বীমা সম্পর্কে মৌলিক ধারণা,বীমাযোগ্য স্বার্থ কী?,আর্থিক ক্ষতিপূরণের নীতি বলতে কী বোঝায়?
বীমা সম্পর্কে মৌলিক ধারণা
১। মি. তামিম তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ৩০ লাখ টাকার বীমা করেন। দুর্ঘটনায় গাড়িটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মি. তামিম বীমা দাবি পেশ করার কিছুদিনের মধ্যে বীমা প্রতিষ্ঠানটি দাবীকৃত ক্ষতিপূরণ প্রদান করে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি খুলনার একজন ব্যবসায়ী ৩০ হাজার টাকায় কেনেন। গাড়ি বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ মি. তামিম দাবি করলে বীমা প্রতিষ্ঠানটি উক্ত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ক) বীমাযোগ্য স্বার্থ কী?
খ) আর্থিক ক্ষতিপূরণের নীতি বলতে কী বোঝায়?
গ) উদ্দীপকের মি. তামিম কোন নীতির আওতায় বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থলাভ করেছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ) বীমা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মি. তামিমের সর্বশেষ দাবি পূরণ না করার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
ক) বীমাকৃত বিষয়বস্তুতে বীমাগ্রহীতার আর্থিক স্বার্থকেই বীমাযোগ্য স্বার্থ বলে।
খ) যে নীতির আলোকে চুক্তিতে উল্লেখ্য কারণে বীমাকৃত সম্পত্তির ক্ষতি হলে বীমা কম্পানি ক্ষতিপূরণ দেয় তাকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের নীতি বলে।
এ নীতি অনুযায়ী বীমাগ্রহীতা বীমাকৃত বিষয়বস্তুর সম্ভাব্য ঝুঁকি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাবে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আর্থিক মূল্যে মূল্যায়িত হতে হবে।
অর্থের অঙ্কে মূল্যায়ন করা না গেলে তার ক্ষতিপূরণ করা বীমা কম্পানির পক্ষে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তবে জীবন বীমার ক্ষেত্রে যেহেতু মানুষের জীবনের কোনো আর্থিক মূল্য নির্ণয় করা যায় না, সে জন্য তা ক্ষতিপূরণের চুক্তি হবে না, সেটা হবে নিশ্চয়তার চুক্তি।
গ) উদ্দীপকে মি. তামিম বীমার আর্থিক ক্ষতিপূরণ নীতির আওতায় বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থলাভ করেছেন।
আর্থিক ক্ষতিপূরণের নীতি হচ্ছে এমন একটি নীতি, যার আওতায় বীমাগ্রহীতাকে আর্থিক সহায়তা এমনভাবে দেওয়া হয়, যেন বীমাগ্রহীতা এমন অবস্থায় ফিরে যায় যে তার কোনো ক্ষতিই হয়নি।
উদ্দীপকে মি. তামিম তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ৩০ লাখ টাকা বীমা করেন।
দুর্ঘটনায় গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মি. তামিম বীমাদাবি পেশ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই বীমাকারী দাবীকৃত ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। মূলত ক্ষতিপূরণের নীতি অনুযায়ী বীমার বিষয়বস্তু ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং বীমাচুক্তির সব শর্ত মেনে চললে বীমাদাবি পেশ করার কিছুদিনের মধ্যেই যত দ্রুত পারা যায় বীমাকারী ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়, যা মি. তামিমের ক্ষেত্রে হয়েছে। অর্থাৎ মি. তামিম বীমা ব্যবসায়ের ক্ষতিপূরণ নীতির আওতায় ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।
ঘ) বীমা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মি. তামিমের সর্বশেষ দাবি পূরণ না করাটা যৌক্তিক। কারণ বীমাদাবি পরিশোধ করার সঙ্গে সঙ্গেই বীমাকারী মি. তামিমের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে।
সম্পত্তি বীমার ক্ষেত্রে সম্পদের সম্পূর্ণ ক্ষতি হলে এবং বীমাকারী পূর্ণ বীমাদাবি পরিশোধ করলে উক্ত সম্পত্তির অবশিষ্ট অংশের ওপর বীমাকারী পূর্ণাঙ্গ অধিকার পায়। বীমাগ্রহীতার কাছ থেকে অধিকারটি বীমাকারীর কাছে চলে যাওয়াসংক্রান্ত নীতিকেই স্থলাভিষিক্তকরণের নীতি বলা হয়।
উদ্দীপকে মি. তামিম গাড়িটি ৩০ লাখ টাকার বীমা করেন। দুর্ঘটনায় গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি বীমাদাবি পেশ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই বীমাদাবি পেয়ে যান। পরবর্তী সময়ে তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি খুলনার একজন ব্যবসায়ী ৩০ হাজার টাকায় কেনেন। কিন্তু গাড়ি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ মি. তামিম দাবি করলেও বীমা প্রতিষ্ঠানটি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ স্থলাভিষিক্তকরণের নীতি কার্যকর হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
স্থলাভিষিক্তকরণের নীতির মূল কথা অনুযায়ী যখনই বীমা প্রতিষ্ঠানটি মি. তামিমের বীমাদাবি পরিশোধ করেছে, তখনই তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটির সব অধিকার বীমা প্রতিষ্ঠানটির হয়ে গেছে। সুতরাং গাড়িটির বিক্রয়লব্ধ অর্থের মালিক কোনোভাবেই বীমা প্রতিষ্ঠানটি মিস তাসলিমার এই দাবিটি পূরণ করেননি।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।