প্রশ্ন সমাধান: চাকরির পরীক্ষায় সারমর্ম লেখার কৌশল, চাকরির পরীক্ষায় সারমর্ম লিখবেন কীভাবে,সারাংশ-সারমর্ম লেখার নিয়ম,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল সারাংশ-সারমর্ম, সারাংশ-সারমর্ম লিখিত পরীক্ষায় শেষ মুহূর্তের শর্টকাট প্রস্তুতি
বিসিএসসহ চাকরির বিভিন্ন লিখিত পরীক্ষায় সারাংশ বা সারমর্ম লিখতে হয়। কীভাবে লিখলে এ অংশে ভালো নম্বর পাওয়া যায়, সে বিষয়ে আজ আলোচনা করব। প্রথমেই মনে রাখবেন, সারাংশ বা সারমর্মে কত নম্বর বরাদ্দ আছে, তা নিয়ে ভাববেন না। বরং হিসাব করে বের করুন, মোট নম্বরের ভিত্তিতে এটি লেখার জন্য কতটুকু সময় পাচ্ছেন। যেমন, বিসিএস পরীক্ষায় সারমর্মের জন্য নির্ধারিত নম্বর ২০। এটি লেখার জন্য অন্তত ২০ মিনিট সময় পাবেন। তাই তাড়াহুড়া করে শুরু করবেন না। মূলভাব বা বিষয় বোঝার জন্য অর্ধেক সময় বরাদ্দ রাখুন।
সারাংশ বা সারমর্ম করার সময় যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে :
১.অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে অন্তত তিনবার পড়ুন।
২. বাক্যগুলো আলাদাভাবে বোঝার চেষ্টা করুন।
৩. শব্দ দেখেও ভাববস্তু বোঝার চেষ্টা করতে পারেন।
৪. সারাংশ বা সারমর্ম তিনটি বাক্যে লিখবেন।
৫. প্রথম বাক্যেই মূলকথাটি লিখে দেবেন; বাকি কথাগুলো এরপরে লিখবেন।
৬. কোনো ধরনের অলংকারমণ্ডিত ভাষা ও কাব্যিক উপস্থাপনা করা যাবে না। যেমন, ‘পৃথিবীতে আজ অদ্ভুত আঁধার এসেছে’ লেখা যাবে না। বরং লিখতে হবে ‘পৃথিবী আজ সংকটাপন্ন’।
৭. কোনো ধরনের উপমা ব্যবহার করা যাবে না। মতো/যেন/ন্যায় এ ধরনের শব্দ বর্জন করতে হবে। যেমন, ‘ধারালো তরবারির মতো’, ‘সত্যের ন্যায়’ ইত্যাদি লেখা যাবে না।
৮. সারমর্মের তিনটি বাক্যই একভাবে শেষ করবেন না।
৯. পরপর দুটির বেশি বিশেষণ ব্যবহার না করাই ভালো। যেমন, ‘অত্যাচারিত, নিপীড়িত, শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে’, লেখা যাবে না।
১০. বানান নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে বিকল্প শব্দ দিয়ে লিখবেন; ভুল বানান লেখা যাবে না।
কবিতা যখন কঠিন মনে হয়
কবিতার সারমর্ম করা অনেক সময় কঠিন হয়। কারণ, আধুনিক কবিতার ভাব, ভাষা উপলব্ধি করা সহজ নয়। এ জন্য কিছু কৌশল নিচে দেখানো হলো:
ক. কবিতার শব্দের মধ্য দিয়ে কবির উপস্থাপিত ভাবকে বোঝার চেষ্টা করুন। কিছু শব্দের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ভাব এবং কিছু শব্দের মধ্য দিয়ে নেতিবাচক ভাব প্রকাশিত হয়। যেমন: আলো, সামনে, একত্র, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ইত্যাদি ইতিবাচক ভাব। অন্ধকার, পেছনে, বিচ্ছিন্নতা, মাথা নিচু করা এগুলো নেতিবাচক ভাব।
খ. কবিতায় বিভিন্ন উপাদান দিয়ে বিভিন্ন রকম অর্থ প্রকাশ করা হয়। যেমন, সাপ একই সঙ্গে জীবন ও মরণের প্রতীক, নদী জীবনের গতিশীলতার প্রতীক, অশ্রুবিন্দু বেদনার প্রতীক। আবার সবুজ ধানগাছ সজীবতার প্রতীক, পাকা ধানগাছ সম্ভাবনার ইঙ্গিতবাহী, শুকনা খড় অন্তঃসারশূন্যতার চিহ্ন।
গ. কবিতায় রং দিয়ে বিভিন্ন রকম অনুভূতি প্রকাশ করা হতে পারে। যেমন, লাল রং দিয়ে বিপ্লব ও সংগ্রাম, নীল রং দিয়ে বেদনা ও বিরহ, হলুদ রং দিয়ে শূন্যতা ও একাকিত্ব, সোনালি রং দিয়ে আশা ও সম্ভাবনাকে প্রকাশ করা হয়।
ঘ. আমরা যেভাবে কথা বলি, কবিতায় শব্দগুলো সেভাবে বিন্যস্ত থাকে না। যেমন, ‘তোমাকে লাল শাড়িতে খুব মানায়’, এই কথাটি কবিতায় থাকতে পারে এভাবে—‘মানায় শাড়িতে লাল তোমাকে খুব’।
ঙ. কবিতায় এক পঙ্ক্তি থেকে অন্য পঙ্ক্তিতে ভাব প্রবাহিত হয়। এ জন্য কবিতায় বিরামচিহ্ন দেখে বিরতি দিয়ে পড়বেন।
চ. বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণী, বস্তু কিংবা উপাদান কবিতায় একেকটি চরিত্র হয়ে ওঠে। এসব চরিত্র মানবচরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ বা প্রতিরূপ। যেমন, ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার চড়ুই আর বাবুই পাখি বাস্তব জগতের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে।
মানুষের যুগযন্ত্রণা, অস্থিরতা, অস্তিত্বের সংকট, হতাশা, শূন্যতা, একাকিত্ব—এগুলো আধুনিক কবিতার বিশাল জায়গাজুড়ে আছে। কবিতায় এসব অনুভব খুব সহজেই বোঝা যায়। মাথায় রাখবেন, আধুনিক কবিতা শুরু হয় হতাশা দিয়ে। কিন্তু এর পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে হতাশা দিয়ে, কিংবা নতুন আশা ও সম্ভাবনার ইঙ্গিতের মধ্য দিয়ে।
কয়েকটি নমুনা
১. হে চিরদীপ্ত, সুপ্তি ভাসাও
জাগার গানে;
তোমার শিখাটি উঠুক জ্বলিয়া
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সবার প্রাণে।
ছায়া ফেলিয়াছে প্রলয়ের নিশা,
আঁধারে ধরণী হারায়েছে দিশা।
তুমি দাও বুকে অমৃতের তৃষা
আলোর ধ্যানে!
ধ্বংস তিলক আঁকে চক্রীরা
বিশ্ব-ভালে।
হৃদয় ধর্ম বাঁধা পড়িয়াছে
স্বার্থ-জালে।
এই কবিতায় ‘হে চিরদীপ্ত’ বলতে কাকে নির্দেশ করা হয়েছে, বোঝার চেষ্টা করুন। কবিতায় ‘ছায়া ফেলিয়াছে প্রলয়ের নিশা’, ‘আঁধারে ধরণী হারায়েছে দিশা’, ‘ধ্বংস তিলক আঁকে চক্রীরা’ ইত্যাদি কথার মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে—পৃথিবী এখন ভালো নেই। তবু কবিতায় হতাশা ব্যক্ত হয়নি। বরং এখানে ‘সুপ্তি ভাসাও জাগার গানে’, ‘তোমার শিখাটি উঠুক জ্বলিয়া সবার প্রাণে’, ‘তুমি দাও বুকে অমৃতের তৃষা আলোর ধ্যানে’ ইত্যাদি কথার মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে সুন্দর করে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। অতএব এ অংশের সারমর্ম এমন হতে পারে:
সারমর্ম: বিধাতার গুণাবলির অংশকে ধারণ করে আমরা পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে পারি। পরিপার্শ্ব এখন অন্যায় ও অশুভ শক্তিতে ভরে গেছে। প্রেম ও পবিত্রের আলোয় পৃথিবীকে সুন্দর করে তোলা সম্ভব।
২. নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো
যুগ জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আলো।
সবাই মোরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে
নিন্দুক সে তো ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে।
বিশ্বজনে নিঃস্ব করে পবিত্রতা আনে
সাধকজনে বিস্তারিতে তার মত কে জানে?
সারমর্ম: নিন্দা ও সমালোচনা জীবন গঠনের বড় অবলম্বন হতে পারে। সুসময়ের বন্ধুরা দুঃখের দিনে, বিপদের সময় না–ও থাকতে পাড়ে। কিন্তু নিন্দুক অসৎ উদ্দেশ্যে সর্বক্ষণ পেছনে লেগে থাকে বলে আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
৩. একদা ছিল না জুতা চরণযুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে।
দেখি সেথা একজন পদ নাহি তার
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন
আপনার মনে দুঃখ থাকে কতক্ষণ।
সারমর্ম: মানুষ সর্বদাই উচ্চাকাক্ষী। কিন্তু অপরের সীমাবদ্ধতার দিকে তাকালে নিজের অনেক অপূর্ণতার খেদ দূর হতে পারে। অন্যের দুঃখ দেখলে প্রায়ই নিজের দুঃখ লোপ পায়।
সতর্কতা
১. প্রশ্নে কয়টি সারাংশ বা সারমর্মের উত্তর করতে বলেছে দেখে নিতে হবে।
২. একটি গদ্য ও একটি কবিতা অংশ থাকলে যেটি ভালো পারবেন, সেটির উত্তর করবেন।
৩. যে পৃষ্ঠায় সারমর্ম লিখবেন, সে পৃষ্ঠার নিচের দিকে একবার খসড়া করে নিতে পারেন।
৪.‘এখানে কবি বলেছেন’ এ রকম শব্দ প্রয়োগ করা যাবে না।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট
- ইজারা সম্পদ বিক্রয়ের উপর করের প্রভাব বিস্তারিত আলোচনা কর