ঘরে বসে আয় করুন রাকিব হোসেন সজল

করোনা তাণ্ডবে দেশ এখন দ্বিতীয় লকডাউনে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে নিয়ে আসতে পারলে আর্থিক লোকসান কমবে। লকডাউনের মধ্যে বাড়বে নিত্য নতুন কর্মসংস্থান। একই সঙ্গে তৈরি হবে ঘরে বসে আয় করার সুযোগ।

অনেক গুলো মাধমে আমরা টাকা আয় করতে পারি

ঘরে বসে অ্যাড পড়া (Ad Rading Work From Home)


বর্তমানে লক্ষাধিক লোকের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ হলো বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাড ক্লিলিং জব। এই জবগুলোকে জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোই সরবরাহ করে থাকে। এই সব জনপ্রিয় ওয়েব সাইটগুলোতে গিয়ে আপনার কাজ হবে কেবল অ্যাড ক্লিক করা এবং কয়েক সেকেন্ডের জন্য সেই অ্যাডগুলো দেখা।

আপনার বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটের ওপর গবেষণা এবং সেই ওয়েবসাইটগুলোকে পরীক্ষা করে দেখে আপনাদেরকে বলতে পারি যে, ৫/৬ টি’র বেশি কোম্পানি যারা এই কাজগুলো দিয়ে থাকেন তারা তাদের এমপ্লয়িদেরকে শুধু্ উপযুক্ত সম্মানি প্রদান করেন না বরং তারা চেষ্টা করেন সম্মানি সঠিক সময়ে প্রদান করতে। তাহলে দেরি না করে আপনিও হতে পারেন একজন অ্যাড রিডার এবং এই সেক্টর থেকে ইনকাম করতে পারেন নিয়মিত। ঘরে বসে অ্যাড পড়ে আয় করার একটি বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট হল পেইডভার্টস। জেনে নিন কিভাবে পেইডভার্টস থেকে প্রতিদিন ১০ ডলার আয় করবেন।

ঘরে বসে জিপিটি জব (GPT Job From Home)


অ্যাড পড়ার মতো কাছাকাছি একটি কাজ হলো জিপিটি। জিপিটি’র মিনিং হলো- গেট পেইড টু টাস্ক, টাকার বিনিময়ে কারো কাজ করে দেওয়া। জিপিটি এবং অ্যাড রিডিং প্রায় কাছাকাছি ধরণের কাজ কিন্তু কাজের ধরণে সামান্যতম কিছু পার্থক্য আছে।

অনলাইনে খুঁজলে এ ধরণের কিছু বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট পাবেন যারা তাদের মেম্বারদেরকে এই ধরণের কাজ দিয়ে যাচ্ছেন। আপনি সহজেই সে-সব ওয়েবসাইট থেকে কাজ পেতে পারেন। কিন্তু কাজ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ওয়েবসাইটগুলোতে নিবন্ধন করতে হবে (সাইন আপ) করতে হবে। জিপিটি জব পাওয়া যায় এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখে নিন- আউটসোর্সিং এর জন্য সেরা ১০টি ওয়েবসাইট।

ঘরে বসে অনলাইন জরিপ (Complete Online Surveys from Home)


আজকাল প্রায় সবাই অনলাইন জানেন এবং ঘরে বসে অনলাইন সার্ভে করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অনলাইন সার্ভেগুলো হলো হোমওয়ার্কার, পার্টটাইমার এবং ছাত্রদের জন্য অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। যে-সব সাইটগুলোতে ভালো জরিপ রয়েছে, আপনি সে-সব সাইটগুলোর সাথে নিবন্ধিত হতে পারেন এবং বিভিন্ন জরিপ পূরণ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

আপনি ইচ্ছা করলে অনলাইন সার্ভে ওয়েবসাইটগুলো চেক করতে পারেন এবং সেখান থেকে সে-সব ওয়েবসাইটের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারেন। আপনারা সিওর জব (Sure Job) ট্রেনিং প্যাকেজ এ সাইন আপ করতে পারেন, যেটি আপনাদের এই ধরনের কাজ পেতে সাহায্য করবে।

ব্লগিং – দীর্ঘস্থায়ী আয়


আপনি যদি অনলাইনে স্থায়ী, নির্ভরশীল এবং স্থিতিশীল কোন কাজ করতে চান, তাহলে সেখানে প্রথম সারিতে থাকবে ব্লগিং। ব্লগিং এমন একটি কাজ যেটি আপনি পার্ট টাইম এবং ফুলটাইম করতে পারেন। প্রথমাবস্থায় আপনি যখন নিজেকে ব্লগিংয়ে যুক্ত করবেন তখন ব্লগিং বুঝতে আপনার বেশ কিছু সময় দিতে হবে।

আপনি যদি একবার কাজটা আয়ত্ব করতে পারেন তাহলে আপনি অনেক ফুল টাইম চাকুরিজীবির চেয়ে অনেক বেশি সম্মানজনক আয় করতে পারবেন এই সেক্টর থেকে।

ঘরে বসে হন ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট (Work as VA from Home)


বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ লোক ভার্চুয়াল সহকারী (ভিএ) হিসাবে হোম থেকে কাজ করছে এবং সময় এবং দক্ষতার উপর নির্ভর করে ভাল আয় উপার্জন করছে। ভার্চুয়াল সহকারী হিসেবে কাজ করার জন্য আপনি ভার্চুয়াল সহকারী হিসাবে কাজ করতে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইটগুলিতে সাইনআপ করতে পারেন এবং প্রতি ঘন্টায় $ 5- $ 10 (500 থেকে 1000 টাকা) চার্জ করতে পারেন।

আপনার উল্লেখযোগ্য দক্ষতা ও বাজেটের ভিত্তিতে লোকজন আপনাকে কাজ দেবে এবং আপনাকে উভয়ের মধ্যে নির্ধারিত হারের ভিত্তিতে আপনাকে অর্থ প্রদান করবে। প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি 2 ঘন্টা, 8 ঘন্টা বা দিন কাজ করতে পারেন।

ঘরে বসে হয়ে যান রাইটার (Work from Home Writer)


আপনার যদি ভাল লেখার দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনার জন্য ইন্টারনেটে প্রচুর কাজ আছে। আপনি ৫০০ শব্দের কন্টেন্ট এর জন্য ৫$ থেকে ১০$ আয় করতে পারেন। ব্লগ এবং ওয়েবসাইট, প্রুফরিডিং, একাডেমিক লিখন, কপিরাইট ইত্যাদি লেখার মতো লেখার বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে।

YouTube হতে টাকা আয়

অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে YouTube. এখান থেকে যে কোন বয়সের লোক খুবই সহজে টাকা ইনকাম করতে পারেন। ইন্টারনেট বিশ্বের জনপ্রিয় ১০ ওয়েবসাইটের মধ্যে YouTube হচ্ছে একটি। আপনি ইচ্ছে করলেই এখান থেকে কম সময় ব্যয় করে অল্প অভীজ্ঞতা নিয়ে মাসে ভালো মানের টাকা অনলাইনে ইনকাম করতে পারেন। এই জন্য আপনাকে যেটি করতে হবে- প্রথমে বিভিন্ন ভাল মানের ভিডিও YouTube এ আপলোড করতে হবে। ভিডিও তৈরি করার জন্য আপনার মোবাইল ফোনকে ব্যবহার করতে পারেন।

Adsense থেকে টাকা আয়

Adsense হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনের (Advertisement) Program. এটি গুগল কর্তৃপক্ষ সয়ং নিজে পরিচালনা করছে। আপনি যদি আপনার ব্লগ বা ইউটিউব চ্যানেলকে ভালোমানের Platform এ নিয়ে যেতে পারেন এবং ব্লগে বা ইউটিউব চ্যানেলে প্রচুর পরিমানে ভিজিটর থাকে তাহলে Adsense থেকে আপনি হাজার হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

Freelancing – একজন লেখক হয়ে

অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে Freelancing একটি জনপ্রিয় প্লাটফর্ম। Freelancing করে বর্তমানে বাংলাদেশের হাজার হাজার লোক ঘরে বসে অনলাইন হতে টাকা আয় করছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের কাজে লাগানোর জন্য Freelancing বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর ব্যবস্থা চালু করেছে। অনেকে সেই সমস্ত সরকারী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে Freelancing এর মাধ্যমে মাসে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা ইনকাম করে স্বাবলম্বি হচ্ছে।

গ্রাফিকস ডিজাইন

অনলাইনে গ্রাফিকস ডিজাইনের চাহিদা প্রচুর পরিমানে রয়েছে। অনলাইনে ঘরে বসে আয়ের ক্ষেত্রে গ্রাফিকস ডিজাইন একটি ভালো উপায়। যারা এই কাজে দক্ষ, তারা বিভিন্ন ডিজাইন বিষিয়ক অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে তাদের নিজেস্ব ডিজাইন দিয়ে রাখেন। সেখান থেকে তাদের ডিজাইনগুলো ক্রেতাদের পছন্দ হলে কিনে নেয়। এ ধরনের একটি পণ্য অনেকবার বিক্রি হয়, অর্থাৎ একটি ভালো নকশা থেকেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত আয় হতে থাকে। অনলাইনে এ ধরনের অনেক ওয়েবসাইটে গ্রাফিকসের কাজ বিক্রি করা যায়। গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার কাজটি আপনি প্রাথমিকভাবে এডোবি ফটোশপ থেকে শুরু করতে পারেন।

 ই-কমার্স সাইট থেকে ইনকাম

চাহিদা সম্পন্ন পণ্য বাছাই

অনলাইনে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, সেটা নির্বাচন করা জরুরি। বেশিরভাগ মানুষই পণ্য ও বাজার নিয়ে রিসার্চ করতে ভুল করে। সম্ভাবনা যাচাই করার কৌশল অনেকটা এরকম যে, আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে কোন মানুষ কি খুঁজছে এবং তাদের চাহিদা। যদিও কাজটা বেশ জটিল তবে ইন্টারনেট এই ধরণের বাজার গবেষণা খুবই সহজ করে দিয়েছে। যেমন: আপনি বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে যান এবং দেখুন মানুষ কি ধরনের প্রশ্ন করে এবং কি ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।

সুযোগ থাকলে কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করুন। রিসার্চ করে জানুন, মানুষ কি ধরনের কি-ওয়ার্ড বেশি অনুসন্ধান করে। প্রয়োজনে প্রতিযোগীদের সাইট ভিজিট করুন। জানার চেষ্টা করুন, তাদের গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ ও গ্রাহক চাহিদা অনুসন্ধানের জন্য কি কি করছে। অথবা কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে। প্রতিটি বিষয়কে নোট করুন। আপনি রিসার্চ করে যা যা পেলেন তা দিয়ে একটি পণ্যের লিস্ট তৈরি করুন।

বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নতুনত্ব

অনেকেই অনলাইনে পণ্য বিক্রয় করছে। এরমধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। ফলে অনলাইনে ব্যবসায় করতে গেলে অবশ্যই নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেমন-

১। পণ্যের আকর্ষণীয় শিরোনাম।

২। পণ্যের সঠিক বর্ণনা।

৩। সময়োপযোগী মূল্য ছাড়।

৪। সম্ভব হলে পণ্যের সঙ্গে গ্যারান্টি ও ওয়ারেন্টি যুক্ত করা।

৫। পণ্যের ছবির সঙ্গে ভিডিও রাখা।

৬। সঠিক পণ্য বিক্রয় করা।

পেইজ বা ওয়েব সাইট তৈরি করা

পণ্য নির্বাচন করার পর ব্যবসায়ের জন্য দুর্দান্ত একটি ওয়েব সাইট তৈরি করা সময়ের দাবি। তবে অনেকেই এখন ওয়েবসাইট তৈরির আগে ফেসবুকে ব্যবসায় করছেন। এক্ষেত্রে ফেসবুক পেইজ ওপেন করে সেখানে মার্কেটিং করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল মাথায় রাখা জরুরি-

১। পণ্যের বর্ণনা তথ্যবহুল করার চেষ্টা করুন করা

২। ওয়েব সাইটে ক্রেতার মন্তব্য জানানোর অপশন রাখুন।

৩। ফেসবুক পেইজে ব্যবসায় করলে বিজনেস ম্যানেজার ব্যবহার করে ব্যবসায় পরিচালনা করুন।

৪। পেইজে নিয়মিত পণ্যের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করুন।

৫। ক্রেতাদের মন্তব্য যুক্ত করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিন

অনলাইন ব্যবসা করতে গেলে ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া সফলতা সম্ভব নয়। আপনি যদি পণ্যের সেল বৃদ্ধি করতে চান এবং ব্যবসায়কে দ্রুত প্রসার করতে চান তাহলে, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিকল্প কোন কিছু নেই।

দ্রুত ডেলিভারির ব্যবস্থা করা

অনলাইন ব্যবসায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ডেলিভারি। পণ্য ঠিকঠাক মত ডেলিভারি না করতে পারলে ক্রেতাকে আকর্ষণ করা সম্ভব হবে না। ফলে ব্যবসায় নামার আগেই ভালো মানের কুরিয়ার সার্ভিস বা ডেলিভারির সঙ্গে যুক্ত এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।

এবং আরও…

অনলাইন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে যারা ব্যবসায় নামবেন, তাঁদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। বিশেষ করে  শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাতে যারা প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যবসা শুরু করবেন, তাঁরা ভালো করবেন। ফ্যাশন বা প্রসাধনী শিল্পে অগমেন্টেড বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার গ্রাহকদের বেশি আকৃষ্ট করবে। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বা হলোগ্রামের সংযোজন ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে দর্শক ও অংশগ্রহণকারীদের কাছে। যারা নতুনভাবে উদ্যোক্তা হতে চাচ্ছেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা তাঁদের উদ্যোগে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেন।

Leave a Comment