প্রশ্ন সমাধান: অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কাকে বলে, বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দাও,মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও এদের শ্রেণীবিভাজন
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কাকে বলে। বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দাও।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অর্থনৈতিক ভূগোলের এটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। মানুষ তার জীবনধারণ ও জীবিকা নির্বাহের জন্য যে সকল উৎপাদন মূলক কাজ করে থাকে তাকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বলে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পেছনে কিছু নিয়ামক রয়েছে সেগুলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড : মানুষের যেসব কার্যাবলী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয় যা অর্থ বা আর্থিক মূল্য দ্বারা নিরূপণ করা যায় তার সমষ্টিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলে। যেমন- কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস্য চাষ, পরিবহন, আইন ব্যবসা, ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিচে তার কয়েকটি তুলে ধরা হল।
অধ্যাপক আলেকজান্ডার এর মতে- পৃথিবীর পৃষ্ঠে কোন কিছুর উৎপাদন, বিনিময়, এবং ভোগ বা ব্যবহারের সাথে সম্পর্কযুক্ত মানুষের যাবতীয় কর্মকাণ্ডই অর্থনৈতিক হলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে- পণ্য সামগ্রী ও সেবার উৎপাদন, বিনিময় এবং ব্যবহারের সাথে সম্পর্কযুক্ত যে কোনো মানবীয় আচরণের প্রকাশই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
অধ্যাপক টমাস এর মতে- উৎপাদন, ভোগ ও বন্টনজনিত কর্মকাণ্ডকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বলে।
সহজভাবে বলা যায়- মানুষ দৈনন্দিন জীবনে জীবন যাপনের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যেসব কাজগুলো করে থাকে তাদের সমষ্টিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা হয়।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্রেণীবিভাগ:
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশের পার্থক্যের জন্য মানুষের শিক্ষা, দক্ষতা ও মেধার উন্নয়নের সাথে সাথে জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তন ঘটে। মানুষের এ পরিবর্তিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধারাকে নিম্নোক্ত চারটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়। যথা
১। প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড :
মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য সরাসরি প্রকৃতির সাথে যে সকল কর্মের জড়িত থাকে সেগুলোকে প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা হয়। প্রাচীনকালে মানুষ ছিল বর্বর ও অসহায়। প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল তাদের জীবন। মানুষের সেসময় ফলমূল সংগ্রহ, পশু ও মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ।
বৈশিষ্ট্যসমূহ:
ক) প্রাথমিক পর্যায়ের পণ্যসমূহ সরাসরি প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত হয়
খ) এ কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি হচ্ছে ভূমি ও শ্রম
গ) এ ধরনের কর্মকাণ্ড সাধারণত প্রাথমিক
ঘ) মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করাই এর প্রধান লক্ষ্য
ঙ) অনুন্নত দেশ সমূহে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সর্বাধিক লক্ষ্য করা যায়
২। দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড:
প্রাথমিক পর্যায়ের কর্মকাণ্ড হতে উৎপাদিত পণ্যের আকার ও গঠন পরিবর্তন করে উপযোগিতা সৃষ্টি করার পণ্যসামগ্রীর প্রক্রিয়াকে দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা হয়। যেমন- ধান থেকে চাল এবং তুলা হতে সুতা ইত্যাদি। আবার খনি হতে প্রাপ্ত পাতলা আকরিক লোহার রূপ পরিবর্তন করে ঢালাই লোহার পেরেক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করা । এসব পরিবর্তন সাধন সাধারণত প্রস্তুতকারী শিল্পের কাজ হওয়ায় সকল প্রকার দ্রব্যকে রূপান্তরিত করে সর্বাধিক ব্যবহারোপযোগী বস্তুতে পরিণত করা হয়।
বৈশিষ্ট্যসমূহ:
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
ক) দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত শিল্পায়নে প্রথম পর্যায়ের উৎপাদিত দ্রব্য সমূহকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে অধিকতর নবায়নযোগ্য করা হয়।
খ) এ কর্মকান্ডে ভূমির ব্যবহার কম
গ) এ ধরনের কর্মকাণ্ড শহর বা নগরে গড়ে ওঠে
ঘ) এ কর্মকাণ্ডে অর্ধেক লোকের কর্মসংস্থান হয়
ঙ। এ কর্মকাণ্ডে অধিক মূলধন ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার হয়
৩। তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড :
কোন প্রকার উৎপাদন না করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ড থেকে প্রাপ্ত বস্তুসমূহের উপযোগিতা বৃদ্ধি করা কে তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা হয়। যেমন- পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্যসমূহ;
ক) তৃতীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ডের মাত্রা নির্ভর করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পণ্য দ্রব্যের উৎপাদনের উপর
খ) এ কর্মকাণ্ডে দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে হবে
গ) এ পর্যায়ের কর্মকাণ্ড পণ্যের মানের উপর নির্ভরশীল
ঘ) এ কর্মকাণ্ডে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বাজার সৃষ্টি করতে হবে
ঙ) এ কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিবর্গ পরস্পরের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত
৪। চতুর্থ পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:
চতুর্থ পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের সাথে জড়িত। তবে সেবামূলক কার্যক্রম বেশি পরিলক্ষিত হয়। সেবামূলক কার্যক্রম এর মধ্যে বৃত্তিমূলক, প্রশাসনিক, বিনোদনমূলক সেবাকর্ম অন্তর্ভুক্ত। বৃত্তিমূলক সেবা কর্মের মধ্যে ডাক্তারি, ওকালতি, শিক্ষকতা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ব্যাংকার, নাপিত ইত্যাদি পেশার লোক অন্যতম।
আবার প্রশাসনিক সেবা গরমের মধ্যে সরকার প্রধান ও দেশের বিভিন্ন বিভাগের সহকারী ও বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা ও নির্বাহী কর্মকর্তা যেমন- রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, সংসদ সদস্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মধ্যে চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক, সার্কাস, নাটক ইত্যাদি প্রধান।
বৈশিষ্ট্যসমূহ:
ক) এ পর্যায়ের কর্মকাণ্ড শহর ও নগরমুখী
খ) এ পর্যায়ের কর্মকাণ্ড মূলধনমুখী হলেও মূলত সেবামূলক
গ) এ কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করেই কোন দেশের উন্নতির পরিমাপ এবং অবস্থা নির্ণয় করা যায়
ঘ) এ পর্যায়ের উন্নতি মূলক চিন্তা ধারাকে সামনে রেখে দেশ পরিচালনা করা হয়।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।