ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রী কথা না শুনলে স্বামীর করনীয়, কোরআর শরিফে অবাধ্য স্ত্রীদেরকে কেন নির্যাতন করা জায়েজ করা, স্ত্রীকে হালকা মার দেয়া যেতে পারে

স্ত্রীকথানাশুনলে

স্বামীর_করনীয়

স্ত্রী যদি কখনো স্বামীর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয় তাহলে স্বামী কি করবেন সেটার বর্ণনা আল্লাহ কুরানুল কারীমে উল্লেখ করেছেন।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“আর যাদের (স্ত্রীর) মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সৎ উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।

যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত”।
সুরা আন-নিসাঃ ৩৪-৩৫।

সুতরাং কুরআনী বিধান হলো –
১. তাদেরকে নসীহাহ বা সুন্দর ভাষায় উপদেশ দিতে হবে।

২. এতে কাজ না হলে তাদের বিছানা আলাদা করে দিতে হবে, যাতে করে তাদের আত্মসম্মানে আঘাত আসে।

৩. এতেও যদি তাদের সংশোধন না হয় তাহলে তাদেরকে মৃদু প্রহার করা জায়েজ রয়েছে।

হাদীসে এর ব্যখ্যায় এসেছে, প্রহার এতোটাই মৃদু হতে হবে যাতে করে গায়ে দাগ না পড়ে। এবং রেগে গিয়ে প্রথমেই যে কাজটা অনেকেই করে চেহারায় আঘাত করা – এইটা সম্পূর্ণ হারাম।

কারণ আল্লাহ নিজে এই চেহারাকে সৃজন করেছেন – কোনো মানুষের চেহারায় আঘাত করা হারাম।
তাফসীরে আরো বিস্তারিত দেখে নিতে পারনে। এই প্রহারের মূল উদ্দেশ্য তাকে শারিরীকভাবে কষ্ট বা নির্যাতন দেওয়া নয়। বরং তাকে একথা জানানো যে তার অপরাধ গুরুতর।

৪. এতেও সংশোধন না হলে – দুই পরিবার থেকে এক জন করে বিজ্ঞ ও দ্বীনদার ধার্মিক – দুইজনের কথা শুনবেন – এবং ন্যায়সংগত ফয়সালা করে দেবেন। কারো প্রতি পক্ষপাতী না হয়ে – আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্য। স্বামী স্ত্রী দুইজনেই যদি সৎ আন্তরিক থাকে তাহলে আল্লাহ এই ফয়সালাতে বরকত দেবেন এবং তাদের আবার মিল মহব্বত করে দেবেন।

উল্লেখ্যঃ এই বিধান গুরুতর অবস্থার জন্য প্রযোজ্য। এমন না যে, স্বামী হারাম বা অনৈতিক কাজে আদেশ করছে আর স্ত্রী সেটা মানছেন না – তখন স্বামী এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু করে দিলেন। অথবা ছোটো-খাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ দাম্পত্য কলহ হওয়াতে বদমেজাজী স্বামী হিকমাহর সাথে সদুপদেশ না দিয়ে সরাসরি হার্ডলাইনে চলে যাবেন।

প্রাসংগিক একটি আলোচনাঃ

পারিবারিক জীবন পুরুষদের একটি মন্দ স্বভাব – নারীদের গায়ে হাত তোলাঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর স্ত্রীদের গায়ে কোনোদিন হাত তুলেন নি। নারীদের গায়ে হাত তোলা পুরুষ হচ্ছে নিজেই দুর্বল – মানসিক দিক থেকে। এই জন্য নারীদের গায়ে হাত তুলে সে মনে মনে আত্মতৃপ্তি অনুভব করে, বাহাদুরীর কাজ বলে মনে করে।

নারীদের মধ্যে অবাধ্যতা দেখা গেলে শাসন হিসেবে মৃদু প্রহার করা শরীয়ত সম্মত। তবে আমি যতগুলো কেইস জানি, কোথাও এইরকম কাহিনী হয়েছে – সেটাকে শরীয়তের দিক থেকে জায়েজ বলা যাবেনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষের খামখেয়ালী আচরণ, বদমেজাজী, রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে না পারা – এই খারাপ অভ্যাসগুলোই বেশি দায়ী।

এদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো”।

আল্লাহ ভাই ও বোনদের পারিবারিক জীবনকে সুন্দর করুন, আমিন।

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মিল-মহব্বতের বিকল্প নেই। সংসার জীবনে কোনো স্ত্রী যদি স্বামীর অবাধ্য হয়, তবে সেক্ষেত্রে স্বামীর জন্য রয়েছে বেশ কিছু করণীয়। কুরআনুল কারিমে এ ক্ষেত্রে স্বামীর জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কী সেসব দিকনির্দেশনা?

হ্যাঁ, স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীকে সংশোধন করা। সংশোধনের চেষ্টা করা। যদি কোনো কারণে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্য হয় বা তার অধিকার আদায় না করে; বরং উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে যায়; তবে স্বামীর দায়িত্ব হলো তাকে সংশোধনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধনে স্বামীর প্রতি কুরআনের নির্দেশ
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে অবাধ্য স্ত্রীদের ব্যাপারে করণীয় তুলে ধরে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর; তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৪)

> প্রথম পদক্ষেপ : উপদেশ দেয়া
স্ত্রীর অবাধ্যতা দেখলেই কোনো স্বামীরই উচিত নয় যে, তার ব্যাপারে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া। বরং নিজেকে সংযত রেখে স্ত্রীকে মিষ্টি ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করা কিংবা উপদেশ দেয়ার কথাই কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করা হয়েছে।
কোনো কারণে স্ত্রী ভুল ধারণায় থাকলে যথাসম্ভব তা দূর করার চেষ্টা করা। স্বামী নিজেকে সংযত রাখার পাশাপাশি স্ত্রীর অন্যায়গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা। তাদের অন্যায় আচরণে ছাড় দেয়া এবং মায়া-মমতার মাধ্যমে যত দূর সম্ভব দাম্পত্য জীবন স্থায়ী করার আপ্রাণ চেষ্টা করা।

> দ্বিতীয় পদক্ষেপ : শয্যা ত্যাগ করা
উপদেশ দেয়ার পরও যদি স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্য থাকে তবে স্ত্রীর সঙ্গে রাগ-অনুরাগ, অভিমান প্রকাশ করার জন্য শয্যাত্যাগ করা। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে একত্রে রাতযাপন থেকে বিরত থাকা। স্ত্রীর ঘুমানোর জায়গা পৃথক করে দেবে।
স্ত্রী যদি এতেই সতর্ক হয়ে যায় এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তাহলে দাম্পত্য জীবন সুখের হবে। আল্লাহ বলেন, ‘স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও। তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর।’

> তৃতীয় পদক্ষেপ : মৃদু প্রহার করা
স্ত্রী যদি উপদেশ ও শয্যা ত্যাগের মাধ্যমে সংশোধন না হয় তবে তাদের প্রহার নির্দেশনা এসেছে কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও। তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর। অতঃপর তাদের সামান্য প্রহার কর।’
মুজামে তাবরানিতে এসেছে- ‘এমনভাবে হালকা প্রহার করবে, যাতে শরীরে কোনো যখম বা আঘাত না হয় এবং মুখে ও লজ্জাস্থানে কখনো প্রহার করবে না।’
এখানে প্রহার বলতে হালকা প্রহারের কথা বলা হয়েছে। যাতে শরীরে কোনো ধরনের জখম বা আঘাতের চিহ্ন না পড়ে। আবার মুখ এবং লজ্জাস্থানে কোনোভাবেই প্রহার করা যাবে না।

> চতুর্থ পদক্ষেপ : উভয় পক্ষের সালিশ বসানো
উল্লিখিত দুটি উপায়ে গ্রহণ করার পরও যদি কোনো কাজ না হয় তবে ইসলামের নির্দেশনা হলো- উভয় পক্ষ থেকে এক বা একাধিক সালিসের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৫)

সুতরাং উত্তেজিত বা আক্রোশবশত কোনোভাবেই স্ত্রীর প্রতি অমানবিক আচরণ বা অবিচার করা যাবে না। কুরআনুল কারিমের নির্দেশনা মোতাবেক আচরণেই স্ত্রীরা অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসতে বাধ্য। আর তাতে দাম্পত্য জীবন হয়ে ওঠবে সুখ ও শান্তিময়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অবাধ্য স্ত্রীদের সঙ্গে সুন্দর-সুসম্পর্ক বজায় রেখে উত্তম জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের দিকনির্দেশনা মোতাবেক স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীদের উত্তম আচরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Comment