أركانه، وواجباته، والأحكام لمن أراد الإحرام ، وما يمتنع হজের রুকন ওয়াজিবসমূহ; ইহরাম বাঁধার পূর্বে করণীয়, মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ কাজসমূহ;

অ্যাসাইনমেন্টঃ أركانه، وواجباته، والأحكام لمن أراد الإحرام ، وما يمتنع

শিখনফল/বিষয়বস্তুঃ كتاب الحج: به بيان أركان الحج وواجباته بيان الأحكام لمن أراد الإحرامبیان ما يمتنع منه | المحرم

নির্দেশনা (সংকেত, ধাপ ও পরিধি): 

১. হজের রুকন ওয়াজিবসমূহ;

২. ইহরাম বাঁধার পূর্বে করণীয়,

৩. মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ কাজসমূহ;

উত্তর সমূহ:

হজের রুকন ওয়াজিবসমূহ;

হজ্বের রুকনসমূহ
১- ইহরাম অর্থাৎ হজ্বকর্মে প্রবেশের নিয়ত। হাদীসে এসেছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «নিশ্চয় আমলের নির্ভরতা নিয়তের ওপর। আর প্রতি ব্যক্তির ভাগে তাই থাকে যা সে নিয়ত করে।»
(বর্ণনায় বুখারী)

২- সাফা-মারওয়ার সায়ী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«তোমরা সায়ী করো; কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর সায়ী লিখে দিয়েছেন।»(বর্ণনায় আহমদ) সায়ী করা আলেমদের কারো কারো নিকট ওয়াজিব, যা ছুটে গেলে দম দিয়ে শুধরে নিতে হয়।

৩- উকুফে আরাফা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«হজ্ব হলো আরাফা।»(বর্ণনায় তিরমিযী)

৪- তাওয়াফে ইফাযা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
(وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ )

{আর তারা যেন প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে।}
[সূরা আল হাজ্জ:২৯]

সতর্কতা
যে ব্যক্তি হজ্বের কোনো রুকন ছেড়ে দিল তার হজ্ব পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না সে তা পুনরায় আদায় করে নেবে|

হজ্বের ওয়াজিবসমূহ
১ – মিকাত থেকে ইহরাম করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিকাতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, «এ মিকাতগুলো ওই এলাকাবাসী এবং বহিরাগতদের যারা ওই অঞ্চল দিয়ে হজ্ব ও উমরা আদায়ের উদ্দেশে আসবে তাদের জন্য।» (বর্ণনায় বুখারী)

২ – যে ব্যক্তি দিনের বেলায় উকুফে আরাফা করবে তার জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করেছেন।

৩- মুযদালিফায় রাতযাপন; কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম মুযদালিফায় রাতযাপন করেছেন এবং বলেছেন,«আমার উম্মত আমার কাছ থেকে হজ্বকর্মসমূহ বুঝে নিক; কেননা আমি জানি না, এ বছরের পর তোমাদের সাথে আমার হয়তো সাক্ষাৎ নাও হতে পারে। আর যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুর্বলদের জন্য মধ্যরাতের পর মুযদালিফা থেকে প্রস্থান করার অনুমতি দিয়েছেন। এর দ্বারা বুঝা গেল মুযদালিফায় রাতযাপন করা আবশ্যক। আর আল্লাহ তাআলা মাশআরুল হারামের কথা উল্লেখের সময় এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সুবহে সাদেকের পর কিছু সময় মুযদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৪- আইয়ামে তাশরীকে মিনার রাতগুলো মিনায় যাপন করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাখালদের জন্য মিনায় রাতযাপন না করার অনুমতি দিয়েছেন। এর দ্বারা বুঝা গেল মিনায় রাতযাপন মূলত ওয়াজিব। ওযর ব্যতীত মিনায় রাতযাপন পরিত্যাগ করা বৈধ নয়। অবশ্য আলেমদের কারো কারো নিকট মিনায় রাতযাপন করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা ছেড়ে দেয়া মাকরুহ এবং অযাচিত কর্ম।৫- কঙ্কর মারা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ )

{আর আল্লহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে।}
[ আল বাকরা:২০৩]

কঙ্কর নিক্ষেপ করা আল্লাহর যিকরের মধ্যে শামিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«নিশ্চয় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সায়ী ও কঙ্কর নিক্ষেপ আল্লাহর যিকর বাস্তবায়নের উদ্দেশে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে|

৬ – মাথা মুণ্ডন ও চুল ছোট করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(لَتَدۡخُلُنَّ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمۡ وَمُقَصِّرِينَ)

{তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুণ্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে।}
[সূরা আল ফাতহ:২৭]

৭ – বিদায়ী তাওয়াফ। ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,«মানুষদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে তাদের শেষ সাক্ষাৎ যেন হয় বায়তুল্লাহর সাথে, তবে তিনি ঋতুগ্রস্ত নারীর জন্য সুযোগ দিয়েছেন।»

ইহরাম বাঁধার পূর্বে করণীয়

ইহরাম বাঁধা ফরজ
হজ ও ওমরা পালনের নিয়তে যারা মক্কার উদ্দেশে গমন করেন, তাদের মিকাত (নির্ধারিত স্থান) অতিক্রম করার আগে ইহরামের কাপড় পরে নিতে হয়। ইহরাম না পরে মিকাত অতিক্রম করা তাদের জন্য জায়েজ নয়।সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন দিক থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য পাঁচটি নির্দিষ্ট স্থানকে শরিয়ত ‘মিকাত’ হিসেবে নির্ধারণ করেছে।

ইহরাম বাঁধার আগে সুগন্ধি ব্যবহার
ইহরাম বাঁধার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর বা ঘ্রাণ ইহরাম গ্রহণের পর বাকি থাকলেও অসুবিধা নেই। তবে ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরামের কাপড়ে এমন আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ, যার ঘ্রাণ ইহরামের পরও বাকি থাকে। মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে। অতঃপর যে হজ আদায়ের ইচ্ছা সে অনুযায়ী নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে।

গোঁফ-নখ এবং ‘গুপ্তস্থানে’র লোম পরিষ্কার
যে ব্যক্তি হজে যেতে চায় তার শরীরের ক্ষৌর কার্য সম্পর্কে বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত আতা (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এর অনুমতি আছে, এতে কোনো অসুবিধা নেই। ’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৪৯৯৮)

ইহরামের উদ্দেশ্যে উত্তমভাবে গোসল করা
জায়েদ বিন ছাবেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.)-কে ইহরামের জন্য পরিহিত পোশাক খুলতে এবং গোসল করতে দেখেছেন। (তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১০২)

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে, তখন তার জন্য গোসল করা সুন্নত। ’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৫৮৪৭)

ইহরামের কাপড়-পরিধেয়
পুরুষদের দুইটি সাদা চাদর প্রয়োজন হবে, যা নতুনও হতে পারে কিংবা ধোয়াও হতে পারে। একটি লুঙ্গির মতো করে এবং অপরটি চাদর হিসাবে পরিধান করবে। কালো রঙের কিংবা পুরুষের জন্য অনুমোদিত এমন যেকোনো রংয়ের কাপড় পরিধান করাও জায়েয। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ চুল আঁচড়ালেন, তেল লাগালেন এবং লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করে মদীনা থেকে হজের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তিনি জাফরানযুক্ত ব্যতীত অন্য কোনো চাদর ও লুঙ্গি পরতে নিষেধ করেননি। -সহীহ বুখারী ১/২০৯

জুতা- স্যান্ডেল পরার নিয়ম
পায়ের পাতার উপরের উঁচু অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরা যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা লুঙ্গি, চাদর ও চপ্পল পরে ইহরাম গ্রহণ কর। যদি চপ্পল না থাকে তবে চামড়ার মোজা পায়ের গীরার নিচ পর্যন- কেটে তা ব্যবহার করতে পারবে। -মুসনাদে আহমদ হাদিস: ৪৮৮১

ইহরামের সুগন্ধি ব্যবহার
ইহরামের আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর ও ঘ্রাণ যদি ইহরাম বাঁধার পর অবশিষ্ট থাকে, তবুও কোনো অসুবিধা নেই। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম গ্রহণের সময় তাঁর সর্বাধিক উত্তম সুগন্ধিটি ব্যবহার করতেন। তিনি বলেন, ইহরাম বাঁধার পর তার শ্মশ্রু ও শির মোবারকে তেলের ঔজ্জ্বল্য দেখতে পেতাম। ’ (মুসলিম: ১/৩৭৮)

ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না। কারণ, ইহরামের পরও অবশিষ্ট থাকে—এমনভাবে আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪৮৯; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃষ্ঠা: ৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২২২; মানাসিক মোল্লা আলী কারি, পৃষ্ঠা: ৯৮)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা (ইহরাম অবস্থায়) এমন কোনো কাপড় পরিধান করবে না যা জাফরান বা ওয়ারসযুক্ত। (মুসলিম: ১/৩৭২)

দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া
মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম গ্রহণের পূর্বে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া। (গুনইয়াতুন নাসিক ৭৩; মানাসিক মোল্লা আলী কারি, পৃষ্ঠা: ৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮২ 

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হজের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে রওনা হয়ে জুলহুলাইফাতে পৌঁছলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। অতঃপর জুলহুলাইফার নিকট যখন উটনী তাকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করলেন…। (মুসলিম: ১/৩৭৬)

ইহরামের নিয়ত করা
(পুরুষ হলে টুপি বা মাথার কাপড় খুলে ফেলতে হবে) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, মুখমণ্ডল ও তার উপরের অংশ মাথার অন-র্ভুক্ত। অতএব ইহরাম গ্রহণকারী থুতনী থেকে উপরের কোনো অংশ আবৃত করবে না। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা হাদিস : ১৪৪৫২

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

নিয়ত হতে হবে আলাদা
তামাত্তুকারী শুধু ওমরার নিয়ত করবে, ইফরাদকারী শুধু হজের নিয়ত এবং কিরানকারী হজ ও ওমরার নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা বিদায় হজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ শুধু ওমরার উদ্দেশ্যে তালবিয়া পাঠ করলেন, কেউ হজ-ওমরা দু’টোর উদ্দেশ্যে এবং কেউ শুধু হজের উদ্দেশ্যে তালবিয়া পাঠ করলেন। (মুসলিম ১/২১২)

মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ কাজসমূহ;

পশম ওঠানো:

মুহরিম অবস্থায় মাথার চুল, গোঁফ, নাভির নিচের লোম, বগলের লোম বা শরীরের যে কোনো স্থানের পশম যে কোনো উপায়ে উঠানো নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَا تَحۡلِقُواْ رُءُوسَكُمۡ حَتَّىٰ يَبۡلُغَ ٱلۡهَدۡيُ مَحِلَّهُۥۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ بِهِۦٓ أَذى مِّن رَّأۡسِهِۦ فَفِدۡيَة مِّن صِيَامٍ أَوۡ صَدَقَةٍ أَوۡ نُسُك﴾

‘আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুণ্ডন করবে না, যতক্ষণ না কুরবানির পশু যথাস্থানে পৌঁছে যায়। তোমাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে ছওম পালন করবে কিংবা ছাদাক্বা করবে অথবা কুরবানি করবে।’ [সুরা বাকারা : ১৯৬]

মাথার চুলের মত সমস্ত শরীরের যে কোনো স্থানের পশমও এই বিধানের আওতায় পড়বে। কেননা এসবই সৌখিনতার অন্তর্ভুক্ত। তবে দাড়ি কাটা বা ছাঁটা ইহরাম এবং হালাল উভয় অবস্থায় হারাম।

নখ কাটা:

ইমাম ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, মুহরিম ব্যক্তির জন্য নখ কাটা নিষিদ্ধ।’ [ইবনুল মুনযির, আল-ইজমা, পৃ. ৫৭]

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

﴿ثُمَّ لۡيَقۡضُواْ تَفَثَهُمۡ﴾

‘এরপর (ইহরাম খোলার পর) তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়।’ [সুরা হজ : ২৯]

ইমাম ইবনু কাসির (রহ.) উক্ত আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে বলেন, ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘(আয়াতের অর্থ হচ্ছে) মাথা মুণ্ডন করা, সাধারণ পোশাক পরা এবং নখ কাটা।’

উম্মু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,

«إِذَا رَأَيْتُمْ هِلاَلَ ذِى الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّىَ فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وأظفارهِ»

‘যখন তোমরা যিলহজ মাসের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের কেউ যদি কুরবানি করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে যেন তার চুল এবং নখ না কাটে।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ৫১১৯] কুরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির তুলনায় মুহরিম ব্যক্তি এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে পড়ার অধিক উপযুক্ত।

সুগন্ধি ব্যবহার করা:

মুহরিম ব্যক্তি শরীরে অথবা কাপড়ে কোনো প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে। ইবনু উমর (রা.) এর হাদীছে এসেছে,

«وَلاَ تَلْبَسُوا مِنَ الثِّيَابِ شَيْئًا مَسَّهُ الزَّعْفَرَانُ وَلاَ الْوَرْسُ»

‘তোমরা যাফরান এবং ওয়ার্‌স (এক প্রকার উদ্ভিদ, যাতে সুগন্ধি রয়েছে) রঞ্জিত কাপড় পরবে না’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৫৪২; মুসলিম, আসসাহিহ : ২৭৯১]

উপরোক্ত হাদিস প্রমাণ করে যে, মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না। তবে মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম বাঁধার পূর্বে তার শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে; কাপড়ে নয়। ইহরাম বাঁধার পর সুগন্ধি অবশিষ্ট থাকলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা ফিকহের উসুল হচ্ছে,

يَجُوْزُ فِيْ الْاِسْتِدَامَةِ مَا لاَ يَجُوْزُ فِي الْاِبْتِدَاءِ

‘কিছু বিষয় অব্যাহত রাখা জায়েয হলেও নতুনভাবে শুরু করার ক্ষেত্রে তা জায়েয নয়।’

মুহরিম ব্যক্তি কর্তৃক মাথা বা মুখের সাথে লেগে থাকে এমন কিছু দ্বারা মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা:

ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে,

«لاَ يَلْبَسُ الْقُمُصَ وَلاَ الْعَمَائِمَ»

‘মুহরিম ব্যক্তি জামা এবং পাগড়ি কোনটাই পরবে না’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৫৪২; মুসলিম, আসসাহিহ : ২৭৯১]

তবে মাথা বা মুখের সাথে লেগে থাকে না এমন কিছু দ্বারা ছায়া গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন: ছাতা, গাড়ির ছাদ, কাপড়, তাঁবু ইত্যাদি। কেননা জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপের সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাপড় দ্বারা ছায়া দেওয়া হয়েছিল। [মুসলিম, আসসাহিহ : ৩১৩৮]

সেলাইকৃত পোশাক পরিধান:

পুরুষ কর্তৃক সারা দেহ আবৃত করে এমন সেলাইকৃত পোশাক পোশাকের স্বীয় আকৃতিতে পরা, যেমন: জামা। অথবা শরীরের কিছু অংশ আবৃত করে এমন সেলাইকৃত পোশাক স্বীয় আকৃতিতে পরা, যেমন: পায়জামা, চামড়ার মোজা, কাপড়ের মোজা, গেঞ্জি ইত্যাদি।

তবে উযরের কারণে পাজামা ও মোজা পরিধান করা যেতে পারে। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আরাফাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«مَنْ لَمْ يَجِدِ النَّعْلَيْنِ فَلْيَلْبَسِ الْخُفَّيْنِ وَمَنْ لَمْ يَجِدْ إِزَارًا فَلْيَلْبَسْ السَّرَاوِيلَ لِلْمُحْرِمِ»

‘যার সেন্ডেল নেই, সে যেন মোজা পরে। অনুরূপভাবে কেউ যদি পরনের কাপড় না পায়, তাহলে সে যেন পাজামা পরে; এই হুকুম মুহরিমের জন্য।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৮৪১; মুসলিম, আসসাহিহ : ২৭৯৪]

মহিলা মানুষ শরিয়তসম্মত স্বাভাবিক যে কোন পোশাক পরতে পারে। হাত মোজা এবং নেকাবসহ মুখমণ্ডলের মাপে তৈরিকৃত অন্যান্য কাপড় ছাড়া তার জন্য অন্য কোন পোশাক নিষেধ নেই। রাসুল (সা.) বলেন,

«وَلَا تَتَنَقَّبْ الْمُحْرِمَةُ وَلَا تَلْبَسْ الْقُفَّازَيْنِ»

‘মুহরিম মহিলা মুখাচ্ছাদন ব্যবহার করবে না এবং হাত মোজা পরবে না।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৮৩৮]

তবে বেগানা পুরুষের উপস্থিতিতে সে তার কাপড় দ্বারা হাত এবং ওড়না দ্বারা মুখমণ্ডল ঢেকে দিবে। আয়িশা (রা.) বলেন,

«كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ»

‘আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালীন আরোহী পথযাত্রীরা আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত। তারা আমাদের বরাবর পৌঁছলে আমরা আমাদের মাথার বড় চাদর টেনে মুখমণ্ডলের উপরে ঝুলিয়ে দিতাম এবং তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে চলে গেলে আবার মুখ খুলে দিতাম।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ১৮৩৩; শাওয়াহিদের ভিত্তিতে হাদিসটি সহিহ]

ইমাম ইবনুল মুনযির (রহ.) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, মহিলারা সেলাইকৃত সব ধরনের পোশাক এবং মোজা পরতে পারে। মাথা এবং চুল ঢেকে রাখতে পারে। মুখমণ্ডলের উপর একটি কাপড় ঝুলিয়ে দিবে, যাতে বেগানা পুরুষের দৃষ্টিগোচর থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।’ [ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি, ৩/৪০৬]

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

আমাদের YouTube এবং Like Page

  • ১১ম -১২ম শ্রেণীর এইচএসসি ও আলিম এসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ১০ম শ্রেণীর এসএসসি ও দাখিল এসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৬ষ্ঠ ,৭ম,৮ম ৯ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৯ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৮ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৭ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক

এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।

Leave a Comment