বাংলাদেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাতীয় পলিউন্নয়ন নীতি-২০০১ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কীভাবে? আলোচনা কর, জাতীয় পল্লিউন্নয়ন নীতি ২০০১ এর কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে আলোচনা কর

বাংলাদেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাতীয় পলিউন্নয়ন নীতি-২০০১ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কীভাবে? আলোচনা কর, জাতীয় পল্লিউন্নয়ন নীতি ২০০১ এর কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে আলোচনা কর

ভূমিকা : “A policy of rural development is a policy of national development.” – Julias Nyrer উন্নয়ন সংক্রান্ত ধারণায় ‘পল্লিউন্নয়ন’ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। পল্লিউন্নয়ন বলতে এমন একটি বিশেষ প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা পল্লির সর্বস্তরের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা প্রদানসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ও সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রণয়ন করা হয় ‘জাতীয় পল্লিউন্নয়ন নীতি- ২০০১’। পল্লিউন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় ।

জাতীয় পল্লিউন্নয়ন নীতি-২০০১ এর কার্যক্রম : জাতীয় পল্লিউন্নয়ন নীতি-২০০১ এর কার্যক্রম নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. দারিদ্র্য বিমোচন : বলা হয় Poverty is curse for any eqentry. তাই দারিদ্র্য কোনো জাতির জন্য কাম্য নয়। দারিদ্র্য সকল অনুন্নয়নের এবং অশান্তির মূল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, “দারিদ্র্য শান্তির জন্য হুমকি।” শান্তির সাথে দারিদ্র্যের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বের ৯৪% আয় মাত্র ৪০% লোকের পকেটে এবং বাকি ৬০% আয়ের মাত্র ৪০% জনের দিয়ে জীবনযাপন করে। এ বৈষম্যের জন্য দারিদ্র্যের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এ নীতি প্রণয়ন করে সমবণ্টনের ভিত্তি নিশ্চিত করে দরিদ্রতা হ্রাস করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

২. জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি : একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সে দেশের সর্বস্তরে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য । নারী-পুরুষ সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশে এ অংশগ্রহণ এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই এ নীতিমালার মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণকে বিশেষ করে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

৩. কৃষি অর্থনীতির উন্নয়ন : উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ হচ্ছে কৃষি। তাই কৃষিকে পাশ কাটিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ নীতিমালাতে কৃষির সার্বিক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে পল্লি উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ কৃষির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।


আরো ও সাজেশন:-

৪. পল্লির অবকাঠামোগত উন্নয়ন : একটি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা রাস্তাঘাট, কালভার্ট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যবস্থাপনা প্রভৃতির উন্নয়ন প্রয়োজন। পল্লি উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে পল্লির অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা। কারণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন পল্লির অর্থনীতিকে সচল রাখবে।

৫. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : বলা হয় “Over population is the root cause of all underdevelopment.” তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। পল্লি উন্নয়নের জন্য পল্লির জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। কারণ অতিরিক্ত জনগণ দেশের দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে এবং অনুন্নয়নে সহায়তা করবে। তাই এ নীতিতে অতিরিক্ত জনগণকে দারিদ্র্যের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

৬. গ্রামীণ শিক্ষার উন্নয়ন : বলা হয় “Education is the Panacea for all development.” তাই গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ব্যতীত পল্লিউন্নয়ন সম্ভব নয়। পল্লির জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বৃদ্ধি, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষম জনশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্রামীণ শিক্ষার উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। গ্রামীণ জনগণকে তাই শিক্ষিত করা এ নীতির একটি অন্যতম কার্যক্রম।

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৭. স্বাস্থ্যসেবা : বলা হয় “A sound mind in a sound body.” তাই স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এ নীতিতে। গ্রামীণ জনগণের সুস্বাস্থ্যের উপর পল্লিউন্নয়ন অনেকটা নির্ভরশীল। তাই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

৮. গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ : শিল্প একটি দেশের প্রাণকেন্দ্র। তাই গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন ব্যতীত পল্লিউন্নয়ন সম্ভব৷ নয়। পল্লি অঞ্চলের শিল্প বলতে কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে। এ নীতিমালাতে গ্রামীণ কুটির ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।

৯. নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর ক্ষমতায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা হয় এবং তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাই পল্লি উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে পল্লির নারীদের – ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ । তাদেরকে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে হলে যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

১০. আঞ্চলিক উন্নয়ন কর্মসূচি : পল্লি উন্নয়নের জন্য এলাকাভিত্তিক বিশেষ উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা অপরিহার্য। তাই আঞ্চলিক উন্নয়ন বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা অপরিহার্য। যেমন- স্থানের ভিত্তিতে বিশেষ দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প গ্রহণ করা।

১১. যুব উন্নয়ন কর্মসূচি : যুবকদের অনগ্রসর রেখে পল্লিউন্নয়ন অসম্ভব। তাই এ নীতিতে পল্লির যুবকদেরকে দক্ষ ও কর্মক্ষম করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গ্রামীণ যুবকদের কাজে লাগাতে যুব অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পল্লি উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের জন্য এটা অবশ্যই প্রয়োজন। তাই সরকার ‘জাতীয় পল্লিউন্নয়ন নীতি-২০০১’ গ্রহণ করেছেন। পল্লি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ নীতি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা রয়েছে, এসব সমস্যা দূর করতে পারলে এ নীতি আরো কার্যকরী হবে বলে আশা করা যায়।

আপনার জন্য আমাদের ক্যাটাগরি


প্রশ্ন সমাধান
সাজেশন
চাকরি
ধর্ম
মতামত
শিক্ষা
শিক্ষা সংবাদ
নিয়োগ পরীক্ষা
জানা অজানা
Writing Side
অনার্স ও মাস্টার্স
এইচ এস সি
এসএসসি
ডিগ্রি ও উন্মুক্ত
স্বাস্থ্য
উদ্ভিদ ও প্রাণী
ঔষধি গুন
গোপন সমস্যা
রূপচর্চা
রেসিপি
রোগ প্রতিরোধ
রচনা ,প্রবন্ধউত্তর লিংক ভাবসম্প্রসারণউত্তর লিংক Paragraphউত্তর লিংক
আবেদন পত্র ও Applicationউত্তর লিংক অনুচ্ছেদ রচনাউত্তর লিংক Compositionউত্তর লিংক
চিঠি Letterউত্তর লিংক প্রতিবেদনউত্তর লিংক CVউত্তর লিংক
ইমেলEmailউত্তর লিংক সারাংশ ও সারমর্মউত্তর লিংক Seen, Unseenউত্তর লিংক
Essayউত্তর লিংকCompleting Storyউত্তর লিংকDialog/সংলাপউত্তর লিংক
অনুবাদউত্তর লিংকShort Stories/Poems/খুদেগল্পউত্তর লিংকSentence Writingউত্তর লিংক

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment