কুরবানি : একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত
কুরবানি এটি আরবি কুরবুন বা কুরবানুন শব্দ থেকে নির্গত। যার আভিধানিক অর্থ হলো- নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করা। পরিভাষায় মহান আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্ধারিত নিয়মে, নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক নির্দিষ্ট জন্তু কবাই করাকে কুরবানি বলে। কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব আমল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় কখনও কুরবানি ত্যাগ করেননি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত – রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেছেন। আর প্রতি বছরই তিনি কুরবানি করেছেন। বিদায় হজে একশত উট কুরবানি করেছেন। নিজ হাতে তেষট্টিটি। বাকিগুলো হযরত আলী রা. সম্পন্ন করেছেন। একসাথে এতগুলো উট কুরবানি করার দ্বারা, সুস্পষ্টভাবে কুরবানির ফজিলত ও গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। -তারীখে কুরবানি পৃ.২১
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন- আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করুন এবং কুরবানি করুন। -সূরা কাউসার : ০২
এই আয়াত থেকেও কুরবানির গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। মিখলাফ ইবনু সুলাইম রা. থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আরাফায় অবস্থান করছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন- হে লোকসকল! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের লোকদের ওপর প্রতি বছর কুরবানি করা কর্তব্য। -সুনানে আবু দাউদ
এককভাবে কেউ উট গরু বা মহিষ জাতীয় প্রাণী কুরবানি দিতে না পারলে ; তিনি সর্বোচ্চ সাত অংশের একজন অংশীদার হয়েও কুরবানিতে অংশ নিতে পারেন। এ মর্মে সহিহ হাদিসে জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে তামাত্তু হজ করতাম এবং সাতজন মিলে একটি গরু কুরবানি করতাম। অনুরূপভাবে একটি উটেও সাতজন শরীক হয়ে কুরবানি করেছি। -সুনানে আবু দাউদ
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, একটি গরুতে সাতজন মিলে কুরবানি দেওয়া যাবে। অন্যথা ছাগল বা ভেড়া বকরি দ্বারাও এককভাবে আলাদা কুরবানি করা যায়। যেমনটি সুনানে ইবনে মাজাহ-তে বর্ণিত রেওয়ায়েত থেকে জানা যায়।
মুস্তাদরাকে হাকীমের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ইদগাহের ধারে কাছেও না আসে। তাই সাধ্য অনুযায়ী আমাদের সকলের জন্য আবশ্যক হলো- অন্তত একটি ছাগল বা ভেড়া হলেও কুরবানি করা।
আল্লাহ তাআলা একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য, বিশুদ্ধ নিয়তে আসন্ন পবিত্র ইদুল আজহায় আমাদের সামর্থ্যবান সকলকে নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক (মীযান মুহাম্মদ হাসান)