শ্রেণি: ১২শ/ hsc/ উন্মুক্ত-2021 বিষয়: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র এসাইনমেন্টেরের উত্তর 2021 |
---|
এসাইনমেন্টের ক্রমিক নংঃ 02 বিষয় কোডঃ 2856 |
বিভাগ: মানবিক শাখা |
এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা সম্রাট বাবরের চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ণ করুণ
এসাইনমেন্ট সম্পর্কে প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে Google News <>YouTube : Like Page ইমেল : assignment@banglanewsexpress.com
জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ছিলেন ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার মধ্য এশিয়ার তুর্কিস্থানের এক ক্ষুদ্র রাজ্য ফারগানায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবরের পিতা উমর শেখ মির্জা ছিলেন দুধর্ষ সমর নেতা তৈমুরের বংশধর এবং ফারগানা নামক ক্ষুদ্র রাজ্যের অধিপতি।
তাঁর মাতা কুতলুঘ নিগার খানম ছিলেন মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খানের অধস্তন বংশধর ইউনুস খানের কন্যা। বাবরের পিতা উমর শেখ মির্জা ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে আকস্মিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবর পিতৃ সিংহাসনে উপবেশন করেন। সিংহাসনে আরোহণের অব্যবহিত পর বাবর তাঁর নিকট আত্মীয়-স্বজন বিশেষত উজবেক নেতা সাইবানী খানের প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হন।
উল্লেখ্য মধ্যএশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ও সৌন্দর্যময় নগরী ছিল সমরকন্দ। বাবরের পিতৃব্য আহমদ মির্জার মৃত্যুর-পর ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার, ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়বার এবং ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয়বারের মতো তিনি (বাবর) সমরকন্দ অধিকার করেন। ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে এক যুদ্ধে সাইবানী খান বাবরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে সমরকন্দ থেকে বিতাড়িত করেন।
একই সময়ে বাবর পিতৃরাজ্য ফারগানা থেকেও বিতাড়িত হন। ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে বাবর কাবুলের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সুযোগে হিন্দুকুশ পর্বতমালা অতিক্রম করে কাবুলের শাসক আর্ঘুনকে পরাজিত করে কাবুল অধিকার করেন। বাবর অল্পদিনের মধ্যেই সমগ্র আফগানিস্তানে নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ‘পাদশাহ’ (বাদশাহ) উপাধি গ্রহণ করে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাবুলের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে উজবেকদের সাথে সংঘটিত এক যুদ্ধে বাবর পরাজিত হয়ে সমরকন্দ থেকে বিতাড়িত হন। অতঃপর মধ্য এশিয়ায় রাজ্য স্থাপন অসম্ভব মনে করে বাবর ভারতবর্ষের দিকে মনোনিবেশ করেন।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
বাবরের ভারত অভিযান ;
জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ঐতিহাসিক পানিপথের প্রথম যুদ্ধের পূর্বে ভারতে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন যা সাধারণত পর্যবেক্ষণমূলক অভিযান নামে সমধিক পরিচিত। বাবর ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে বাদাখসান এবং ১৫২২ খ্রিস্টাব্দে কান্দাহার হস্তগত করেন। স্বীয় পুত্র হুমায়ুন ও কামরানকে যথাক্রমে বাদাখসান ও কান্দাহারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
লোদী বংশের সর্বশেষ সুলতান ইব্রাহীম লোদীর অত্যাচার ও নির্মম আচরণে অসন্তুষ্ট আফগান আমির ওমরাহদের বিশেষ অনুরোধে পাঞ্জাবের তৎকালীন শাসনকর্তা দৌলত খান লোদী, ইব্রাহিম লোদীর পিতৃব্য আলম খান জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবরকে ভারতবর্ষ আক্রমণে আহ্বান জানালে উচ্চাভিলাষী বাবর তাঁর সাম্রাজ্য স্থাপনের ইচ্ছা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে লাহোর দখল করেন। এ সময় বাবর শিয়ালকোট, দিপালপুর এবং পাঞ্জাবের অন্যান্য স্থানও অধিকার করেন। এমতাবস্থায় দৌলত খান লোদী ও আলম খান বাবরের মূল উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পেরে তাঁর বিরোধিতা শুরু করলে বাধা হয়ে বাবর পূর্ণোদ্যমে ভারত অভিযান আরম্ভ না করে সসৈন্যে কাবুল প্রত্যাবর্তন করেন।
পানিপথের প্রথম যুদ্ধ (২১ এপ্রিল, ১৫২৬ খ্রি.):
পানিপথ বর্তমান ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে হরিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত। ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে বাবর কাবুল থেকে আগমন করে পাঞ্জাবের শাসক দৌলত খান লোদীকে পরাজিত করে লাহোর তথা সমগ্র পাঞ্জাব অধিকার করেন। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের ২১ এপ্রিল লোদী বংশের সর্বশেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদী ও জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবরের মধ্যে ঐতিহাসিক পানিপথের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ‘তুযুক-ই-বাবুরী’ বা ‘বাবরনামা’র বিবরণ অনুযায়ী পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের সেনাবাহিনীতে ছিল ১২,০০০ পদাতিক, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অশ্বারোহী ও গোলন্দাজ। এই যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীর সৈন্যবাহিনীতে ছিল ১,০০,০০০ সৈন্য ও ১০০ হস্তী। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর সর্বপ্রথম এই যুদ্ধে কামানের ব্যবহার করেন। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাবর ইব্রাহিম লোদীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও নিহত করেন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয় লাভ করার মাধ্যমে লোদী বংশের পতন ঘটে। ফলে উপমহাদেশে সুলতানি শাসনের অবসান ঘটে এবং মুঘল বংশের রাজত্ব শুরু হয়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
যুদ্ধে বাবরের সাফল্যের কারণ পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের সাফল্যের পশ্চাতে অন্যতম কারণ ছিল। যথা১. বাবরের তুলনায় ইব্রাহিম লোদীর সৈন্যসংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশী হওয়া সত্ত্বেও বাবরের সৈন্য বাহিনী ছিল সুশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল।
২. বাবর এই যুদ্ধে কামানসহ অন্যান্য উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেন, যা ইব্রাহিম লোদীর কাছে অজানা ছিল।
৩. বাবর ছিলেন একজন দৃঢ় চরিত্রবান ও কুশলী সৈন্যাধ্যক্ষ। অন্যদিকে ইব্রাহিম লোদী ছিলেন সৈন্য পরিচালনা ও যুদ্ধবিদ্যায় একজন সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ব্যক্তি।
৪. সেনাপতি ওস্তাদ আলী ও মোস্তফার নেতৃত্বে গোলন্দাজ বাহিনীর কর্তব্যনিষ্ঠা ও সুনিপুণ যুদ্ধ কৌশল বাবরের সফলতার অন্যতম কারণ।
৫. নানা জাতির অভিজ্ঞ সৈন্যদের নিয়ে গঠিত আফগান বাহিনীর মধ্যে কোন একতা ছিল না। অন্যদিকে বিভিন্ন জাতির সৈন্যদের সমন্বয়ে বাবরের সেনাবাহিনী গঠিত হলেও তারা ছিল বাবরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
৬. ইব্রাহিম লোদীর নিষ্ঠুর আচরণের ফলে আমির ওমরাহ ও আত্মীয় স্বজন ছিল তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট, যা বাবরের অনুকূলে ছিল। পানিপথের যুদ্ধের ফলাফল ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে পানিপথের প্রথম যুদ্ধের ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী। এই যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীর পরাজয়ের ফলে তিন শতাব্দির অধিককাল স্থায়ী দিল্লি সালতানাতের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই যুদ্ধে বাবরের বিজয়ের ফলেই ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয় লাভের ফলে ভারতবর্ষের বিপুল ধন-সম্পদ বাবরের হস্তগত হয়। ভারতবর্ষে তিনিই সর্বপ্রথম গোলন্দাজ বাহিনী নামে একটি বিশেষ বাহিনী গড়ে তুলেন।
খানুয়ার যুদ্ধ (১৫২৭ খ্রিস্টাব্দ):
সালতানাতের ধ্বংসস্তুপের উপর হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে বাবর ঐতিহাসিক পানিপথের প্রথম যুদ্ধে লোদী বংশের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল বংশের গোড়াপত্তন করলে রাজপুত শক্তি মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহের নেতৃত্বে বাবরের বিরোধিতা করে। রানা সংগ্রাম সিংহ বিলসার সিলহদা, ধুনগড়ের উদয়সিংহ, মারবাড়ের ভীমসিংহ, চান্দেরীর মেহেদী রাও প্রমুখ অসংখ্য রাজপুত সর্দার এবং হাসান খান মেওয়াটির সাহায্যে একটি শক্তিশালী সামরিক জোট গঠন করেন। সম্মিলিত সামরিক জোটে রানা সংগ্রাম সিংহের নেতৃত্বে ১২০ জন রাজপুত সর্দার, ৮০ হাজার অশ্বারোহী (মতান্তরে ১,২০,০০০ অশ্বারোহী) ৫ শত হস্তী বাহিনী (মতান্তরে ১,০০০ হস্তীবাহিনী) এবং বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক বাবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধপ্রস্তুতি গ্রহণ করে।
বিপুল সংখ্যক সৈন্যের বিরুদ্ধে বাবর মাত্র অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে স্বয়ং সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রানা সংগ্রাম সিংহের নেতৃত্বে রাজপুতদের সমন্বয়ে গঠিত এই বিশাল বাহিনীর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত্র ক্ষুদ্র বাহিনীকে বাবর ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের (১৭৬৯-১৮২১ খ্রি.) ন্যায় এক অনলবর্ষী ও তেজোদীপ্ত ভাষণ দ্বারা অগ্নিমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই মার্চ আগ্রার অনতিদূরে ফতেহপুর সিক্রির নিকট খানুয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এক বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করা সত্ত্বেও যুদ্ধ কৌশলের অপকর্ষতার ফলে রানা সংগ্রাম সিংহের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
খানুয়ার যুদ্ধের ফলাফল:
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে যে সকল যুদ্ধ ভাগ্য-নিয়ন্ত্রণকারী যুদ্ধ নামে পরিচিত সেগুলোর মধ্যে খানুয়ার যুদ্ধ অন্যতম। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিক পানিপথের যুদ্ধের পর ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের খানুয়ার যুদ্ধ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা পানিপথের প্রথম যুদ্ধে দিল্লির লোদী বংশের সর্বশেষ নামমাত্র সুলতান ইব্রাহিম লোদী পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু খানুয়ার যুদ্ধের ফলে ভারতে শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ রাজপুত শক্তির শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে রানা সংগ্রাম সিংহের হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন চিরতরে বিনষ্ট হয়ে যায় এবং রাজপুত শক্তির প্রাধান্য ক্ষুণ্ন হয়। খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাবরের প্রাধান্য ও ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয়েছিল। বাবর এই যুদ্ধে জয়লাভের পর তাঁর ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দু কাবুল থেকে হিন্দুস্থানে স্থানান্তর করেন। খানুয়ার যুদ্ধে রাজপুত শক্তির পুনরুজ্জীবনের আশা স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত করে বিজয়ের নিদর্শনস্বরূপ জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ‘গাজী’ উপাধি ধারণ করেন।
গোগরার যুদ্ধ (৬মে, ১৫২৯ খ্রি.) :
খানুয়ার যুদ্ধে সম্মিলিত রাজপুত শক্তিকে পর্যুদস্ত করার পর জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর দুধর্ষ আফগান দলপতিদের দমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত ইব্রাহিম লোদীর ভ্রাতা জৌনপুরের তৎকালীন শাসক মাহমুদ লোদী, বিহারের শের খান বাবরের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী জোট গঠন করেন। বাবর নিজ পুত্র আসকারীকে পাঠিয়ে স্বয়ং যুদ্ধযাত্রা করেন।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
মাহমুদ লোদীর বিরুদ্ধে আসকারীর নেতৃত্বে প্রেরিত এই বাহিনী পথিমধ্যে এলাহাবাদ, চুনার, বেনারস হস্তগত করে পাটনার সন্নিকটে গোগরা নদীর তীরে বাংলা ও বিহারের আফগানদের সম্মিলিত সেনাবাহিনী বাবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। জৌনপুরের শাসক মাহমুদ লোদী ও বাংলার শাসক নুসরত শাহের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত আফগান সেনাবাহিনী ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ই মে ঐতিহাসিক গোগরার যুদ্ধে বাবরের নেতৃত্বাধীন মুঘল সেনাবাহিনীর নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে গোগরার যুদ্ধের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কেননা ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের পানিপথের প্রথম যুদ্ধ এবং ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের খানুয়ার যুদ্ধের পর ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দের গোগরার যুদ্ধ পরিপূরক যুদ্ধ হিসেবে সমধিক পরিচিত। এই যুদ্ধই ছিল বাবরের বর্ণাঢ্য জীবনের সর্বশেষ বৃহৎ যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে আফগানদের পুন: সংঘটিত হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা চিরতরে বিনষ্ট হয়।
বাবরের চরিত্র ও কৃতিত্ব:
জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ছিলেন এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শাসক। বিভিন্নমুখী প্রতিভার অধিকারী বাবর এশিয়ার ইতিহাসে এক আকর্ষণীয়, রোমাঞ্চকর ও কৌতূহলোদ্দীপক চরিত্র। বাবর ছিলেন সমসাময়িক এশিয়ার শাসকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দীপ্তিমান চরিত্রের অধিকারী। বাবরের চরিত্রে সামরিক প্রতিভা, বীরসুলভ দু:সাহসিকতা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, অদম্য অধ্যবসায়, দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়, অনন্যসাধারণ দুঃসাহসিকতা, অটুট মনোবল, অতুলনীয় রণনিপুণতা, দূরদর্শী রাজনৈতিক মেধা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, পিতৃবাৎসল্য এবং গভীর মমত্ববোধ প্রভৃতি গুণাবলির এক অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছিল। বাবরের ধমনীতে বিশ্ব ত্রাস সৃষ্টিকারী তৈমুর লঙ ও দুধর্ষ চেঙ্গিস খানের শোণিত ধারা প্রবাহিত ছিল। বাবরের মধ্যে
তুর্কীদের সাহস ও কর্মদক্ষতার সাথে সাথে মোঙ্গলদের তেজস্বিতা ও সমর নিপুণতার এবং দুর্ধর্ষ যাযাবর তাতারদের বীরত্ব ও অস্থিরতার সঙ্গে পারসিক সংস্কৃতি ও সভ্যতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছিল। বাবর ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান একজন খাঁটি সুন্নী মুসলমান। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদীকে, ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে খানুয়ার যুদ্ধে মেবারের রাজপুত নেতা রানা সংগ্রাম সিংহকে, ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে চান্দেরী অভিযানের সময় মেদেনী রাওকে এবং সর্বশেষ ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে গোগরার যুদ্ধে সম্মিলিত আফগান শক্তিকে পরাস্ত করার মধ্যে বাবরের উন্নত সামরিক কৌশল, রণনিপুণতা এবং একজন সফল সমর নায়কের কৃতিত্ব ফুটে উঠে। ভারতবর্ষে মুঘল বংশের প্রতিষ্ঠা করে জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর এক নতুন সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন।
শাসক হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব:
জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্য শাসন করেন। তাঁর সময় মুঘল সাম্রাজ্য পশ্চিমে কাবুল থেকে পূর্বে বিহার এবং উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে চান্দেরি পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। মাত্র চার বছরের সংক্ষিপ্ত রাজত্বকালে বাবর বিশাল সাম্রাজ্যে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সময় স্বল্পতার কারণে বিজিত অঞ্চলব্যাপী চলমান শাসনব্যবস্থাকেই অব্যাহত রাখেন। তবে বাবর খলিফার ক্ষমতাকে অস্বীকার করে স্বয়ং ‘বাদশাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন। তিনি পূর্ববর্তী আমলে প্রচলিত সামন্ত প্রথা ও জায়গীরদারী প্রথা চালু রাখলেও তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব সীমিত করেন। বাবরের শাসনামলে বিভাগীয় প্রধান এবং বাদশাহের সাথে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতেন প্রধানমন্ত্রী নিজামউদ্দিন খলিফা। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হত ওয়ালী (প্রাদেশিক গভর্ণর) দিওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা), সিকদার (সমর কর্মকর্তা) ও কোতয়াল (নগর কর্মকর্তা) প্রমুখ কর্মকর্তাদের দ্বারা। বাবর সমগ্র সাম্রাজ্যব্যাপী ১৫ মাইল অন্তর অন্তর ডাকচৌকির ব্যবস্থা করেন।
শিল্প ও সাহিত্যানুরাগী হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব:
জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ছিলেন শিল্প ও সাহিত্যানুরাগী এবং একজন রুচিশীল শাসক। তিনি দিল্লি ও আগ্রায় ২০টি উদ্যান, বহু পাকা নর্দমা, সেতু ও অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন। বীরযোদ্ধাও সমরকুশলী বাবরের সাহিত্যানুরাগ ছিল প্রগাঢ়। তিনি তুর্কী ও ফার্সি ভাষায় যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি তুর্কি ও ফার্সি ভাষায় অসংখ্য কবিতা রচনা করেন। তাঁর রচিত তুর্কি কবিতার সংকলন ‘দিওয়ান’ নামে পরিচিত। ফার্সি ভাষায় বাবর এক প্রকার নতুন ছন্দ আবিষ্কার করেন যা সাধারণত ‘মুবইয়ান’ নামে সুপরিচিত। জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবরের সাহিত্যানুরাগের শ্রেষ্ঠ নির্দশন তুর্কি ভাষায় রচিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘তুযুক-ই-বাবরী’। ‘তুযুক-ই-বাবরী’ মুঘল ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সবার আগে Assignment আপডেট পেতে Follower ক্লিক করুন
এসাইনমেন্ট সম্পর্কে প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে Google News <>YouTube : Like Page ইমেল : assignment@banglanewsexpress.com
অন্য সকল ক্লাস এর অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর সমূহ :-
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় SSC এসাইনমেন্ট :
- বিজ্ঞান ১ম ও ২য় বর্ষের এসাইনমেন্ট লিংক
- ব্যবসায় ১ম ও ২য় বর্ষের এসাইনমেন্ট লিংক
- মানবিক ১ম ও ২য় বর্ষের এসাইনমেন্ট লিংক
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় HSC এসাইনমেন্ট :
- মানবিক ১ম ও ২য় বর্ষের এসাইনমেন্ট লিংক
- বিজ্ঞান ১ম ও ২য় বর্ষের এসাইনমেন্ট লিংক
- ব্যবসায় ১ম ও ২য় বর্ষের এসাইনমেন্ট লিংক
বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস// https://www.banglanewsexpress.com/
- Degree 3rd Year Exam Marketing 5th paper Suggestion
- ডিগ্রি ৩য় বর্ষের সাজেশন (১০০% কমন ডাউনলোড করুন), ডিগ্রি ৩য় বর্ষের পরীক্ষার সাজেশন [নিশ্চিত ১০০% কমন সকল বিষয়ে]
- degree 3rd year philosophy 6th paper super suggestion, ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ১০০% কমন দর্শন ৬ষ্ঠ পত্র সাজেশন, ডিগ্রি ৩য় বর্ষ দর্শন ৬ষ্ঠ পত্র স্পেশাল সাজেশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ৩য় বর্ষ দর্শন ৬ষ্ঠ পত্র পরিক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান
- degree 3rd year psychology 6th paper super suggestion, ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ১০০% কমন মনোবিজ্ঞান ৬ষ্ঠ পত্র সাজেশন, ডিগ্রি ৩য় বর্ষ মনোবিজ্ঞান ৬ষ্ঠ পত্র স্পেশাল সাজেশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ৩য় বর্ষ মনোবিজ্ঞান ৬ষ্ঠ পত্র পরিক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান
- ডিগ্রি ১ম বর্ষের রেজাল্ট NU Degree 1st Year Result
- ডিগ্রী ২য় বর্ষের সাজেশন pdf