শরিকানা (ভাগা) কুরবানি প্রসঙ্গে কিছু কথা। পাঠ -২

❏ বিভ্রান্তির অপনোদন:

শরিকানা (ভাগা) কুরবানিকে যারা সফরের সাথে খাস বলে দাবি করছেন, তাদের এই ভ্রান্ত দাবির জবাব নিম্নরূপ:

·
প্রথমত, উপরিউক্ত হাদীসগুলো বা শরিকানা কুরবানি সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীসগুলোর মধ্যে কোনো একটি হাদীসেও বলা হয়নি যে, মুক্বীম অবস্থায় কুরবানিতে শরিক হওয়া বৈধ নয়। একবারও এ কথা বলা হয়নি যে, শরিকানা কুরবানি শুধুমাত্র সফরের সাথেই খাস।

·
দ্বিতীয়ত, সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ যেভাবে কুরবানি অধ্যায়ে হাদীসগুলো এনেছেন; এ থেকেও বুঝা যায় যে, তাঁরা ওই সব হাদীসকে সফরের সাথে খাস হওয়া বুঝেননি। এটা সুবিদিত যে, মুহাদ্দিসগণ তাঁদের হাদীস গ্রন্থে যেসব বাব তথা অনুচ্ছেদ রচনা করেন, সেটাই তাঁদের ফিক্বহ (বুঝ)। সুতরাং আসুন, তাঁদের বাব তথা অনুচ্ছেদ রচনার ক্যাটাগরিটা দেখে নিই।

·
১. ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) ওপরে উল্লিখিত ১ নং হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে—“বাবুন ফিল ইশরাকি ফিল উদ্বহিয়্যাহ।” অর্থাৎ, “কুরবানিতে শরিক হওয়ার অনুচ্ছেদ।” [সুনানুত তিরমিযী, কিতাবুল হাজ্ব (হজ অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ৬৬]

এরপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরিক হয়ে কুরবানি করার আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন, والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم “এর ওপর নাবী ﷺ এর সাহাবীবর্গ এবং অন্যান্য আহলুল ‘ইলমের আমল রয়েছে।”

এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় সুনানে তিরমিযীর ভাষ্যকার ইমাম ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “অর্থাৎ, হাদ্ঈ* ও কুরবানির উট ও গরুতে সাত জন শরিক হওয়ার বৈধতার আমল রয়েছে।” [ইমাম ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), তুহফাতুল আহওয়াযী; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৮৮; দারুল ফিকর, দিমাশক্ব কর্তৃক প্রকাশিত (সন-তারিখ বিহীন)]

[*]. টীকা: হাদ্ঈ হলো সেই চতুষ্পদ জন্তু—যাকে আল্লাহ’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানির দিনগুলিতে হারামে তথা মক্কায় জবেহ করা হয় ‘তামাত্তু’ বা ‘ক্বিরান’ হজ করার কারণে, অথবা হজ বা ওমরার কোনো ওয়াজিব কাজ ছুটে যাওয়ার কারণে বা ইহরাম অবস্থার নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার কারণে।

·
২. ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) এভাবে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, “বাবুন ফিল বাক্বারি ওয়াল জাযূরি ‘আন কাম তুজযাউ।” অর্থাৎ, “অনুচ্ছেদ: কুরবানিতে গরু ও উট কত জনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুদ্ব দ্বাহাইয়া (কুরবানি অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ৭]

এরপর যে হাদীসকে সফরের সাথে খাস হওয়ার ধারণা করা হয়, সে হাদীসটিই এই অনুচ্ছেদের অধীনে এনেছেন। হাদীসটি হলো—জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, كُنَّا نَتَمَتَّعُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَذْبَحُ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورَ عَنْ سَبْعَةٍ نَشْتَرِكُ فِيهَا “আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে তামাত্তু‘ হজ করতাম এবং সাতজনে মিলে একটি গরু কুরবানি করতাম। অনুরূপভাবে সাতজনে শরিক হয়ে একটি উট কুরবানি করতাম।” [আবূ দাঊদ, হা/২৮০৭; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত উক্ত হাদীসের পরেই তিনি ওই জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত রাসূল ﷺ এর ক্বওলী (বাচনিক) হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি হলো—জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেন, الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ “একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে (কুরবানি করা যাবে)।” [আবূ দাঊদ, হা/২৮০৮; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর বর্ণনাকৃত উক্ত হাদীসদ্বয়কে সফরের সাথে খাস মনে করতেন না, বরং মুক্বীমের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য মনে করতেন। সেজন্যই তিনি ‘শরিক কুরবানি’ অধ্যায়ে হাদীস দুটো এনেছেন। জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত উক্ত হাদীসদ্বয়কে তিনি সফরের সাথে খাস মনে করতেন না—এর প্রমাণে আরও বলা যায় যে, তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) সফরে কুরবানি করা সম্পর্কে স্বতন্ত্র একটি অনুচ্ছেদ রচনা করা সত্ত্বেও সেখানে জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীস দুটি না এনে ভিন্ন একটি হাদীস নিয়ে এসেছেন। অনুচ্ছেদটি হলো—“বাবুন ফিল মুসাফিরি ইউদ্বাহহী।” অর্থাৎ, “অনুচ্ছেদ: মুসাফিরের কুরবানি করা।” [সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুদ্ব দ্বাহাইয়া (কুরবানি অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ১২]

Leave a Comment