বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব কিরূপ তা যথােপযুক্ত তথ্য ও উপাত্তের মাধ্যমে উপস্থাপন করুন এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের উপায় সম্পর্কে মতামত দিন, hsc উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ১২শ শ্রেণি অর্থনীতি ২য় পত্র ৩য় অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান/ উত্তর ২০২১

শ্রেণি: ১২শ/ hsc/ উন্মুক্ত-2021 বিষয়: অর্থনীতি ২য় পত্র এসাইনমেন্টেরের উত্তর 2021
এসাইনমেন্টের ক্রমিক নংঃ 03 বিষয় কোডঃ 2858
বিভাগ: মানবিক শাখা
বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস// https://www.banglanewsexpress.com/

এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব কিরূপ তা যথােপযুক্ত তথ্য ও উপাত্তের মাধ্যমে উপস্থাপন করুন এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের উপায় সম্পর্কে মতামত দিন।

এসাইনমেন্ট সম্পর্কে প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে Google News <>YouTube : Like Page ইমেল : assignment@banglanewsexpress.com

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ :

বাংলাদেশে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি নিম্নে দেওয়া হলো-

(ক) প্রাকৃতিক কারণসমূহ

১. জলবায়ুর প্রভাব: বাংলাদেশের জলবায়ু উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ। এ জলবায়ুতে পুরুষ ও মহিলারা অল্প বয়সেই যৌবন প্রাপ্ত হয় এবং প্রজননে সক্ষম হয়। তাছাড়া বন্ধুভাবাপন্ন আবহাওয়া থাকায় শীতপ্রধান দেশের মেয়েদের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা বেশি থাকে।

২. ভৌগলিক অবস্থান: বাংলাদেশ মৌসুমি অঞ্চলে অবস্থিত উর্বর পলিমাটি সমৃদ্ধ দেশ। এখানে অল্প পরিশ্রমে অধিক ফসল উৎপাদন করা যায় বিধায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরামদায়ক ও স্বল্প ব্যয়বহুল। প্রচুর বৃষ্টিপাত, মাটির উর্বরতা, সমতল ভূ-প্রকৃতি উত্যাদি কারণে সুপ্রাচীন কাল থেকেই এদেশ উচ্চ প্রজননসমৃদ্ধ দেশ। ভৌগলিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় এদেশে প্রজননশীলতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।

(খ) সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণসমূহ

১. জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ত্রুটি-বিচ্যুতি: বাংলাদেশে জন্ম নিয়ন্ত্রন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। অদক্ষ, দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রশাসন, কর্মকর্তা ও কর্মচারী দিয়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী পরিচালনা করা হয় বিধায় কার্যক্রমের সাফল্যের হার অত্যন্ত কম। এ ছাড়া গ্রামীণ সমাজে ধর্মীয় গোড়ামীর কারণে পরিবার-পরিকল্পনা মাঠকর্মীরা অনেক পরিবারে প্রবেশ করতে পারেনা।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

অশিক্ষিত থাকার কারণে অনেক পরিবারে কর্তাব্যক্তি অতি সন্তানের কুফল বুঝতে অক্ষম থাকেন এবং তাকে সেটা বুঝানোর চেষ্টা করলে বেশিরভাগ সময়ই উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ ধরনের পরিবারের মহিলারা ঘরের বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ পায়না এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ ব্যবহার করার জন্য কোন অনুমতি পায় না। এভাবে উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে এবং সামাজিক বাধার কারণে বাংলাদেশে প্রজনন হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।

২. বহু বিবাহ: বাংলাদেশে বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোতে বহু বিবাহ করার প্রবণতা দেখা যায়। বহুবিবাহতে এক পুরুষের ঔরসে অনেক সন্তান জন্ম নেওয়ায় প্রজনন বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ সালে নামক এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, “বহু বিবাহ প্রথা একই পরিবারে অনেক স্ত্রীর সমাবেশ ঘটায় বলে প্রত্যেক স্ত্রী প্রতিযোগীতামূলক মনেবৃত্তি নিয়ে ঐ পরিবারে অধিক সন্তান জন্মদানে সচেষ্ট হয়।”

৩. স্বল্প শিক্ষার হার: বাংলাদেশের জনগণের এক বৃহৎ অংশ নিরক্ষর। এমন কি সমগ্র জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ এখণও স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন নয়। এই বিপুল পরিমাণ অশিক্ষিত মানুষ নানা কুসংস্কারে আবদ্ধ । তারা প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি ও ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অনুগত থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রনের প্রতি অনীহা বোধ করে। আবার অশিক্ষিত মহিলারা ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে এক রকম গৃহবন্দী থাকতে বাধ্য হয়। পরিবারে তাদের অবস্থান এবং মতামতের তেমন কোন গুরুত্ব নেই। সন্তান জন্মদানে পুরুষরাই মূলত প্রধান ভূমিকা পালন করে। এসব কারণে বাংলাদেশে প্রজনন হার স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত উচ্চ হয়।

৪. অসুস্থ বিনোদন: বাংলাদেশ মুসলিম দেশ হলেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে এদেশে বিভিন্নভাবে অসুস্থ বিনোদন ব্যবস্থা সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ছড়িয়ে পড়ছে। সুস্থ বিনোদন ব্যবস্থার অভাবে মানুষ অসুস্থ বিনোদনের দিকে ঝুকে পড়ছে। ফলস্বরূপ অধিক সন্তানের জন্ম হয় ও প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।

৫. চিত্ত বিনোদনের অভাব: বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সংস্কৃতি চর্চা ও চিত্ত বিনোদনের কোন আধুনিক সুযোগ সুবিধা নেই। বিনোদন, বেড়ানো, শপিং ইত্যাদি সবই শহর কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। গ্রামের জনসাধারনের পক্ষে সর্বদা শহরে গিয়ে চিত্ত বিনোদনের সুবিধা লাভ করা সম্ভব হয় না। ফলে দরিদ্র জনসাধারনের জন্য স্ত্রী সঙ্গ লাভই চিত্ত বিনোদনের প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। যার ফলে গ্রামাঞ্চলে প্রজননের হার উর্ধ্বমুখী হয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৬. মনস্তাত্ত্বিক কারণ: বাংলাদেশে বিবাহিত প্রতিটি মহিলাই সন্তানের মা হতে চায় এবং ছেলে সন্তান তাদের একান্ত কাম্য। তারা জন্ম নিয়ন্ত্রনের সকল ব্যবস্থার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে। তাদের ধারণা ঐগুলো ব্যবহার করলে তারা অসুস্থ হয়ে যাবে। এমনকি তারা সাময়িকভাবে সন্তান উৎপাদন বন্ধ রাখতেও আগ্রহী নয়। তারা মনে করে যে, সাময়িকভাবে সন্তান উৎপাদন বন্ধ রাখলে তারা চিরতরে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। তাদের এ সকল ভ্রান্ত মনোভাবের কারণে জন্মহার বৃদ্ধি পায়।

৭. খাদ্যাভ্যাস: বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ খাদ্য গ্রহনের ক্ষেত্রে ভাত, আটা, আলু, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি শে^তসার জাতীয় খাদ্য বেশি গ্রহণ করে থাকে। দারিদ্র্যের কারণে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ইত্যাদির মতো প্রোটিন ও আমিষ জাতীয় খাদ্য কম গ্রহণ করে। এমন অনেক পরিবার আছে যারা শুধু বছরে একবার কোরবানীর ঈদের সময় মাংস খাওয়ার সুযোগ পায়।

শে^তসার জাতীয় খাদ্য মানুষের প্রজনন হার বৃদ্ধি করে। ফলে বাংলাদেশে সাধারণ পারিবারগুলোতে জন্মহার বৃদ্ধি পায়। ৮. দারিদ্র্য: বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং এদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য অনেক পুরুষই অল্প বয়সে বিবাহ করে এবং বেকারত্বের কারনে ঘরেই অবস্থান করে। এগুলো প্রজননের উচ্চ হারের জন্য দায়ী প্রধান কারণ।

৯. শিশু প্রতিপালনে স্বল্প ব্যয়: বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্ন। দরিদ্র ও অশিক্ষিত পরিবারে শিশু লালন পালনের ব্যয়ভার অত্যন্ত কম হয়। এ ধরনের পরিবারে দারিদ্র ও অজ্ঞতার কারণে শিশুদের খুব একটা পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয় না। শিশুদের ভাল কাপড়ের প্রয়োজনকেও এড়িয়ে যাওয়া হয়। শিশুরা শিক্ষার কোন সুযোগ পায় না। তাদেরকে অল্প বয়স থেকেই কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত করা হয়। ফলে শিশুদের প্রতিপালনে পরিবারের ব্যয় অত্যন্ত কম হয় এবং তাদেরকে বোঝা হিসেবে বিবেচনা না করে অধিক আয়ের হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়। এভাবে শিশু প্রতিপালনের ব্যয়ভার স্বল্প হওয়ায় প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।

১০. উচ্চ শিশু মৃত্যুহার: বাংলাদেশে দারিদ্র্য, অপুষ্টি, রোগব্যাধি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ইত্যাদি কারণে প্রতি বছর প্রচুর শিশু অকালে মৃত্যুবরন করে। এই মৃত্যুহার জনগণকে অধিক সন্তান গ্রহনে উৎসাহিত করে। বিশেষ করে অশিক্ষিত জনগণ শিশু মৃত্যুর কারণে কম সন্তান জন্মদানকে ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকি মনে করে। এজন্য অশিক্ষিত পরিবারগুলো অধিক সন্তানের জন্ম দেয় যেন দু’একটি শিশুর মৃত্যু হলেও বাকিরা বেঁচে থাকে। এভাবে অধিক শিশু মৃত্যুহার উচ্চ প্রজনন হারের সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে।

১১. উচ্চ জীবনযাত্রা সম্পর্কে প্রত্যাশাহীনতা: বাংলাদেশের জনগণ নিম্ন অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে ভবিষ্যত অপেক্ষা বর্তমানের সাথে বেশি সম্পর্কিত থাকে। অধিকাংশ সাধারণ মানুষ সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে জীবন নির্বাহ করে। তারা সব কিছুকেই সৃস্টিকর্তার বিধান হিসেবে মেনে নেয়। এমনকি প্রতি বছর সন্তান জন্ম দিয়ে তারা এটাকেও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা হিসেবে চাপিয়ে দেয়। তারা জানে না তাদের জীবনের কি অধঃপতন হচ্ছে। অধিক সন্তান প্রজননের জন্য তাদের কোন দুঃখ নেই। এ কারণে বাংলাদেশে প্রজনন হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েই চলছে।

১২. পারিবারিক বন্ধন: বাংলাদেশে শক্ত পারিবারিক বন্ধন উচ্চ জন্মহারের অন্যতম কারণ। এদেশে তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। আবার বিবাহের পর স্ত্রী ছেড়ে কেউ সাধারণত দূরে যেতে চায় না। ফলে স্বামীর অনুপস্থিতির হারও কম। মহিলাদের সন্তান ধারণকালীন সময়ে স্বামী কাছে থাকায় সন্তান জন্মদান বেশি হয়। ১৩. শিল্পায়ন ও শহরায়নের ধীর গতি: বাংলাদেশে শহরায়নের মাত্রা আপেক্ষিকভাবে বেশ নিম্নমানের। মোট জনসংখ্যার ১০% শহরে বাস করে। এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই হলো অশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত। শহরের উপকন্ঠে গড়ে উঠেছে শত শত বস্তি। এসব বস্তিতে বসবাসকরী স্বল্প আয়ের মানুষজন মনে করে অতিরিক্ত সন্তান জন্ম দিলে অধিক আয় হবে যা তাদের দারিদ্র দূর করবে। কিন্তু হয় তার বিপরীত। ফলে প্রজনন সমস্যা প্রকট আকার ধারন করে।

১৪. দ্রুত সন্তান জন্মদান প্রবণতা: বালাদেশে সামাজিক মূল্যবোধ এমন যে বিবাহের পর কোন পরিবারে সন্তান জন্মাদানে বিলম্ব হলে স্ত্রীকে সন্তান জন্মদানে অক্ষম বলে বিবেচনা করা হয়। এই কারণে অশিক্ষিত এবং এমনকি শিক্ষিত নারীদের মধ্যে বিবাহের পর যথাশীঘ্র প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তান জন্মাদানের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তান যদি কন্যা শিশু হয় তবে এজন্য মহিলাদেরকেই দোষারোপ করা হয় এবং ছেলে সন্তানের আশায় বারবার সন্তান জন্মদান চলতেই থাকে। সন্তান জন্মদানের এই প্রবণতা নিশ্চিতভাবেই প্রজনন হার বৃদ্ধি করছে বলা যায়।

১৫. অল্প বয়সে বিবাহ: বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে মেয়েরা অল্প বয়সেই যৌবন প্রাপ্ত হয় এবং তাদের প্রজনন শক্তি সৃষ্টি হয়। এদেশের মেয়েদের বিবাহের জন্য উপযুক্ত বয়স ১৭-১৮ বছর। শতকরা ৯৫ জন মেয়ের বয়স ত্রিশ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। একবার বিয়ে হয়ে গেলে বিবাহ বিচ্ছেদ, তালাক, দীর্ঘস্থায়ী অস্স্থুতা এবং মৃত্যু ব্যতীত স্বামী-স্ত্রী একত্রেই বসবাস করে। বিবাহের পর অধিকাংশ মহিলাই ঘরেই বাস করে এবং সন্তান জন্মদানের চিন্তা করে। এভাবে প্রজনন হার বৃদ্ধি পেতে থাকে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

(গ) অর্থনৈতিক কারণসমূহ

১. অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা ও বেকারত্ব: বাংলাদেশে উচ্চ প্রজননের অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা ও বেকারত্ব। এদেশের অধিকাংশ কর্মক্ষম মানুষ দরিদ্র ও বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত। তাদের কোন অর্থনেতিক নিরাপত্তা নেই। জনবিজ্ঞানীদের মতে, চড়াবৎঃু ধহফ ভবপঁহফরঃু মড় ঃড়মবঃযবৎ। অর্থাৎ দারিদ্র ও প্রজনন ক্ষমতা একত্রে অগ্রসর হয়। তাছাড়া কৃষি প্রধান অর্থনীতি, মহিলাদের স্বল্প কর্মসংস্থান, কৃষি ও মৌসুমী শিল্পে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্ম বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদিও অধিক প্রজনন হারের সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে।

২. কৃষি প্রধান অর্থনীতি: বাংলাদেশের প্রধান পেশা কৃষি। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট। এ পেশার জন্য প্রান্তিক শ্রমশক্তি স্বাগতিক ও সনাতন ধরনের। তাই কৃষক পরিবারে অধিক সন্তান মানেই কৃষিকাজে অধিক শ্রমিকের ব্যবহার। তারা ছেলে সন্তান কামনা করে প্রজনন হার বৃদ্ধি করে থাকে।অধিক ছেলে সন্তান হলে তারা বাহির থেকে শ্রমিক না নিয়ে পরিবারের সদস্য দিয়েই কৃষি কাজ পরিচালনা করে। এতে খরচ কমে যায় এবং কৃষি থেকে লাভবান হওয়া যায়। এজন্য জন্মের পর ছেলে হলে তারা উল্লাস প্রকাশ করে। এতে সঙ্গত কারণেই প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।

৩. ছেলে সন্তানদের অর্থনৈতিক মূল্য: অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে বিশেষকরে দরিদ্র পরিবারে ছেলে সন্তানের চাহিদা বেশি থাকে। দরিদ্র পরিবারে ছেলে সন্তানকে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা এবং অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এজন্য একের পর এক কন্যা সন্তান জন্ম নিলেও পিতামাতা পুত্র সন্তানের আশায় প্রজনন হার বৃদ্ধি করেই চলে। জনবিজ্ঞানী গবধফ ঈধরহ এবং ঝধসঁবষ ঝ. খরবনবৎসধহ তাদের “উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঢ়ড়ষরপু ধহফ ঃযব ঢ়ৎড়লবপঃং ড়ভ ঋবৎঃরষরঃু উবপষরহব রহ ইধহমষধফবংয” নামক একটি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন যে, বাংলদেশের গ্রামাঞ্চলে পুত্র সন্তানকে ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মনোভাবকে উচ্চ জন্মহারের অন্যতম প্রধান কারণ বলা হয়।

৪. মহিলাদের স্বল্প কর্মসংস্থান সুযোগ: বিভিন্ন জরীপ এবং গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, পরিবারের বাহিরে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া হলে প্রজনন হার আশানুরুপ হ্রাস পায়। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হার অত্যন্ত কম। আর শিক্ষিত হলেও প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি এবং ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় না। ১৯৯২ সালে উৎ. গ.অ গধনঁন পরিচালিত ইধহমষধফবংয’ং চড়ঢ়ঁষধঃরড়হ চৎড়নষবস ধহফ চৎড়মৎধসসব উুহধসরপং নামক এক গবেষণা জরীপ থেকে দেখা যায় যে, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের হার যাই হোক না কেন, যে সব মহিলা গৃহস্থালী কর্মে নিযুক্ত থাকে তাদের প্রজনন হার বাহিরে কার্যরত মহিলাদের প্রজনন হারের তুলনায় অনেক বেশি হয়। বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক এবং ধর্মীয় কারণে মহিলাদের পরিবারের বাহিরে কাজের সুযোগ খুব কম থাকে। ফলে তাদের প্রজনন হার উচ্চ হয়।

৫. নিম্ন জীবনযাত্রার মান: বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণের নিম্ন জীবনযাত্রার মান ক্রমাগতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছে। নিম্ন জীবন যাত্রা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে তারা অধিক পুত্র সন্তান কামনা করে। এজন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠী জন্মনিয়ন্ত্রণে আগ্রহী নয়। তারা সন্তান সংখ্যা বৃদ্ধিকে বিশেষ করে পুত্র সন্তান বৃদ্ধিকে অধিক আয়ের পথ বলে বিবেচনা করে। এজন্য প্রতি বছর তারা সন্তান জন্মদান করে এবং ছেলে সন্তান একটু বড় হলেই তাদেরকে কোন কাজে নিয়োজিত করে। তাদের এ মনোভাবের ফলে প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৬. অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা: বাংলাদেশে অতিরিক্ত সন্তানকে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে ভবিষ্যত নিরাপত্তার ভিত্তি বিবেচনা করা হয়। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ সন্তান সংখ্যা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত হয়। কারণ দরিদ্র পরিবারের উপার্জনের জন্য সদস্যদের শ্রম ব্যতীত অন্যকোন অর্থনৈতিক সম্পদ নেই। তাই তারা অতিরিক্ত সন্তানের ভবিষ্যত শ্রমকে অতিরিক্ত উপার্জনের উৎস বলে মনে করে। এজন্য তারা অধিক সন্তান জম্নদানে উৎসাহী হয় এবং প্রজনন হার বৃদ্ধি করে চলে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সে দেশের জনগোষ্ঠী একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। বাংলাদেশেও এরূপ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনসংখ্যা এদেশের জন্য একটি আপদে পরিণত হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মূলে আঘাত হানায় রাষ্ট্রীয়ভাবে এটিকে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের ১,৪৮,৩৯৩ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট দেশে বর্তমানে (২০০২) সালে প্রায় ১৩.১২ কোটি লোকের বসবাস ছিল। এত বেশি লোকের কর্মসংস্থানের জন্য দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ শিল্প কারখানা ও ব্যবসা বাণিজ্য সহ অর্থনীতির বিকাশ ঘটেনি। এছাড়া এখানে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের পরিমাণও খুব সীমিত।

জনসংখ্যা ১.৪৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পরবর্তী ৩২ বছরের কম সময়ে জনসংখ্যা বর্তমানের দ্বিগুণে পরিণত হবে। এরূপ অবস্থা জাতির জন্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের বর্তমান জনগোষ্ঠীকে নিম্নলিখিত দৃষ্টি ভঙ্গিতে বিবেচনা করলে নির্দ্বিধায় এটি একটি জটিল সমস্যা বলে আখ্যায়িত করা যায়।

১. খাদ্যের উপর চাপ সৃষ্টি: দেশের মোট খাদ্য উপাদান দ্বারা ১৩.১২ কোটি লোকের অন্নসংস্থান করা একটি কঠিন বিষয়। খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। সরকার খাদ্য ঘাটতির মোকাবেলার জন্য বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানী করে থাকে। ইতোমধ্যে দেশে বেশি খাদ্য ফলানোর জন্য সরকারিভাবে কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এতে উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় তার পরিমাণ এখনো অপ্রতুল। বর্ধিত জনসংখ্যা খাদ্যের উপর ভাগ বসানোর ফলে খাদ্য বন্টনের হার ক্রমে কমে আসছে। তাই চাহিদার ঘাটতি পূরণের জন্য গড়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫লাখ টন খাদ্য বিদেশ হতে আমদানি করা হয়।

২. মূলধন গঠন: উন্নয়নের জন্য মূলধন অপরিহার্য। বাংলাদেশে অধিকাংশ লোকের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি। তাই আমাদের সঞ্চয়ের পরিমাণও কম। ২০০১-০২ সালে এর পরিমাণ ছিল ২২.৪৩%। দেশের ব্যাংক বীমাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয়ের জন্য যে পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করা হয় তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। এ কারণে আমাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না।

৩. কৃষি জমির উপর চাপ: বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬২.৩ জন লোক সরাসরি কৃষির উপর নির্ভরশীল। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মোট আবাদী জমির উপর প্রচন্ড চাপ সৃস্টি হয়েছে। গ্রামে কৃষি ব্যতীত বিকল্প কর্মসংস্থানের সীমিত ব্যবস্থায়ই বর্ধিত যুব সমাজের অধিকাংশই কৃষি জমিতে ভীড় জমাতে শুরু করেছে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষি জোতসমূহ দিন দিন ছোট থেকে আরো ছোট হচ্ছে।

৪. ভূমিহীনের সংখ্যা বৃদ্ধি: দেশে কর্মসংস্থানের প্রসার না ঘটায় অধিকাংশ পরিবারে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য এ সকল বেকার লোক তাদের সামান্য সহায় সম্পদ বিক্রি করে ধীরে ধীরে ভূমিহীন দরিদ্র লোকে পরিণত হয়। ৫. বেকার সমস্যা: আমাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো তেমন মজবুত নয়। সরকারী এবং বেসরকারী উদ্যোগের ফলে সামান্য কিছু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি হলেও চাহিদার তুলনায় তা কম। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য অংশ কিশোর তরুণদের কাতারে সামিল হয়ে শ্রমমক্তি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হয়। এ জন্যই বেকারের পরিমাণ দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৬. বন্টন: মানুষের মৌলিক চাহিদার উপকরণ বন্টনে মাথাপিছু হার এতই কম থাকে যে, যা দ্বারা নিম্নতম চাহিদা পূরণ হয় না। সে কারণেই মানুষ অপুষ্টি, অন্ধত্ব ও নান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। সরকারী প্রচেষ্টায় রোগ নিরাময়ের জন্য কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়।

৭. বর্ধিত জনগোষ্ঠীর ভরন পোষণ: প্রতি বছর বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ভরণপোষণের জন্য স্বাভাবিক চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত ৩লক্ষ ৫০ হাজার টন খাদ্য, ২লক্ষ ৮১ হাজার বাসগৃহ এবং ৭ লক্ষ ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের প্রয়োজন । দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য বর্ধিত জনসংখ্যার লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা উচিত। তা ছাড়া আরও প্রায় ৭ লক্ষ ৩৬ হাজার স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ২৩ হাজার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল প্রয়োজন। ২০০৩ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান সুবিধাদি এ বর্ধিত প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল।

৮. নির্ভরশীলতার হার বৃদ্ধি: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্মীয় কারণ ছাড়াও সামাজিক, বয়স ও রোগজনিত কারণে দেশের মোট জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশের উন্নয়ন কাজে যথাযথ ভূমিকা নেই বললেই চলে। দেশে একটি সুষ্ঠু অর্থনীতি গড়ে তোলার পথে এটিও একটি অন্তরায়। এক হিসাবে দেখাযায় মাত্র ৬.৩ কোটি পুরুষ ও নারী কাজ করে, আর ৭.০৯ কোটি পোষ্য বসে বসে খায়। এই কর্মী সংখ্যার মধ্যে ১ কোটি ৫০ লক্ষ কর্মী শহরে এবং ৪ কোটি ৮০লক্ষ কর্মী গ্রামে বাস করে।

৯. শিল্প উন্নয়নে বাধা: দেশকে শিল্পে সমৃদ্ধ করার জন্য বিপুল পরিমাণ পুঁজির প্রয়োজন। পুঁজি গঠনের জন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগ পরষ্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের দেশে সমস্যা অনেক। মানুষের মৌলিক চাহিদার বেশির ভাগ অপূর্ণ রাখা গেলেও খাদ্য চাহিদাকে তাৎক্ষনিক ভাবে পূরণ করতে হয়। বর্তমানে কৃষি উৎপাদন দ্বারা মোট জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। তাই সরকারকে প্রতি বছর বিদেশ থেকে নগদ মূল্যে অথবা ঋণের মাধ্যমে খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করতে হয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল জনসংখ্যা সমস্যা। জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস করার জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। পর্যায়ক্রমে এই কর্মসূচী ও পদক্ষেপগুলোর পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সম্প্রসারণও করা হয়েছে। এই কর্মসূচীগুলো সাফল্য ও ব্যর্থতায় মিশ্রিত। নিম্নে বিভিন্ন কার্যক্রমে সরকারের ভূমিকা মূল্যায়ন করা হলো।

১. প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা: সরকার মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম পরিদর্শনের নীতিমালা জারী করেছে। এই নীতিমালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়, জেলা ও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের তদারকি ও পরিদর্শনের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষনা, প্রতিবেদন পেশ করা, ইত্যাদি।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম সমগ্র দেশব্যাপী পরিচালিত একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয় সংশ্লিষ্ট তাকে। এদের মধ্যে কোন সমন্বয় পরিলক্ষিত হয় না। সমন্বয়হীনতার কারণে কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এই বিশৃঙ্খলা জনগণের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়।

২. মাঠ পর্যায়ে সেবা দান কর্মসূচী: সরকার মাঠপর্যায়ে বিবাহিত দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে একটি হলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনে তিরিশ হাজার মাঠকর্মীর এক সুবিশাল নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কে অন্তর্ভূক্ত মহিলাদের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে যেন তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিবাহিত মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সচেতন করে এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য খাবার বড়ি সরবরাহ করে।

বাস্তবে এই কর্মীবাহিনী ঘরে ঘরে জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা পৌঁছে দিতে যথেষ্ট সক্ষম হয়নি। দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠী এই নেটওয়ার্কের কোন সেবা পায়নি। যা কিছু পাওয়া গেছে তা অত্যন্ত অনিয়মিত ও অকার্যকর। এক জরীপে দেখা গেছে, গ্রামের বিবাহিত মহিলারা ছয় মাস কি এক বছরে কদাচিৎ একজন মহিলা পরিবার পরিকল্পনা মাঠ কর্মীর সাক্ষাত পান। এই মাঠ কর্মীরা বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থ হন। এ সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাব, নিয়মিত তদারকি না করা, ইত্যাদি।

৩. জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণের বিতরণ পদ্ধতি: বাংলাদেশের গ্রামীন এলাকায় জনগণের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী সহজলভ্য করতে সরকার থানা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে এগুলো বিতরণ করার উদ্যোগ গ্রহন করেছে। এছাড়া থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতির সেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলি থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ ব্যবহারকারী মহিলাদেরকে ও.ট.উ পদ্ধতি প্রদান করা সহ পর্যায়ক্রমিক জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সরকারের উপরোক্ত কার্যক্রম মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, দেশের প্রায় ১০% থানায় এবং ৪০% ইউনিয়নে কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নেই। ফলে এই এলাকার জনগণ সরকারের উপরোক্ত কার্যক্রমের সুবিধা নিতে সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়। এছাড়া যেসকল থানা ও ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে সেগুলোও নানা সমস্যায় জর্জরিত। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির প্রধান সমস্যা ডাক্তারদের কর্মক্ষেত্রে অবস্থান না করা। এছাড়া প্রয়োজনীয় ঔষধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণেরও ঘাটতি দেখা যায়।

৪. মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব বন্টন: মাঠ পর্যায়ে একজন কর্মী কতটুকু কাজ করবে তা নির্ধারণ করে দেয়া অত্যন্ত জরুরী।এজন্য থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মাঠ কর্মীদের কাজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কাজের মধ্যে ভিন্নতা আনার লক্ষ্যে ও অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের যৌথ দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে একজন স্বাস্থ্যকর্মী নিজ দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করে। একইভাবে একজন পরিবার পরিকল্পনা কর্মী নিজেদের কাজের অতিরিক্ত হিসেবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করে।

৫. আর্থিক প্রণোদনা ব্যবস্থা: থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করতে প্রনোদনা হিসেবে আর্থিক পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরষ্কারের ধরণ কর্মী এবং ডাক্তার ভেদে ভিন্ন হয়। থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন কর্মী পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে পুরষ্কার হিসেবে নগদ অর্থ প্রদান করার ব্যবস্থা নেয়া হয়। আবার, একজন ডাক্তার স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ এবং ও.ট.উ পদ্ধতির ক্ষেত্রে তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে পুরষ্কার হিসেবে তাকে দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষনে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হয়। এছাড়া যেসব পুরুষ ও মহিলা স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি গ্রহণ করে তাদেরকেও বিভিন্ন পুরষ্কার প্রদান করা হয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

সবার আগে Assignment আপডেট পেতে Follower ক্লিক করুন

এসাইনমেন্ট সম্পর্কে প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে Google News <>YouTube : Like Page ইমেল : assignment@banglanewsexpress.com

অন্য সকল ক্লাস এর অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর সমূহ :-

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় SSC এসাইনমেন্ট :

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় HSC এসাইনমেন্ট :

বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস// https://www.banglanewsexpress.com/

Leave a Comment