প্রশ্ন সমাধান: ব্যবসায় ঋণের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ আলােচনা কর। অথবা, ব্যবসায় ঋণের ভালাে ও মন্দ দিক তুলে ধরো, ব্যবসায় ঋনের বৈশিষ্ট্য গুনাবলি গুলো কি কি ?, বাসায় ঋণের বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর।
ব্যবসায় ঋণের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ আলােচনা কর। অথবা, ব্যবসায় ঋণের ভালাে ও মন্দ দিক তুলে ধরো
উত্তর : ভূমিকা : ব্যবসায় ঋণের সুবিধা ও অসুবিধা অর্থায়নের উৎস। নিম্নে ব্যবসায় ঋণের সুবিধা ও অসসি আলােচনা করা হলাে
সুবিধাসমূহ : অর্থসংস্থানের উৎস হিসেবে ব্যবসায় অনেক সুবিধা রয়েছে। সুবিধাগুলাে নিচে বর্ণনা করা হলাে :
১, সহজলভ্যতা : ব্যবসায় ঋণ খুব সহজে পাওয়া , অর্থাৎ এটি তাৎক্ষণিকভাবে সংগ্রহ করা যায়। কোন ব্যক্তি ক্রয় কার সাথে সাথেই এটি সংগৃহীত হয়ে যায়। তাছাড়া এ অর্থসংস্থানের একটি ধারাবাহিক পদ্ধতি।
২. স্বল্প ব্যয় : ব্যবসায় ঋণ অপেক্ষাকৃত সস্তা। এর উপসরাসরি কোন সুদ প্রদান করতে হয় না ।
৩, নমনীয়তা : ব্যবসায় ঋণ অর্থসংস্থানের একটি নমনী মাধ্যম। যখন প্রয়ােজন হয় শুধু তখনই এটি হয়। এ জন্য কে বাধ্যবাধকতা নেই।
৪. অনানুষ্ঠানিকতা : অর্থসংস্থানের উৎস হিসেবে এটি সুবিধাজনক। ব্যাংক ঋণের চেয়ে অনেক সহজে এটি পাওয়া যায়। কোন আনুষ্ঠানিকতার প্রয়ােজন হয় না এবং পরিশােধ সময়কালও পরিবর্তনযােগ্য।
৫. কম ঝুঁকিপূর্ণ : অন্যান্য অর্থসংস্থান পদ্ধতির চেয়ে এ ঋণ কম ঝুঁকিপূর্ণ। যথাসময়ে এ ঋণ পরিশােধ করলে পাওনাদাররা তেমন কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চায় না।
৬, বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত : ব্যবসায় ঋণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার উপর কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা হয় না। এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার তেমন কোন | পর্যালােচনা ও পরীক্ষা করা হয় না।
৭, বিক্রয় বৃদ্ধি : ব্যবসায় ঋণের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান তার বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হলে শুধু নগতে বিক্রয়ের । মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান তার মােট বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারে না।
৮, প্রাতিষ্ঠানিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি : ধারে ক্রয়বিক্রয় ছাড়া | বর্তমান যুগে ব্যবসায়বাণিজ্যের কথা কল্পনা যায় না। ব্যবসায় ঋণ এ ধরনের সুযােগ সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। |
৯, শেষ সম্বল : ছােট, নতুন ও আর্থিক দিক থেকে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলােকে সহজে কেউ ঋণ প্রদান করা। এমতাবস্থায় ছােট প্রতিষ্ঠানগুলাের জন্য ব্যবসায় ঋণই অর্থসংস্থানের একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচিত। |
অসুবিধাসমূহ : ব্যবসায় ঋণের যেমন সুবিধা আছে | তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এগুলাে নিচে বর্ণনা করা হলাে :
১. স্বল্প সময়কাল : ব্যবসায় ঋণের পরিশােধ সময়কাল অল্প। পণ্য দ্রুত বিক্রয় না হলে ঋণ পরিশােধে সমস্যা দেখা ‘দেয়। সময়মত ঋণ পরিশােধ করতে না পারলে বিক্রেতার সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়। এতে পুনরায় ঋণ পেতে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
২. সুনির্দিষ্ট ব্যবহার : ব্যবসায় ঋণ ইচ্ছামূলক অর্থসংস্থানের নয়। এটি নগদ অর্থ পাওয়া যায় না বিধায় অন্য কাজে গানাে যায় না। শুধুমাত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা চলে।
৩. সুযােগ ব্যয় : প্রায়শ বাট্টার সুযােগ গ্রহণ করা যায় না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাট্টার সময়কাল খুব কম ধার্য করা হয়, ফলে সুযােগ ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৪, ব্যয়বহুল : বাট্টা প্রদান না করা হলে অথবা বাট্টার যাগ গ্রহণ না করলে দেখা যায় ব্যবসায় ঋণের খরচ তলনামূলকভাবে বেশি। তাছাড়া পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে ধরার কারণেও এ ঋণের ব্যয় বেশি পড়ে।
৫. করের পরিমাণ বৃদ্ধি : ব্যবসায় ঋণের ক্ষেত্রে কোনরূপ সদ দিতে হয় না। ফলে সুদের উপর যে কর ছাড়ের সুযােগ লাভ করা যায় তা এ ক্ষেত্রে সম্ভবপর হয় না। |
উপসংহার : উপরিউক্ত আলােচনার মাধ্যমে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, ব্যবসায় ঋণের অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায় ঋণের সুবিধা আধুনিক বাণিজ্যিক বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
ব্যবসায় ঋনের বৈশিষ্ট্য গুনাবলি গুলো কি কি ? অথবা বাসায় ঋণের বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর।
স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসাবে লালসায় পাশ দিও নগদ অর্থের যােগান দেয় না, তবুও এর ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিশ্টর কারণে বর্তমান ব্যবসা জগতে তা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে আলােচনা করা হলাে :
১.বাকীতে বা ধারে ক্রয়বিক্রয় : ব্যবসায় ঋণের প্রাথমিক # বা বৈশিষ্ট্য হলাে তা বাকিতে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট । পদ মল্যে ক্রয়বিক্রয় হলে ব্যবসায় ঋণ সৃষ্টির সুযােগ হয় না। উৎপাদনকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতার মধ্যে বাকিতে লেনদেনের মাধ্যমে ব্যবসায় ঋণের সৃষ্টি হয়।
২. কম আনুষ্ঠানিকতা : ব্যবসায় ঋণের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না। যদিও প্রতিশ্রুতিপত্র ও ব্যবসার স্বীকার পত্রের ক্ষেত্রে কিছুটা আনুষ্ঠানিকতার প্রয়ােজন আছে। খােলা হিসাব ব্যবস্থায় কোন আনুষ্ঠানিকতার কোন প্রয়ােজন হয় না।
৩, সময়সীমা : ব্যবসায় ঋণ সাধারণত: এক থেকে তিন মাসের জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করে থাকে যা মালে ক্রয় করে ডেলিভারী আনার সময় থেকে ঐ মালের মূল্য পরিশােধের সময় পর্যন্ত। অনেক সময় মাল বিক্রেতা বিশেষ সুবিধাদানের জন্য বা একই সাথে অধিক পরিমাণ মাল বিক্রয়ের লক্ষ্যে তিন মাসের অধিক সময়সীমার জন্য এ সুবিধা প্রদান করে থাকেন। |
৪. অর্থায়নের পরিমাণ : ব্যবসায় ঋণের মাধ্যমে অর্থায়নের পরিমাণ নির্ভর করে ক্রয়ের পরিমাণ ও মূল্য পরিশােধের সময়ের উপর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি ক্রেতা প্রতিদিন ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকার মাল ক্রয় করেন এবং মাল গ্রহণ করার ত্রিশ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশােধ করেন, তাহলে ব্যবসায় ঋণ খাতে অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০,০০০ X ৩০ = ৩,০০,০০০ (তিন লক্ষ) টাকার। এভাবে হিসাব করে দেখা যায় যে, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এ উপায়ে অর্থায়নের পরিমাণ অনেক বেশি।
৫, অর্থায়নের ব্যয় : অর্থায়নের উৎস হিসাবে ব্যবসায় ঋণের ব্যয় কত হবে তা নির্ভর করে কতগুলাে বিষয়ের উপর। তার মধ্যে প্রধান বিষয় হচ্ছে বিক্রেতা কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের শর্ত। বিক্রয়ের শর্তের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে নগদ বাট্টার হার। যদি বিক্রেতা প্রদত্ত নগদ বাট্টার কথা বলা না থাকে তাহলে ব্যবসায় ঋণের কোন ব্যয় থাকে না। পক্ষান্তরে যদি বিক্রয় শর্তে নগদ বাট্টার কথা উল্লেখ থাকে এবং ক্রেতা যদি বিক্রেতা প্রদত্ত নগদ বাট্টার সুবিধা গ্রহণ করে বা না করে তাহলে ব্যয় ভিন্ন রকম হয়।
৬. উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি : ব্যবসায় ঋণ ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলাে মজুদ মাল ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সগ্রহ করা। অর্থাৎ চলতি মূলধনের শুধুমাত্র মজুদ মাল ক্রয়ের জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থসহ করা হয়। তাই যে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শুধুমাত্র ক্রয়-বিক্রয় কাজে নিয়ােজিত তাদের সর্বাধিক ব্যবসায় ঋণ ব্যবহার করার প্রয়ােজন হয়। তাছাড়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাচামাল ক্রয়ের জন্য প্রচুর পরিমাণ ব্যবসায় ঋণ ব্যবহার করতে হয়।
৭. জামানত : অর্থায়নের জন্য ব্যবহৃত ব্যবসায় ঋণের জন্য কোন রকম জামানতের প্রয়ােজন হয় না। এক্ষেত্রে ক্রেতাবিক্রেতার মধ্যে ব্যবসায়িক সুস্পৰ্ক, ক্রেতার আর্থিক সচ্ছলতা বা সুনামই জামানতের কাজ করে থাকে। আর্থিকভাবে দুর্বল বা নতুন ক্রেতার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিক্রেতা। ক্রেতার নিকট থেকে প্রতিজ্ঞাপত্ৰ বা তৃতীয় পক্ষের নিশ্চয়তা দাবি করে থাকে।
৮. ক্রমবর্ধমান ঋণ : আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য উৎস হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদি ঋণের চেয়ে ব্যবসায় ঋণ সহজে ও ক্রমবর্ধমান হয়ে পাওয়া যায়। যদিও ঋতুগত কারণে ব্যবসায় ঋণের পরিমাণ কমবেশি হয়ে থাকে, বছরের সব সময় কিছু পরিমাণ ব্যবসায়ে ঋণ থাকবেই। যেহেতু ক্রয়-বিক্রয়ই যেকোনাে ব্যবসায়ের মূল কাজ; যেহেতু সারা বছরই ব্যবসায় ঋণের মাধ্যমে ক্রয় করে আবার তা সময়মত পরিশােধ করলে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ের স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের প্রয়ােজন মিটানাে যায় ।
৯. পুনঃ বিক্রয় : ব্যবসায় ঋণের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে অবশ্যই ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে কোন দ্রব্য বা সেবা পুনঃবিক্রয়ের জন্য ক্রয় করতে হবে। ভােগের জন্য বাকিতে কোন দ্রব্য বা সেবা ক্রয় করলে তা ব্যবসায় ঋণের সৃষ্টি করবে না।
১০, পর্যাপ্ততা : যেকোনাে অর্থনীতিতে প্রায় সব ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় ঋণ ব্যবহার করে থাকে। প্রায় সব ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রয়ােজনীয় স্বল্পমেয়াদি মূলধনের প্রায় ৪০ শতাংশই ব্যবসায় ঋণের মাধ্যমে মিটানাে হয়। বিশেষ করে ছােট ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যারা উৎপাদনকারী বা পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী হিসাবে কাজ করে তারা তাদের প্রয়ােজনীয় মূলধনের । একটা বিরাট অংশ ব্যবসায় ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করে থাকে।
১১, পারস্পরিক আস্থা ও সুস্পৰ্ক : পারস্পরিক আস্থা ও সুসম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ব্যবসায় ঋণের মূল ভিত্তি হলাে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সুসম্পর্ক। আস্থা ও সম্পর্ক ভালাে না হলে কেউ কাউকে বাকিতে মাল বিক্রয় করে না।
উপরের আলােচনা আলােকে বলা যায় যে, স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসাবে ব্যবসায়ের ঋণের উপরের বৈশিষ্ট্যগুলি থাকা অত্যবশ্যক।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট
- ইজারা সম্পদ বিক্রয়ের উপর করের প্রভাব বিস্তারিত আলোচনা কর