আজকের বিষয়: সূরা কাউসার সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল কাউসার আলমল ও ফজিলত
সূরা কাওসার পবিত্র আল কুরআনের ১০৮ তম সূরা। সূরাটির আয়াত সংখ্যা ৩ এবং এটি ৩০ পারায় অবস্থিত। এই সূরাটি পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরা। সূরা কাওসার মক্কায় অবতীর্ণ হয় তাই সূরাটি মাক্কী সূরার অন্তর্ভূক্ত। সূরাটির অর্থ হচ্ছে প্রভূত কল্যাণ বা কল্যাণের প্রাচুর্য। এ সূরাকে সূরা নাহারও বলা হয়ে থাকে। সূরাটি মুসলিম উম্মাহর জন্যে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সূরাটিতে জান্নাতের হাউযে কাউসার এর কথা বলা হয়েছে যা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে দান করা হয়েছে।
মক্কার কাফিররা রাসুল (সাঃ) এর পুত্রসন্তান না থাকার কারণে বিদ্রূপ করত এবং এতে তিনি মানসিক কষ্ট পেতেন। তাই তাদের বিদ্রূপের জবাব দিতে ও মহানবীকে সান্ত্বনা দিতে আল্লাহ এই সুরাটি নাজিল করেছেন। যার অর্থ এই যে, আমি তোমার বংশে অসাধারণ প্রাচুর্য বা বরকত দান করেছি। সে কারণে বর্তমানে সম্ভবত এমন কোন স্থান নেই যেখানে তাঁর সন্তান অর্থাৎ সাইয়্যেদ নেই। আর বহু সুন্নি আলেমদের বর্ণিত একটি হাদিস হল, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ সকল নবীর বংশ তাঁদেরই ঔরসে রেখেছেন, আর আমার বংশ আলীর ঔরসে রেখেছেন।’ (শারহে মুসলিম, ত্বাহা হোসাইন)
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
সূরা কাওসার
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
(১)
আরবিঃ إِنَّآ أَعْطَيْنَٰكَ ٱلْكَوْثَرَ
উচ্চারণঃ ইন্নাআ‘তাইনা-কাল কাওছার।
অনুবাদঃ নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি।
(২)
আরবিঃ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ
উচ্চারণঃ ফাসালিল লিরাব্বিকা ওয়ানহার।
অনুবাদঃ অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন।
(৩)
আরবিঃ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلْأَبْتَرُ
উচ্চারণঃ ইন্না শা-নিআকা হুওয়াল আবতার।
অনুবাদঃ যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।
সূরা কাওসার এর শানে নুযূল
মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হােসাইন থেকে বর্ণিত, তৎকালীন আরবে যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায় তাকে ” আব্তার” বা নির্বংশ বলা হত।
শৈশবে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পুত্র কাসেম অথবা ইবরাহীম মারা যাওয়ার পর কাফেররা নবীজিকে নির্বংশ বলে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে শুরু করলো। ওদের মধ্যে ‘আস ইবনে ওয়ায়েল’র নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। তার সামনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কোনও আলােচনা হলে সে বলত, আরে তার কথা বাদ দাও, সে তাে কোনও চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চারণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয়। (ইবনে কাসির, মাযহারি)
সূরা কাওসার এর ফজিলত সমূহ
সূরা কাওসার হচ্ছে দোজাহানের অফুরন্ত কল্যাণের সুখবর! এই সূরা হতে জানা যায় হাউজে কাউসার সম্পর্কে, যা কিয়ামতের মাঠে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওয়াসাল্লামকে প্রদান করা হবে। যে মুহূর্তে সূরা আল কাউসার নাজিল হয় সে মুহূর্তে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের চেহরা মােবারকে হাসির নুরানি ঝটা দেখতে পান সাহাবায়ে কেরামগণ। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কাউসার’ সেই অজস্র কল্যাণ যা আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.)-কে দান করেছেন। কাউসার জান্নাতের একটি প্রস্রবণের নাম। সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে যে, এটা একটি নহর যা বেহেশতে নবী (সা.)-কে দান করা হবে।’
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদিন মসজিদে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন। হঠাৎ মহানবীর (সা.) মাঝে তন্দ্রা অথবা একধরনের অচেতনতার ভাব দৃশ্যমান হলাে। এরপর নবীজি (সা.) হাসিমুখে মস্তক উত্তোলন করলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, এই মুহূর্তে আমার নিকট একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে’। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহসহ সূরা কাউসার পাঠ করলেন এবং বললেন, ‘তােমরা জান, কাউসার কী?’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল ভালাে জানেন। তিনি বললেন, ‘এটা জান্নাতের একটি নহর। আমার পালনকর্তা আমাকে এটা দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ আছে এবং এই হাউজে কেয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকাসম হবে। তখন কতক লােককে ফেরেশতাগণ হাউজ থেকে হটিয়ে দেবে। আমি বলবাে, পরওয়ারদেগার, সে তাে আমার উম্মত। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আপনি জানেন না, আপনার পরে সে কী নতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল?’ (হাদিসে সহিহ বােখারি, মুসলিম শরিফ, আবু দাউদ, নাসায়ী)।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। সূরা আল কাউসারে আল্লাহর তাওহীদ তথা একত্ববাদের বাণী এসেছে। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে অন্য কোনাে কিছুর শরীক না করার কথা পবিত্র কোরআনে বারবার এসেছে। সূরা কাউসারেও এ সম্পর্কিত নির্দেশ এসেছে। সূরা কাউসারের দ্বিতীয় আয়াতে এই নির্দেশ এবং একিসঙ্গে আল্লাহ তায়ালার উদ্দ্যেশ্যে কোরবানি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় আয়াত যেসব কাফের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে নির্বংশ বলে দোষারােপ করত তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। অধিকাংশ রেওয়ায়েত মতে এই আয়াতে,আস ইবনে ওয়ায়েল এবং কোনাে কোনাে রেওয়ায়েত মতে ওকবা এবং কোনাে কোনাে রেওয়ায়েত মতে, কা’ব ইবনে আশরাফকে বােঝানাে হয়েছে।