চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বৈশিষ্ট্য ও সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি প্রভাব বিস্তার করেছিল?
ভারতে কোম্পানি ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন। কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করার পর ভারতবর্ষে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। ফলে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ন্যায় করাল গ্রাস নেমে আসে। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকার ভারতে দুর্ভিক্ষের জন্য কোম্পানিকে দায়ী করেন এবং ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংসকে গভর্নর জেনারেল করে পাঠান। ওয়ারেন হেস্টিংস এর সময় কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রেগুলেটিং এ্যাক্ট পাস করা হয় ।
পরে একই ধরনের নিয়মে রাজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য ১৭৮৬ সালে লর্ড কর্নওয়ালিসকে গভর্নর জেনারেল করে পাঠানো হয়। লর্ড কর্নওয়ালিসের শাসনামলে বিখ্যাত দু’দশকের অনেক পর্যালোচনার বিষয় যা সাধারণ জেলা প্রশাসক থেকে পার্লামেন্ট, ডাইরেক্টর সভা, অর্থনীতিবিদ, ঐতিহাসিক সকলের চেতনার ফসল ছিল তা অর্থাৎ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকরী হয়।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রেক্ষাপট : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য জমিদারদের সাথে সম্পাদিত একটি চুক্তি সমতুল্য ব্যবস্থা। ১৭৯৩ সালে ২২ মার্চ গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস কর্তৃক এটা ঘোষিত হয়। কিন্তু আইডিয়া হিসেবে এ বন্দোবস্ত কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞ মহলে আলোচিত হতে থাকে প্রায় দুদশক আগে থেকেই। বিমূর্তভাবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আইডিয়া প্রথম দেন সমকালীন ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ/ অর্থনীতিবিদ আলেকজান্ডার দাও ও হেনরি পেটুল্লো। দাও-পেটুল্লো প্রদত্ত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আইডিয়া থেকে প্রথম বিমূর্ত রূপ দেন কাউন্সিলর ফিলিপ ফ্রান্সিস। কিন্তু ফিলিপ ফ্রান্সিসের বন্দোবস্তের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় নি। তবে অনেকটা ব্রিটিশ সরকারকে ভূমি রাজস্ব সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ফিলিপ ফ্রান্সিসের পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে পরে ব্রিটিশ সরকার ১৭৮৪ সালে ‘Pitt India Acts’ পাস করেন। এ ‘Pitt India Acts’-এর ৩৯নং ধারায় রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছিল।
‘Pitt India Acts’ পাস হওয়ার পর কাউন্সিলর চার্লস স্টুয়ার্ট প্রথম দিকে চিরস্থায়ী
বন্দোবস্তের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন এবং ‘Pitt India Acts’-এর ৩৯নং ধারা মোতাবেক চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এ সময় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পক্ষপাতী ছিলেন না। তাই দেখা যায়, চার্লস স্টুয়ার্টের পরিকল্পনা প্রশংসিত হলেও তা কার্যকরী করা সম্ভব ছিল না। কারণ, গভর্নর জেনারেলের পরিকল্পনা কার্যকরী না করে কাউন্সিলের পরিকল্পনা কার্যকরী করার কোন পরিবেশ ছিল না। তাই তা ব্যর্থ হয়। কিন্তু চার্লস স্টুয়ার্টের পরিকল্পনার মধ্যে ব্রিটিশ সরকার রাজস্ব সমস্যা সমাধানের আভাস পান।
চার্লস স্টুয়ার্টের পরিকল্পনার কিছুদিন পরে কোম্পানি দেখলেন যে, ভারতে কোম্পানির রাজস্ব নিয়ে যে সমস্যা ত সমাধান করার একমাত্র উপায় হল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তন করার মাধ্যমে রাজস্ব সমস্যা সমাধান করা।
তাই ১৭৮৬ সালে কোর্ট অব ডাইরেক্টরস রাজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য কর্নওয়ালিসকে গভর্নর জেনারেল হিসেবে ভারতে পাঠান। কর্নওয়ালিস গভর্নর জেনারেল হিসেবে ভারতে এসেই রাজস্ব সমস্যা সমাধানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা কার্যকরী করার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেন। কিন্তু এ কার্যে তাঁর কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ান তাঁর রাজস্ব উপদেষ্টা ও বোর্ড অব রেভিনিউর প্রেসিডেন্ট জন শোর। জন শোর মতামত ব্যক্ত করেন যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করার পূর্বে জানা দরকার :
১. জমিদার, তালুকদার ও রায়তের বর্তমান আর্থিক অবস্থা। মুঘল শক্তির অবক্ষয়ের আগে জমিদার ও রায়তের অধিকার।
৩. মুঘল শক্তির পতন পর্বে রায়তের খাজনা সংক্রান্ত আইন।
৫. দেওয়ানি লাভের পর জমিদার কর্তৃক আরোপিত নতুন আবওয়াব, মামথ ইত্যাদি । সাধারণ রায়তের স্বার্থরক্ষার উপায় । বর্তমান রাজস্ব ধার্য ব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ দূর করার উপায়।
৭. ১৭৭২ সাল থেকে প্রত্যেক জমিদারির বিস্তারিত জমা, উত্তল ও বাকি হিসাব সংগ্রহ। জন শোরের মতানৈক্যের জন্য কর্নওয়ালিসের পরিকল্পনা কার্যকরী করা সম্ভব হল না। এছাড়া ঐ সময় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার ক্ষেত্রে দুটি সমস্যাও ছিল।
যথা : ১. নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব, ২. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সরকারি বিশেষজ্ঞ মহলে ঘোরতর মতানৈক্য।
এ ধরনের পারিপার্শিক অবস্থায় বোর্ড অব রেভিনিউ এর প্রেসিডেন্ট জন শোর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরিবর্তে আপাতত এক বা দুদশকের জন্য একটি পরীক্ষামূলক বন্দোবস্ত করার পক্ষে জোরালো যুক্তি প্রদর্শন করেন। তাই ১৭৯০ সালে দশসালা বন্দোবস্ত করা হয়। এ শর্তে বলা হয় যে, কোর্ট অব ডাইরেক্টরস তৎক্ষণাৎ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার পক্ষে মতামত প্রকাশ করলে দশসালা বন্দোবস্তকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে ঘোষণা করা হবে। তাই ১৯৯২ সালের শেষের দিকে কোর্ট অব ডাইরেক্টরস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার পক্ষে মতামত দিলে কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে ২২ মার্চ দশসালা বন্দোবস্তকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে ঘোষণা করেন। ফলে রাজস্ব সমস্যা নিয়ে যে দুদশকের আলোচনা পর্যালোচনা তার অবসান হয়। তবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কর্নওয়ালিসের শাসনামলে প্রবর্তিত হলেও এককভাবে তাঁর কৃতিত্ব ছিল বলা যায় না। এ ক্ষেত্রে দুদশক ধরে সাধারণ জেলা প্রশাসক, আইনজীবী; অর্থনীতিবিদ, ঐতিহাসিক, পার্লামেন্ট ও কোর্ট অব ডাইরেক্টরস সভার অবদান ছিল। কর্নওয়ালিস এসবের মধ্যে সমন্বয় করেন মাত্র।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য : মুঘল আমলে জমিদার-সরকার সম্পর্ক, জমিদার-রায়ত সম্পর্ক এবং জমিদার-রায়তের পারস্পরিক দায়, অধিকার ইত্যাদি ছিল রেওয়াজ মাত্র। কিন্তু কর্নওয়ালিস রেওয়াজের স্থলে চুক্তির ব্যবস্থা করেন। আর চুক্তির ধরন কি ছিল তাই হল তার শাসনব্যবস্থার রাজস্বব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। নিম্নে তার রাজস্বব্যবস্থার বিভিন্ন বিধিবিধান ও প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া হল ঃ
১. সরকার জমিদার সম্পর্ক নির্ধারণ : ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে ঘোষণা করেন যে আইন জারি করে তিনি সরকার জমিদার সম্পর্ক বিধিবদ্ধ করেন। সরকার জমিদারকে জমির একমাত্র মালিক বলে স্বীকার করে নেয় এবং অঙ্গীকার করে যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত গ্রহণকারী জমিদার ও তালুকদারদের উপর ধার্যকৃত সরকারি জমা চিরকালের জন্য অপরিবর্তনীয় থাকবে। এই বন্দোবস্তে জমির একচ্ছত্র মালিক হিসেবে জমিদার তার জমি সরকারের অনুমতি ছাড়াই মুক্তভাবে হস্তান্তর করতে পারবে, দান করতে পারবে এবং মুসলিম ও হিন্দু আইন অনুসারে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করতে পারবে। তবে এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অসুবিধাও ছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে এ অসুবিধাগুলো দূর করা হয়।
২. জমিদার ও তালুকদার সম্পর্ক নির্ধারণ : মুঘল সরকারের সময় জমিদার এর ন্যায় তালুকদার ছিলেন বংশানুক্রমিক সরকারি এজেন্ট। জমিদার ও তালুকদারের মধ্যে নীতিগত কোন পার্থক্য ছিল না। পার্থক্য ছিল শুধু এই যে, জমিদারের ভূ-কর্তৃত্ব ও সামাজিক প্রভাব ছিল তালুকদারের চেয়ে বেশি। এছাড়া তালুকদারদের মধ্যে অনেক শ্রেণীবিভাগ ছিল। লর্ড কর্নওয়ালিস জমিদার ও তালুকদারদের মধ্যে পার্থক্য বিলুপ্ত করেন।
৩. জমিদার ও রায়ত সম্পর্ক নির্ধারণ : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে পূর্বের নিয়মের অবসান করে নতুনভাবে জমিদার ও রায়তদের সম্পর্ক নির্ধারণ করেন। কর্নওয়ালিস আশা পোষণ করেন যে, জমিদারগণ তাদের নিজ স্বার্থেই রায়তের কল্যাণ কামনা করবে, কেননা রায়ত বিনে জমির কোন মূল্য নেই। তবে জমিদারগণ যেন প্রজাগণকে তাদের কপাহীন অসহায় অধিকারহীন মনে না করে এবং প্রয়োজন পড়লে সরকারি রায় যে প্রকার স্বার্থরক্ষায় এগিয়ে আসতে প্রস্তুত, তা জমিদার জানিয়ে দেওয়ার জন্য ঘোষণা করা হয় যে, যেহেতু সব শ্রেণী স্বার্থরক্ষা সরকারের দায়িত্ব, বিশেষ করে যারা আপেক্ষিকভাবে দুর্বল ও অসহায়, তাদের রক্ষা করা যেহেতু সরকারের দায়িত্ব সেহেতু দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা করা হচ্ছে যে, প্রয়োজনবোধে গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিল অধীনস্থ তালুকদার ও রায়তকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনকানুন প্রণয়ন করতে পারবে এবং এতে জমিদারগণ কোন আপত্তি তুলতে পারবে না।
৪. চিরস্থায়ী জমা, যোগ্যতা ও বিধিনিষেধ : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে, জমা ধার্য করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুনের প্রবর্তন করা হয়। এছাড়া জমিদারদের মধ্যে যোগ্য ও অযোগ্য বিবেচনা করা হয়। এতে জমিদারদের মধ্যে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় যে- (১) সেসব স্ত্রীলোক যাদেরকে জমিদারি পরিচালনায় অপারগ বলে সরকার গণ্য করে। (২) নাবালক, বোকা, পাগল, বিকৃতমনা ও অন্যান্য দুর্বল ব্যক্তি। যারা জমিদারি পরিচালনার জন্য অযোগ্য, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি রাজস্ব বাকি রাখার পক্ষপাতী বা পতিত চরিত্রের লোক তারা জমিদারি করতে পারবে না। এছাড়া চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর কতিপয় বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়।
৫. লাখেরাজ ও পেনশন প্রদান ঃ কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পর থেকে যেসব লাখেরাজ সৃষ্টি করা হয়েছে যেসব স্বত্ব অবৈধ বলে গণ্য হবে এবং উক্ত লাখেরাজ ভূমি মালগুজারীতে পরিণত হবে। এছাড়া বলা হয় যে, কোম্পানির দেওয়ানি উত্তর কোন লাখেরাজ জমি যদি সরকার কর্তৃক সৃষ্ট বা অনুমোদিত হয়ে থাকে, তবে উক্ত লাখেরাজের আদি শর্ত সরকার মেনে চলবে। এছাড়া পেনশন সংক্রান্ত যে জটিলতা ছিল তার অবসান করা হয়।
৬. পঞ্চসনা রেজিস্টার ঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ভূমি আইনে বিধান করা হয় যে, রাজস্ব ভূমির একটি পঞ্চসনা রেজিস্টার রাখা হয়েছিল। আইন করা হয় যে, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর জেলা কালেক্টর তার অধীনস্থ সমস্ত জমিদারির একটি রেজিস্টার প্রস্তুত করবেন। উক্ত রেজিস্টারে উল্লেখ থাকবে মালিকের নাম, সরকারি জমার পরিমাণ, বিক্রয়, দান ও উত্তরাধিকারজনিত কারণে জমি হস্তান্তরের বিবরণ ইত্যাদি। এছাড়া আরো অনেক বিধান ছিল ।
প্রশাসনিক কাঠামো : ৪৭টি রেগুলেশন নিয়ে এ বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
এটি কার্যকরী করার জন্য বিভিন্ন সরকারি এজেন্সিও ছিল। নিম্নে এজেন্সিগুলোর বিবরণ দেওয়া হল :
১. বোর্ড অব রিভিনিউ প্রতিষ্ঠা : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রাজস্ব কার্য পরিচালনার জন্য বোর্ড অব রিভিনিউ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্ষমতা ও গুরুত্বের দিক থেকে গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিলের পরে ছিল এর স্থান। বোর্ডের দায়িত্ব ছিল নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করা। বোর্ডের কর্মচারীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে কাজ করে সেদিকেও বোর্ডকে লক্ষ রাখতে হতো। বোর্ড কর্মচারীদেরকে অসৎ আচরণের জন্য শাস্তি দিতে পারত ।
২. কোর্ট অব ওয়ার্ডস স্থাপন : এ বন্দোবস্তে অযোগ্য ও নাবালক জমিদারদের নায়েব গোমস্তাদের চক্রান্ত থেকে প্রশিক্ষণ দানের জন্য কোর্ট অব ওয়ার্ডস স্থাপন করা হয়। বোর্ড অব রিভিনিউ কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর দায়িত্ব পালন করে না। জমিদারি পরিচালনায় অপারগ মহিলা, নাবালক, বোকা, পাগল, অর্বাচীন প্রভৃতি শ্রেণীর জমিদারদের কোর্ট অব ওয়ার্ডসের আওতাভুক্ত করা হয়। এছাড়া যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাজস্ব বাকি রাখে এবং নষ্ট চরিত্রের লোক তাদেরকেও এর আওতাভুক্ত করা হয়। কোর্ট অব ওয়ার্ডসের স্থানীয় প্রতিনিধি ছিলেন জেলা কালেক্টর । বস্তুত জেলা কালেক্টর কোর্ট অব ওয়ার্ডস হিসেবে কাজ করতেন ।
৩. জেলা কালেক্টর গঠন : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিধানের সবচেয়ে কর্মব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল জেলা কালেক্টর। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিধানের প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্য হল জেলা কালেক্টর। বিহার উড়িষ্যা ছাড়া বাংলাকে ২১টি জেলায় বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি জেলায় একজন কালেক্টর নিযুক্ত করা হয়। তাকে সাহায্য করার জন্য নিযুক্ত করা হয় একাধিক এ্যাসিস্টেন্ট কালেক্টর। কালেক্টরের অফিসিয়াল উপাধি হচ্ছে Collector of the Revenue of the Zillah, কালেক্টরের কিছু দায়িত্বও ছিল। এছাড়া কিছু নিষেধাজ্ঞাও ছিল।
৪. দেশী কর্মচারী : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে অনেক দেশীয় কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল। এ কর্মচারীগুলোর মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ ছিল। তারা পদমর্যাদা অনুযায়ী কার্য পরিচালনা করত।
বাংলার অর্থনীতি ও সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি প্রভাব বিস্তার করেছিল?
চার্লস স্টুয়ার্টের পরিকল্পনার কিছুদিন পরে কোম্পানি দেখলেন যে, ভারতে কোম্পানির রাজস্ব নিয়ে যে সমস্যা তা সমাধান করার একমাত্র উপায় হল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তন করার মাধ্যমে রাজস্ব সমস্যা সমাধান করা। তাই ১৭৮৬ সালে কোর্ট অব ডাইরেক্টরস রাজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য কর্নওয়ালিসকে গভর্নর জেনারেল হিসেবে ভারতে পাঠান। কর্নওয়ালিস গভর্নর জেনারেল হিসেবে ভারতে এসেই রাজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা কার্যকরী করার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেন। কিন্তু এ কার্যে তাঁর কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ান তাঁর রাজস্ব উপদেষ্টা ও বোর্ড অব রেভিনিউর প্রেসিডেন্ট জন শোর। জন শোর মতামত ব্যক্ত করেন যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করার পূর্বে জানা দরকার :
১. জমিদার, তালুকদার ও রায়তের বর্তমান আর্থিক অবস্থা।
২. মুঘল শক্তির অবক্ষয়ের আগে জমিদার ও রায়তের অধিকার।
৩. মুঘল শক্তির পতন পর্বে রায়তের খাজনা সংক্রান্ত আইন ।
দেওয়ানি লাভের পর জমিদার কর্তৃক আরোপিত নতুন আবওয়াব, মামথ ইত্যাদি ।
৫. সাধারণ রায়তের স্বার্থরক্ষার উপায়।
৬. বর্তমান রাজস্ব ধার্য ব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ দূর করার উপায় ।
৭. ১৭৭২ সাল থেকে প্রত্যেক জমিদারির বিস্তারিত জমা, উশুল ও বাকি হিসাব সংগ্রহ। এ ধরনের মতানৈক্য চলাকালে লক্ষ করা যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার পথে দুটি বাধা। বাধা দুটি হল :
১. নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব ও
২. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সরকারি বিশেষজ্ঞ মহলে ঘোরতর মতানৈক্য। বোর্ড অব রেভিনিউর সভাপতি ও কাউন্সিলর জন শোর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরিবর্তে আপাতত এক বা দুদশকের জন্য একটি পরীক্ষামূলক বন্দোবস্ত করার পক্ষে জোরাল যুক্তি প্রদান করেন। অবশেষে ১৭৯০ সালে দশসালা বন্দোবস্ত করা হয় |
এ শর্তে যে, কোর্ট অব ডাইরেক্টরস তৎক্ষণাৎ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত স্থায়ী বন্দোবস্ত করার পক্ষে মত প্রকাশ করলে দশসালা বাবরকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে ঘোষণা করা হবে। ফলে ১৭৯২ সালের শেষের দিকে কোর্ট অব ডাইরেক্ট্ররা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার পক্ষে মতামত দিলে কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে ২২ মার্চ দশসালাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বার ঘোষণা করেন। রাজস্ব সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ দুদশকের যে আলোচনা ও পর্যালোচনা তার সমাপ্তি হয়। তাই কর্নওয়ালিসের শাসনামলে এটা বাস্তবায়িত হয় বলে একে এককভাবে তার কৃতিত্ব বললে ভুল হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ জেলা প্রশাসক থেকে সকল প্রকার কর্মচারী ডাইরেক্টর সভা পার্লামেন্টের পরামর্শ ছিল। যা দুদশক পরে বাস্তবায়িত হয়।
বাংলার অর্থনীতি ও সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলার অর্থনীতি ও সমাজের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঔপনিবেশিক যার কোম্পানির রাজনৈতিক অধিকারকে অর্থনৈতিক দিক থেকে অর্থবহ করে তুলবার যে তাগিদ তা হতেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ভাবনার সৃষ্টি হয়। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসও এটা স্বীকার করেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হল : ক. বাংলার অর্থনীতির উপর প্রভাব ।
১. কৃষিকার্যের অবনতি বাংলাদেশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনে যারা উদ্যোগী হয়েছিলেন তাদের বক্তব্য ছিল যে, এ ব্যবস্থায় কৃষিকার্যের উন্নতি ঘটবে। জমিদারদের জমির উপর ব্যক্তির মালিকানা দেওয়ার ফলে তারা জমির উন্নতির দিকে দৃষ্টি দিবেন। কারণ, জমিতে পুঁজি বিনিয়োগ করলে জমিদারদেরই লাভ। জমিদাররা জমি থেকে রাজস্ব হিসেবে অর্থ উপার্জন করতে সমর্থ হবেন। কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের বেশ কিছুদিন পরে একথা স্পষ্ট হয়ে উ জমিদারদের প্রধান লক্ষ্য ছিল মুনাফা অর্জন করা; জমির উন্নতি সাধন নয়। যে কারণে দেখা যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে কৃষিকার্যের অবনতি ঘটেছিল। ফলে যে উদ্যোগ তা ব্যর্থ হয়।
২. কৃষকরা জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনুসারে রাজস্ব আদায়কারী এবং জমিদাররা সকলেই ভূস্বামী বা জমির মালিক বলে বিবেচিত হন। অর্থাৎ, জমিদারি এলাকার সকল কর্তৃত্বই তাদের উপর বর্তায় অন্যদিকে কৃষক বা প্রজারা তাদের জমির উপর অধিকার হারিয়ে সামান্য ভাড়াটিয়া প্রজাতে পরিণত হয়। অর্থাৎ, এতদিন যে জমিতে ভোগ দখল করেছিল তারা সেটা হতে বঞ্চিত হয়।
৩. অতিরিক্ত রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা জমিদারি প্রথা প্রবর্তনের সময় নিয়ম ছিল যে, কৃষকদের কাছ থেকে আদায়কৃত রাজস্বের ভাগ জমিদাররা সরকারি আদায় হিসেবে জমা দেবেন এবং ভাগ নিজস্ব আয় হিসেবে রাখবেন কিন্তু রাজস্বের পরিমাণ চিরদিনের জন্য নির্দিষ্ট হওয়ার ফলে জমিদার পরবর্তীকালে লাভবান হয়েছিল। কারণ, কৃষি এলাকার বৃদ্ধি, রায়তের কাছ থেকে বর্ধিত হারে খাজনা আদায় প্রভৃতির ফলে জমিদারি আয় বৃদ্ধি পেলে তার সুফল কেবল জমিদারগণই ভোগ করত, অপর কেউ নয়। এতে প্রজাদের নানারকম অসুবিধা হয় এবং সরকারেরও আর্থিক ক্ষতি হয়।
৪. অর্থনৈতিক বিকাশ ব্যাহত: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদাররা শোষণের হাতিয়ার ব্যবহার করতে থাকেন। ফলে কৃষির উদ্বৃত্ত মূল্যের প্রায় সবটুকুই কৃষকদের হাতছাড়া হয়ে যায়। অন্যদিকে মুৎসুদ্দী ব্যবসায়ীদের হাতে যে বণিক পুঁজি ছিল তা শিল্প পুঁজিতে পরিণত হওয়ার সুযোগ পায় নি। কারণ, জমিতে অর্থ বিনিয়োগ করে তারা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন এবং তারা জমিদারি ক্রয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ফলে অর্থনৈতিক বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়। ৫. শতকরা ৪০ ভাগ সম্পদ কৃষকদের : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে দেখা যায় কোম্পানির কাছে তেমন কোন নথিপত্র ছিল না। যে কারণে রাজস্ব নির্ধারিত করা হয়েছিল সরকারের খোয়াল খুশি মত। জমিদারের সাথে আলাপ আলোচনা না করেই সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যেনতেন প্রকারে সর্বাধিক অর্থ যাতে আদায় করা যায়। স্বাভাবিকভাবে রাজস্ব হিসেবে দেওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল অত্যধিক। এমতাবস্থায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে দেখা যায় বাংলার মোট উৎপাদনের শতকরা হিসেবে মাত্র ৪০ ভাগ কৃষকদের হাতে থাকত। সরকারের হিস্যা ছিল ৪৫ এবং জমিদার ও অপরাপর মধ্যস্বত্বভোগীদের ১৫ ভাগ।
খ. বাংলার সমাজের উপর প্রভাব :
১. সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে প্রথমে দেখা যায়, এ ব্যবস্থা ভারতীয় সমাজের সম্পূর্ণ কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল। অল্পকথায় বলতে গেলে ইংরেজদের ভারত বিজয়ের অন্যতম প্রধান পরিণতি ছিল যুগযুগ ধরে ভারতীয় সমাজের যে কাঠামো অপরিবর্তিত ছিল একে ভেঙে দিয়ে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করা। রজনী পান দত্ত এ পরিবর্তনকে একটি সমাজ বিপ্লবের সাথে তুলনা করেছেন। বলাবাহুল্য বাংলার প্রাচীন ভূমি ব্যবস্থায় পরিবর্তনের মাধ্যমেই এ পরিবর্তন সূচিত হয়।
২. কৃষি সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তি ঃ প্রাচীনকাল থেকে কৃষি ছিল ভারতের অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং এদের সামাজিক সম্পর্ক কৃষিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। ইংরেজরা প্রচলিত ভূমি ব্যবস্থার পরিবর্তন আনার ফলে সে সামাজিক সম্পর্ক ও পরিবর্তন অনিবার্য হয় । ফলে সামাজিক সম্পর্ক কৃষি সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়।
৩. পুরাতন জমিদার ধ্বংস: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রাজস্ব জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের কড়াকড়ি ছিল অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিনের সূর্যাস্তের পূর্বে রাজকোষে অর্থ প্রদানের নিয়ম ছিল। এতে দেখা যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত জমিদারদের অনেকেই নির্দিষ্ট দিনে রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হয় ফলে জমিদারি নিলামে বাতিল হয়ে যায়।
৪. মধ্যস্বত্বভোগীর সৃষ্টি ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য সামাজিক প্রভাব ছিল জমিদার ও রায়তের মাঝখানে এক নতুন সামাজিক শ্রেণীর বিকাশ। এ নতুন সামাজিক শ্রেণী হল মধ্যস্বত্বভোগী। এখন জানা দরকার কিভাবে এ মধ্যস্বত্বভোগীর সৃষ্টি হল। ইংরেজ সরকারের সাথে জমিদারের সম্পর্কের ভিত্তি ছিল সময়মত রাজস্ব প্রদান। এর পরিবর্তে জমিদার জমির মালিক হিসেবে জমিদারি নিয়ে কি করবেন তা ইংরেজ সরকারের বিচার্য নয়। এমতাবস্থায় জমিদার আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে কোন বিত্তশালী ব্যক্তিকে জমিদারির একাংশ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ইজারা বা লিজ দিতে পারতেন। এই ইজারাদাররাই মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে পরিচিত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে এর সৃষ্টি হয়।
৫. জমিদারদের অনুপস্থিতিতে প্রজা অত্যাচার বৃদ্ধি : এ ব্যবস্থার ফলে বাংলার প্রাচীন জমিদারদের বিলুপ্তি ঘটেছিল। যে সকল জমিদার গ্রামে বাস করে প্রজাদের সুখ দুঃখের অংশীদার হতেন তারা নতুন রাজস্ব ব্যবস্থায় পাততাড়ি গুটান। এদের পরিবর্তে সে জায়গা দখল করেন এমন সব বিত্তশালী মানুষ যারা জমিকে পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে মনে করতেন। শহরে বসবাসকারী এসব অনুপস্থিতি জমিদারদের জমির প্রতি কোন টান ছিল না। প্রজাদের দুঃখ কষ্টের প্রতি তারা নজর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করা দূরে থাকুক, তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল প্রজাদের কাছ থেকে যথাসম্ভব উচ্চহারে রাজস্ব আদায় করা এবং শহরে থেকে আমোদ প্রমোদে দিন কাটানো। গোমস্তাদের মাধ্যমেই তারা জমিদারির কাজ চালাতেন। ফলে প্রজারা অত্যাচারে পতিত হন।
উপসংহার : অতএব বলা যায়, ১৭৯৩ সালে যে কারণে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত লর্ড কর্নওয়ালিসের শাসনামলে পাস করা হয় তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় নি। তবে কোম্পানির স্বার্থগত দিক থেকে এটা অনেকটা সুফল হয়েছিল। ফলে দেখা যায় যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রাজস্ব সমস্যার সমাধান করতে না পারলেও জমিদারদের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে যে প্রজাদের স্বার্থে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়েছিল তা বাস্তবায়িত হয় নি। কারণ, প্রজারা এর ফলে অত্যাচারে পতিত হয় ।
লর্ড কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল ব্রিটিশ ভারতের কোম্পানি শাসনের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে সুদীর্ঘ কাল ধরে ভারতে কোম্পানির রাজস্ব সম্পর্কে জমিদার ও সরকার, জমিদার ও রায়ত ইত্যাদি সম্পর্কে যে জটিলতা ছিল তার অবসান হয়।
এছাড়া এ বন্দোবস্তের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাঠামোরও পুনর্বিন্যাস করা হয়। তাই এ ব্যবস্থায় সাময়িকভাবে কিছুটা সুফল পরিলক্ষিত হয়। তবে সুফল পরিলক্ষিত হলেও এর অনেক ব্যর্থতা ছিল। তাই সার্বিক বিচারে কোম্পানির রাজস্ব সম্পর্কে এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল ।