বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক সারের কাজ, বিভিন্ন সারের কাজ, কোন সারে কী কাজ, উত্তম উপায়ে রাসায়নিক সার ব্যবহার
বাংলাদেশের কৃষিতে মূলত ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বরিক এসিড বা বোরন সার ব্যবহার করা হয়। একেকটি সার একেক রকম কাজে ব্যবহার করা হয়।
ইউরিয়া সারের কাজ: ইউরিয়া একটি নাইট্রোজেন সংবলিত রাসায়নিক সার, যা ব্যাপক হারে ফসলের জমিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ থাকে ৪৬%। ইউরিয়া সার নাইট্রোজেন সরবরাহ করে থাকে যা শিকড়ের বৃদ্ধি বিস্তাররে সহায়তা করে থাকে। গাছের ও শাকসবজির পর্যাপ্ত পরিমাণ পাতা, ডালপালা ও কান্ড উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে।
ইউরিয়া সার ক্লোরোফিল উৎপাদনের মাধ্যমে গাছপালাকে গাঢ় সবুজ বর্ণ প্রদান করে থাকে। কুশি উৎপাদনসহ ফলের আকার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। উদ্ভিদের শর্করা ও প্রোটিন উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও গাছের অন্যান্য সব আবশ্যক উপাদানের পরিশোষণের হার বাড়িয়ে থাকে।
টিএসপি, ডিএপি বা ফসফেট জাতীয় সারের কাজ: টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও ডিএপি (ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট)-এই দুটোই হলো ফসফেট জাতীয় রাসায়নিক সার। এই সার দুটোতে শতকরা ২০ ভাগ ফসফরাস থাকে। টিএসপিতে শতকরা ১৩ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং ১.৩ ভাগ গন্ধক রয়েছে। ডিএপিতে ফসফেট ছাড়াও ১৮% নাইট্রোজেন বিদ্যমান থাকে যার কারণে ডিএপি সার প্রয়োগ করলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি ইউরিয়া সার কম দিতে হয়।
ফসফরাস জাতীয় সার কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে। শর্করা উৎপাদন ও আত্তীকরণে সহায়তা করে। গাছের মূল বা শিকড় গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গাছের কাঠামো শক্ত করে গাছকে নেতিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে থাকে। ফলের পরিপক্কতা ত্বরান্বিত করে থাকে। ফুল, ফল ও বীজের গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।
এমপি সার বা পটাশ সারের কাজ: এমওপি বা মিউরেট অব পটাশ সারে শতকরা ৫০ ভাগ পটাশিয়াম থাকে। এমওপি উদ্ভিদ কোষের ভেদ্যতা রক্ষা করে। উদ্ভিদে শর্করা বা শ্বেতসার দ্রব্য পরিবহনে সহায়তা করে। লৌহ ও ম্যাংগানিজের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। উদ্ভিদে প্রোটিন বা আমিষ উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। উদ্ভিদে পানি পরিশোষণ, আত্তীকরণ ও চলাচলে অর্থাৎ সার্বিক নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে। গাছের কাঠামো শক্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নাইট্রোজেন ও ফসফরাস পরিশোষণে সমতা বজায় রাখে।
জিপসাম সারের কাজ: জিপসাম সারে শতকরা ১৭ ভাাগ গন্ধক এবং ২৩ ভাগ ক্যালসিয়াম রয়েছে। জিপসাম বা গন্ধক প্রোটিন বা আমিষ উৎপাদনে সহায়তা করে। তেল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গন্ধক ক্লোরোফিল গঠনে ভূমিকা রাখে এবং গাছের বর্ণ সবুজ রাখতে সহায়তা করে। বীজ উৎপাদন এবং হরমোনের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে।
বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক সারের কাজ, বিভিন্ন সারের কাজ, কোন সারে কী কাজ, উত্তম উপায়ে রাসায়নিক সার ব্যবহার
জিংক সালফেট সারের কাজ: সালফেট ( মনোহাইড্রেটে ) শতকরা ৩৬.০ ভাগ দস্তা এবং ১৭.৬ ভাগ গন্ধক রয়েছে। অপরদিকে জিংক সালফেট (হেপটাহাইড্রেটে) দস্তা ও গন্ধকের যথাক্রমে ২১.০ % এবং ১০.৫% রয়েছে। এছাড়াও চিলেটেড জিংকে ১০ % দস্তা রয়েছে। জিংক সালফেট (মোনোহাইড্রেট), জিংক সালফেট (হেপটাহাইড্রেট) সারের তুলনায় বেশি পরিমাণে মাটিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোনো কোনো ফসলে স্প্রে করেও এটি প্রয়োগ করা যায়।
গাছে বিভিন্ন ধরনের হরমোন তৈরিতে দস্তা বা জিংক অংশগ্রহণ করে থাকে। ক্লোরোফিল উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শিম জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ফলন বাড়িয়ে থাকে।
বোরন সারের কাজ: বরিক এসিডে ১৭ % এবং সলুবোর বোরণে ২০% বোরণ থাকে। এটি গাছের কোষ বৃদ্ধিতে এবং পাতা ও ফুলের রং আকর্ষণীয় করতে সাহায্য করে। পরাগরেণু সবল ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। বীজ উৎপাদনে সাহায্য করে এবং চিটা হওয়া রোধ করে থাকে। বোরন গাছে ফুল ও ফল ধারণে সাহায্য করে এবং ফলের বিকৃতি রোধ সহায়তা করে। লেখাটি কৃষি বাতায়ন থেকে সংগ্রহ করা।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।