প্রশ্ন সমাধান: জগতের অনাদিত্ব সম্পর্কে দার্শনিকগণ কিরূপ মতবাদ দেন? আল গাজালি সেগুলো কিভাবে খণ্ডন করেন এবং নিজস্ব মতবাদ দেন আলোচনা কর।,জগতের অনাদিত্ব সম্পর্কে দার্শনিকদের যুক্তিগুলো আল গাজালি কিভাবে খণ্ডন করেন বিশ্লেষণ কর
ভূমিকা : জগৎ অনন্তকাল ধরে অস্তিত্বশীল ছিল বলেই তাকে জগতের অনাদিত্ব বলা হয়। জগৎ কোন সময়ে সৃষ্টি বা উৎপত্তি হয় নি। অনন্তকাল থেকেই জগৎ বিদ্যমান ছিল। অধিকাংশ পাশ্চাত্য মুসলিম দার্শনিক গাজালির পূর্বের ও পরবর্তী সময়ের জগতের অনাদিত্ব বিশ্বাস করতেন। কিন্তু গাজালি এ ধরনের বিশ্বাস দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি মনে করেন, এসব ধারণা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। তিনি আরো বলেন, এসব ধারণা ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন।
জগতের অনাদিত্ব সম্পর্কে যুক্তি : জগতের অনাদিত্ব সম্পর্কে দার্শনিকরা কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেন এবং আল গাজালি সেগুলোকে খণ্ডন করেন। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
দার্শনিকদের প্রথম যুক্তি : জগতের অনাদিত্ব সম্পর্কে দার্শনিকদের প্রথম যুক্তি চার প্রকার। যথা :
প্রথমত, দার্শনিকদের মতে, জগৎ চিরকাল বিদ্যমান ছিল। সৃষ্টিকর্তা যদি জগৎ সৃষ্টি করেন তাহেল কেন নির্দিষ্ট সময়ে সৃষ্টি করলেন? এ নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরবর্তী সময়ে সৃষ্টি করলেন না কেন? সুতরাং জগৎ অনাদি ও অনন্ত। তাই চিরকাল ধরেই জগৎ বিদ্যমান ছিল।
আরো ও সাজেশন:-
দ্বিতীয়ত, দার্শনিকরা অনেক সময় মনে করেন, সৃষ্টিকর্তার জগৎ সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল না। পরে তিনি পরিকল্পনা করলেন জগৎ সৃষ্টি করবেন। তাই তিনি জগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাই সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা বা ইচ্ছা পরবর্তনশীল।
তৃতীয়ত, দার্শনিকদের মতে, জগৎ অনাদি ও অনন্ত। জগতের সাথে সৃষ্টিকর্তার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। জগৎ সৃষ্টিকর্তার সত্তা থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়। সুতরাং বলা যায় যে, সৃষ্টিকর্তা আছে মানেই জগৎ আছে।
চতুর্থত, দার্শনিকদের মতে, সৃষ্টিকর্তাকে যদি অনাদি বলা হয় তাহলে তিনি কোন এক সময় জগৎ সৃষ্টি করেছেন মনে হয়। কিন্তু তিনি কোন এক সময়ে জগৎ সৃষ্টি করতে পারেন না।
আল গাজালির খণ্ডন : দার্শনিকদের প্রথম যুক্তিকে আল গাজালি নিম্নলিখিতভাবে খণ্ডন করেন :
প্রথমত, গাজালির মতে, আল্লাহ জগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পক্ষে জগৎ সৃষ্টি করা কখনোই অসম্ভব ছিল না। দার্শনিকদের জগৎ সৃষ্টির ব্যাপারে প্রশ্ন হলো, সৃষ্টিকর্তা কেন একটি নির্দিষ্ট সময়ে জগৎ সৃষ্টি করলেন? গাজালি এসব প্রশ্নকে ভ্রান্ত ও অবান্তর বলে উল্লেখ করেন।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
দ্বিতীয়ত, দার্শনিকরা বলেন, সৃষ্টিকর্তার জগৎ সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল না। পরে তিনি পরিকল্পনা করে জগৎ সৃষ্টি করেছেন। দার্শনিকদের এ যুক্তি খণ্ডন করে আল গাজালি বলেন, সৃষ্টিকর্তার জগৎ সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল। তিনি পরিকল্পনা মাফিক জগৎ সৃষ্টি করেন । তাঁর পরিকল্পনা বা ইচ্ছায় কোন পরিবর্তন নেই।
তৃতীয়ত, গাজালি বলেন, জগৎকে অনাদি বলে দার্শনিকরা স্ববিরোধিতায় উপনীত হয়েছে। তাঁর মতে, আল্লাহতায়ালা অনাদি এবং তিনিই জগৎকে সৃষ্টি করেছেন।
চতুর্থত, অনেক দার্শনিকরা সর্বেশ্বরবাদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আল গাজালি সর্বেশ্বরবাদী মুসলিম দার্শনিকদেরকে নাস্তিক বলে অভিহিত করেন।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
দার্শনিকদের দ্বিতীয় যুক্তি : জগতের অনাদিত্ব প্রমাণে দ্বিতীয় যুক্তি প্রসঙ্গে দার্শনিকরা বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা কালের দিক থেকে অগ্রগামী নয়, অস্তিত্বের দিক থেকে অগ্রগামী। তারা সৃষ্টিকর্তা ও জগতের সম্পর্ককে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বলে উল্লেখ করেন।
আল গাজালির খণ্ডন : আল গাজালির মতে, সৃষ্টিকর্তা কাল এবং অস্তিত্ব উভয় দিক থেকেই অগ্রগামী সত্তা। তাঁর মতে, সৃষ্টিকর্তা যেহেতু কাল সৃষ্টি করেছেন সেহেতু কাল দ্বারা তিনি কখনো সীমাবদ্ধ থাকতে পারেন না।
দার্শনিকদের তৃতীয় যুক্তি : জগতের অনাদিত্ব প্রমাণে তৃতীয় যুক্তি প্রসঙ্গে দার্শনিকরা বলেন, জগৎ অনাদিকাল থেকে ছিল। জগৎ সৃষ্টির আগেই জগতের অস্তিত্ব ছিল । জগতের অস্তিত্বে যে আসতে পারে তার পক্ষে কোন কালেই আসা অসম্ভব নয়।
আল গাজালির খণ্ডন : আল গাজালি দার্শনিকদের তৃতীয় যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে বলেন, জগৎ সৃষ্টি হওয়া কখনো অসম্ভব ছিল না। সবসময়ই সম্ভব ছিল। জগৎ সৃষ্ট নিশ্চিত। এভাবেই তিনি তৃতীয় যুক্তির খণ্ডন করেন।
দার্শনিকদের চতুর্থ যুক্তি : জগতের অনাদিত্বের চতুর্থ যুক্তিতে দার্শনিকরা তিনটি কথা বলেন, (ক) জগতের অস্তিত্ব সম্ভব। (খ) জগতের অস্তিত্ব অবশ্যই সম্ভব। (গ) জগতের অস্তিত্ব অসম্ভব। সুতরাং বলা যায় যে, যেহেতু জগতের অস্তিত্ব আছে সেহেতু তাকে আর অসম্ভব বলা যায় না।
আল গাজালির খণ্ডন : দার্শনিকরা সম্ভাব্যতা যেভাবে গ্রহণ করেছেন, আল গাজালি সম্ভাব্যতা সেভাবে গ্রহণ করেন নি। তাঁর মতে, সম্ভাব্যতা একটি সার্বিক ধারণা। তাই সার্বিক ধারণার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গাজালি দার্শনিকদের যুক্তিগুলোকে অত্যন্ত সুচারুরূপে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি একটি অগ্রগামী সত্তা। তাই জগৎ তার দ্বারা সৃষ্টি। সুতরাং দার্শনিকদের কর্তৃক জগতের অনাদিত্ব সম্পর্কে প্রদত্ত ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে গাজালির অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ লিখ
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট