রাষ্ট্রচিন্তা কি? | রাষ্ট্রচিন্তা বলতে কী বুঝ? |রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।
উত্তরঃ ভূমিকা রাষ্ট্র হলো সমাজজীবনের সর্বাপেক্ষা সর্বজনীন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। যেসব সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষ যুগ যুগ ধরে চিন্তাভাবনা করে আসছে, তার মধ্যে রাষ্ট্র অন্যতম।
এর মাধ্যমেই মানুষের সামাজিক জীবনের সূচনা এবং এর মাধ্যমেই তার জীবনের গতি প্রবহমান। বিভিন্ন যুগের মনীষীগণ বিভিন্ন পরিবেশের প্রভাবে রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন রকম চিন্তাভাবনা করে এসেছেন এবং এর ফলে উদ্ভূত হয়েছে রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ ও চিন্তাধারা ।
রাষ্ট্রচিন্তা :
সাধারণত রাষ্ট্রচিন্তা বলতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনীষী বা দার্শনিকের মতবাদকে বুঝায় অর্থাৎ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিদ্যমান বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দার্শনিকের যে চিন্তাধারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্থান পেয়েছে তাই রাষ্ট্রচিন্তা হিসেবে পরিচিত। অন্য কথায় সমাজবদ্ধ মানুষের প্রকৃতি, তার আচরণ ও কার্যাবলি, রাষ্ট্রের গঠন ও কার্যাবলি প্রভৃতি বিষয়াবলি নিয়ে যুগে যুগে বিভিন্ন মনীষীর চিন্তাই রাষ্ট্রচিন্তা নামে অভিহিত ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
অধ্যাপক আর্নেস্ট বার্কার (Prof. Ernest Barker) এর মতে, “Political theory is speculation of particular thinkers, which may be remote from actual fact of the time. Political thought is the immanent philosophy of the whole age.” অর্থাৎ, রাষ্ট্রচিন্তা বিভিন্ন চিন্তাবিদদের চিন্তাচেতনা ও গবেষণার ফসলস্বরূপ ঘটনাবলি থেকে দূরে থাকে, কিন্তু রাষ্ট্রদর্শন একটি যুগের বাস্তব ঘটনাবলির স্থায়ী দর্শন ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হেনরি বি. মেয়ো (Henry B. Mayo) এর মতে, “যে রাজনৈতিক চিন্তাধারা কোনো বিশেষ সময়ে কোনো বিশেষ জনসমাজের ভাবধারা ও বিশ্বাসসমূহের প্রতি ইঙ্গিত করে তাই রাষ্ট্রচিন্তা। অর্থাৎ রাষ্ট্রচিন্তা হলো কোনো কালের বা যুগের রাজনৈতিক ধারণার সমষ্টি।”
অধ্যাপক হেরম্যান হেলার (Prof. Herman হেল্লের মতে, “রাষ্ট্রচিন্তা হলো রাষ্ট্রের স্থিতিশীল পর্যায়গুলোর আলোচনা করে।”
অধ্যাপক ওয়েপার (Prof. Wayper) এর মতে, “রাষ্ট্রচিন্তা বলতে সেই মতবাদকে বুঝায় যা রাষ্ট্রের গঠন, প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফিলিপ ডোয়েল (Philip Doyle) এর মতে, “মানব প্রকৃতি ও তার কার্যকলাপ, জীবনের সমগ্র অনুভূতির জন্য পৃথিবীর অপরাপর বিষয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ক ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে যে দর্শন কাজ করে তাকে রাষ্ট্রচিন্তা বলে ।”
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন চিন্তাবিদদের মতামতই হলো রাষ্ট্রচিন্তা। রাষ্ট্রচিন্তা মূলত মানুষের বিভিন্ন প্রকার সামাজিক কার্যাবলি আলোচনার মাধ্যমে মানুষ ও রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে । এককথায় মানুষ এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যাবলি এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যাবলি যা মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে, তা সবই রাষ্ট্রচিন্তার অন্তর্ভুক্ত।