প্রশ্ন সমাধান: ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা কর
পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যতগুলো আন্দোলন করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে চরম বহিঃপ্রকাশ গণঅভ্যুত্থান।
গণঅভ্যুত্থান বাংলার মানুষদের সাহসী ও আত্মসচেতন করে তুলেছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে আইয়ুববিরোধী বিক্ষোভ করেন। পাকিস্তানে সরকারের অন্যায়, শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ :
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মুক্ত করার জন্য বাংলার জনগণ সংগ্রামী হয়ে ওঠেন। নিম্নে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এর কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. ছয় দফা আন্দোলন :
১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধু লাহোরে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয় দফা আন্দোলন ছিল বাঙালিদের মুক্তির সনদ। এই কর্মসূচি জনগণ ব্যাপকভাবে সমর্থন করে। জনগণের সমর্থনে পাকিস্তানি সরকার ভীত হয়। ছয় দফা আন্দোলন বাঙালিদের মধ্যে সাহস জুগিয়েছিল।
২. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা :
ছয় দফা দাবির প্রতি জনগণের সমর্থন ও শেখ মুজিবুরের জনপ্রিয়তা বহুগুণ বেড়ে যায়। পাকিস্তানি শাসকেরা শেখ মুজিবুরসহ ৩৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
এতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আন্দোলনের পর আন্দোলন চালিয়ে যান। গড়ে ওঠে গণআন্দোলন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল।
৩. সাহসী মনোবল তৈরি :
পূর্ব পাকিস্তানি জনগণ ছয় দফা দাবি ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি সমর্থন দেয়, বঙ্গবন্ধুর ডাকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তানের সব স্তরের জনগণ যোগদান করে।
পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এই আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যজোট গঠন করে।
৪. ন্যাশনাল আওয়ামী দলের ভাঙন :
গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ ন্যাশনাল আওয়ামী দলের ভাঙন। এর এক দলের নেতা হন মওলানা ভাসানী ও অন্য দলের নেতা হন পশ্চিম পাকিস্তানের ওয়ালি খান।
পূর্ব পাকিস্তানের ওয়ালি দলের নেতা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ছয় দফা দাবির প্রতি সমর্থন দেন। অন্যদিকে মওলানা ভাসানীপন্থিরা এর বিরোধিতা করেন। ফলে ছয় দফা আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
৫. আইয়ুববিরোধী আন্দোলন :
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আইয়ুব সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলার পর পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্রই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
৬. ছাত্র আন্দোলন :
১৯৬৯ সালে ছাত্রদের আন্দোলন ছিল গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ। ছাত্ররা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আন্দোলনে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন। ১১ দফা দাবি উত্থাপনের ফলে পাকিস্তানি বিরোধী আন্দোলন আরো দৃঢ় হয় ১১ দফা দাবি আন্দোলনে সবাই অংশগ্রহণ করে।
৭. ছাত্র নেতার মৃত্যু :
১৯৬৯ সালে ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ছাত্রনেতার মৃত্যুর পর পাকিস্তানি আন্দোলন আরো তীব্র হয়।
সমগ্র জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রামী আন্দোলন গড়ে তোলেন। স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ‘ডাক’ কর্তৃক আহত হরতাল ১৭ জানুয়ারি হয়েছিল।
৮. জহরুল হক ও ড. সামসুজ্জোহার মৃত্যু :
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলার আসামি জহরুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. সামসুজ্জোহাকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। এই দুটি ঘটনার পর গণঅভ্যুত্থান চরম আকার ধারণ করে।
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আদায়ে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে পাকিস্তানি বিরোধী যে মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল তা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুরের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেন। এই আন্দোলনের ফলে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয় ।
আরো ও সাজেশন:-
প্রশ্ন সমাধান: ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা কর
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আদায়ে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে পাকিস্তানি বিরোধী যে মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল তা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুরের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেন। এই আন্দোলনের ফলে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয় ।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল
বাঙালিরা বীরের জাতি। অন্যায়, অত্যাচার ও শোষণের নিকট কখনো মাথানত করেনি। বীরের মতো সংগ্রাম করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন।
১৯৬৯ সালের কঠোর আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানি সরকার আগরতলা মামলার আসামিদের মুক্তি দেয়। বঙ্গবন্ধু জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের ফলে আইয়ুব সরকারের পতন হয়।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল :
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ জাগ্রত হয়। নিম্নে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল উল্লেখ করা হয় :
১. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অবসান :
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মালার অবসান ঘটে। গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানি সরকার ভীত হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের সর্বস্তরের জনগণ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের উপর সমর্থন জানায়। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব আসামিদের বিনাশর্তে মুক্তি দেওয়া হয়।
২. শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি :
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ মুজিবুরের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। শেখ মুজিব সর্বস্তরের জনগণের নেতা হিসেবে পরিচিত লাভ করে।
শেখ মুজিবুরের মুক্তির পর ১৯৬৯ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুরকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন তোফায়েল আহমেদ রেসকোর্স ময়দানের এক গণসংবর্ধনায় ।
৩. গোল টেবিল বৈঠকের আহ্বান :
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার জন্য গোল টেবিল বৈঠকের আহ্বান করেন। এই বৈঠকে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হলে তা বাতিল হয়। লীগ বৈঠক ত্যাগ করে।
৪. আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি:
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতিহয়। সারাদেশে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আইন লংঘন করে মিছিল ও আন্দোলন করে।পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করে।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৫. আইয়ুব সরকারের অবসান :
কঠোর আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য গভর্নর মোনায়েম খানকে সরিয়ে ড. এস. এন হুদাকে গভর্নর নিযুক্ত করেন। আইয়ুব খানের পতনের পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
৬. ১৯৭০ সালের নির্বাচন :
প্রচণ্ড চাপে পাকিস্তান সরকার সাধারণ নির্বাচন দেয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পায়। প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসন পায়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে
৭. জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ :
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ ঘটে। বাঙালি তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন হয়ে ওঠে। অন্যায়, অতাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার সাহস পায়।
৮. স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি :
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেন । যার ফলে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
বাঙালি তাদের ঐতিহ্য ফিরে পায়। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের তাৎপর্য অপরিসীম। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন।
ছাত্র, জনতা, শ্রমিকসহ সব স্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুসহ সব বন্দি নেতাদের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হন। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাঙালি স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনেন। বিশ্ব দরবারে বাঙালি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
রচনা ,প্রবন্ধ | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক | Paragraph | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র ও Application | উত্তর লিংক | অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক | Composition | উত্তর লিংক |
চিঠি ও Letter | উত্তর লিংক | প্রতিবেদন | উত্তর লিংক | CV | উত্তর লিংক |
ইমেল ও Email | উত্তর লিংক | সারাংশ ও সারমর্ম | উত্তর লিংক | Seen, Unseen | উত্তর লিংক |
Essay | উত্তর লিংক | Completing Story | উত্তর লিংক | Dialog/সংলাপ | উত্তর লিংক |
অনুবাদ | উত্তর লিংক | Short Stories/Poems/খুদেগল্প | উত্তর লিংক | Sentence Writing | উত্তর লিংক |
আপনার জন্য আমাদের ক্যাটাগরি
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট
- ইজারা সম্পদ বিক্রয়ের উপর করের প্রভাব বিস্তারিত আলোচনা কর