খাঁটি ঝুঁকির কি ও খাঁটি ঝুঁকি হ্রাসের উপায় আলোচনা কর, খাঁটি ঝুঁকির সংজ্ঞা দাও , খাঁটি ঝুঁকি বলতে কি বুঝ?, খাঁটি ঝুঁকি হ্রাসের উপায় আলোচনা কর
খাঁটি ঝুঁকির সংজ্ঞা দাও , খাঁটি ঝুঁকি বলতে কি বুঝ?
ভূমিকা : সাধারণত সকল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন করা। এই মুনাফা অর্জন করার জন্যই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ, শ্রমিক কর্মী নিয়োগ করে উৎপাদন ও বিক্রয় কার্যসম্পাদন করে বা পণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করে বা বিভিন্ন সেবামূলক কার্য সম্পাদন করে। এ সকল কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে ব্যবসায়িকে বিভিন্ন রকম ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাজনিত কারণে অর্জিত লাভের দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনাকে পূরণ করা সম্ভব না হলে উক্ত ঝুঁকিকে খাঁটি ঝুঁকি বলে ।
খাঁটি ঝুঁকি : মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মূলধন বিনিয়োগ করে এবং বিভিন্ন সেবামূলক কার্যসম্পাদন করে। এসব কাজ সম্পাদনের সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নানাবিধ ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয়। যার ফলে লাভের সুযোগ নষ্ট হয়। এরূপ ক্ষেত্রে লাভের দ্বারা ঝুঁকি পূরণ সম্ভব না হলে তাকে খাঁটি বা বিশুদ্ধ ঝুঁকি বলে ।
G. C. A. Dicksor-এর মতে, বিশুদ্ধ বা খাঁটি ঝুঁকি ক্ষতি বা বড় জোর লাভ নয় এরূপ অবস্থার সাথে জড়িত। এর ফলাফল সবসময় আমাদের জন্য প্রতিকূল হয় যা ক্ষতি সংঘটিত হওয়ার পূর্বে যেসব ছিল তা থেকে দূরে সরে যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি গার্মেন্টস শিল্পে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে যেসব সমস্যা হয় :
১. আগুনে কারখানার যন্ত্রপাতি ও জানমাল ক্ষতি;
২. কারখানার মালামাল চুরি;
৩. শ্রমিক মালিক অসন্তোষ ইত্যাদি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপরে উল্লিখিত কোনো কারণে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়
তাকে ঘাঁটি ঝুঁকি বলে ।
আরো ও সাজেশন:-
খাঁটি ঝুঁকি হ্রাসের উপায় আলোচনা কর।
ভূমিকা : আর্থিক সিদ্ধান্তের সাথে আর্থিক ঝুঁকি জড়িত । সুতরাং আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করতে হলে সঠিক অর্থসংস্থানের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সঠিক মূলধন কাঠামো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঝুঁকিকে হ্রাস করে। আর্থিক ঝুঁকি হ্রাসের পদ্ধতি বা উপায়গুলো নিচে আলোচনা করা হলো :
১. বিমা ব্যবস্থার মাধ্যমে : বিমা ঝুঁকিবহুল প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ঝুঁকি হ্রাসে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে বিমার মাধ্যমে ঝুঁকিজনিত ক্ষতি বন্ধ করা যায় না; বরং এর মাধ্যমে কেবল একের ক্ষতি অন্যের নিকট
হস্তান্তর করা
বিমা চুক্তি দ্বারা একপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অপর পক্ষ তা পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। সুতরাং জীবনবিমা, অগ্নিবিমা, নৌবিমা প্রভৃতি দ্বারা কারবারের বিভিন্নস্তরের ঝুঁকি হ্রাস করার ব্যবস্থা করা যায় ।
২. বাজার বিশ্লেষণ : বাজার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আর্থিক ঝুঁকি এড়ানো যায় । যেমন— বাজার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্রেতাদের রুচি, অভ্যাস, ফ্যাশন, চাহিদা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় এবং এ সকল তথ্য অনুযায়ী দ্রব্য প্রস্তুত করলে ঝুঁকি হ্রাস পায় ।
৩. প্রাকৃতিক অনিশ্চয়তা দূরীকরণ : প্রাকৃতিক অনিশ্চয়তা থেকে আর্থিক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। তাই প্রাকৃতিক অনিশ্চয়তা দূরীকরণের মাধ্যমে আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করা যেতে পারে।
৪. সময়ের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ : কারবারের ক্ষেত্রে একক ব্যক্তি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা কারবারের জন্য ঝুঁকি বা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। তাই একক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পরিহার করে সময়ের ভিত্তিতে পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের ব্যবস্থাকরণে ঝুঁকি এড়ানো যায় ।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৫. মানবীয় অনিশ্চয়তা দূরীকরণ : মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট কারণসমূহ দ্বারা অনেক সময় কারবারে অনিশ্চয়তা বা ঝুঁকি সৃষ্টি হয় । সুতরাং কারবার প্রতিষ্ঠানে মানবীয় অনিশ্চয়তা দূরীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের মাধ্যমে আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করা যায়।
৬. পুঁজি সংরক্ষণ : আর্থিক ঝুঁকির ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগকারীকে বেশি ঝুঁকি বহন করতে হয়। তাই পুঁজি সংরক্ষণের মাধ্যমে আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব। এজন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মূলধন সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় ।
৭. শ্রমিকদের সহযোগিতা : সৌহার্দপূর্ণ শিল্পীয় সম্পর্কের মাধ্যমে আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করা যায়। শ্রমিকদের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট বা লকআউটের ফলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে না । সুতরাং শ্রমিক মালিক সম্পর্ক উন্নয়নে আর্থিক ঝুঁকি এড়ানো যায় ।
৮. অন্যান্য পরিপূরক ব্যবস্থা : আর্থিক ঝুঁকি হ্রাসকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিপূরক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন- কোন একটি প্রতিষ্ঠান কোন দ্রব্য ক্রয়ের ফলে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে বিক্রয়ের মাধ্যমে যাতে উক্ত ক্ষতিপূরণ করা যায় সে পন্থা অবলম্বন করা ।
৯. সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ : বিভিন্ন ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা যেমন- অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি চালু, সম্পত্তির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ঝুঁকির পরিমাণ কমানো সম্ভব ।
১০. স্বাধীনতা অর্জন : পণ্য দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে একক ব্যক্তি কর্তৃক স্বাধীনভাবে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিলে ঝুঁকি হ্রাস পাবে। কারণ এভাবে উৎপাদিত পণ্য দ্রব্য দ্রুত বিক্রি হয়ে যাবে ।
১১. অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি : যেকোন দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে । তাই দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কে জানা থাকলে ঝুঁকি এড়ানো যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্পূর্ণভাবে আর্থিক ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব না হলেও উপরিউক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা কিছুটা হ্রাস করা যায় ।