প্রশ্ন সমাধান: অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রস্তাব ব্যর্থ হয় কেন? আলোচনা কর।,অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রস্তাব ব্যর্থ হয় কেন? বর্ণনা কর।,অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠায় কেন ব্যর্থ হয়?, ভারত শাসন আইনের ত্রুটিগুলো আলোচনা কর,অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠায় কেন ব্যর্থ হয়? ভারত শাসন আইনের দুর্বলতাগুলো উল্লেখ কর
ভূমিকা : ভারত বিভক্তির প্রাক্কালে স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসু অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২৭ এপ্রিল দিল্লিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বাংলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মি. জিন্নাহ এর সাথে আলোচনায় বসেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎচন্দ্র বসুসহ অন্যান্য বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা কিরণ শংকর রায় প্রমুখ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে। এ প্রচেষ্টা সফল হলে ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি অবিভক্ত বাংলা তৃতীয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতো। কিন্তু বাঙালিদের ভুল বোঝাবুঝি এবং মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের কায়েমি স্বার্থরক্ষায় অখণ্ড স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কারণ : ১৯৪৭ সালে অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের এঁচেষ্টা যে সকল কারণে ব্যর্থ হয় তা বর্ণনা করা হলো :
১. হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ : ভারত বিভক্তির পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ এক দশক (১৯৩৭ – ১৯৪৭) সময়কালে বাংলার হিন্দু সম্প্রদায় সরকার পরিচালনায় কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখার সুযোগ পায়নি। এ সময় মুসলমানরা রাষ্ট্র পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকায় ছিল। এজন্য হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে রাজনৈতিক হতাশা ও এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধ জন্ম নেয়। এ অবস্থার জন্য সর্বভারত ভিত্তিক হিন্দু-মুসলমান রাজনৈতিক মেরুকরণ বহুলাংশে দায়ী ছিল এবং এ থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলা বিভক্তির মানসিকতা সৃষ্টি হয়। অখণ্ড স্বাধীন বাংলা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
২. কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের অনীহা : কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ অখণ্ড বাংলাকে সমর্থন করেনি। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের যে সকল নেতৃবৃন্দ অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল তারা মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের হাইকমাণ্ডের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত বাংলা বিভক্তির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে।
৩. বাংলার জনসংখ্যা বণ্টন সমস্যা : বাংলার পশ্চিম অংশে হিন্দু এবং পূর্ব অংশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। জনসংখ্যার এরূপ বণ্টন সাম্প্রদায়িকতার বা ধর্মের ভিত্তিতে প্রদেশগুলোকে বিভক্তি করা সহজতর করে তোলে।
৪. সর্বভারতীয় ভিত্তিক হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণ : বাংলা বিভক্তির জন্য সর্বভারতীয় ভিত্তিক হিন্দু-মুসলমান রাজনৈতিক মেরুকরণ বহুলাংশে দায়ী ছিল বলে অনেকে মনে করেন। ফলে অবিভক্ত বাংলা গঠন প্রস্তাব বানচাল হয়ে যায়।
: ৫. সময়ের সীমাবদ্ধতা : যুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের ক্ষেত্রে সময়ের সীমাবদ্ধতা একটি অন্যতম বাধা। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (১৯৪৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত) ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তর করে ভারত পরিত্যাগের চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়। কিন্তু কার্যত তারা এর পূর্বেই আগস্ট ১৯৪৭ ভারত ত্যাগ করে। সময়ের সীমাবদ্ধতার ফলে পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়।
৬. ১৯৪৬ সালের কোলকাতা দাঙ্গা : ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে মুসলিম লীগের ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসে’ সংঘটিত ভয়াবহ কোলকাতা দাঙ্গার পর থেকে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বাংলা বিভক্তির পক্ষে প্রচারণা চালাতে স্বার্থান্বেষী হিন্দু মালিকানাধীন পত্রিকাগুলোর জন্য অপূর্ব সুযোগ এনে দেয়। যা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ভয়াবহ সন্দেহের সৃষ্টি হয় ।
৭. ব্রিটিশ সরকারের আন্তরিকতার অভাব : ব্রিটিশ সরকারের আন্তরিকতার অভাবে বাংলা বিভক্ত হয়। মাউন্ট ব্যাটেন কংগ্রেসের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন। তেমনি বাংলা বিভাগের সিদ্ধান্তের পর গঠিত সীমানা কমিশনের চেয়ারম্যান র্যাড ক্লিফ কংগ্রেসের পক্ষ অবলম্বন করেন। ফলে স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
ভারত স্বাধীনতা আইনের ত্রুটি : ভারত স্বাধীনতা আইন ভারত-পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্র স্পষ্টকরণেও এ আইনে নানাবিধ ত্রুটি লক্ষণীয় ছিল যথা :
১. রাজনৈতিক অমীমাংসা : ব্রিটিশরা দিল্লিতে বসে ভারত বিভক্তির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে তারা কংগ্রেসের পক্ষ অবলম্বন করে। ব্রিটিশ আমলে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেছে এমন দেশীয় রাজ্যসমূহ স্বাধীন হবে, না ভারত পাকিস্তানভুক্ত হবে সে বিষয়ে ভারত স্বাধীনতা আইনে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। এ সুযোগে ভারত শক্তিশালী বলে কিছু দেশীয় রাজ্য দখল করে নেয়। আবার কিছু দেশীয় রাজ্য ভারতের সঙ্গে যোগ দেয়। যার ফলে ভূমি ও সীমানা নিয়ে চিরস্থায়ী দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যেমন- কাশ্মীর দখল নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে ১৯৪৮, ১৯৬৫ ও ১৯৯৮ সালে যুদ্ধ হয় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে।
২. সীমানা বণ্টন সমস্যা : যেহেতু ব্রিটিশরা দিল্লিতে বসে মানচিত্র অনুযায়ী সীমানা ভাগ করে সেহেতু ভারত বিভক্তির পর দেখা গেছে কারো বাড়ি কারো আঙ্গিনা, এমনকি কারো ঘর পড়েছে ভারতের দিকে আর আঙ্গিনা পড়েছে পাকিস্তানের দিকে। ফলে সৃষ্টি হয় নতুন জটিলতা। যা ভারত স্বাধীনতা আইনের অন্যতম ত্রুটি।
৩. সম্পদ বণ্টন : ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পদ বণ্টন বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। ফলে পরবর্তীতে সম্পদের মালিকানা নিয়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়।
৪. উদ্বাস্তু সমস্যা : ভারত স্বাধীনতা আইনে উদ্বাস্তু সমস্যা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হলে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এছাড়া দাঙ্গা থেকে বাঁচতে যারা দেশত্যাগ করে তাদের অবস্থা হয় শোচনীয়। ১৯৪৬-৪৭ সালের দাঙ্গায় বহু লোক মারা যায়। যা ভারত স্বাধীনতা আইনের অন্যতম ত্রুটি ছিল।
উপসংহার : পরিবেশে বলা যায় যে, ভারত স্বাধীনতা আইন অনুসারে ভারত বিভক্ত হয় এবং পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে অবিভক্ত বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে সোহরাওয়ার্দী ও বসু। কিন্তু মুসলিম লীগ কংগ্রেস ও অন্যান্য কারণে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আইন গৃহীত হয়। যদিও আইনটি ছিল উত্তম তথাপি আইনের বেশকিছু ত্রুটি বিদ্যমান থাকায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী তিক্ততা সৃষ্টি করে।
রচনা ,প্রবন্ধ | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র ও Application | উত্তর লিংক | অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক |
চিঠি ও Letter | উত্তর লিংক | প্রতিবেদন | উত্তর লিংক |
ইমেল ও Email | উত্তর লিংক | সারাংশ ও সারমর্ম | উত্তর লিংক |
Paragraph | উত্তর লিংক | Composition | উত্তর লিংক |
CV | উত্তর লিংক | Seen, Unseen | উত্তর লিংক |
Essay | উত্তর লিংক | Completing Story | উত্তর লিংক |
Dialog/সংলাপ | উত্তর লিংক | Short Stories/Poems/খুদেগল্প | উত্তর লিংক |
অনুবাদ | উত্তর লিংক | Sentence Writing | উত্তর লিংক |
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট
- ইজারা সম্পদ বিক্রয়ের উপর করের প্রভাব বিস্তারিত আলোচনা কর