বিষয়: মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার
সূচনা
বর্তমানে সমাজ ও দেশের জন্য মাদকাসক্তি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের নীল নেশা আজ তার বিশাল থাবা বিস্তার করে চলেছে এ দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এ এক তীব্র নেশা। হাজার হাজার তরুণ এ নেশায় আসক্ত। এ মরণনেশা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা না গেলে এ হতভাগ্য জাতির পুনরুত্থানের স্বপ্ন অচিরেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশ আজ এক সর্বনাশা মরণনেশার শিকার। যে তারুণ্যের ঐতিহ্য রয়েছে সংগ্রামের, প্রতিবাদের, যুদ্ধ জয়ের, আজ তারা নিঃস্ব হচ্ছে মরণনেশার করাল ছোবলে। মাদক নেশার যন্ত্রনায় ধুঁকছে শত-সহস্র তরুণ প্রাণ। ঘরে ঘরে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা। ভাবিত হচ্ছে সমাজ।
মাদকাসক্তি কি
মাদকাসক্তি একটি স্নায়বিক ক্রিয়া। এর প্রভাবে ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা ও আচার-আচরণে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি যুব সম্প্রদায়ের এক আদিম প্রবণতা। শাব্দিক অর্থে মাদকাসক্তি বলতে ড্রাগ বা মাদকদ্রব্যের প্রতি এক প্রবল আকর্ষণকে বোঝায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, নেশা এমন একটি মানসিক বা শারীরিক অবস্থা, যার সৃষ্টি হয়েছে জীবিত প্রাণী ও মাদক ওষুধের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে।
মাদকদ্রব্য
মাদক শব্দের অর্থ হল – মত্ততা জন্মায় এমন দ্রব্য। অর্থাৎ নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যকেই মাদকদ্রব্য বলে। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে স্নায়বিক বৈকল্য দেখা দেয় ও বারবার ওই দ্রব্য গ্রহণের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। মাদকদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল এ আসক্তি প্রশমিত হয়। অন্যথায় শরীরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদকদ্রব্য সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন – ‘আল খামরু মা খামারুল আখলাক’ অর্থাৎ মাদকদ্রব্য তা-ই যা মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে।
মাদকদ্রব্যের উৎস ও প্রকারভেদ
অবয়ব, ক্ষমতা ও মূল্যমানের বিভিন্নতার ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। মাদক দ্রব্যের মূল উৎস ঔষধি গাছ। এসব গাছের রাসায়নিক নির্যাস রােগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে একে অপপ্রয়ােগ করে নেশার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- পপি গাছ থেকে ব্যথানাশক মরফিন ও প্যাথেডিন ওষুধ তৈরি হলেও বর্তমানে একে আরও পরিশােধন করে তৈরি হচ্ছে আফিম ও হেরােইন। আবার ক্যানাবিস বা গাঁজা গাছও মূলত ঔষধি গাছ। এদেশে প্রচলিত মাদকদ্রব্যগুলাে হলাে- হেরােইন, প্যাথিডিন, মরফিন, আফিম, ক্যানাবিস, কোকেন, মারিজুয়ানা, গাঁজা, ভাং, চরস, হাশিশ, ফেনসিডিল, ঘুমের বড়ি, টিজিডিসিফ, মদ, বিয়ার ইত্যাদি।
মাদকদ্রব্যের ব্যাবহার পদ্ধতি
সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক ড্রাগ ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের মাদকের ব্যবসা ফেঁদেছে। এসব মাদকের ব্যবহার পদ্ধতিও নানারকমের। ধূমপানের পদ্ধতি, নাকে শোকার পদ্ধতি, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ত্বকের নিচে গ্রহণের পদ্ধতি এবং সরাসরি রক্তপ্রবাহে অনুপ্রবেশকরণ পদ্ধতি। বিভিন্ন রকম ড্রাগের মধ্যে হেরোইন আজ সব নেশাকেই ছাড়িয়ে গেছে। এর আসক্তি অত্যন্ত তীব্র। নিছক কৌতূহল যদি কেউ হেরোইন সেবন করে তবে এই নেশা সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো তার ঘাড়ে চেপে বসে।
মাদকাসক্তির কারণ
গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বহুবিধ কারণে মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। যেমন- অবাঞ্ছিত আনন্দ লাভেরর বাসনা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রয়াস, মাদকের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা, প্রতিকূল পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, বন্ধু-বান্ধব ও সঙ্গীসাথিদের প্রভাব, পারিবারিক পরিমণ্ডলে মাদকের প্রভাব, কৈশাের ও যৌবনের বেপরােয়া মনােভাব, বেকারত্ব, হতাশা ও আর্থিক অনটন, মানসিক অশান্তি, মাদকের সহজলভ্যতা, নৈতিক শিক্ষার অভাব ইত্যাদি। তাছাড়া কৌতূহল মেটাতে ও কুসঙ্গে পড়ে যারা একবার বা দু’বার মাদক গ্রহণ করেছে, তারা আর এর সংস্রব থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। নতুনত্বের প্রতি মানুষের চিরন্তন নেশা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্জয়ের দুর্নিবার আকর্ষণ ও আপাত ভালাে লাগার অনুভূতি তাড়িত হয়েও অনেকে মাদক ব্যবসায়ীদের পেতে রাখা ফাঁদে ধরা দেয়। নৈরাজ্যের তীব্র যন্ত্রণায় দগ্ধীভূত হয়েও যুবসমাজ বেছে নেয় মাদকাসক্তি এর মাধ্যমে আত্মহননের পথ।
মাদকাসক্তির লক্ষণ
যখন কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তখন তার মধ্যে কিছু কিছু লক্ষণ ও চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। যেমন : আচারআচরণের পরিবর্তন; রাতে ঠিকমতাে ঘুম না হওয়া এবং দিনে বসে বসে ঝিমানাে; গুছিয়ে কথা বলায় অপারগতা; খাবার গ্রহণের প্রতি অনীহা, চিত্তচাঞ্চল্য, মেজাজ কখনও খুব ভালাে, কখনও খুব খারাপ থাকা; মনােযােগ দেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকা; আড্ডায় বেশি সময় নষ্ট করা; আর্থিক চাহিদা বাড়তে থাকা; দিনের একটি বিশেষ সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য মন চঞ্চল হয়ে ওঠা; শরীর ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
মাদকের ক্ষতিকর দিক
মাদক সমস্যা মানুষের সৃষ্ট শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা। মানবসম্পদ উন্নয়নে এ সমস্যা এক বিরাট বাধা। মাদকের অপব্যবহারে ব্যক্তি তাে বটেই, পুরাে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মাদকাসক্তির ফলে জনশক্তি দুর্বল ও নির্জীব হয়ে পড়ছে। মাদকের নিষ্ঠুর ছােবলে অকালে ঝরে যাচ্ছে বহু তাজা প্রাণ এবং অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে বহু তরুণের সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। মাদকদ্রব্য তরুণ সমাজের এক বিরাট অংশকে অকর্মণ্য ও অসচেতন করে তুলছে, অবক্ষয় ঘটাচ্ছে মূল্যবােধের। ফলে সুস্থ-সামাজিক বিন্যাস, সুন্দর পরিবেশ ও জাতীয় স্থিতিশীলতা বিরাট হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। রুদ্ধ হয়ে পড়ছে সামাজিক ভারসাম্য। নতুন কিছু আবিষ্কারের সম্ভাবনা স্তিমিত হয়ে পড়ছে। মানবিক মূল্যবােধ ও সামাজিক সম্পর্কের দারুণ অবনতি ঘটছে। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার তাই গোটা বিশ্বকে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে, মৃত্যুর দিকে।
মাদকাসক্তির পরিণাম
যেকোনাে খারাপ জিনিসের পরিণামও খারাপ। মাদক খারাপ তাই এটি গ্রহণে মানুষের মাছে কুপ্রভাব দেখা দিবে এটিই স্বাভাবিক ব্যাপার। কোনােভাবে একবার কেউ মাদকাসক্ত হলে অচিরেই নেশা তাকে পেয়ে বসে। সে হয়ে পড়ে নেশার কারাগারে বন্দি। মাদকাসক্তির ফলে তার আচার-আচরণে দেখা যায় অস্বাভাবিকতা। তার চেহারার লাবণ্য হারিয়ে যায়। আসক্ত ব্যক্তি ছাত্র হলে তার বইপত্র হারিয়ে ফেলা, পড়াশােনায় মনোেযােগ কমে যাওয়া, মাদকের খরচ জোগাতে চুরি করা ইত্যাদি নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দেয়। নেশার জন্য প্রয়ােজনীয় ড্রাগ না পেলে মাদকাসক্তরা প্রায়ই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। লােকের সঙ্গে এরা দুর্ব্যবহার করে। মাদকের প্রভাবে রােগীর শারীরিক প্রতিক্রিয়াও হয় নেতিবাচক। তার মননশক্তি দুর্বল হতে থাকে। তার শরীর ভেঙে পড়ে। ক্রমে স্নায়ু শিথিল ও অসাড় হয়ে আসে। এভাবে সে মারাত্মক পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
মাদকের নেশা দ্রুত প্রসারের কারণ
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ক্ষেত্রে হতাশা ও দুঃখবােধ থেকে সাময়িক স্বস্তিলাভের আশা থেকেই এই মারাত্মক নেশা ক্রমবিস্তার লাভ করছে। পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে, অনেক দেশে বিপথগামী মানুষ ও বহুজাতিক সংস্থা উৎকট অর্থ লালসায় বেছে নিয়েছে রমরমা মাদক ব্যবসার পথ। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বিভিন্ন দেশের মাফিয়া চক্র। মাদকের ঐ কারবারিরা সারা বিশ্বে তাদের ব্যবসা ও হীনস্বার্থ রক্ষায় এই নেশা পরিকল্পিতভাবে ছাড়িয়ে দিচ্ছে।
মাদকাসক্তি প্রতিরোধের উপায়
মাদকাসক্তির করাল গ্রাস থেকে পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে হবে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন। সমাজসেবীরা উৎকণ্ঠা ও উদবেগ প্রকাশ করছেন। দেশে দেশে নানা সংস্থা ও সংগঠন মাদকবিরােধী আন্দোলন শুরু করেছে। বিশ্বের প্রতিটি শাস্ত্র, বিষয় ও ধর্মে মাদককে নিষিদ্ধ ঘােষণা করা হয়েছে এবং এর প্রতিকারে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন দর্শন, সমাজতত্ত্ব, সাহিত্য প্রতিটি বিষয়ে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে এসব নেশার প্রতি নিষেধমূলক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে। তাই এসব অনুশাসন মেনে সুশৃঙ্খল জীবনযাপনই পারে মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ করতে। আমাদের দেশেও মাদকবিরােধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। বেতার, টিভি, সংবাদপত্র ইত্যাদি গণমাধ্যম মাদকবিরােধী জনমত গঠনে সক্রিয় হয়েছে। মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিরােধ গড়ে তােলার লক্ষ্য নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এসব তৎপরতার লক্ষ্য হচ্ছেঃ
(ক) মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তােলা।
(খ) বেকার যুবকদের জন্যে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
(গ) মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ভেষজ ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ।
(ঘ) সুস্থ বিনোদনমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে তরুণদের সম্পৃক্ত করে নেশার হাতছানি থেকে তাদের দূরে রাখা।
(ঙ) ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে মাদকাসক্তির মর্মান্তিক পরিণতি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা।
উপসংহার
ভীরু খুঁজে সাহস, দুর্বল খুঁজে শক্তি, দুঃখী খুঁজে সুখ। কিন্তু অধঃপতন ছাড়া তারা আর কিছুই পায় না। তারপরও এরই আকর্ষণে অসংখ্য সম্ভবনাময় তরুণ আজ অকালে মৃত্যুর দিকে ছুতে চলছে। এ অবস্থা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে। কঠোর ব্যবস্থার মাধমে বন্ধ করতে হবে মাদকদ্রব্যের চোরাচালান। এ মারাত্মক সমস্যা সম্পর্কে ঘরে ঘরে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। সুস্থ, সুন্দর, আনন্দ-উচ্ছল সমাজজীবন গড়ে তােলার লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য ব্যবহার রােধ করার বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তির করাল গ্রাস থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব দল-মত নির্বিশেষে সবার।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)] |
Paragraph & Composition/Application/Emali | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক | প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক |
এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও
- বাংলাদেশের সংবিধানের প্রনয়ণের প্রক্রিয়া শুরু হয় কবে? উত্তর-২৩ মার্চ, ১৯৭২,বাংলাদেশের সংবিধান কবে উত্থাপিত হয়? উত্তর- ১২ অক্টোবর, ১৯৭২,গনপরিষদে কবে সংবিধান গৃহীত হয়? উত্তর-০৪ নভেম্বর,১৯৭২,কোন তারিখে বাংলাদেশের সংবিধান বলবৎ হয়? উত্তর-১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২
- Hon‘s 2nd: Business Communication & Report Writing
- Degree 3rd Year Exam Marketing 5th paper Suggestion