পাঁচওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা বর্ণনা কর, আওকাতুস সালাত কী? আওকাতুস সালাত বিশদভাবে আলোচনা কর, ইমামদের মতভেদসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি আলোচনা কর
ভূমিকা : সালাত একটি ফরজ ইবাদত। আর ইহাকে সময় সহকারে ফরজ করা হয়েছে। সালাত অবশ্যই ওয়া সহকারে আদায় করতে হবে নতুবা সওয়াবের পরিবর্তে গোনাহই বেশি হবে। রাসূল (সা.) কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে যে সম বর্ণনা করে গেছেন তার মধ্যে সালাত আদায় করা ফরজ।
→ ইমামদের মতভেদসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি : নিম্নে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের শুরু ও শেষ সীমা বণ্টন করা হলো-
১. ফজরের সালাতের সময়সীমা :
(ক) সালাতের শুরুর সীমা : সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার সাথে ফজরের সালাতের সময় আরম্ভ হয়। রাত্রির একেবারেই শেষাংশে আকাশের উপর লম্বালম্বি একটি কালো রেখা স্তম্ভের মত দেখা যায়। তখন সামান্য সময়ের জন্য তুলনামূলক একটু বেশি অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে একে সুবহে কাযিব বলে। এরপর পূর্বাকাশে উত্তর-দক্ষিণে আড়াআড়িভাবে একটি সাদা রেখা দেখা যায় ইহাকে সুবহে সাদিক বলে । সুবহে সাদিকের সাথে সাথে ফজরের সময় শুরু হয়।
(খ) ওয়াক্তের সমাপ্তি : পূর্ব আকাশে সূর্য উঠবার সাথে সাথে ফজরের ওয়াক্তের সমাপ্তি ঘটে। তবে সূর্য উদয়কালীন ২৩ মিনিট কোন প্রকার সালাত আদায় করা একেবারেই নিষেধ ।
২. যোহরের সালাতের ওয়াক্ত :
(ক) ওয়াক্তের শুরু : যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ব্যাপারে জমহুর ওলামায়ে কেরামের মত হলো, সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার পর যোহর সালাতের সময় শুরু হয়। অর্থাৎ ছায়ায়ে আসলির পর থেকে যোহরের সময় শুরু হয় ।
(খ) ছায়ায়ে আসলি নির্ণয় পদ্ধতি : ছায়ায়ে আসলি বা মূল ছায়া নির্ণয় করার সহজ নিয়ম হলো- কোন সমান জায়গায় একটি সোজা বাঁশ অথবা কাঠের টুকরো গেড়ে দিবে। প্রথমে সূর্যের আলোতে বাঁশ বা কাঠের দণ্ডটির ছায়া পশ্চিম দিকে বাড়তে থাকবে, এরপর ক্রমান্বয়ে দণ্ডটির ছায়া নামতে থাকবে। যেখানে ছায়া স্থির হবে। তারপর দণ্ডটির ছায়া পূর্বদিকে বাড়তে থাকবে। তখন থেকেই যোহরের সময় শুরু হবে।
(গ) যোহরের ওয়াক্তের সমাপ্তি : যোহরের সালাতের ওয়াক্তের সমাপ্তি নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন- ১. ইমাম আবু হানিফার মতে— কোন বস্তুর মূল ছায়া ব্যতীত যখন তার ছায়া দ্বিগুণ হবে, তখনই ওয়াক্ত শেষ হবে।
২. সাহেবাইনদের মতে— মূল ছায়া যখন বস্তুর ছায়ার দ্বিগুণ হবে তখন যোহরের সালাতের সময় শেষ হবে ।
তবে ইমাম আযমের মতের উপরই ফতোয়া ।
আরো ও সাজেশন:-
৩. আসরের সালাতের সময়সীমা :
(ক) ওয়াক্তের প্রারম্ভ : আসরের সালাতের শুরু নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমামদের মতভেদ অনুযায়ী যোহরের ওয়াক্ত শেষ হবার পর আসরের সালাতের সময় হয়। কিন্তু ইমাম মালিক (রহ.) এর মতে, যোহরের সময় শেষ হবার পররাকাআত সময় পর্যন্ত যোহর ও আসর যে কোন সালাতই আদায় করা যাবে। ইমাম মালিকের মতে, উক্ত সময়টুকু মুশতারিক ওয়াক্তের অন্তর্ভুক্ত।
(খ) ওয়াক্তের সমাপ্তি : ইসলামি ফিকহের বিধান অনুসারে সূর্যাস্তের সাথে সাথে আসর সালাতের সময় শেষ হয় ।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৪. মাগরিবের সালাতের সময়সীমা :
(ক) ওয়াক্তের প্রারম্ভ : মাগরিবের সালাতের প্রার্থনা বা ওয়াক্ত নিয়ে কোন মতভেদ নেই। সকলেই একমত যে, সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিবের সালাতের সময় শুরু হয়।
(খ) ওয়াক্তের সমাপ্তি : মাগরিবের সময়ের সমাপ্তি নিয়ে ইমামদের মতভেদ নিম্নরূপ-
১. ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন- সূর্যাস্তের পর আযান, ইকামাত ও পাঁচ রাকাত সালাত পড়তে যত সময় লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত মাগরিবের সময় অবশিষ্ট থাকে ।
২. কারো কারো মতে— শাফাক ডুবে যাওয়া পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে ।
৩..ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মতে- শাফাকা ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্তের সমাপ্তি হয়।
→ শাফাকের পরিচয় : শাফাকের পরিচয় নিয়ে ইমাম আবু হানীফা ও সাহেবাইনদের মধ্যে মতপ্রার্থক্য রয়েছে-
১. ইমাম আবু হানীফার মতে, শাফাকা হলো ঐ সাদা আভা যা আকাশের লালিমা চলে যাবার পর প্রকাশিত হয় । ২. সাহেবাইনদের মতে- আকাশের লালিমাই হলো শাফাক ।
৫. ইশার সালাতের সময়সীমা :
(ক) ওয়াক্তের প্রারম্ভ : ইমামদের মতানুসারে মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হবার সাথে সাথে ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়।
(খ) ওয়াক্তের সমাপ্তি : ইমামগণ ইশার সালাতের শেষ ওয়াক্ত নিয়ে মতবিরোধ করেছেন। যথা-
১. ইমাম শাফেয়ী, আহমদ ও মালিকের মতে- রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ইশার সময় বাকি থাকে।
২. ইমাম শাফেয়ী ও আহমদের দ্বিতীয় মতানুসারে অর্ধরাত পর্যন্ত ইশার সালাতের সময় বাকি থাকে ।
হানাফীদের মতানুসারে— মধ্যরাত পর্যন্ত ইশার সালাত আদায় করা যায়, তবে মধ্যরাতের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ইশার সালাত আদায় করা মাকরূহ ।