মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা উল্লেখ কর,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী ভূমিকার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর

প্রশ্ন সমাধান: মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা উল্লেখ কর,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী ভূমিকার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা

১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মানব ইতিহাসের এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। কেননা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম মূলত সে দেশের জনসাধারণের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হলেও একটি বিশেষ বিশ্ব পরিস্থিতিতে সেটি আন্তর্জাতিক মাত্রা অর্জন করে। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে এই যে, পাকিস্তানের পক্ষে তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও চীন প্রকাশ্যে অবস্থান গ্রহণ করে, অন্যদিকে মুক্তিকামী বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সুস্পষ্ট সমর্থন জানায়। এজন্য ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট একটি মৈত্রী চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বস্তুত, তৎকালীন দুই পরাশক্তির মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রতিফলিত হয়।


আরো ও সাজেশন:-

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধ দেশে-বিদেশে একটি নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হয়। এরূপ ধারণা বাংলােদশের স্বাধীনতার জন্য খুবই সহায়ক হয়। কিন্তু অন্যতম বৃহৎ শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। সে সময় পাকিস্তানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। এছাড়া আদর্শগতভাবে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা বিদ্যমান ছিল। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সমর্থন করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে।


মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল হতাশাব্যঞ্জক। নিচে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :


১. পাকিস্তানকে সমর্থন প্রদান : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সংবাদপত্রগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে জনমত গঠনে সহায়তা করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারসহ মার্কিন প্রশাসনের নীতিনির্ধারক মহল ব্যতীত পাকিস্তানের বর্বর হামলা ও অমানবিক কর্মকাণ্ডের সমর্থন আমেরিকার কোথাও তেমন দেখা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধকালীন পুরো নয় মাস নিক্সন প্রশাসন পাকিস্তানের জন্য নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমর্থন যুগিয়েছিল ।


২. কমিউনিজম প্রতিরোধ : তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশে প্রচুর রাজনৈতিক সমর্থক ছিল কমিউনিজমের পক্ষে। এছাড়া ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সমর্থন প্রদান করলে বাংলাদেশে সোভিয়েত রাজত্ব কায়েমের আশঙ্কা থেকে নিক্সন প্রশাসন পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে মার্কিন স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

৩. তৎকালীন বাস্তবতা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বা সমসাময়িককালে মানবাধিকারের বিষয়টিকে বর্তমানকালের মতো গুরুত্ব প্রদান করা হতো না। এমনকি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধে ধারণা ছিল খুবই ট্র্যাডিশনাল। ফলে একটি দেশের এক গোষ্ঠী কর্তৃক গণহত্যা মনে করা হতো সে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ এটাকে অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবে গ্রহণ করে

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৪. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার : ভারত বিভক্তির পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার শুরু করে। ১৯৫৪ সালের ১৯ মে করাচিতে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সাহায্য ও নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সমাজতন্ত্র বিস্তাররোধে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কেন্দ্র করে ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালে দুটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ দুটি মৈত্রী জোটের অন্যতম সদস্য ছিল পাকিস্তান। ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার একজন বিশ্বস্ত মিত্রকে রক্ষা করতেই পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করে।

৫. পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক : আমেরিকার বিশ্বস্ত বন্ধু ছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির সূচনা হয়। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে।


৬. সোভিয়েত বিরোধী জোট গঠন : বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরস্পর বিরোধী শিবিরের নেতৃত্বে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে উভয়ের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ বিদ্যমান ছিল। তাছাড়া দক্ষিণ এশীয় রাজনীতিতে ভারত ছিল আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থি। কাজেই পাকিস্তানকে শক্তিশালী করা আমেরিকার স্বার্থেই প্রয়োজন ছিল।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক


৭. স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাব : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে দুই মেরুভিত্তিক স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়।এক মেরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য মেরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন নেতৃত্ব প্রদান করে। এক দিকে পুঁজিবাদী শক্তি অন্যদিকে, সমাজতান্ত্রিক শক্তি দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে তাদের পক্ষে রাখতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে।


৮. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের অবস্থান : নিক্সন প্রশাসন যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসন একাধিক বার যুদ্ধকে অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব আনে কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো প্রয়োগে প্রস্তাবগুলো গৃহীত হতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ সম্পর্কে পররাষ্ট্রনীতি নিজ দেশ দ্বারাও পরিত্যক্ত হয়েছিল।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল বাংলাদেশ বিরোধী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। যদিও শেষ পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। নিক্সন প্রশাসন বাংলাদেশকে ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল স্বীকৃতি প্রদান করেছিল ।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment