লীগ অব নেশনস ব্যর্থতার কারণ গুলো আলোচনা কর, লীগ অব নেশনস ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী?, লীগ অব নেশনস ব্যর্থতার কারণ কি
লীগ অব নেশনস এর ব্যর্থতার কারণ
১৯৩০ সাল পর্যন্ত লীগ অব নেশনস অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিরোধ মোটামুটি সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় সমর্থ হয়।
কিন্তু ১৯৩১ এর পর বৃহৎ শক্তিগুলো পারস্পরিক স্বার্থে দ্বিধাবিভক্ত হলে লীগ অব নেশনস তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।
যেমন: জাপান ১৯৩১ সালে চীন আক্রমণ করে মাঞ্চুরিয়া দখল করে নেয়। জাপান ছিল লীগ অব নেশনসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং চীন নবীন সদস্য।
চীন লীগ অব নেশনসের কাছে ন্যায়বিচার দাবি করে আবেদন করলে ব্রিটেনের প্রভাবে লীগ অব নেশনস জাপানের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
কিন্তু বিশ্ব জনমতের চাপে ও চীনা জাতীয়তাবাদীদের প্রচন্ড গোলমালের কারণে লীগ অব নেশনস এ সংক্রান্ত এক কমিশন গঠন করে। এদিকে জাপান মাঞ্চুরিয়ায় মাঞ্জুকুয়ো নামে এক তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করে তার সব দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করে।
কমিশন জাপানকে আক্রমণকারী সাবস্ত করলে এর প্রতিবাদে দেশটি লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ পরিত্যাগ করে। কিন্তু ব্রিটেনের প্রভাবে লীগ অব নেশনস জাপানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়।
১৯৩৫ সালে ইতালি আবিসিনীয় সীমান্তে ওয়াল ওয়ালা গ্রামে গুলিবর্ষণ করলে আবিসিনিয়া লীগ অব নেশনস কাউন্সিলে আবেদন জানায়। লীগ অব নেশনস ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করে, তবে তা ব্রিটেন ও ফ্রান্সের চাপে অকার্যকর করে রাখা হয়।
ইতোমধ্যে ইতালি আবিসিনিয়া সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করলে লীগ অব নেশনস একের পর এক কমিশন গঠন করলেও ব্রিটেনের চাপে সে কমিটিগুলোর রিপোর্ট বাতিল হয়ে যায়।
ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভেবেছিল ইতালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ফ্যাসিবাদী ইতালি নাৎসিবাদী জার্মানির সাথে ঐক্যবদ্ধ হলে ইউরোপের শক্তির ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং তা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য তারা ইতালিকে লীগ অব নেশনসের মাধ্যমে শাস্তি দিতে অনীহা প্রকাশ করে।
শেষ পর্যন্ত ব্রিটেন ও ফ্রান্স তাদের নিজ দেশের জনমতের চাপে ইতালিকে আক্রমণকারী ঘোষণা দিতে বাধ্য হয় এবং লীগ অব নেশনস গঠনতন্ত্রের ১৬ নং ধারা অনুযায়ী ইতালির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করে।
কিন্তু ইতালি লীগ অব নেশনসের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সদস্যপদ পরিত্যাগ করে। এভাবে ১৯৩১ সালের পর বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের স্বার্থে লীগ অব নেশনস কে অমান্য করতে শুরু করলে এর কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়।
লীগ অব নেশনস এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে যৌথ নিরাপত্তা বিনষ্ট হয়। এর ফলে বিশ্ব আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়। রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে লীগ অব নেশনস ব্যর্থ হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হয়।
লীগ অব নেশনসের ২৩ নং ধারা অনুযায়ী ১৯২৩ সালে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা গঠিত হলে প্রাচ্যদেশে কলেরা, প্লেগ ও ম্যালেরিয়া দমনে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হয়।
১৯২০ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে লীগ অব নেশনসের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বাধা দূর করার জন্য বহুবিধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বার্থ নির্ধারণ, শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ, সঙ্গতিপূর্ণ আমদানি শুল্ক, দাস বাণিজ্য বিলোপ সাধন, মূলধন ও পণ্য চলাচলে বাধা দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসংখ্য কার্যকর সুপারিশ প্রণয়ন করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের পুনর্গঠনে লীগ অব নেশনস উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। যদিও রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসায় লীগ অব নেশনস তেমন সফল হয়নি, তবে এর অর্জনও কম নয়।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে লীগ অব নেশনসের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ এর সাধারণ পরিষদের হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না। আর কাউন্সিল ছিল বৃহৎ শক্তিবর্গের নিয়ন্ত্রণে। এর ফলে লীগ অব নেশনস বৃহৎ শক্তিবর্গের ক্রীড়নকে পরিণত হয়।
লীগ অব নেশনস কাকে বলে? লীগ অব নেশনস এর পটভূমি, গঠন, উদ্দেশ্য, গুরুত্ব এবং ব্যর্থতার কারণ আশা করি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন।