প্রশ্ন সমাধান: আগুন নিভানোর জন্য পানি ব্যবহারের কারন কি,পানি ব্যবহারের করার হয় আগুন নিভানোর জন্য, পানি আগুনকে নিভায় কেন?,পানি দিলে আগুন নিভে যায় কেন?,পানি ঢাললে আগুন নেভে কেন,পানি কিভাবে আগুন নেভায়?,আগুন নেভাতে কেন পানি ব্যবহার (H2O) করা হয়,
আগুণ জ্বলতে থাকার জন্যে প্রয়োজন ৩ টি জিনিস- জ্বালানী , অক্সিজেন এবং তাপ। যে কোন একটাকে সরাতে পারলেই আগুণের খেলা শেষ। জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পানি ঢালা আগুণ নেভানোর জন্যে পানি দুটো কাজ করে।
পানিতে আছে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন। হাইড্রোজেন আগুনের সংস্পর্শে আসলে বিস্ফোরিত হয় আর অক্সিজেন আগুন জ্বালিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই আগুনের সংস্পর্শে পানি আসলে প্রথমে বিস্ফোরিত হবে পরে আগুন জ্বলতে থাকবে এমনটি হওয়ার কথা। কিন্ত বাস্তবে তা হয় না। কেন?
চলুন দেখাযাক তার জবাবে কে কী বলেছেন। অভিষেক সোম জিতের মতে – ‘আগুন নেভাতে পানি ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র বাংলাদেশে ও বিশেষ ক্ষেত্রে হাসপাতালে। কারণ এটি পোড়া জিনিস ঠাণ্ডা করে ও ক্ষতিকারক প্রভাব নেই। আসলে উন্নত বিশ্বে আগুন নেভাতে ফোম ব্যবহার করা হয়।
পানি, কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা হয় আগুন থেকে বের হবার জায়গা করার জন্য আর ফোম ব্যবহার করা হয় নেভানোর জন্য। ফোম আগুনকে কম্বলের মত আটকায়’। তবে ঠিক কীভাবে আগুন এই কাজটি করে তা উঠে আসে TAN ছদ্মনাম ধারী আমাদের আরেক পাঠকের কথায়।
TAN বলেন, ‘উপরের ছবিটি fire triangle. একটি বাহু সরিয়ে ফেলতে পারলেই আগুন নিভিয়ে ফেলা যায়। পানি cooling agent হিসেবে কাজ করে। পানিকে বাষ্পীভূত করতে প্রচুর পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়। ফলে পানি তাপ শোষণ করে নেয়। তাপ কমিয়ে দিয়ে পানি আগুণ নিভাতে সাহায্য করে। আবার পানি বাষ্পীভূত হওয়ার সময় প্রায় ১৭০০ গুণ বেশি স্থান অধিকার করে। ফলে কিছুটা অক্সিজেন এর যোগানও কমে যায়। আর এ কারণেই আগুন নেভাতে পানি ব্যবহার করা হয়’
প্রথমত, পানি জ্বলন্ত বস্তুর স্পর্শে এলেই বাষ্পীভূত হয়। ফলে, জ্বলন্ত বস্তু তার অনেকখানি উত্তাপ হারিয়ে ফেলে। এখন ঘটে মজার ব্যাপার। শীতল পানিকে ফুটন্ত অবস্থায় আনতে যে পরিমাণ উত্তাপের প্রয়োজন হয়, একই পরিমাণ ফুটন্ত পানিকে বাষ্পে পরিণত করতে তার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি উত্তাপের প্রয়োজন হয়। মোটকথা আগুণের উত্তাপের কিছু অংশ পানির পিছনে ব্যয়িত হয়ে যাবার ফলে জ্বলন্ত বস্তু কিছুটা স্বস্তি পায়। তাছাড়া বস্তুটা তো আগের চেয়ে কম উত্তপ্ত হলোই।
দ্বিতিয়ত, পানি বাষ্পীভূত হবার ফলে এখন তার আয়তন কয়েকশো গুণ বেড়ে গেছে। এই বাষ্প জ্বলন্ত বস্তুটিকে ঘোমটার মত ঢেকে ফেলে। ফলে জ্বলন্ত বস্তুটার কাছে বাষ্প ভেদ করে অক্সিজেন পৌঁছতে পারে না। আর দহনের জন্য অক্সিজেনের উপস্থিতি প্রয়োজন। ফলে, আগুণ নিভতে বাধ্য।
তার মানে, প্রথম ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে উত্তাপ। আর ২য় ক্ষেত্রে অক্সিজেনের স্পর্শ থেকে বস্তুটাকে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
আগুন নেভানোর জন্য প্রথমেই যেই উপাদানটির কথা মনে পড়ে তা হলো গিয়ে পানি। কিন্তু পানি কি সব ধরনের আগুন নেভানোর জন্য কার্যকর?
কোথাও আগুন লেগে গেলে সেই আগুনকে টিকিয়ে রাখতে তিনটি উপাদান প্রয়োজন- আগুন টিকিয়ে রাখতে অক্সিজেনের যোগান, পর্যাপ্ত তাপ এবং জ্বলনে সহায়ক জ্বালানী। এবার এই তিন উপাদানের মধ্যে ঠিকঠাক বিক্রিয়া ঘটলেই হলো। আগুন নেভাতে গেলে তিন উপাদানের মধ্যে যেকোনো একটি উপাদানকে সরিয়ে দিতেই হবে।
উপাদানগুলোকে সরিয়ে দিতে আমাদেরও উপযুক্ত উপাদান প্রয়োজন। কিন্তু সেই উপযুক্ত উপাদান কোনটি? এটি জানার পূর্বে আগুনের ধরন নিয়ে জানা প্রয়োজন।
আগুন লেগে যাওয়াকে পাঁচটি ক্লাসে ভাগ করা হয়েছে-
ক্লাস A: একেবারে সাধারণ আগুন লেগে যাওয়াটা A ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত। কিছু কঠিন পদার্থ এই যেমন প্লাস্টিক, রাবার, কাগজ, কাঠ, কাপড়- এসবে আগুন লাগা।
ক্লাস B: দাহ্য তরল- পেট্রোল, তেল, অ্যালকোহল, আলকাতরা, তেলজাত রং, পেট্রোলিয়াম গ্রীস কিংবা দাহ্য গ্যাস- প্রোপেন, বিউটেন; এসবে আগুন লেগে যাওয়াটা B ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত।
ক্লাস C: বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যেমন কম্পিউটার, ট্রান্সফরমার, মোটর; এসবে আগুন লাগাটা C ক্লাসের। C ক্লাস থেকে অন্যান্য ক্লাসের আগুন লেগে যেতে পারে।
ক্লাস D: দহনযোগ্য ধাতু যেমন ম্যাগনেসিয়াম, টাইটেনিয়াম, জির্কোনিয়াম, সোডিয়াম, লিথিয়াম এবং পটাসিয়ামে লেগে যাওয়া আগুন।
ক্লাস K: এটা রান্নাবান্না সংশ্লিষ্ট, সাধারণত স্টোভে ঘটে থাকে। রান্না করতে গিয়ে তেল চর্বি থেকে অঘটন ঘটতে পারে। কিছুক্ষেত্রে একে B ক্লাসের সাথে জুড়ে দেয়া হয়।
পাঁচ ধরনের আগুন লাগিয়ে দিয়েছি, এবার নেভানোর পালা।
ক্লাসভিত্তিক কোন কোন উপাদান ব্যবহার করা হয় আগুন নেভাতে দেখে নেয়া যাক।
ক্লাস A: পানি অথবা ফোম জাতীয় অগ্নিনির্বাপক বস্তু, অগ্নিনির্বাপন যোগ্য শুষ্ক রাসায়নিক পদার্থ।
ক্লাস B: কার্বন ডাই অক্সাইড, অগ্নিনির্বাপন যোগ্য শুষ্ক রাসায়নিক পদার্থ। পানি ব্যবহার বিপজ্জনক।
ক্লাস C: কার্বন ডাই অক্সাইড, অগ্নিনির্বাপন যোগ্য শুষ্ক রাসায়নিক পদার্থ। পানি ব্যবহার বিপজ্জনক।
ক্লাস D: অগ্নিনির্বাপন যোগ্য শুষ্ক পাউডার। পানি ব্যবহার করা যাবে না।
ক্লাস K: অগ্নিনির্বাপন যোগ্য ওয়েট কেমিক্যাল। পানি ব্যবহার না করলেই ভালো।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে বালির ব্যবহারও লক্ষণীয়।
শুধুমাত্র A ক্লাসের আগুন নেভাতে পানি ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ পানির ব্যবহার বেশ সীমিত পরিসরে। কাগজ, কাঠ, কাপড়, প্লাস্টিকজাতীয় জিনিসে আগুন লেগে গেলেই কেবল পানির সাহায্য যথেষ্ট।
অন্যান্য ক্লাস অর্থাৎ ধাতু, দাহ্য তরল-গ্যাস, বৈদ্যুতিক আগুনের ক্ষেত্রে পানির ব্যবহার উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বয়ে আনবে, আগুনকে আরও ছড়িয়ে যেতে সাহায্য করবে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অগ্নি দুর্ঘটনার সংখ্যা ৮৫ হাজারেরও বেশি যাতে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
তাদের তথ্যমতে অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণগুলো তিনটি- বৈদ্যুতিক গোলযোগ, চুলা থেকে লাগা আগুন এবং সিগারেটের আগুন। যত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তার ৭২ শতাংশই ঘটে এই তিনটি কারণে।
কিন্তু এই কারণগুলো এবং তা থেকে বাঁচার উপায় সাধারণ মানুষজন কতটা জানেন?
বৈদ্যুতিক গোলযোগ, চুলার আগুন এবং সিগারেটের আগুন
দমকল বাহিনীর অপারেশন্স বিভাগের উপ পরিচালক দিলিপ কুমার ঘোষ বলছেন, “আবাসিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে মানুষজন সবচেয়ে বড় ভুল যেটি করেন তা হল অনেকে রান্নার পর চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। চুলার আশপাশে অনেকেই শুকনো পদার্থ, কাগজ, কাপড় বা অন্যান্য দাহ্য পদার্থ রাখেন। শিশুদের হাতের নাগালে গ্যাসের চুলা ও ম্যাচের কাঠি অনেক সময় বিপদের কারণ হতে পারে।”
মশার কয়েলও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে সাবধান করেন মি. ঘোষ। “মশার কয়েল ব্যাবহারে হয়ত আপনি মশা থেকে বাঁচলেন কিন্তু এটি আবাসিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের বড় উৎস।”
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের বড় কারণ হিসেবে মি. ঘোষ বলছেন, বিদ্যুতের তার সঠিক ভাবে না নেয়া, অনেক বেশি মাল্টি-প্লাগ ব্যবহার করা, বাড়ির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার ক্ষমতার বাইরে বেশি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা, বৈদ্যুতিক তার বা সরঞ্জামের সাথে পানির সংস্পর্শ।
এছাড়া বিদ্যুৎ চলে গেলে মোমবাতি বা কুপির ব্যবহারও ঝুঁকিপূর্ণ। সিগারেট খাওয়ার পর তা কোথায় ফেলছেন এব্যাপারে সতর্ক থাকেন না অনেকে।
সেটি গ্যাসের লাইনের উপরে পড়তে পারে অথবা শুকনো কাগজ বা পাতার উপর পরে আগুন ধরে যেতে পারে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সিগারেট খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়াও বিপদের অন্যতম কারণ।
কোন ধরনের আগুন কীভাবে নেভাবেন?
দিলিপ কুমার রায় বলছেন, শুষ্ক ও দাহ্য পদার্থ চুলার কাছ থেকে সরিয়ে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।
তিনি বলছেন, শুষ্ক বস্তুর আগুন যেমন কাগজ, কাপড় বা গাছের পাতায় আগুন লাগলে নেভানোর সবচেয়ে ভালো উপায় পানি।
তবে রান্না করার সময় গরম তেলে আগুন লাগলে কড়াইটির উপরে কোন ঢাকনা দিতে হবে।
পেট্রল বা ডিজেলের মতো তেলে আগুন লাগলে পানি ব্যবহার করলে বরং বিপদ। এক্ষেত্রে আগুন যদি ছোট হয় তবে বালি, বস্তা, কাঁথার মতো ভারি কাপড় দিয়ে সেই আগুন ঢেকে দিতে হবে।
জ্বালানি তেলের আগুনে সবচেয়ে বেশি কাজ করে ফেনা জাতীয় পদার্থ। গ্যাসের আগুনে কার্বন ডাই-অক্সাইড সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
ঘরে সবসময় ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন মি. ঘোষ। যা দিয়ে সব ধরনের আগুন নেভানো যায়।
কিন্তু সেটি কেনার সামর্থ্য না থাকলে এক বালতি পানি ও বালি রাখার কথা বলছেন তিনি।
বিদ্যুতের আগুন লাগলে অবশ্যই ‘মেইন সুইচ’ বন্ধ করতে হবে। আর গ্যাসের আগুনের ক্ষেত্রে গ্যাসের রাইজার বন্ধ করে সরবরাহ কেটে দিতে হবে।
ঘন ঘন মহড়া, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ চিহ্নিত করে রাখার কথাও বলছেন তিনি।
মি. রায় বলছেন, এগুলো করলেই যে একশ ভাগ আগুনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে তা নয়। তবে এতে অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের সংখ্যা কমে আসবে।
দমকল বাহিনী তথ্যমতে শুধুমাত্র ২০১৮ সালে অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৮৬ কোটি টাকা।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।