ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম দ্বারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দরিদ্রতার উপর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। যদিও ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাবের পরিমাপ করার প্রসঙ্গে মিশ্র বদানুবাদ রয়েছে। আর এ প্রতিক্রিয়ার অধিকাংশ বক্তা হচ্ছেন, বিভিন্ন পেশার জনগণ, বুদ্ধিজীবী, নীতিনির্ধারক, ক্ষুদ্র অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ এবং সর্বোপরি।
অর্থনীতিবিদগণ, বিভিন্ন মতভেদের তাদের প্রতিক্রিয়ার ক্ষুদ্র অর্থায়নের বিভিন্ন ধাপে পরিমাপযোগ্য প্রভাবের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। নিম্নে ক্ষুদ্র অর্থায়নে প্রভাব আলোচনা করা হলো :
১. উন্নয়নের উপর ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব : উন্নয়নের উপর ক্ষুদ্র অর্থায়নের আনুপাতিক প্রভাব বিরাজমান। ২০০৮ সালে UNCDF এক প্রতিবেদন, অর্থনীতিকে উন্নয়নশীল ভূমিকা রাখে ক্ষুদ্র অর্থায়ন দ্বারা এমন ৩টি চাবিকাঠি প্রকাশ করে থাকে ।
Otero নামক লেখক বলেন, “ক্ষুদ্র অর্থায়নের মূল যুদ্ধ দারিদ্র্যতার সাথে। তিনি আরো বলেন, দারিদ্র্যতা নিরসনের লক্ষ্যে কার্যকর মূলধন, শ্রম, একতা, নিষ্ঠা, সামাজিকতা ও মানসিকতার সহাবস্থানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র অর্থায়ন কর্মকাণ্ড অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করে থাকে।”
সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা লক্ষ্য করি, দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বিধিবদ্ধ কোনো তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংককে সহায়তা করার জন্য পায় না। সেখানে ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ সকল বাজার ব্যর্থতা নিরসন হয়ে থাকে। এ অবস্থায় International Monetary Fund (IMF) পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে এ খাতের কার্যকর উন্নয়ন ব্যতীত Mellennium Development Goal (MDG) অর্জন সম্ভবপর নয়।
কিছু বিশেষজ্ঞ ক্ষুদ্র অর্থায়ন দ্বারা কোনো উৎসাহমূলক পরিবর্তন খুঁজে পাননি। তাদের মতে, ক্ষুদ্র অর্থায়ন কোনো Silver Bullet নয় যে, দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
Hulme & Mosley ১৯৯৬ সালে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেন, ক্ষুদ্র অর্থায়ন দ্বারা দারিদ্র্যতা উপশ নয়, বরং আর নিঃস্ব হয়ে যায়।
Rogale-এর মতে,
ক্ষুদ্র অর্থায়নের বিপক্ষে ৫টি যুক্তি তুলে ধরেন। যা নিম্নরূপ :
ক) ক্ষুদ্র অর্থায়ন দারিদ্র্যতা নিরসনের লক্ষ্যে Single sector approce-কে উৎসাহিত করেছেন।
(খ) ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অপ্রাসঙ্গিকতা ।
(গ) দারিদ্র্যতার ব্যাপারে অতিরিক্ত সহজ ও সাবলীলধারণা ব্যবহৃত ।
(ঘ) ক্ষেত্র বিশেষের উপর অতিরিক্ত প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
(ঙ) অপর্যাপ্ত শিক্ষা ও স্থান ।
২. দারিদ্র্যতার উপর ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব : জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবই হচ্ছে দারিদ্র্যতা।
Wright এর মতে, “আয়ের বর্ধিষ্ণুতা দ্বারা দারিদ্র্যতার উপর ক্ষুদ্র অর্থায়নের একক প্রভাব পরিমাপের অন্যতম সদস্য সীমাবদ্ধতা।” তিনি আরো বলেন, “আয়ের বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যতার হ্রাসের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কোনো দারিদ্র্য ব্যক্তির আয়ের বৃদ্ধির দ্বারা দারিদ্র্যতা হ্রাস বুঝায় না। তার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন ।
ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তেমনভাবে সমাজের সবচেয়ে দারিদ্র্য ব্যক্তির নিকট পৌঁছাতে পারে না। অনেকের ধারণা আয়ের ও সম্পদের বৃদ্ধি এবং ঋণগ্রহীতার সংখ্যা হ্রাস দ্বারা ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রমের সাফল্য নির্ভর করে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা চিত্রিত হয়েছে ক্ষুদ্র অর্থায়নের উপর ব্যয়ের মসৃণ প্রভাব । সম্পদের পুনর্বণ্টন এবং গৃহ আবাসস্থলের প্রভাব ।
গ্রামীণ ব্যাংক, ব্যাংক ও আশার মতো প্রতিষ্ঠানসমূহ এটি নিশ্চিত করেছে। দারিদ্র্যতা হ্রাসের পাশাপাশি আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি কীভাবে মূলধন দ্বারা সম্ভব।
Maxoux-এর মতে, “দারিদ্র্যতার উপর ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব নিম্নোক্তভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।”
১. ঋণ আয় বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামাজিক জীবনে তথা নারীর ক্ষমতায়নে ।
২. ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম আয় ও ব্যয়ের মাঝে সামঞ্জস্যপূর্ণ সহাবস্থানের পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত ও জরুরি সময়ে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে ।
দারিদ্র্যতার উপর ক্ষুদ্র অর্থায়নের মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও এর ইতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে বিদ্যমান ।
৩. জীবিকার নিরাপত্তার উপর ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব : সামর্থ্য সম্পদ (সামাজিক ও অর্থনৈতিক) এবং কার্যক্রমের সমন্বয়। যা জীবনধারণের প্রয়োজনকে জীবিকা বলা হয়। জীবিকার নিরাপত্তা বলতে সামঞ্জস্যপূর্ণ অধিকার বাস্তবায়নে প্রদেয় নিরাপত্তাকে বুঝানো হয়ে থাকে। এর মধ্যে স্পর্শনীয় সম্পদ ও অস্পর্শনীয় সম্পদ দ্বারা ঝুঁকি হ্রাস। সংঘর্ষ এড়ানো এবং আনুষ্ঠানিক খরচ মিটানোকে বুঝায়। সাধাণ অর্থে, কোনো নির্দিষ্ট পরিবার বা সমাজের নির্দিষ্ট সময় পরস্পর সম্পদ, আয় ও সামাজিক অবস্থানের উত্তরণ ।
এনজিওসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার লক্ষ্য থাকে গ্রাহকের জীবিকার নিরাপত্তার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসকরণ কার্যক্রম চালু করা। উক্ত প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের সংখ্যা, মোট আমানতের পরিমাণ মোট ঋণের পরিমাণসহ সংখ্যাত্মক তথ্যদ্বারা গ্রাহকের জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
এক্ষেত্রে অবশ্য আরো একটি বিষয় জড়িত তা হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া যার মধ্যে বন্যা, খরা, এছাড়া সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থা ও ক্ষুদ্র অর্থায়নের জীবিকার নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় ।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।