বজ্রপাত রোধে তাল গাছ, বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে তালগাছ লাগানো প্রয়োজন,বজ্রপাতে তালগাছ কী ভূমিকা পালন করে বা কিভাবে সহায়তা করে?
বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে দেশব্যাপী তালগাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই সরকারি উদ্যোগে ১০ লাখ তালগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নারিকেল গাছের চারা রোপণেরও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গ্রামেগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে তালগাছ ও নারিকেল গাছ থাকলে সেগুলো বজ্র নিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে। এর ফলে বজ্রপাতে নিহত হওয়ার ঘটনা এড়ানো যাবে বলে আশা করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, দেশে বজ্রপাতের ঘটনা আগের চেয়ে বেড়েছে। গত বছর দেশে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে চারশ’ মানুষ। এর মধ্যে একদিনেই মারা যান ৮২ জন। বিষয়টি তখন সংবাদমাধ্যমসহ সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
এসব মৃত্যুর ঘটনায় কালবৈশাখী-ঘূর্ণিঝড়, বন্যা-জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প-অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে নতুন দুর্যোগ হিসেবে যুক্ত হয়েছে বজ্রপাত। বিষয়টি সরকারকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এটিকে নতুন দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনা করেছে। সরকারি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় সর্বত্রই তালগাছসহ বড় বড় গাছের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে।
জনমনে প্রচলিত আছে, আগে বজ্রপাত হলে তা তালগাছ বা অন্য কোনও বড় গাছের ওপর পড়তো। বজ্রপাত এক ধরণের বিদ্যুৎ রশ্মি। তাই বজ্রপাতের ওই রশ্মি গাছ হয়ে তা মাটিতে চলে যেত। এতে জনমানুষের তেমন ক্ষতি হতো না।
কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম ঘুরলেও এখন আর তাল গাছ দেখা যায় না। একইভাবে বড় আকারের গাছও এখন আর তেমন নেই। দেশব্যাপী বনায়ন হলেও তা আকারের দিক থেকে বড় হয়ে ওঠেনি। মূলত এ কারণে বজ্রপাতে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বজ্রপাতের আগাম পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তাই এ দুর্যোগ থেকে সাধারণ মানুষ যেন রেহাই পায় সেজন্য দেশব্যাপী তালগাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আগে প্রতি বছর ২৮ মার্চ দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস হিসেবে পালিত হতো। এই তারিখটি মহান স্বাধীনতা দিবসের (২৬ মার্চের) কাছাকাছি বলে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ মার্চ দেশব্যাপী জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘দুর্যোগে প্রস্তুতি সারাক্ষণ, আনবে টেকসই উন্নয়ন’। শুক্রবার (১০ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রয়েছে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসের প্রধান অনুষ্ঠান।
দুর্যোগকবলিত মানুষের কথা মাথায় রেখেই সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি জানান, যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে দুর্যোগকবলিত মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘এ’ গ্রেডের জেলায় ২ লাখ টন খাদ্য শস্য, ২ লাখ টাকা; ‘বি’ গ্রেডের জেলার জন্য দেড় লাখ টন খাদ্য শস্য ও দেড় লাখ টাকা এবং ‘সি’ গ্রেডের জেলায় ১ লাখ টন খাদ্য শস্য ও ১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। জেলা প্রশাসকরা এগুলো কাজে লাগাতে পারেন।
দেশের জনসাধারণকে দিনের শুরুতেই ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ১০৯০ নম্বরে ফোন করে আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী। এজন্য কোনও অপারেটর থেকেই চার্জ দিতে হবে না বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশবাসীর জন্য এসব ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। জনসাধারণের মধ্যে এ সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়লে দুর্যোগ এবং এর ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগ অনেকাংশে কমবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও