. ফরমায়েশ প্রাপ্তি : আমদানিকারক দেশের আমদানিকারকের ফরমায়েশ প্রদানের মাধ্যমেই রপ্তানি প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। অর্থাৎ | রপ্তানিকারক আমদানিকারকের নিকট হতে পণ্যক্রয়ের ফরমায়েশপত্র পেয়ে থাকে। ফরমায়েশপত্র দু প্রকার। যথাক.

ক. ফরমায়েশপত্র : এ ফরমায়েশপত্রে পণ্যের যাবতীয় তথ্য উল্লেখ থাকে না। এতে কেবল পণ্যের নাম, বিবরণ ইত্যাদি লেখা হয়।

খ, নির্দিষ্ট ফরমায়েশপত্র : এ ধরনের ফরমায়েশপত্রে আমদানিকারক পণ্যের দাম, মান, গুণ, শ্রেণী, মূল্য, প্রেরণের সময় ও তারিখ, প্যাকিং, জাহাজি ও বীমা নির্দেশ, মূল্য পরিশােধ পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ লেখা থাকে।

২. ফরমায়েশ গ্রহণ বা স্বীকৃতি : রপ্তানিকারক যদি পণ্য প্রেরণের ফরমায়েশ গ্রহণ করে তবে তা লিখিতভাবে আমদানিকারককে কে জানিয়ে দেবে। একে ফরমায়েশের স্বীকৃতিও বলে ।

৩. প্রত্যয়পত্র খােলার নির্দেশ : ফরমায়েশ গ্রহণের পর রপ্তানিকারক তার পণ্যের মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা হিসেবে ব্যাংকের নিকট হতে প্রত্যয়পত্র সংগ্রহ করে প্রেরণের জন্য আমদানিকারককে নির্দেশ দেবে। তখন আমদানিকারক তার ব্যাংকের নিকট হতে রপ্তানিকারকের অনুকূলে প্রত্যয়পত্র সংগ্রহ করে প্রেরণ করবে। প্রত্যয়পত্রের শর্ত অনুযায়ী আমদানিকারক পণ্যের মূল্য পরিশােধ না করলে ব্যাংক রপ্তানিকারকের মূল্য পরিশােধ করতে বাধ্য থাকে।

৪. মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ চুক্তি : এ পর্যায়ে রপ্তানিকারী ভবিষ্যৎ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ওঠানামার ক্ষতি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যাংকের সাথে অগ্রিম মুদ্রার বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করে চুক্তি সম্পাদন করে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে সে নির্ধারিত হারে আমদানিকারকের নিকট প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা দেশীয় মুদ্রায় রূপান্তর করতে সক্ষম হয়।

৫. সরকারি অনুমতিপত্র সংগ্রহ : রপ্তানিকারককে পণ্য রপ্তানির জন্য প্রয়ােজনীয় সরকারি অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয় যাকে রপ্তানি লাইসেন্স বলে।

৬. পণ্যদ্রব্য সংগ্রহ : সরকারি অনুমতিপত্র এবং প্রত্যয়পত্র পাওয়ার পর রপ্তানিকারক নিজে উৎপাদক না হলে অন্যান্য উৎস হতে প্রয়ােজনীয় পণ্যদ্রব্য সংগ্রহ করে এবং উক্ত পণ্যগুলাে যথাযথভাবে মােড়কীকরণের ব্যবস্থা করে। পণ্যগুলাে নিজের নিকটে অথবা ডক কর্তৃপক্ষের গুদামেও রাখতে পারে।

৭.জাহাজে স্থান বুককরণ : একই সময় রপ্তানিকারক পণ্য প্রেরণের জন্য জাহাজ কোম্পানি বা তার প্রতিনিধির সাথে জাহাজে স্থান বুক করে চুক্তি সম্পাদন করবে, যাকে জাহাজ ভাড়া চুক্তি Charter Party বলে।

৮, পণ্যের বীমাকরণ : রপ্তানিকারকের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলাে পণ্যদ্রব্যের নিরাপদ গন্তব্যস্থানে পৌছানাের নিশ্চয়তা হিসেবে নৌৰীমা কোম্পানির সাথে জাহাজে প্রেরিত মালের যথােপযুক্ত বীমা চুক্তি সম্পাদন করা।

৯. শুদ্ধ বিভাগীয় অনুমতিপত্র সংগ্রহ : জাহাজে পণ্য তােলার আগে রপ্তানিকারীকে রপ্তানি পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ, সরকারি অনুমতিপত্র ইত্যাদিসহ শুল্ক কর্তৃপক্ষের নিকট একটি রপ্তানি ঘােষণাপত্র নির্দিষ্ট ফীসহ দাখিল করতে হয়। এগুলাে পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে শুল্ক কর্তৃপক্ষ রপ্তানি আদেশপত্র ইস্যু করে এবং চালানের ওপর শুল্কের পরিমাণ লিখে দেয়। এরপর জাহাজঘাটের
মাসুল প্রদান করে পণ্য জাহাজে উঠানাের ব্যবস্থা করতে হয়।

১০. জাহাজে মাল বােঝাইকরণ : শুল্ক বিভাগীয় অনুমতিপত্র ও জাহাজঘাটা রসিদ পাওয়ার পর রপ্তানিকারক জাহাজে পণ্য বােঝাইয়ের ব্যবস্থা করবে। এ বিষয়ে তাকে মালের ওজনের সনদ এবং জাহাজ কর্তৃক দেয় পণ্য বােঝাইকরণ নির্দেশ সংগ্রহ করতে হয়। অতঃপর রপ্তানিকারক নিজে অথবা তার প্রতিনিধি অথবা ডক কর্তৃপক্ষ জাহাজে মাল বােঝাই করতে পারে। জাহাজে পণ্য তােলা হলে পরে জাহাজ কোম্পানি পণ্যের বহনপত্র বা চালানি রসিদ প্রদান করে। এটি তিন প্রখে তৈরি করা হয় এবং প্রতি কপিতে কর্তৃপক্ষের সিলমােহরকৃত স্বাক্ষর থাকে।

১১. পণ্য প্রেরণের সংবাদ প্রদান : এরপর রপ্তানিকারক জাহাজে পণ্য প্রেরণের যাবতীয় সংবাদ দিয়ে আমদানিকারককে একটি পত্র প্রেরণ করে। উক্ত পত্রের সাথে চালানি রসিদের হস্তান্তর অযােগ্য এক কপি এবং অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়। ফলে আমদানিকারক পণ্য প্রাপ্তির সম্ভাব্য তারিখ সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারে ।

১২. রপ্তানি দলিলপত্রাদি তৈরি ও প্রেরণ : পণ্য জাহাজিকরণ এবং আমদানিকারককে সংবাদ প্রেরণের পর রপ্তানিকারক রপ্তানি দলিলপত্রাদি প্রস্তুত করে ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানিকারকের নিকট পাঠিয়ে দেয়। ব্যাংক স্বীকৃত বা বিলের মূল্য প্রাপ্তির বিনিময়ে উক্ত দলিলপত্রগুলাে আমদানিকারকের নিকট হস্তান্তর করে। তখন আমদানিকারক উক্ত কাগজপত্রগুলাে দেখিয়ে জাহাজ হতে পণ্য গ্রহণ করে থাকে। এ দলিলগুলােকে জাহাজি দলিলও বলা হয়। রপ্তানিকারক চার প্রস্থে রপ্তানি চালান তৈরি করে এবং উক্ত চালানে পণ্যের যাবতীয় বিবরণ, মূল্য পরিশােধের পদ্ধতি, বিভিন্ন
খরচ ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। বিনিময় বিল তিন প্রস্থে তৈরি করতে হয়।

১৩, মূল্য প্রাপ্তি : আমদানিকারক কর্তক বিনিময় বিল স্বীকৃত হওয়ার পর ব্যাংক তা রপ্তানিকারকের নিকট ফেরত পাঠায়। তখন
রপ্তানিকারক তা ব্যাংকে নির্দিষ্ট বাট্টার বিনিময়ে ভাঙাতে পারে অথবা বিল প্রদেয় হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে নির্দিষ্ট
সময়ে ব্যাংকের মাধ্যমে মূল্য সংগ্রহ করতে পারে অথবা বিলের বাজারে বিক্রি করে দিতে পারে।
১৪, রপ্তানি প্রক্রিয়ার সমাপ্তিপত্র : সর্বশেষ আমদানিকারক মূল্য পরিশােধ করলে এবং পণ্য বুঝে পেয়ে রপ্তানিকারককে পণ্য সম্বন্ধে
সন্তোষ প্রকাশ করে পত্র লেখার মাধ্যমে রপ্তানি প্রক্রিয়া শেষ হয়। তবে কোনাে বিষয়ে অসন্তোষের কারণ ঘটলে পরস্পরের মধ্যে
পত্রালাপের মাধ্যমে অথবা স্থানীয় বণিক সভার মাধ্যমে তার সফল নিষ্পত্তি করা হয়।

উপসংহার : পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ বা কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। এসব পদক্ষেপ ধারাবাহিক ও যথাযথভাবে পালন করতে পারলে রপ্তানি বাণিজ্য হতে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সুতরাং উল্লিখিত পদ্ধতিতে বাংলাদেশ হতে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করলে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।

H.S.C

1 thought on “বৈদেশিক বাণিজ্যের রপ্তানির পদ্ধতি গুলো লিখবে”

Leave a Comment