প্রশ্ন সমাধান: মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আলোচনা কর।,মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিবরণ দাও,মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিশ্লেষণ কর।,মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যাখ্যা কর
ভূমিকা : মানি লন্ডারিং বলতে আমরা সাধারণত হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারকেই বুঝে থাকি। কিন্তু এটা শুধু হুন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মানি লন্ডারিং কথাটি আরো ব্যাপক অর্থ বহন করে। সহজভাবে বলতে গেলে মানি লন্ডারিং এর অর্থ দাঁড়ায় সমাজের অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা কালো টাকাকে সাদা করে। অর্থাৎ যে কোনো প্রকার সম্পত্তি সরাসরি বা
অন্য কোনো অবৈধ উপায়ে অর্জন, হস্তান্তর এবং এসব কার্যকলাপ গোপন রাখাই মানি লন্ডারিং। মানি লন্ডারিং প্রতিটি দেশের জাতীয় অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যে দেশে মানি লন্ডারিং যত ব্যাপক সে দেশের অর্থনীতি ততই দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সমস্যা বিশ্বের সকল দেশে বিরাজিত রয়েছে।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন : ১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সময়ে ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির পর মানি লন্ডারিং ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৬ সালে তারা আইন প্রণয়ন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়। আমেরিকার সকল ব্যাংকে অবৈধভাবে মুদ্রা পাচার বন্ধ করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
শুধু আমেরিকা নয়, সমগ্র বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের পিছনে যারা অর্থ যোগান দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মানি লন্ডারিং কার্যক্রম প্রতিরোধকল্পে বিভিন্ন দেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী এখন অবৈধভাবে মুদ্রা পাচারের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলছে। সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার পাচার রোধ এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করাই এ আইনের লক্ষ্য।
আরো ও সাজেশন:-
দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ অবৈধ পন্থায় পাচার হয়ে যাওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি
হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে এবং কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। আর এ অবৈধ পাচার বন্ধ করার জন্যই প্রণীত হয়েছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন। এ আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর কারাদণ্ড এবং পাচারের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করার বিধান দিয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব ও ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর অর্পণ করা হয়েছে। সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাতে মানি লন্ডারিং সঠিকভাবে প্রতিরোধ করতে পারে তার জন্য যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা নিম্নে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
১. গ্রাহকদের পরিচয়ের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
২. গ্রাহকদের হিসাবে লেনদেন বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধ হওয়ার দিন থেকে পাঁচ বছর কাল লেনদেন হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে।
৩. প্রত্যেক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে ‘কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিট’ এবং শাখা পর্যায়ে পরিপালন কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
৪. অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্তকরণের লক্ষ্যে গ্রাহকের হিসাবের সম্ভাব্য লেনদেনের অনুমিত মাত্রা সম্পর্কে গ্রাহকের ঘোষণা সংরক্ষণ করতে হবে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৫. সন্দেহজনক লেনদেনের ক্ষেত্রে শাখা থেকে কেন্দ্রীয় পরিপালন কমিটির কাছে রিপোর্ট করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় পরিপালন কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করবেন। তদন্তকালীন সময়ে কোনো তথ্য ফাঁস করা যাবে না।
৬. শাখা পর্যায় থেকে সংগৃহীত অস্বাভাবিক- সন্দেহজনক লেনদেন সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় পরিপালন কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।
৭. প্রত্যেক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাতে অবৈধ লেনদেন না হয় তার জন্য গ্রাহকের পরিচয়ের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্যসংগ্রহ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে কাস্টমার আইডেন্টিফিকেশনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ইংরেজিতে বলা যায় “Know your customer (KYC)”।
কাজেই যে কোনো গ্রাহকের হিসাব খোলার সময় এর সাথে সম্পৃক্ত কাগজপত্র ও গ্রাহকের পরিচয় সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্যসংগ্রহ করে হিসাব খুললে মানি লন্ডারিং এর ব্যাপারে ‘অনেকটা নিরাপদ থাকা সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে সাধারণ ও প্রকৃত গ্রাহকদের যেন ভোগান্তি না হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ করা সকলের একান্ত কর্তব্য। বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সুষ্ঠু কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মশালার আয়োজন করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকছেন।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- ইজারা অর্থায়ন বনাম ধারে ক্রয় কোনটি ভালো ব্যাখ্যা কর
- ইজারার কর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ লিখ, ইজারার কর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো বিস্তারিত আলোচনা কর
- ইজারার কর সীমাবদ্ধতা কী কী । ইজারার কর অসুবিধা লিখ
- ইজারার কর সুবিধা সমূহ আলোচনা কর
- ইজারা অর্থায়নে এর চেয়ে ঋণকৃত অর্থায়ন সুবিধা সমূহ ব্যাখ্যা কর
- ইজারা অর্থায়ন পরিকল্পনা সুবিধা ও অসুবিধা গুলো বিস্তারিত আলোচনা কর