ইসতিসকার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, ইসতিসকার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইসতিসকার নামাজের পর আমল
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য রোদ, বৃষ্টির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কিন্তু অনেক দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও।
অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষ, পশুপাখি, বৃক্ষ ও তরুলতা— সব কিছুই হাঁপিয়ে উঠেছে। এক চিলতে বৃষ্টির জন্য সর্বত্রই তীব্র হাহাকার বিরাজ করছে। খরতাপে শুকিয়ে গেছে বেশিরভাগ খাল ও পুকুরের পানি। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই এখন তীব্র গরম। আকাশে মেঘ নেই, পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কমে গেছে। এতে আরও বাড়ছে গরমের তীব্রতা। জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছেন, তারা পড়ছেন বেশ অস্বস্তিতে। রোদ ও গরমের তীব্রতার সঙ্গে বাড়ছে মানুষের বিভিন্ন রোগ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি।
বৃষ্টির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বৃষ্টির নামাজের পর আমল,বৃষ্টির সালাতের ফজিলত
ইসতিসকার নামাজ কখন পড়বে
বৃষ্টি না হওয়ায় তাপপ্রবাহে দেশের মানুষের বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট হতে থাকলে প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে নামাজ পড়ে পানি প্রার্থনা করে দোয়া করা সুন্নত। বৃষ্টির যিনি মালিক তার কাছেই ধরণা দিতে, তার কাছেই বৃষ্টি প্রার্থনা করতে বলে ইসলাম। একেই আরবিতে বলা হয় ‘ইসতিসকা অর্থাৎ পানি প্রার্থনা করা। বৃষ্টি তো তারই রহমত ও মহান কুদরতের প্রকাশ।
তিনি চাইলে বৃষ্টি দেন, আবার চাইলে অনাবৃষ্টিতে ভোগান। তাই অনাবৃষ্টির এমন সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে বৃষ্টিদাতার দিকেই ফিরে আসা প্রকৃত জ্ঞানীর কাজ।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এর পর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য হতে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রুম: ৩৮)
আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা
ইসতিসকার নামাজ অর্থ বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ। নবিজি বৃষ্টির প্রার্থনার জন্য এ নামাজ পড়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন অতি সাধারণ পোশাক পরিধান করে, বিনত-বিনম্র অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে করতে ইসতিসকার নামাজের জন্য বের হলেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১১৬৫, সুনানে তিরমিজি: ৫৫৮)
দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হলে নবিজির (সা.) অনুসরণ করে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব।
ইসতিসকার নামাজ আদায়ের পদ্ধতি হলো, ইমাম মুসল্লিদের নিয়ে কোনো খোলা প্রান্তরে নামাজের আয়োজন করবেন। জামাতের সাথে আজান ইকামাত ছাড়া দুরাকাত নামাজ আদায় করবেন। নামাজে উচ্চৈস্বরে কেরাত পাঠ করবেন। নামাজের পর ইমাম খুতবা দেবেন, খুতবার শুরুতে চাদর ঘুরিয়ে দেবেন। খুতবার পর কেবলার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে দুহাত তুলে দোয়া করবেন।
বৃষ্টি না হলে এভাবে টানা তিন দিন ইসতিসকার নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব।
ইসতিসকার দোয়া
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য মাঠে গিয়ে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দোয়াটি পড়েছিলেন,
الْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ لَا إِلَهَ إِلَا اللهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ اللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ لَا إِلَهَ إِلَا أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلَاغًا إِلَى حِينٍ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহি রব্ববিল আলামীন, আররহমানির রাহীম, মালিকি ইয়াওমিদ্দীন, লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ইয়াফআলু মা ইউরীদু আল্লাহুম্মা আনতা-লল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল-গানিয়্যু ওয়া নাহনুল ফুক্বারাউ, আনযিল আলায়নাল-গয়সা ওয়াজআল মা আনযালতা লানা ক্যুওয়াতান ওয়া বালাগান ইলা- হীন
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর। তিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা, মেহেরবান ও ক্ষমাকারী। প্রতিদান দিবসের মালিক। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবুদ নেই। তিনি যা চান তা-ই করেন। হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই। তুমি অমুখাপেক্ষী আর আমরা কাঙ্গাল, তোমার মুখাপেক্ষী। আমাদের ওপর তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করো। আর যা তুমি অবতীর্ণ করবে তা আমাদের শক্তির উপায় ও দীর্ঘকালের পাথেয় করো। (সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৩)
বৃষ্টি প্রার্থনায় আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও একাধিক দোয়া বর্ণিত রয়েছে। আমর ইবনে শোয়াইব থেকে বর্ণিত রয়েছে তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে তার দাদা বলেছেন, নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বৃষ্টির জন্য দোয়া করার সময় বলতেন,
اللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهِيمَتَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَأَحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ
উচ্চারণ: আল্লহুম্মা-সক্বি ইবাদাকা ওয়াবাহীমাতাকা ওয়া-নশুর রাহমতাকা ওয়া আহয়ি বালাদাকাল মাইয়্যিত
আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাদেরকে, তোমার পশুদেরকে পানি দান করো। তাদের প্রতি তোমার করুণা বর্ষণ করো। তোমার মৃত জমিনকে জীবিত করো। (সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৬)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একদিন নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে কতিপয় লোক (বৃষ্টি না হওয়ায়) ক্রন্দনরত অবস্থায় এলে তিনি দোয়া করলেন,
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা-সকিনা গাইসাম-মুগীসাস-মারিআন-নাফিআন গাইরা যাররিন আজিলান গাইরা আজিলিন
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদেরকে বিলম্বে নয় বরং তাড়াতাড়ি ক্ষতিমুক্ত-কল্যাণময়, তৃপ্তিদায়ক, সজীবতা দানকারী, মুষল ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করুন।
বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দোয়ার পরপরই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়। (ইবনে খুযাইমাহ: ১৪১৬)