বিষয়: পরমাণু যুগে বাংলাদেশ
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। গত ১ ডিসেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম কংক্রিট ঢালাই আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু বিশ্বে প্রবেশ করল। জাতি হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের জন্য অনেক গৌরব ও আনন্দের। তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র উন্নত বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজ শুরুর মধ্য দিয়ে বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে ৩২তম সদস্য হল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ছাড়া আরও কয়েকটি দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বেলারুশ। দেশটির প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবে ২০১৮ সালে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিসরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে।
১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরে হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দিয়ে প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নেয় পাকিস্তান সরকার। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়নে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প হাতে নেন। শুরুতে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন ড. ওয়াজেদ মিয়া। এ সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পাকিস্তান আমলে এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত প্রচেষ্টা ও ইচ্ছাশক্তির কারণে প্রকল্পটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০১০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট হয়। একই বছর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ অ্যাটোমিক অ্যানার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট পাস করা হয়। অতঃপর আরও কিছুটা পথ পরিক্রমণ শেষে প্রকল্পটি এখন আলোর মুখ দেখতে চলেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে ২০২২ সালে। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের দুটি ইউনিট থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। প্রকল্পের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পাঁচ স্তরের বিশেষ নিরাপত্তাবলয়ের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনকালীন কোনো ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এ ছাড়াও রয়েছে রুশ প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর পরও যদি অনাকাক্সিক্ষত কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, এর তেজস্ক্রিয় পদার্থ জনগণের সংস্পর্শে যাবে না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান যুগান্তরকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প শুধুই একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়। এর মাধ্যমে বাঙালি নিউক্লিয়ার জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হবে, বাংলাদেশ পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করল। এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ। পাবনার রূপপুরে নতুনভাবে অধিগ্রহণ করা পদ্মার বিশাল চরে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির স্থান, প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ও পরিবেশ-সংক্রান্ত সব ধরনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে প্রকল্পের প্রকৌশল নকশা প্রস্তুত ও এ সংক্রান্ত অনুমোদন মিলেছে। এখন শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল স্থাপনা, অর্থাৎ রিঅ্যাক্টর বিল্ডিংয়ের (পারমাণবিক চুল্লি যেখানে বসানো হবে) নির্মাণকাজ।
প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের মাটি তুলনামূলক নরম হওয়ায় যন্ত্রের সাহায্যে মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত সিমেন্ট ঢোকানো হচ্ছে। এভাবে ১৭ হাজার ৪৫০ ঘনমিটার কংক্রিটিং হবে। প্রথম পর্যায়ে চার হাজার ঘনমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যেই পুরোটা শেষ হবে। মূল স্থাপনার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে ৭০ মিটার করে, আর ফাউন্ডেশনের (ভিত্তি) পুরুত্ব হবে তিন মিটার। পাশাপাশি চলছে প্রকল্প রক্ষাবাঁধ তৈরির কাজ। ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার লম্বা এবং ১৩ মিটার প্রস্থ এ বাঁধের কাজও এগিয়েছে অনেকটাই।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ইউরিক মিখাইল খোসলেভ যুগান্তরকে জানান, ২০১৭ সালটি রূপপুর প্রকল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখন রিঅ্যাক্টর বিল্ডিং তৈরির প্রস্তুতি হিসেবে সাব-বেজ তৈরি করা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে মূল প্রকল্পের ভিত্তি। অবকাঠামো ছাড়াও অনেক কাজ চলছে, যেমন- ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশপ হচ্ছে। মূল স্থাপনার কাজ শুরু হলে ৬৮ মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, রাশিয়া ও বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ ও কর্মী মিলে প্রায় হাজারের অধিক জনবল দিন-রাত কাজ করছেন। প্রকল্পের জন্য অত্যাধুনিক থ্রি প্লাস প্রজন্মের চুল্লি বসবে, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তি। এরই মধ্যে রাশিয়ার একটি প্রকল্পে এ চুল্লি চালু হয়েছে। তিনি জানান, ২০২০ সালের মধ্যেই রিঅ্যাক্টরসহ সব যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে চলে আসবে। এরপর এখানে সংযোজন করা হবে।
নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর যুগান্তরকে বলেন, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের কারণে এবং রাশিয়ার নির্মিত প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় কোনো ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এর পরও যদি অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, এর তেজস্ক্রিয় পদার্থ জনগণের সংস্পর্শে যাবে না। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি মোকাবেলার সক্ষমতা নিয়েই তৈরি করা হচ্ছে এ পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর। জাপানের ফুকুশিমা দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে এমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেও ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্লান্টটি নিরাপদে থাকে। প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, এই প্লান্ট থেকে ধোঁয়া নির্গত হবে না, শব্দও হবে না।
শৌকত আকবর আরও বলেন, পারমাণবিক প্রকল্পের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ‘স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ (ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় জ্বালানি) রাশিয়া ফেরত নেবে। গত ৩০ আগস্ট রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেরত নেয়া সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে সই করে উভয় দেশ। ভবিষ্যতে আরেকটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, যেখানে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় জ্বালানি পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিশোধন ব্যয়ের বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। তার মতে, বাস্তবায়ন ব্যয় বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদি এবং গ্যাস, তেল ও কয়লার মতো জ্বালানি খরচ না থাকায় তুলনামূলক সস্তা হবে এই বিদ্যুৎ। এ প্রকল্পের ‘লাইফ’ বা জীবনশক্তি হবে ৫০ বছর। আর তা সংস্কার করলে দাঁড়াবে ৮০ বছর।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)] |
Paragraph & Composition/Application/Emali | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক | প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক |
এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও
- বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা কোনটি?
- বাংলাদেশের সংবিধানের প্রনয়ণের প্রক্রিয়া শুরু হয় কবে? উত্তর-২৩ মার্চ, ১৯৭২,বাংলাদেশের সংবিধান কবে উত্থাপিত হয়? উত্তর- ১২ অক্টোবর, ১৯৭২,গনপরিষদে কবে সংবিধান গৃহীত হয়? উত্তর-০৪ নভেম্বর,১৯৭২,কোন তারিখে বাংলাদেশের সংবিধান বলবৎ হয়? উত্তর-১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২
- Hon‘s 2nd: Business Communication & Report Writing