আজকের বিষয়: কুরবানির ১০ দিন আগে যেসব কাজ করা সুন্নাত ,কোরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যে সকল কর্ম থেকে বিরত থাকবেন,কোরবানির ঈদের আগে নখ চুল কাটা যাবে?
জিলহজ্ব মাসে চুল-নখ কাটার বিধান
জিলহজ্জ মাস শুরু হলে যে ব্যক্তি কু’রবানি করতে চায় তার জন্য শরীরের অতিরিক্ত পশম (যেমন, মাথার চুল, নাভির নিচের বা বগলের পশম ইত্যাদি) কাটা জায়েজ নাই। কারণ, উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ-
“জিলহজ্জ মাস শুরু হলে যে ব্যক্তি কু’রবানি করতে চায় সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে।” (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: কুরবানি, অনুচ্ছেদ: জিলহজ্জ মাস শুরু হলে যে ব্যক্তি কু’রবানি করবে তার জন্য চুল ও নখ কাটা নিষেধ।)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে: ((ولا من بشرته شيئاً) “শরীরের চামড়া যেন না কাটে।” (সহীহ মুসলিম)
- ইবনে কুদামা রহ. বলেন: নিষেধাজ্ঞার দাবী হলো হারাম হওয়া। অর্থাৎ যে কু’রবানী করতে চায় তার জন্য কু’রবানীর পশু জবেহ করা পর্যন্ত নখ-চুল, শরীরের অতিরিক্ত চামড়া ইত্যাদি কাটা হারাম। এ বিধান যে ব্যক্তি কু’রবানি করবে কেবল তার জন্য প্রযোজ্য। যাদের পক্ষ থেকে কু’রবানি করা হবে যেমন, স্ত্রী, সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যগণের জন্য অথবা যারা কু’রবানি করবে না তাদের নখ-চুল ইত্যাদি কাটাতে কোন অসুবিধা নাই।
- জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে কু’রবানির পশু জবেহ করা পর্যন্ত চুল-নখ কাটা যাবে না। কু’রবানি করার পর তা কাটা যাবে। কোন ব্যক্তি ভুল বশত: নখ, চুল ইত্যাদি কেটে ফেললে তার জন্য কাফফারা নেই। তবে এ জন্য তওবা করতে হবে। এ দিনগুলোতে নতুন জামা কাপড়, আতর-সুগন্ধি মাখা ও স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হওয়ায় কোন অসুবিধা নাই।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
প্রশ্ন: অনেকেই বলেন কোরবানির ঈদের আগে নখ, চুল কাটা যাবে না। এটা কি ঠিক?
উত্তর: হাদিস শরিফে এসেছে হজরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যার কাছে কোরবানির পশু আছে, সে ওটা কোরবানি দিতে চায় এবং জিলহজ মাসের চাঁদও দেখা গেছে; সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি যেন কোরবানি করার আগে চুল ও নখ না কাটে।
এই হাদিসের আলোকে হানাফি মাজহাবের স্কলাররা বলেন, যে ব্যক্তি কোরবানি দেবেন তার জন্য জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কোরবানির আগ পর্যন্ত অর্থাৎ জিলহজ মাসের প্রথম দশকে নখ, চুল ও শরীরের যেকোনও পশম না কাটা মুস্তাহাব। অর্থাৎ এটি পালন করলে সওয়াব আছে, তবে না করলে গুনাহ হবে না।
উল্লেখ্য, নখ ও নাভির নিচের পশম ৪০ দিনের অতিরিক্ত যেন না হয়ে যায় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
তথ্যসূত্র: মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-১৯৭৭। আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং-২৭৯১। তিরমিজি শরিফ, হাদিস নং-১৫২৩। নাসায়ি শরিফ, হাদিস নং-৪৩৬১। ইবনে মাজাহ শরিফ, হাদিস নং-৩১৫০। মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-২৬৬৫৪। ফতোয়ায়ে শামি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৮১।
মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী- খতিব, পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদ, গুলিস্তান, ঢাকা।
- “লা আদওয়া” সংক্রমন নেই!হাদীসটি কী বুঝায়?
- রমজানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যত পরামর্শ
- ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
- আজহারী: কোন ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙে
- রমজান মাসের ৯টি ফজিলত
জিলহজ মাসে চুল কাটা
একটি কথা প্রচলন আছে যে জিলহজ মাসে চুল নখ কাটা যাবেনা। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জিলহজ মাসের কুরবানী করবে তাহলে সে যেন তার শরীরের পশম এবং নখ না কাটে, কোরবানি করা পর্যন্ত। অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি কোরবানি করার নিয়ত করে থাকে তাহলে জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কোরবানি করার আগে পর্যন্ত শরীরের পশম চুল দাড়ি ইত্যাদি কাটা যাবে না। যে ব্যাক্তি কোরবানি করবে শুধুমাত্র তার ওপর এই বিধান। পরিবারের অন্য কারোর ওপর জিলহজ মাসে চুল নখ কাটা এই বিধান নয়।
যে ব্যাক্তি কোরবানি করবে তার ওপর এই বিধানটি মুস্তাহাব অনেক ওলামায়ে কেরাম তাই মনে করেন। আবার অন্য এক দল মনে পড়ে এটি ওয়াজিব। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেহেতু বলেছেন সেহেতু এর গুরুত্ব অনেক। তো এটাই উত্তম হবে আপনি যদি কোরবানি করেন তাহলে জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা পর থেকে কোরবানি করার আগে পর্যন্ত আপনার শরীরের যেকোনো পশম কাটা থেকে বিরত থাকবেন।
এই বিধান বিশেষ করে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে কোরবানি করার আগে পর্যন্ত। কোরবানি করার পরে আপনি চাইলে চুল গোঁফ নখ ইত্যাদি কাটতে পারেন। যেহেতু আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের এটির নির্দেশ করে গিয়েছে সেহেতু যে ব্যক্তি কোরবানি করবে তাকে এ কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
যদি ভুলক্রমে কেউ চুল গোঁফ নখ ইত্যাদি কেটে ফেলে তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে যে এটা থেকে বিরত থাকা। যে ব্যক্তি কোরবানি করবে সে ব্যাক্তি জিলহজ মাসে চুল নখ কাটা নিষিদ্ধ।
জিলহজ মাসে নখ কাটা – জিলহজ মাসে চুল নখ কাটা
জিলহজ মাসে নখ কাটা বিষয়ে একই বিধান যেটা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,” যখন জিলহজ এর ১০ দিন আসে এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার নিয়ত করে তখন সে যেন নিজের চুল ও চামড়ার কোন অংশ না কাটে”। (মুসলিম)
যেহেতু আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে ব্যক্তি কোরবানি করার নিয়ত করে সে ব্যক্তি কে তার শরীরের যে কোন প্রকার পশম ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। সেহেতু আমাদের উচিত এই কাজ থেকে বিরত থাকা। তবে সকলের জন্য এমনটা নয়। শুধুমাত্র যে ব্যাক্তি কোরবানি করবে তার ওপর এই বিধান। তার পরিবারের অন্য সদস্যরা চাইলে জিলহজ মাসে চুল ইত্যাদি কাটতে পারেন।
শেষ কথাঃ জিলহজ মাসে চুল নখ কাটা
অনেকেই আছে যারা এই ভুলটি করে থাকে কেবলমাত্র যে ব্যাক্তি কোরবানি করবে তার ওপর জিলহজ মাসে চুল নখ কাটা নিষিদ্ধ এই বিধানটি। তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর নয়। উপরে আমরা জিলহজ মাসে চুল নখ কাটা বিষয় সম্পূর্ণ আলোচনা করেছি।
এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম পোস্ট আরও করতে নিয়মিত আমাদের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট ফলো করুন।
জিলহজ মাস শুরু হওয়ার আগে নখ, চুল, গোঁফ, বোগল-নাভির পশম ইত্যাদি কেটে নেওয়া উচিত। কেননা জিলহজ শুরু হলে এসব কাটা থেকে বিরত থাকা সুন্নত ও মোস্তাহাব আমল। বিশেষ করে যারা কোরবানি করার সংকল্প করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য করে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কাছে কোরবানির পশু আছে সে যেন জিলহজের নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।’ (মুসলিম: ৪৯৫৯, আবু দাউদ: ২৭৮২)
এক দল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, এ কাজটি ওয়াজিব। তবে রাসুল (স.)-এর নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে, কাজটি গুরুত্বপূর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং, যারা কোরবানি করবেন তাদের জন্য উত্তম হলো তারা চুল, দাড়ি, গোঁফ এবং নখ কোরবানি হওয়ার আগ পর্যন্ত কাটবেন না। কোরবানি হওয়ার পর এগুলো কাটা জায়েজ রয়েছে।
যারা কোরবানি করতে সক্ষম নয় তারাও এই আমল পালন করতে পারে। অর্থাৎ নিজের চুল, নখ, গোঁফ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকবে। কেননা কোনো অসচ্ছল লোক যদি এ দিনগুলোতে চুল, নখ, গোঁফ ইত্যাদি না কেটে ঈদের দিন কাটে, তবে তাদের পূর্ণ কোরবানির সওয়াব দেওয়া হবে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আমি কোরবানির দিন সম্পর্কে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ তাআলা তা এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে অর্থাৎ যা শুধু দুধপানের জন্য দেওয়া হয়েছে? আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, না; বরং সেদিন তুমি তোমার চুল কাটবে, নখ কাটবে, গোঁফ ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটিই আল্লাহর কাছে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে। (মুসনাদে আহমদ: ৬৫৭৫)
উক্ত হাদিসে রাসুল (স.) কোরবানি করতে অক্ষম ব্যক্তিরাও যেন সচ্ছল মুসলমানদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ও খুশি উদ্যাপনে অংশীদার হতে পারে, সেই রাস্তা বাতলে দিয়েছেন। তারা এই ছোট্ট আমলটির মাধ্যমেও পরিপূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবে। অনুরূপভাবে হাজিদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী হিসেবে গণ্য হবে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহ ঈদের দিনে তাঁর কোনো বান্দাকেই নৈরাশ করেননি।
তবে, যারা কোরবানি করবে না, তাদেরকে নখ, চুল ইত্যাদি কাটতে নিষেধ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে শাইখ বিন বায (রহ) বলেন, আলেমগণের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, ‘তারা চুল কাটা ও নখ কাটার নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। হুকুমটি কোরবানিকারীর জন্য খাস, যিনি তার সম্পদ থেকে কোরবানির পশুটি ক্রয় করেছেন।’ (ফতোয়ায়ে ইসলামিয়্যা: ২/৩১৬)
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও
- নামাজে আমরা যা বলি তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
- ইসলামে কুরবানীর গুরুত্ব ও বিধান,ইসলামে কোরবানির যত ফজিলত গুরুত্ব ও শিক্ষা
- বৃষ্টির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বৃষ্টির নামাজের পর আমল
- ইসতিসকার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, ইসতিসকার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইসতিসকার নামাজের পর আমল
- বাসর রাত সম্পর্কে ইসলামের বিধান,বাসর রাতের নামাজ
- তাসবিহ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, তাসবিহ সালাতের ফজিলত