নরমাল ডেলিভারি চান?, নরমাল ডেলিভারির জন্য কিছু টিপস
মাতৃত্বকালীন সময়টা মায়ের সাথে সাথে পরিবারের সকলের একটু বেশি সতর্ক থাকা জরুরী। প্রত্যেকেই চায় গর্ভাবস্থার সময়টা সহজভাবে কাটুক এবং স্বাভাবিক প্রসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মা তার সন্তানের জন্ম দিক।
তবে ইদানিং ডেলিভারি মানেই সিজার। অথচ আগের সময় বেশিরভাগ ডেলিভারিই হতো স্বাভাবিক প্রসব প্রক্রিয়ায়। সিজারে বাচ্চা হলে মা ও শিশুর নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সিজার ছাড়া নরমাল ডেলিভারিতে প্রসব প্রক্রিয়ার জন্য মাতৃত্বকালীন সময়ে মায়েদের জন্য আছে কিছু পরামর্শ। এগুলো পালন করলে, নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্ম হতে পারে।
ব্যায়াম:
গর্ভধারণ সময়ে নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের শক্তি বাড়ে ও শরীর সতেজ থাকে। তাছাড়া ব্যায়াম প্রসবকালীন ব্যথা ও অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। সাথে স্বাভাবিক প্রসবের রাস্তাও প্রশস্ত করে।
খাদ্যাভ্যাস:
সুষম খাদ্য শুধু মায়ের জন্যই নয়, বরং গর্ভের ভ্রুণের সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করে। গর্ভকালিন সময় সবুজ শাক-সবজি, ফলমূল ও প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
ঘুম:
গর্ভবতী মায়েদের দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম প্রয়োজন। এতে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে শিশুর বিকাশ ঘটে। প্রসূতি মায়ের মস্তিষ্ক শান্ত রাখতে ঘুম খুব জরুরি।
শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া:
গর্ভবতী মায়ের প্রসবের সময় ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে হয়। তাই এই সময় থেকেই, শ্বাসপ্রশ্বাস ব্রিদিং অনুশীলন করে নিন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা:
প্রসূতি নারীদের মাতৃত্বকালীন সময়ে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সময় সেজন্য পর্জাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। দৈনিক কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি খেতে হবে।
অ্যাকটিভ লাইফস্ট্যাইল:
অনেকে গর্ভকালীন সময় শুয়ে বা বসে থাকতে পছন্দ করেন। অনেকেই কাজ করার অনীহা দেখায়। যদি চিকিৎসক আপনাকে বিশ্রামে থাকতে না বলেন এবং আপনার কোনো জটিলতা না থাকে তবে শুয়ে বসে না থেকে হালকা ও সাধারণ কাজের মধ্যে থাকুন। নিজেকে সবসময় সচল রাখুন।
মানসিক স্ট্রেস:
নরমাল ডেলিভারির জন্য শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থের উন্নতি প্রয়োজন। শরীর ও মন প্রফুল্ল রাখে এমন কাজ গুলো করুন। এই সময় কোনো মানসিক স্ট্রেস নেওয়া যাবে না। নিজেকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।
তথ্যসূত্র: এইসময়
নরমাল ডেলিভারির জন্য কি খেতে হবে, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়, নরমাল ডেলিভারির সমস্যা, পেইনলেস নরমাল ডেলিভারি, নরমাল ডেলিভারির জন্য দোয়া, বাচ্চার ওজন কত হলে নরমাল ডেলিভারি হয়, নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা, নরমাল ডেলিভারির হোমিও ঔষধ
প্রেগন্যান্ট মায়েদের কাছ থেকে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কিত নানান ধরনের প্রশ্ন শোনা যায়। আজ সেরকমই ৮টি কমন প্রশ্নের উত্তর জানাচ্ছেন ডা. নুসরাত জাহান।
১) প্রশ্ন : ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি (ভ্যাজাইনাল) বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : এই ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি প্রক্রিয়ায় নরমাল ডেলিভারির সময় যে সকল নার্ভ ব্যথার অনুভূতি বহন করে সেগুলো ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে অবশ করে দেয়া হয়, ফলে রোগী নরমাল ডেলিভারির পেইন অনুভব করতে পারে না। তবে এই সময়ে হাঁটাচলা বা অন্যান্য কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে। এই ব্যথানাশক প্রক্রিয়াটির নাম এপিডুরাল এনালজেসিয়া।
২) প্রশ্ন : কিভাবে দেয়া হয় এবং কখন দেয়া হয়?
উত্তর : নরমাল ডেলিভারির তিনটি স্টেজ আছে, যেমন-
প্রথমে স্টেজ : লেবার পেইন শুরু হবার পর থেকে জরায়ুমুখ পুরোপুরি খোলা (১০ সে.মি) পর্যন্ত সময়কে প্রথম পর্যায় ধরা হয়।
দ্বিতীয় স্টেজ : জরায়ুমুখ পুরোপুরি খোলার পর থেকে বাচ্চা ডেলিভারি পর্যন্ত।
তৃতীয় স্টেজ : এ সময় গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা ডেলিভারি হয়।
নরমাল ডেলিভারির প্রথম স্টেজে জরায়ুর মুখ যখন চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার খুলে যাবে এবং রোগী ব্যথা সহ্য করতে পারবে না তখন এই অবশ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
এ প্রক্রিয়ায় মেরুদণ্ডের ভিতরে একটি প্লাস্টিকের ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং এখান থেকে কিছুক্ষণ পর পর স্পাইনাল কর্ডের এপিডুরাল স্পেসে ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হয়।
৩) প্রশ্ন : এ প্রক্রিয়ার সুবিধাগুলো কী কী? নরমাল ডেলিভারি চান?-নরমাল ডেলিভারির জন্য কিছু টিপস
উত্তর : প্রথমত যেসব রোগীরা নরমাল ডেলিভারির ব্যথা সহ্য করতে চাইত না তারা এখন এভাবে সহজেই ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি করাতে সক্ষম হবে। এতে নরমাল ডেলিভারির হার বেড়ে যাবে।
এতে সুবিধা হচ্ছে সিজার-জনিত জটিলতা থেকে মা মুক্ত থাকবে; যেমন সিজারের জন্য কিছুটা হলেও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়, সিজারিয়ান ডেলিভারিতে ব্লিডিং এবং ইনফেকশন হবার আশঙ্কা নরমাল ডেলিভারির তুলনায় বেশি থাকে। সিজারের আরো কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে অ্যাডহেশন তৈরি হওয়া অর্থাৎ পেটের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়। এছাড়াও একবার বা দু’বার সিজার হলে পরে আবার সিজার করার দরকার পরে। তাছাড়া, সিজারের পরে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সাধারণত দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে, অন্য দিকে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হলে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারে। আবার বাচ্চা নরমাল প্রক্রিয়ায় হবার কারণে এদের শ্বাসকষ্ট এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে ভোগার আশঙ্কা কম থাকে।
৪) প্রশ্ন : অসুবিধাগুলো কী কী?
উত্তর : ডেলিভারির দ্বিতীয় স্টেজে মা যেহেতু জোরে পুশ করতে পারে না তাই সাধারণ নরমাল ডেলিভারির চেয়ে এখানে সময় বেশি লাগার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া এই প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল। তবে এই এনালজেসিয়ার কারণে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হবার কোনো আশঙ্কা থাকে না।
৫) প্রশ্ন : এপিডুরাল এনালজেসিয়া বা অবশ করনের জন্য নরমাল ডেলিভারি হবার আশঙ্কা কি কমে যেতে পারে?
উত্তর : এপিডুরালের কারণে নরমাল ডেলিভারি হবার চান্স কমে না, তবে যেকোনো নরমাল ডেলিভারির আগে থেকে ১০০ ভাগ শিওর হওয়া যাবে না যে শেষ পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হবে কিনা। অনেক সময় দেখা যায় কোনো স্টেজে এসে বাচ্চা আটকে গেলে কিংবা ফিটাল ডিসট্রেস/ বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হলে সিজার করার দরকার হতে পারে।
৬) প্রশ্ন : সব মা-ই কি এভাবে ডেলিভারি করানোর জন্য উপযুক্ত?
উত্তর : যেসব মায়ের নরমাল ডেলিভারির জন্য সিলেক্ট করা হয়, তাদের সবাই এপিডুরাল নিতে পারবেন। তবে তাদেরকে গর্ভকালে একবার এনেসথেসিস্ট ডাক্তারের মাধ্যমে চেকআপ করানো হয়।
৭) প্রশ্ন : এভাবে ডেলিভারি করানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কী কী সুবিধা থাকা জরুরি?
উত্তর : প্রথমত, লেবার-কালে সময়ে মা ও বাচ্চার মনিটরিংয়ের জন্য এক্সপার্ট ম্যান-পাওয়ার বা লোকবল থাকতে হবে। একজন অভিজ্ঞ এনেসথেসিস্ট এবং ইমারজেন্সি সিজার করার সুবিধা থাকা অবশ্য জরুরি। এছাড়াও মা ও বাচ্চার সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর জন্য সিটিজি মেশিন দরকার হয়।
৮) প্রশ্ন : এ ব্যাপারে আপনার কী ধরনের অভিজ্ঞতা আছে?
উত্তর : সৌদি আরবে চাকরির সময়ে এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে এবং আমার নিজস্ব পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট-এর জন্য একটি সিটিজি মেশিনও রয়েছে। কোনো মা যদি ব্যথামুক্ত ডেলিভারি করতে চান অথবা এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন।
নরমাল ডেলিভারি চান?-নরমাল ডেলিভারির জন্য কিছু টিপস