ব্যবসায় অর্থায়নের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর, অর্থায়নের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
বর্তমান অর্থায়ন উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের দীর্ঘ সময়ের পথপরিক্রমায় পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আজকের অবস্থায় এসে একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে উন্নীত হয়েছে। শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে ‘যন্ত্রযুগ’ শুরু হবার পর ব্যবসায় জগতে অর্থায়ন প্রচলিত হয়।
সে সময়ে এটি ব্যষ্টিক অর্থনীতির প্রয়োগ শাখার একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হত। নিচে অর্থসংস্থানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. ১৮৯০-১৯০০ দশক : ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ হতে একটি পৃথক শাস্ত্র হিসেবে অর্থায়নের উৎপত্তি হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থায়নের বিষয়বস্তু বিনিয়োগ, ব্যাংকিং, প্রতিষ্ঠানের একত্রিকরণ, পুনর্গঠন এবং কর্পোরেশনের ঋণপত্র ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ সময়কে অর্থায়নের বিষয়টি সনাতনী ধারণার পর্যায়ে ছিল। থমাস এল. গ্রিন “কর্পোরেশন ফিন্যান্স” নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন ১৮৯৭ সালে ।
২. ১৯০০-১৯২০ দশক : ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সামগ্রিকভাবে তহবিল সংগ্রহে সমস্যার সম্মুখীন হয়। এর ফলে অর্থসংস্থানের আওতা তহবিল সংগ্রহ পদ্ধতি ও বিশ্লেষণে সম্প্রসারিত হয়। এ দশকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া শুরু হয় এবং ব্যবসায়ের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করা হয়।
৩. ১৯১০-১৯২০ দশক এ দশকে প্রযুক্তিগত আবিষ্কারসমূহ এবং হেনরী ফোর্ড এর সাফল্য ১৯১৩ সালে ব্যাপক উৎপাদন প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে। এ সময়ে অনেক নতুন শিল্প গড়ে উঠে এবং ব্যাপক উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়। ১৯২০ সালে আর্থার ‘এসT ডিউয়িং কর্তৃক “ফিনান্সিয়াল পলিসিস অব কর্পোরেশন” শীর্ষক একটি মূল্যবান ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ বই রচিত হয়। যা অর্থায়নের ধারণাকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে।
৪. ১৯২০-১৯৩০ দশক : এ সময়ে অর্থায়নের ভূমিকা পরিবর্তিত হতে থাকে। ১৯২০ সাল থেকে অভ্যন্তরীণ অর্থায়নের চেয়ে বাহ্যিক অর্থায়ন অধিক গুরুত্ব লাভ করতে শুরু করে। ফলে অর্থায়নের পুরানো ধারণার স্থলে আধুনিক ধারণা প্রবর্তিত হতে থাকে। ই. এস. মীড়, আর্থার এস, ডিউয়িং এবং এইচ লায়ন এর মত ব্যক্তিগত দক্ষতার সাথে মূলধনীকরণ সমস্যা বিশ্লেষণ, মূলধন কাঠামো নির্ধারণ, উদ্যোগ গ্রহণ, আর্থিক ঝুঁকির প্রকৃতি ও কাঠামো ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে অর্থায়নের আধুনিক মতবাদকে পরিচিত করে তোলেন ।
৫. ১৯৩০-১৯৪০ দশন : ১৯২৯ সাল থেকে মহামন্দা শুরু হয়। মহামন্দায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে তরলতা সমস্যার সৃষ্টি হয়। মহামন্দাকালে শেয়ার বাজারে শেয়ারের মূল্য পতন ঘটে এবং সবগুলো বড় বড় কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে দেউলিয়াত্ব পুনর্গঠন এমনকি টিকে থাকাই অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় মূলধন কাঠামো সিদ্ধান্তে ঋণকে অর্থায়নের প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সমস্যা অর্থসংস্থানের পঠন পাঠন ও বাস্তবে সুষ্ঠু প্রয়োগকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে ।
৬. ১৯৪০-১৯৫০ দশক : এ দশককে অর্থায়নের সনাতন যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৫০ -এর দশকের মধ্যভাগে মূলধন বাজেটিং ও অন্যান্য সমন্ধযুক্ত বিষয়সমূহ ব্যবসায় পুরোভাবে ত্বরান্বিত করে। ফলে নতুন বিনিয়োগ প্রকল্প শনাক্ত করনে নতুন পদ্ধতি ও কৌশলের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৫০ দশক থেকে জটিল তথ্য প্রক্রিয়া ও উপাত্ত সরবরাহ করা হতো যা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আর্থিক ব্যবস্থাপককে সাহায্য করতে শুরু করে।
৭. ১৯৫০-১৯৬০ দশক : . এ দশকের মধ্যে আধুনিক অর্থায়নের উন্নয়ন হয়। এ সময়ে আর্থিক সমস্যা সমাধানে শক্তিশালী বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়। সফল সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও আর্থিক বিশ্লেষণে ফলিত গবেষণা এবং সিদ্ধান্ত তত্ত্বের কৌশলসমূহের ব্যবহার আরম্ভ হয়।
৮. ১৯৬০-১৯৭০ দশক : এ সময়কালে অর্থায়নের কার্যক্রমের আওতা আরও সম্প্রসারিত হয়। এ দশকের প্রধান ঘটনা হলো Portfolio তত্ত্বের উন্নয়ন এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তার যথার্থ প্রয়োগ। ১৯৫২ সালে Warkowity প্রথম Portfolio তত্ত্বটি উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে এ তত্ত্বের আরও অনেক উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি সাধিত হয়। ১৯৭০ এর দশকে Black & scholes সম্পর্কযুক্ত আর্থিক মূল্যায়নের জন্য Option model উদ্ভাবন করেন। ১৯৮০ এর দশকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন বুদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে অর্থায়ন বিষয়টির আওতায় পরিবর্তন ঘটে চলেছে এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে অর্থায়ন ।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।